Hot

বড় দুর্নীতিবাজে ছাড়, দুদক আছে ‘চুনোপুঁটি’ নিয়ে

টিআইর দুর্নীতির ধারণা সূচক এড়িয়ে গেলেন দুদক সচিব

আগে অনেক ‘রাঘববোয়াল’ প্রভাবশালী ব্যক্তিকে দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণসহ খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে হাতকড়া পরাত দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এখন ছোট দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ‘চুনোপুঁটি’ নিয়েই ব্যতিব্যস্ত স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও স্বশাসিত সংস্থাটি। বড় বড় দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান, মামলা, গ্রেপ্তার, অভিযোগপত্র নেই বললেই চলে। অবহেলা, উদাসীনতা ও সরকারের মুখাপেক্ষী হওয়ার কারণে দুদক কার্যক্রমে এখন চলছে ভাটার টান। এমনকি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) ধারণা সূচকে দেশে দুর্নীতির নেতিবাচক চিত্র তুলে ধরা হলেও দুদক এটি আমলে না নিয়ে উল্টো এড়িয়ে চলছে। দুদকের সাম্প্রতিক কার্যক্রম পর্যালোচনা করে এরকম হতাশাজনক তথ্যই মিলেছে। 

দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্বাধীন ও শক্তিশালী পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যর্থতা, সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করা, অভিযোগে প্রভাবশালীর নাম থাকলেও মুখ দেখে ছেড়ে দেওয়া, দুর্নীতি করেও বড় বড় আমলাকে ছাড়, প্রশাসন ক্যাডারকে অলিখিত দায়মুক্তিসহ নানা অভিযোগ আছে বর্তমান কমিশনের বিরুদ্ধে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), দুর্নীতিবিরোধী বিশেষজ্ঞ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন সময় দুদকের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তোলেন। 

গেল মঙ্গলবার টিআইর পক্ষে টিআইবি নানা তথ্য-উপাত্তসহ বাংলাদেশের দুর্নীতির উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরলেও দুদক গতকাল বুধবার সংস্থাটির সব তথ্য এড়িয়ে যায়। কমিশনের পক্ষে দুদক সচিব মাহবুব হোসেন আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের বলেন, টিআই যেসব বিষয়ে গবেষণা করে দুর্নীতির ধারণা সূচকে তুলে ধরেছে, সেখানে দুর্নীতি-সংক্রান্ত কোনো বিষয় নেই। ধারণাসূচক তৈরির জন্য দুদকের কাছে দুর্নীতি-সংক্রান্ত কোনো তথ্যও চাওয়া হয়নি। কোন কোন বিষয়ের ওপর কী কী প্রক্রিয়ায় মূল্যায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে, সেগুলো নিয়ে টিআইর প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি। এই পরিস্থিতিতে টিআইর ধারণা সূচকের বিষয়ে দুদকের মন্তব্য করার কোনো অবকাশ নেই। টিআই প্রতিবেদনকে ধোঁয়াশা বলেও মন্তব্য করেন তিনি। দুদক সচিব এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে মূলত টিআইর দুর্নীতির ধারণা সূচককে এড়িয়ে যান। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে আলোচিত 

কোনো দুর্নীতির অনুসন্ধানে নামেনি। প্রভাবশালী কোনো দুর্নীতিবাজকেও আইনের আওতায় আনতে পারেনি। বর্তমান কমিশনের সময় বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুকে অভিযোগপত্রভুক্ত করা হলেও তাঁর নামে করা মামলা আগের কমিশনের আমলের। এর আগের কমিশনগুলো হলমার্ক, ডেসটিনি, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির মতো বড় গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে। অভিযোগের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনেছে। হলমার্ক গ্রুপের এমডি তানভির আহমেদ, ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমীন এখনও কারগারে। দুদকের এই খ্যাতির দ্যুতি ছড়িয়েছে আগের কমিশনগুলো। বিপরীতে বর্তমান কমিশন অনেকটাই গতিহীন।

একাধিক সূত্র জানায়, বর্তমান কমিশন এসব ক্ষেত্রে বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। কাকে ধরবে, কাকে  ছাড়তে হবে– এসব বিষয় নিয়ে সরকারের দিকে তাকিয়ে থাকছে কমিশন। কমিশনের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় মুখ ফসকে বলেও ফেলেছেন, সরকারের নির্দেশ, পরামর্শ ছাড়া তারা কাজ করতে পারেন না। 

এ ব্যাপারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সমকালকে বলেন, দুদক প্রচলিত আইন অনুযায়ী দুর্নীতিপরায়ণ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালাতে পারে। এ ক্ষেত্রে দুদকের সক্রিয় কোনো ভূমিকা দেখা যায় না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে যে মনোবল থাকা দরকার, বর্তমান কমিশনের সে ধরনের মনোবল ও সাহস নেই বলেই মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের পর সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার নীতিগতভাবেই দুর্নীতিবিরোধী ছিল। এ জন্য সে সময় দুদক শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পেরেছে। 

বর্তমান কমিশনের আমলে গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ২ হাজার ৯২৭। একই সময়ে আদালত স্থগিত করেছেন ৪২৬ মামলা। গত বছর ১৯৫ মামলায় সাজা হয়েছে। আসামিরা খালাস পেয়েছেন ১১৮ মামলায়। এ হিসাবে সাজার হার ৫৭.১৮ শতাংশে। আগের কমিশনের আমলে সাজার হার ছিল প্রায় ৭০ শতাংশ। অথচ বর্তমান কমিশনের আমলে তা নিম্নগামী। সাজার হার বাড়ার পেছনে দুর্নীতির অকাট্য প্রমাণসহ বস্তুনিষ্ঠ অভিযোগপত্র এবং দুদকের আইনজীবীর দক্ষতা ও ভূমিকা মুখ্য বিষয়। বর্তমান কমিশনের আমলে এসব ক্ষেত্রে অবহেলা ও ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। 

জানা গেছে, ওয়ান-ইলেভেনের পর সাঁড়াশি অভিযান ও কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমানের নেতৃত্বে বড় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানো হয়েছে, যা এখন চোখে পড়ে না। বর্তমানে দুদকের জাল থেকে কখনও কোনো কোনো প্রভাবশালীকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে আবার তুলনামূলক ছোট ছোট দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে। 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এমপি প্রার্থীর কারও কারও হলফনামায় ১০০ থেকে ২০০ শতাংশ সম্পদ বেড়েছে। অস্বাভাবিক সম্পদের মালিক বনে গেছেন অনেকে। এসব খবর গণমাধ্যমেও এসেছে। স্বয়ং দুদক চেয়ারম্যান হলফনামার ওইসব বিতর্কিত, অস্বাভাবিক তথ্য অনুসন্ধান করা হবে বলে সাংবাদিকদের জানালেও আজও কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। 

সূত্র জানায়, কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমানের সময়ে ছয় এমপির নির্বাচনী হলফনামার অস্বাভাবিক সম্পদ অনুসন্ধান করে তিনজনের নামে মামলা হয়। একই সঙ্গে তিনজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ব্যাপারটি নিয়ে তখন নেতিবাচক সমালোচনাও হয়েছিল। এর মধ্যে সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান, সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান ও কক্সবাজার-৪ আসনের সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। একই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক, আসলামুল হক ও এনা গ্রুপের কর্ণধার এনামুল হককে। ওই তিনজনকে ছেড়ে দেওয়ায় দুদকের কার্যক্রম নিয়ে নেতিবাচক সমালোচনাও হয়েছে। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports