Trending

ফেব্রুয়ারির বেতন হয়নি শতাধিক কারখানায়, বোনাস নিয়েও শঙ্কা: তৈরি পোশাক

শতাধিক পোশাক কারখানা এখনো শ্রমিকদের ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন দিতে পারেনি। আবার অনেক কারখানা ঈদের বোনাসও দিতে পারেনি। এ নিয়ে সংকট তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন শিল্প পুলিশ ও শ্রমিক নেতারা। তবে মালিক পক্ষ বলছে, কিছু সংকট থাকলেও বরাবরের মতো এবারও নির্দিষ্ট সময়ে শ্রমিকরা বেতন-বোনাস পেয়ে যাবেন।

সম্প্রতি সরকারের নজরদারি প্রতিষ্ঠানগুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছিল, চার শতাধিক পোশাক কারখানায় বোনাস ও মজুরি নিয়ে সংকট তৈরি হতে পারে। তবে এরই মধ্যে এই সংখ্যা কমে শতাধিকে চলে এসেছে। তৈরি পোশাক খাতের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ বলছে, বড় কোনো সংকট তৈরি না হলে প্রতিবারের মতো এবারও শ্রমিকরা বোনাস ও মজুরি নিয়ে ঈদের ছুুটিতে বাড়িতে যাবেন।

জানতে চাইলে শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার নূরানি ফেরদৌসী দিশা বলেন, ‘এখনো শতাধিক কারখানা ফেব্রুয়ারি মাসের মজুরি পরিশোধ করতে পারেনি।

আশা করছি, এসব কারখানার মালিকরা ঈদের আগে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেবেন। সব পক্ষই সচেতন। আমাদের আশা, ঈদের আগেই শ্রমিকরা তাঁদের মজুরি ও বোনাস পাবেন।’

গাজীপুরের কেয়া স্পিনিং মিলের আট হাজার শ্রমিকের দুই মাসের বেতন, বোনাস ও আর্নলিভের টাকা দেয়নি কেয়া স্পিনিং মিল কর্তৃপক্ষ। এ কারণে কয়েক দিন ধরে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকরা। এ ছাড়া গাজীপুরের শ্রীপুর, টঙ্গী বিসিক, কোনাবাড়ী, কাশিমপুরসহ আরো কয়েকটি এলাকার ১০টির বেশি গার্মেন্টস কারখানার শ্রমিকরা গত মঙ্গলবার থেকে বিক্ষোভ করছেন বকেয়া বেতন-বোনাসের দাবিতে। এর বাইরে ঢাকার মিরপুর, সাভার, আশুলিয়া ও নারায়ণগঞ্জের বেশ কিছু কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন বেতন-বোনাসের দাবিতে।

এই ইস্যুকে ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে অবনতি না ঘটে সে জন্য শিল্প পুলিশ থেকে শুরু করে অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে শিল্প মালিক ও মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএর নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। যেসব কারখানায় বেতন-বোনাস নিয়ে সমস্যা হচ্ছে সেগুলোকে দ্রুত সমাধানের তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।

শিল্প পুলিশ সূত্রে আরো জানা গেছে, গাজীপুর অঞ্চলে দুই হাজার ২০০ থেকে দুই হাজার ৩০০টি শিল্প-কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে গার্মেন্টস কারখানা এক হাজার ১৮৫টির মতো। এর কিছু কারখানায় বেতন-বোনাস নিয়ে সমস্যা রয়েছে। একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘কোনো কারখানার মালিক বলছেন, শুধু বোনাস দিতে পারবেন, আবার কেউ বলছেন, শুধু বেতন দেবেন। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে নির্দেশ রয়েছে, ঈদের আগে সব কারখানাকে ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন, ঈদ বোনাস, আর মার্চ মাসের বেতন পুরো না হলেও যেন ১৫ দিনের দেওয়া হয়। আমরাও শিল্প মালিকদের সেভাবেই পরিশোধের আহ্বান জানাচ্ছি।’

বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে গত মঙ্গলবার সাত-আটটি কারখানার শ্রমিকরা কাজ ফেলে বিক্ষোভ করেন বলে শিল্প পুলিশ সূত্র জানিয়েছে। গাজীপুরের শ্রীপুর, কোনাবাড়ী, টঙ্গী বিসিক, কালিয়াকৈর, কাশিমপুর এলাকার এসব কারখানার শ্রমিকরা কারখানার ভেতরেই বিক্ষোভ করেন।

জানতে চাইলে গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘প্রতিবছরই ঈদের আগে গার্মেন্টস খাতে বেতন-বোনাস নিয়ে কিছু সংকট দেখা দেয়। এবারও তার ব্যতিক্রম নেই। তবে বড় বড় কারখানার মালিকরা এরই মধ্যে বেতন-বোনাস দেওয়া শুরু করেছেন। এ ছাড়া গতকাল (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত প্রায় ৬০ শতাংশ কারখানা বোনাস দিয়েছে। বোনাস যেহেতু দিয়ে ফেলেছে শ্রমিকরা বেতনও পাবেন। আশঙ্কার বিষয় হলো, এখনো অনেক কারখানার মালিক ফেব্রুয়ারি মাসের বেতনই দেননি। মার্চ মাসের বেতন দেওয়া শুরু করেননি।

তৈরি পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে পোশাক খাতে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি দেখা গেলেও নানা কারণে ব্যবসা ভালো নেই। অনেক কারখানায় কাজ নেই। এ জন্য বেশ কিছু কারখানার মালিক অর্থসংকটে আছেন, বেতন-বোনাস দিতে সমস্যা হচ্ছে। এর পরও আমরা চেষ্টা করছি শ্রমিকরা ঈদের আগে মজুরি ও বোনাস নিয়ে সুষ্ঠুভাবে বাড়ি যাবেন।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button