ফ্রান্সের এক দ্বীপে ‘সাদা সোনা’

ফরাসি আটলান্টিক দ্বীপ ন্যোয়ারমুটিয়েতে কয়েক শতক ধরে সামুদ্রিক লবণ চাষ করা হচ্ছে। এটি ভালো মানের খাবারের এক অপরিহার্য উপাদান। বলা চলে, জল, বায়ু আর সূর্যের খেলায় ন্যোয়ারমুটিয়ের ‘সাদা সোনা’ খ্যাত লবণ উৎপাদন হয়।
জানা গেছে, ফরাসি আটলান্টিক উপকূলের ন্যোয়ারমুটিয়ের আকার ৫০ বর্গকিলোমিটারের মতো। দ্বীপটির সম্পদ হচ্ছে সামুদ্রিক লবণ। সেই মধ্যযুগ থেকে একই পন্থায় এই লবণ উৎপাদন করা হয়।
লবণের খামারে কাজ শুরু হয় বসন্তের শুরুতে
বসন্তের শুরুতে আরনু জ্যিগা লবণের খামারে কাজ শুরু করেন। তিনি এই দ্বীপে লবণ উৎপাদনকারী ১৫০ ব্যক্তির একজন। আবহাওয়া উষ্ণ হতে শুরু করলে উৎপাদনের প্রক্রিয়া শুরু করেন তারা। তিনি জানান, ‘বসন্ত শুরু হলে আমরা প্রবাহের দিকে একটার পর একটা বেসিন পরিষ্কার করি। জমে থাকা ময়লা, কাদা সরাই এবং কিছুটা ফুটপাতের জন্য রেখে দিই।’
মাটির তৈরি ২৬টি বেসিনে লবণ চাষ করবেন তিনি। এজন্য ১২ হাজার বর্গমিটার এলাকা পরিষ্কার করতে হবে। এ প্রসঙ্গেই আরনু বলেন, ‘এই কাজ করতে প্রায় পুরো বসন্ত লেগে যায়। আবহাওয়া আমাদের কাজের গতি নির্ধারণ করে। আমরা একদিন কাজ করতে পারি, অন্যদিন বৃষ্টির কারণে বন্ধ থাকে কাজ। আমরা পুরোপুরি আবহাওয়ার উপর নির্ভরশীল।’
রয়েছে সামুদ্রিক অ্যাসপারগাসও
আরনু এবং তার স্ত্রী উ্যদরেই মোটা লবণ ও দামি ‘ফ্ল্যর দ্যুঁ সেলে’ বিক্রি করেন। উ্যদরে বিভিন্ন স্বাদের লবণও তৈরি করেছেন। উ্যদরে এই প্রসঙ্গে বলেন,‘মোটা লবণ ব্যবহার করে ঝোলের জন্য মসলা লবণ এবং ঝাঁজালো লবণ তৈরি করা যায়। তাছাড়া ‘ফ্ল্যর দ্যুঁ সেল’ মিশিয়ে নানা স্বাদের লবণ তৈরি করে বিক্রি করা হয়।’
আরনু এবং তার স্ত্রী উ্যদরেই মোটা লবণ ও দামি ‘ফ্ল্যর দ্যুঁ সেলে’ বিক্রি করেন। উ্যদরে বিভিন্ন স্বাদের লবণও তৈরি করেছেন। আরনু এবং তার স্ত্রী উ্যদরেই মোটা লবণ ও দামি ‘ফ্ল্যর দ্যুঁ সেলে’ বিক্রি করেন। উ্যদরে বিভিন্ন স্বাদের লবণও তৈরি করেছেন।
তবে এখানকার লবণ খামারে শুধু লবণই উৎপাদন হয় না। বসন্তের সময় খাওয়ার উপযোগী সামুদ্রিক অ্যাসপারাগাসও বেড়ে ওঠে। জনপ্রিয়তা বাড়ছে বলে উ্যদরে এসব সংগ্রহ করে বিক্রি করেন। তার দাবি, ‘এটা কাঁচা বা সবুজ মটরশুটির মতো ভেজে খাওয়া যায়। আমরা অধিকাংশ সময় এটিকে ভিনেগার বা ভেষজযুক্ত আচার হিসেবে বিক্রি করি। এটা বেশ জনপ্রিয় এবং মৌসুমের শেষ নাগাদ বিক্রি হয়ে যায়।’
জুনের শুরুতে চাষাবাদ
আরনু এবং উ্যদরের খামারে আসা পানি বিভিন্ন খাল হয়ে আটলান্টিক থেকে আসে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দুই মিটার নিচে এই প্যানগুলোর অবস্থান। আটলান্টিক থেকে বেশ কয়েক কিলোমিটার ভেতরে পানি পৌঁছাতে হয়। কতটা পানি আসবে তা স্লুইস গেট দিয়ে নির্ধারণ করা হয়।
জুনের শুরুতে তাপমাত্রা উষ্ণ হলে আরনু চাষাবাদ শুরু করতে পারেন। তিনি বলেন, ‘লবণ চাষ শুরু করতে গেলে কোণাগুলো পরিষ্কার করতে হবে। হাতলওয়ালা এই যন্ত্রের বাঁকানো অংশ দিয়ে পানি ঠেলে দেয়া যায় এবং লবণ ক্রমশ বেসিনগুলোর মাঝের বাঁধে জমা হয়।’
বাঁধে জমা করার পর সারারাত লবণের জল ঝরানো হয়। এরপর তা বড় লবণের স্তূপে যুক্ত করা হয় অন্তত একবছর শুকানোর জন্য। ন্যোয়ারমুটিয়েতে সূর্য, তাপ আর বাতাসের চমৎকার সংমিশ্রণে সাদা সোনা উৎপাদন করা হয়। বছরের ৩০ থেকে ৪০ দিন ফসল তোলার মৌসুম। আরনু এবং উ্যদরের জন্য এই সময়টা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আরনুর কথায়, ‘ফসল তোলার মৌসুমটা আমরা যতটা সম্ভব কাজে লাগাতে চাই। কারণ বাকি বছর এটা দিয়েই কাটাই।’
ন্যোয়ারমুটিয়ের ভালোমানের লবণ। গত শতকের নব্বইয়ের দশকে এখানে ৩০টির মতো খামার ছিল। এখন তা ক্রমশ বাড়ছে।