Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
Hot

ফ্যাসিবাদ-চরমপন্থার উত্থান ঠেকাতে শপথ, শাহবাগে বিশাল ছাত্র সমাবেশে তারেক রহমান

ঢাকায় ছাত্রদলের সমাবেশ থেকে ফ্যাসিবাদ ও চরমপন্থার উত্থান ঠেকানোর শপথ উচ্চারণ করে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এই ছাত্র সমাবেশে ভার্চ্যুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

সমাবেশে তিনি বলেন, আজকের এই তারুণ্য, এই শিক্ষার্থীরা আগামীর বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ, চরমপন্থার উত্থান কিংবা পুনর্বাসন ও চরমপন্থার উত্থান কিংবা পুনর্বাসন ঠেকাতে শিক্ষার্থীদেরকে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে। সচেতন ভূমিকা পালন করতে হবে। 

বেলা সোয়া ৩টায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মধ্যদিয়ে সমাবেশ শুরু হয়। পরে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এ ছাড়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্যাতনে খুন ও গুম হওয়া নেতাকর্মীদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয়। একইসঙ্গে জুলাই-আগস্টের শহীদদের গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয়।

স্বাধীনতার ৫৪ বছর পার হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশ এখন একটি পরিণত দেশ। এই পরিণত বাংলাদেশে,  দেশের জনগণ আর বিভেদ, বিরোধ, প্রতিহিংসা, প্রতিশোধের রাজনীতি তারা চায় না। রাজনৈতিক দলগুলোকে এ কারণেই জনগণের কাছে সেভাবে জবাবদিহি করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জনগণ চায় রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন। সুতরাং আসো কথামালার রাজনীতি নয় বরং আমরা শুরু করি মানুষের জীবনমান উন্নয়নের রাজনীতি। জনগণের জীবনমান উন্নয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নিতে হবে ভবিষ্যত বাংলাদেশ এবং সেটি কে? সেটি হচ্ছে, তোমরা আজকে যারা তোমরা এখানে উপস্থিত হয়েছো। তোমরাসহ তোমাদের মতন তোমাদের সহপার্টি, তোমাদের সহকর্মী যারা সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে-তোমাদেরকে সেই ভূমিকা পালন করতে হবে।  সেটি জ্ঞানে বিজ্ঞানে হোক, শিক্ষা দীক্ষায় হোক, মেধা মননে হোক-তোমাদের নিজেদেরকে গড়ে তুলতে হবে এবং শুধু নিজেদেরকে গড়ে তুললে চলবে না- নিজেদেরকে গড়ে তোলার পাশাপাশি দেশকে গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে হবে। 

তিনি বলেন, বিএনপি’র আগামীদিনের নীতি, ধর্মীয় সামাজিক মূল্যবোধে উচ্চকৃত মানবিক মানুষ গড়ার রাজনীতি শুরু করতে চায়। বিএনপি’র আগামীদিনের নীতি কর্মসংস্থান সৃষ্টি আর নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার রাজনীতি। আজকের এই জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরিত করার রাজনীতি। মানবিক মূল্যবোধে উজ্জীবিত কর্মমুখী শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের রাজনীতি। 

তারেক রহমান বলেন, একজন মায়ের চোখে বাংলাদেশ যেমন, অর্থাৎ আগামীদিনে আমরা নবীন এবং প্রবীণ সবাই মিলে তেমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই। 

দেশের প্রায় ১৩ কোটি ভোটারের মধ্যে গত দেড় দশকে ভোটার তালিকায় এ পর্যন্ত প্রায় ৪ কোটি নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছে উল্লেখ করে তরুণদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তোমরা ভোটার হলেও ফ্যাসিবাদ চক্র তোমাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে এবং এই নির্বাচনে তোমাদের হারানো ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক বিরাট সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্বাবলম্বী বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বিএনপি’র গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য পলাতক স্বৈরাচারের শাসনামলে গত দেড় দশকে ভোট প্রয়োগের অধিকার বঞ্চিত সাড়ে তিন কোটি ভোটারসহ সবার সমর্থন এবং সহযোগিতা চাই। একইসঙ্গে তিনি বলেন, তারুণ্যের প্রথম ভোট ধানের শীষের জন্য হোক।

ছাত্রদলের নেতাকর্মী ও শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, এই মুহূর্তে আমার সামনে উপস্থিত ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় লাখো মুখ, তোমরাই আগামীদিনের বাংলাদেশ। ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে তোমরাই প্রতিষ্ঠিত করবে নিজেদের অধিকার। আজকের প্রবীণ যারা তাদের এই অভিজ্ঞতা পরামর্শ আর তোমাদের বিচক্ষণ এবং বুদ্ধিদীপ্ত ভূমিকায় নির্মিত হবে আগামীদিনের বাংলাদেশ, লাখো শহীদের আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, দেড় দশকের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদলের হাজার হাজার নেতাকর্মী হতাহত হয়েছে, মামলা, হামলা, জেল, জুলুম, নির্যাতন, খুন, গুম ও অপহরণের শিকার হয়েছে। শুধুমাত্র এই জুলাই গণ- অভ্যুত্থানে চট্টগ্রামের ছাত্রদল নেতা ওয়াসিমসহ শতাধিক নেতাকর্মী শহীদ হয়েছে আমাদের। আরও আহত হয়েছে হাজার হাজার। গণ-অভ্যুত্থানের সময় শুধুমাত্র ছাত্রদলেরই দুই হাজারেরও বেশি নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে। যেই সংগঠনে তোমাদের মতন এমন সাহসী মায়ের সন্তানেরা রয়েছে, সেই সংগঠনের অগ্রযাত্রাকে কোনোদিন কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না, ইনশাআল্লাহ। এই যে পলাতক পরাজিত স্বৈরাচার নিষ্ঠুর ও নির্মমতা চালিয়েও কিন্তু ছাত্রদলের এই অগ্রযাত্রাকে দমিয়ে রাখতে পারে নাই। আজকের এই লক্ষ মানুষের সমাবেশ, লক্ষ ছাত্র-ছাত্রীর সমাবেশ আবারো সেটি আজ প্রমাণ করে দিয়েছে। 

ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তারেক রহমান বলেন, যদি তোমরা আগামীদিন সাহস এবং সততার সঙ্গে এগিয়ে যাও তাহলে বাংলাদেশের গণতান্ত্রকামী জনগণ তোমাদের সঙ্গে আছে। ইনশাআল্লাহ তোমাদের সঙ্গে ভবিষ্যতেও তারা থাকবে। মনে রাখবে সবসময় একটি কথা, এই দেশের জনগণই বিএনপি তথা জাতীয়তাবাদী শক্তির সকল রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা অর্জনের যুদ্ধ, ২০২৪ সালের স্বাধীনতা রক্ষার যুদ্ধ এবং ফ্যাসিবাদী পতন কিংবা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, আজকের এই সমাবেশে দলমত নির্বিশেষে আমি আল্লাহর দরবারে সকল শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। সকল শহীদের শোকাহত পরিবারের প্রতি জানাই গভীর শ্রদ্ধা।

তিনি বলেন,  আমি মনে করি, সকল ছাত্রছাত্রীকেই কোনো একটি রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্য হতে হবে, এটি কোনো জরুরি বিষয় নয়। তবে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে যার যার সফল হওয়ার জন্য নিজেদেরকে যোগ্যতম হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা থাকা সবচাইতে বেশি জরুরি। তোমরা তোমাদেরকে যোগ্য নেতৃত্ব হিসেবে গড়ে তুলবে, এটি জরুরি। তবে একইসঙ্গে একটি জরুরি কথা মনে রাখতে হবে। যোগ্য নেতৃত্বের অর্থ শুধুমাত্র নেতা কিংবা নেতৃত্বের অর্থ শুধুমাত্র কোনো একটি রাজনৈতিক দলের পদবি অর্জন, কিংবা শুধু ভবিষ্যতে এমপি বা মন্ত্রী হয় নয়; বরং শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, কিংবা ব্যবসা- প্রত্যেকটি সেক্টরেই দক্ষ নেতৃত্ব প্রয়োজন। কারণ এই সবগুলো সাবজেক্টের সঙ্গে দেশের সামনে এগিয়ে যাওয়া সম্পর্কিত। তোমাদের নিজেদেরকে দক্ষ এবং যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। প্রত্যেকটা সেক্টরে তোমাদের যোগ্য নেতৃত্বই একমাত্র পারে আগামীর বাংলাদেশকে বদলে দিতে। শহীদদের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে।

বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদেরকে যাতে কর্মসংস্থান নিয়ে হতাশায় পড়তে না হয় আমাদের দল বিএনপি সেই আলোকেই শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার এবং জব অপরচুনিটির জন্য কর্মপরিকল্পনা বা প্ল্যানিং তৈরি করছে। আমরা মনে করি, একাডেমিক স্টাডির পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরকে যদি স্কুল পর্যায় থেকেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে, অর্থাৎ যার যেটি ইন্টারেস্ট- এই ক্ষেত্রগুলোতে পলিটিক্যাল নলেজ বা ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জনের দিকে ব্যবস্থা করে দেয়া যায়। এ ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থী যারা থাকবে বা থাকা অবস্থাতেই একজন শিক্ষার্থীর বাস্তব কর্ম অভিজ্ঞতা তৈরি হয়, তাহলে একজন শিক্ষার্থী স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় শেষ হলে অথবা ড্রপআউট হলেও তাকে বেকারত্বের অভিশাপ হয়তো পোহাতে হবে না। বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকলে একজন শিক্ষার্থী ইতিহাস, ভূগোল অথবা অন্য যেকোনো সাবজেক্ট লেখাপড়া করুক না কেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের চার বছর শেষ করার পর চাকরির জন্য তাকে আমরা ধরে নিতে পারি সময়ক্ষেপণ করতে হবে না। সেই লক্ষ্যটাকেই সামনে রেখে বিএনপি স্কুলপর্যায় থেকেই ব্যবহারিক এবং কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দিয়ে আগামীদিনে শিক্ষা কারিকুলাম ঢেলে সাজানোর কাজ করছে। আমাদের দলের থেকে আমাদের দলের ভেতরে যারা এক্সপার্ট আছেন, সে একটি বিশেষজ্ঞ টিম এর মধ্যেই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, সেই কাজগুলোকে সেভাবে তারা তৈরি করছে।

তিনি বলেন, ছাত্রছাত্রী অর্থাৎ তারুণ্যের শক্তি এবং নারী শক্তিকে কর্মপরিকল্পনার বাইরে রেখে একটি রাষ্ট্র কখনোই সামনে এগিয়ে যেতে পারে না। আমি এর আগেও কয়েকবার বলেছি, আজো তোমাদের সামনে আমি তুলে ধরতে চাই। এই যে গ্লোবালাইজেশনের এই সময়, এই সময় নারী-পুরুষ সকলের সামনে কিন্তু সকল সম্ভাবনার দ্বার আজ উন্মুক্ত টেকনোলজিক্যাল কারণে। আমাদের এই তারুণ্য, আমাদের এই শিক্ষার্থীরা যাতে সকল সম্ভাবনাকে সাফল্যে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হয়, এইজন্য একটি বাস্তবধর্মী সুষ্ঠু নীতি পরিকল্পনা আমরা তৈরি করছি এবং সেটি বিএনপি তরুণ জনগোষ্ঠীর সামনে উপস্থাপন করতে চায়, যাতে করে আগামীদিনে তাদের পথ চলা সহজ হয়ে যায়। 

তারেক রহমান বলেন, তথ্য প্রযুক্তির এই সময় বিশ্ববাজারের সঙ্গে দক্ষতা এবং যোগ্যতার প্রতিযোগিতায় যদি টিকে থাকতে হয় তাহলে অবশ্যই তোমাদের সকলকে তথ্য প্রযুক্তি এবং কারিগরি শিক্ষায় দক্ষতা অর্জন করতে হবে। শেষবার বিএনপি যখন সরকার পরিচালনার দায়িত্বে ছিল ২০০৫ সালে, সেই সময় মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। সেই সময় পর্যায়ক্রমিকভাবে দেশের ১০ হাজার শিক্ষক এবং ২ লাখ শিক্ষার্থীকে আইটি প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে তিন বছর মেয়াদি একটি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছিল। ইনশাআল্লাহ্‌, আগামীদিনে জনগণের রায়ে বিএনপি আবারো রাষ্ট্র পরিচালনা দায়িত্ব পেলে, এইবার আমরা স্কুলপর্যায় থেকে শিক্ষা কারিকুলামের ভেতরে আইসিটি এবং কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থাটিকে আমরা প্রবর্তন করবো। শুধু এটাই নয়, অপশোনাল না বরং কম্পোলসারি হিসেবে আমরা খেলাধুলা এবং আর্ট এবং কালচার কেও আমরা শিক্ষা কারিকুলামের ভেতরে নিয়ে আসবো। যাতে সেটির ভেতরেও সেটির মধ্যেও এই সাবজেক্টগুলোতেও যাতে প্রত্যেকটি ছাত্রছাত্রী, যার যেটি পছন্দ- সেই অনুযায়ী সে দক্ষতা অর্জন করতে সক্ষম হয়। 

বিএনপি বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের সামনে একাধিক ভাষা শেখার সুযোগ তৈরি করে দিতে চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে স্কুল বা কলেজগুলোতে বাংলা স্বাভাবিকভাবে আছেই বিভিন্ন সাবজেক্টের কারণে। ইংরেজিও শেখার সুযোগ আছে। কিন্তু এই ইংরেজি ভাষার উপরে আমরা বিশেষভাবে, আলাদাভাবে আমরা এমফেসাইজ দিতে চাই, জোর দিতে চাই। যাতে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ছাত্রছাত্রীরা এই ভাষাতে আরও দক্ষভাবে ব্যবহার করতে পারে, দক্ষভাবে শিখতে পারে। 

তারেক রহমান বলেন, ভাষা শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি আমরা আরও কতোগুলো বিষয় ক্লাস টুয়েলভ পর্যন্ত সংযুক্ত করতে চাই, ইন্ট্রোডিউস করতে চাই, সংযুক্ত করতে চাই। আমরা কি সেগুলো? স্কুল-কলেজ পর্যায় থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য আমরা কতোগুলো প্রাক্টিক্যাল সাবজেক্ট আমরা রাখতে চাই। যেমন ডেন্টাল হাইজিনিস্ট বা মেডিকেল টেকনিশিয়ানের মতন বিভিন্ন টেকনিক্যাল বিষয় থিওরিটিক্যাল এবং প্রাক্টিক্যাল নলেজ অর্জনের সুযোগ আমরা তৈরি করতে চাই। ইনশাআল্লাহ্‌ আগামীদিনে জনগণের রায়ে বিএনপি দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলে দ্রুততার সঙ্গে এই বিষয়গুলো আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য ইন্ট্রোডিউস বা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করবো, বাস্তবায়ন করবো ইনশাআল্লাহ্‌।

তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের প্রায় ১০ লাখেরও বেশি ভাইবোন ফ্রিল্যান্সিং কিংবা আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা, শতকোটি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। তবে এই কাজ যারা করছে তাদের একটি সমস্যা। যারা এই কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং যারা হতে চাইছে কিন্তু হতে পারছে না, একটি সমস্যা সকলেই ফেস করছে। কি সেই সমস্যাটি? এই যে তারা যাদের কাজ করছে তারা তাদের যে পাওনা টাকা পাঠাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা। এটি দেশে আনা সম্ভব হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক গেটওয়ের একটি সমস্যা হচ্ছে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা এরই ভিতরে সংশ্লিষ্ট যে পেপাল আছে, স্ট্রাইপ আছে, ওয়াইজ আছে, তাদের সঙ্গে আমরা এরইমধ্যে কথা বলেছি এবং এরইমধ্যে কথা বলার মাধ্যমে আমরা অন্তত এতটুকু আসতে পেরেছি যে, ইনশাআল্লাহ্‌ আমরা সরকার গঠনে সক্ষম হলে জনগণের সমর্থ নিয়ে দ্রুততার সঙ্গে এই সমস্যাটির সমাধান করতে পারবো ইনশাআল্লাহ্‌। তার ফলে যারা এই কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত তারা যেমন সুবিধা পাবে নতুন করে আরও মানুষ এই কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারবে। 

বিএনপি বর্তমানে দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার রাজনৈতিক কর্মসূচি এবং পরিকল্পনা গ্রহণ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এরইমধ্যে কয়েকটি প্ল্যান, প্রোগ্রাম আমি তোমাদের সামনে তুলে ধরেছি। এর বাইরেও আমরা কৃষি, ক্রীড়া, স্বাস্থ্য, পরিবেশসহ প্রতিটি সেক্টরে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে আমরা কাজ করছি। তবে সকল কর্মপরিকল্পনা যদি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হয় তার জন্য প্রয়োজন তারুণ্য নির্ভর একদল মেধাবী মানুষ। 

তারেক রহমান বলেন, পলাতক স্বৈরাচার মুক্ত বাংলাদেশে প্রচলিত প্রথাগত ছাত্র রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন হওয়া দরকার। জাতীয় রাজনীতি সম্পর্কে সচেতন থাকার পাশাপাশি তিনি বলেন, দেশকে তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করে রাখতে বিগত দেড় দশকে ফ্যাসিস্ট চক্র দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। যার সাক্ষী তোমরা নিজেরাই। নানা অপকৌশলে আশ্রয় নিয়েছিল শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পরিবর্তে শিক্ষাঙ্গনকে সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আস্তানা হিসেবে ব্যবহার করেছিল তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঐতিহাসিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়- এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ইতিহাস জড়িয়ে আছে, জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস, ঐতিহ্য মুক্তিযুদ্ধ। ফ্যাসিবাদ শাসন আমলে ভিন্ন দল ভিন্ন মতের শিক্ষার্থীদের জন্য এই ঢাকা বিশ্বদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোকে সেই সময় কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পরিণত করা হয়েছিল। বর্তমানে যারা এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, তাদের সামনে এই ক্যাম্পাসকে জ্ঞান চর্চা এবং গবেষণার একটি নিরাপদ ভূমি হিসেবে প্রতিষ্ঠার সুযোগ এসেছে। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত এই বিশ্ব গৌরবজনক ইতিহাস আবারো ছড়িয়ে দিতে হবে, তোমাদের যারা উত্তরসূরি শিক্ষার্থী তাদের মনের ভেতরে।

সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের সামনে এখন লড়াই বাংলাদেশে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। আমরা সেই লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছি। আমাদের নেতা তারেক রহমান লন্ডনে বসে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা করে নির্ধারণ করেছেন ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হবে। গোটা বাংলাদেশের মানুষ অপেক্ষা করে আছে ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হবে। তার আগে গোটা বাংলাদেশের মানুষ অপেক্ষা করে আছে আমাদের নেতা তারেক রহমান দেশে ফিরে আসবেন। তাই না? আমরা সবাই তাই চাই না? উনি আসবেন আমাদের নেতৃত্ব দেবেন, আমাদের পথ দেখাবেন। 

২৪-এর ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতার প্রত্যাশা পূরণে ৯ দফা প্রতিশ্রুতি তোলেন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। সেগুলো হলো- শিক্ষাঙ্গনে গেস্টরুম নির্যাতন, গণরুম সংস্কৃতি, জোরপূর্বক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণে বাধ্য করে এবং রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের মতো ঘৃণিত চর্চার স্থায়ী বিলোপসাধন, সকল ধরনের সন্ত্রাস ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে ছাত্রদল সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে। ক্যাম্পাসে ও আবাসিক হলে প্রশাসন কর্তৃক শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ আবাসন, পুষ্টিকর খাদ্য, বাসযোগ্য কক্ষ এবং পড়াশোনার উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ছাত্রদল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। ধর্ম, বর্ণ, জাতিসত্তা, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল বাংলাদেশি নাগরিকের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে একটি জনকল্যাণমুখী, পরমতসহিষ্ণু, উদার এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে ছাত্রদলের প্রতিটি নেতাকর্মী নিবেদিত থাকবে, শিক্ষাক্ষেত্রে ও রাষ্ট্রগঠনের সকল পর্যায়ে নারীর সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এবং নারীদের জন্য শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে ছাত্রদল কর্তৃক জোরালো উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, জাতীয় স্বার্থের সুরক্ষা এবং জাতীয় ঐক্য নিশ্চিত করতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, আধিপত্যবাদবিরোধী এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী চিন্তার সন্নিবেশনে রাষ্ট্রকর্তৃক বাংলাদেশপন্থি সার্বজনীন শিক্ষানীতি ও পাঠক্রম প্রণয়নের লক্ষ্যে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে ছাত্রদল।

এ ছাড়া বেকারত্ব দূরীকরণের রাষ্ট্রকর্তৃক কর্মমুখী ও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা চালু করার লক্ষ্যে ছাত্রদল জোরালো উদ্যোগ গ্রহণ করবে। মাদকমুক্ত ক্যাম্পাস এবং মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে ছাত্রদল অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। বৃটিশবিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৬৯, ১৯৭৫ এর ৭ই নভেম্বর, ১৯৯০ এবং ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক তাৎপর্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ এবং বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভাবধারার সাংস্কৃতিক চর্চা বেগবান করার লক্ষ্যে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তুলবে ছাত্রদল। শিক্ষাঙ্গনসমূহে শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সকল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিতভাবে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিশ্চিত করতে ছাত্রদল জোরালো ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশে যেন আর কখনো ঘৃণ্য ফ্যাসিবাদ বা স্বৈরাচার গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে না পারে, সে লক্ষ্যে ছাত্রদল সদা সোচ্চার থাকবে এবং একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, মানবাধিকার, ভোটাধিকার ও সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা ও স্বকীয়তা নিশ্চিত করতে ছাত্রদল আপামর ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে নিরন্তরভাবে কাজ করে যাবে।

রাকিব বলেন, ডাকসুসহ সকল ছাত্রসংসদ নির্বাচনে ছাত্রদল অবশ্যই অংশগ্রহণ করবে। কিন্তু তার আগে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের তালিকা প্রকাশ করা ও বিচার করতে আমরা দাবি জানিয়েছি। 

ওদিকে, সমাবেশকে কেন্দ্র করে সকাল ১১টা থেকে জাতীয় ও দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে ছাত্রদলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে সমাবেশস্থলে জড়ো হতে শুরু করেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতাকর্মীদের স্লোগান ও পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে শাহবাগ। হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থকদের পদচারণায় ও স্লোগানে শাহবাগ এবং এর আশপাশের এলাকায়  নেতাকর্মীদের ঢল নামে। ঢাকায় বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানাসহ বিভিন্ন জেলা এবং বিভাগ থেকে বাসযোগে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের শাহবাগে আসতে দেখা গেছে। সমাবেশকে কেন্দ্র করে শাহবাগ এবং এর আশপাশের এলাকায় টানানো হয় মাইক। 

অন্যদিকে, বেলা পৌনে ২টার দিকে বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টি উপেক্ষা করে সমাবেশে যোগ দেন নেতাকর্মীরা। খণ্ড খন্ড মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে জড়ো হন। এ সময় তারা সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এবং ছাত্রদলের নামে বিভিন্ন স্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত করে তোলেন। ওদিকে, শাহবাগ এবং এর আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা গেছে। অন্যদিকে, নেতাকর্মীদের জমায়েত মৎস্যভবন, টিএসসি, কাঁটাবন এবং হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। শাহবাগ এলাকায় সবধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায় রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সভাপতিত্বে এবং ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক শ্যামল মালুম, সাংগঠনিক সম্পাদক আমানউল্লাহ আমান বক্তব্য রাখেন। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacantoto4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d toto
slot toto
bacan4d
bacan4d
togel online
Toto Slot
saraslot88
Bacan4d Login
bacantoto
Bacan4d Login
bacan4d
bacan4drtp
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot maxwin
slot bacan4d
slot maxwin
bacan4d togel
bacan4d login
bacan4d login
bacan4d login
bacantoto 4d
slot gacor
bacansport
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot77 gacor
JAVHD
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
gacor slot
slot gacor777
slot gacor bacan4d
bacan4d
bacansport
toto gacor
bacan4d
bacansports login
slot maxwin
slot dana
slot gacor
slot dana
slot gacor
bacansports
bacansport
bacansport
bacansport
bawan4d
bacansports
bacansport
slot gacor
judi bola
slot maxwin
slot maxwin
bacansport
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot demo
slot gacor
slot gacor
slot gacor
toto slot
slot gacor
demo slot gacor
slot maxwin
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot toto