Hot

বড় রদবদলেও গতি আসেনি প্রশাসনে

গুরুত্বপূর্ণ অন্তত ১০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে বর্তমানে সচিব নেই। এসব দপ্তরে দায়িত্ব পাওয়া অতিরিক্ত সচিবরা সচিবের রুটিন কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন। তবে গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত হচ্ছে না। মাঠ প্রশাসনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ জেলা প্রশাসক (ডিসি)। প্রায় এক মাস ধরে আট জেলায় ডিসি নেই। এসব জেলার মধ্যে বিভাগীয় সদর জেলাও আছে। রাজশাহী বিভাগে আট জেলার চারটিতেই নেই ডিসি।
এসব শূন্য পদ পূরণে তোড়জোড় নেই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। কোথাও কাউকে পদায়ন করার পরই আদেশ বাতিল করার ঘটনাও ঘটছে। এদিকে যুগ্ম সচিব ও উপসচিব পদে দুটি ব্যাচের বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা পদোন্নতির অপেক্ষায়। পদায়ন ও পদোন্নতির কাজে দক্ষতা দেখাতে না পারলেও, উল্টো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা নানা বিতর্কে নিজেদের জড়িয়ে ফেলছেন। 
এদিকে বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সিনিয়র সচিব ও সচিব পদে চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়েও আছে সমালোচনা এবং অসন্তোষ। অনেকে বলছেন, অতীতের সরকারগুলোর পথেই হাঁটছে এ সরকার। 

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাজের গতি অত্যন্ত ধীর। এসব মন্ত্রণালয়ের কাজে গতি আনতে সংশ্লিষ্ট সচিবরা দক্ষতা দেখাতে পারছেন না। কেউ কেউ হাল ছেড়ে দিয়ে বসে আছেন। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সচিব পদে বড় ধরনের রদবদল আনা হলেও প্রশাসনে কাজের গতি বাড়েনি। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পেরও একই দশা। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বঞ্চিত পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তাকে কয়েক ধাপে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। তাদের পদায়নও করা হচ্ছে। নতুন কর্মকর্তারাও সরকারি কাজের গতি বাড়াতে এখন পর্যন্ত তেমন সফল হননি।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া ২২ জন সচিব এখনও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে দায়িত্বে রয়েছেন। নতুন করে সচিব দেওয়া হয়েছে ২৬টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগে। ৮ আগস্টের পর সিনিয়র সচিব ও সচিব পদে থাকা ১৭ জনের চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে ওএসডি করা হয়েছে ১৫ জনকে। তাদের মধ্যে পাঁচজন সিনিয়র সচিব, ১০ জন সচিব। এ ছাড়া সচিব পদমর্যাদায় চুক্তিতে বিভিন্ন স্থানে কাজ করা আরও ১৮ জনের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে।

এ ছাড়া গ্রেড-১ ভুক্ত এবং অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের বেশ কিছু কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন স্তরের আড়াই শতাধিক কর্মকর্তা ওএসডি। সিনিয়র সচিব, সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার এত কর্মকর্তাকে একসঙ্গে এর আগে কখনও ওএসডি করা হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দপ্তরে আগের সরকারের নিয়োগপ্রাপ্তদের ওএসডি করায় শীর্ষ পদ ফাঁকা রয়েছে। 

একসঙ্গে ১০ সচিব পদ ফাঁকা
বর্তমানে তিন মন্ত্রণালয় এবং ছয় বিভাগে সচিবের পদ ফাঁকা। তিন মন্ত্রণালয় হলো তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। সচিব না থাকা বিভাগগুলো হলো– মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, আইন ও সংসদবিষয়ক বিভাগ, পরিকল্পনা বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ এবং স্থানীয় সরকার বিভাগ। তিন দিন থেকে দুই মাস পর্যন্ত এসব পদ খালি। এ ছাড়া পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগে সচিব পদমর্যাদায় একজন সদস্যের পদ ফাঁকা রয়েছে। 
সচিব ও ডিসি পদে নিয়োগের পরদিন বাতিল করা এবং চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে কয়েক দিন পর বাতিল করার ঘটনা জনপ্রশাসনে ঘটছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান এ কে এম মতিউর রহমানকে পদোন্নতি দিয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব করা হয়। ২ অক্টোবর তাঁকে করা হয় ওএসডি। খাদ্য ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইলাহী দাদ খানকে ৩০ সেপ্টেম্বর চুক্তিতে খাদ্য সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরদিন তাঁর নিয়োগ বাতিল করে সরকার। গত ১৪ আগস্ট জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মো. মোকাব্বির হোসেনকে জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব হিসেবে বদলি করা হয়। ১৭ আগস্ট মোকাব্বিরকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে বদলি করা হয়। 

সিদ্ধান্ত দিয়ে অল্প সময় পরই বাতিল করায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বেশ আলোচনার জন্ম দিচ্ছে। জানতে চাইলে এই মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান সমকালকে বলেন, সচিবের কয়েকটি পদ শূন্য রয়েছে। এগুলো আমরা শিগগির পূরণ করব। তবে যোগ্য লোকের অভাব রয়েছে। তার পরও সচিব পদ বেশিদিন শূন্য রাখা ঠিক হবে না।
এপিডি অনু বিভাগের একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, অনেক মন্ত্রণালয়ের কিছু উইংয়ে বেশি কর্মকর্তা থাকায় তারা বসার জায়গা পাচ্ছেন না। কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে পদ খালি আছে, সেগুলোতে পদায়ন করা যাচ্ছে না। কারণ, পছন্দের কর্মকর্তা ছাড়া তারা নেবেন না।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, সচিব পদে পদায়নের শর্ত হলো কমপক্ষে এক বছর অতিরিক্ত সচিব পদে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সম্প্রতি উচ্চ পদগুলোতে পদায়নের জন্য নিয়োগবিধির শর্ত শিথিলের প্রস্তাব করা হলে তা অনুমোদন হয়নি। তা ছাড়া জনপ্রশাসনে সার্বক্ষণিক উপদেষ্টা না থাকায় সব ক্যাডারের সব সমস্যা ও বিগত দিনে বঞ্চিতদের দাবির চাপ পড়ছে জনপ্রশাসন সচিবের ওপর। এতে সচিব চাপ সামলে দাপ্তরিক কাজ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন।

ডিসি ছাড়াই চলছে আট জেলা
গত ১০ সেপ্টেম্বর ডিসি হিসেবে ৩৪ জেলায় নতুন নিয়োগ দেওয়ার পরদিন তাদের মধ্য আটজনের নিয়োগ বাতিল করা হয়। এক মাসেও এসব জেলায় কাউকে পদায়ন করা হয়নি। জেলাগুলো হলো– রাজশাহী, নাটোর, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর ও দিনাজপুর। জানা গেছে, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকরা (এডিসি) রুটিন কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন। 
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পি কে এম এনামুল করিমকে ৯ সেপ্টেম্বর সিলেটের ডিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরদিন এনামুলের নিয়োগ বাতিল করে সেখানে আরেকজনকে ডিসি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে এনামুলকে ওএসডি করা হয়েছে। 
ডিসির শূন্য পদ পূরণের বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনু বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুর রউফ সমকালকে বলেন, দ্রুত পদায়ন দিতে আমরা চেষ্টা করছি। আপাতত ডিসি নিয়োগে নতুন ফিটলিস্ট করা হবে না। যে ফিটলিস্ট আছে, সেখান থেকেই আটজনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন পদে নিয়োগের জন্য যোগ্যতার মাপকাঠি অনুসারে কর্মকর্তা পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শর্ত শিথিলের প্রস্তাব করা হলেও তা অনুমোদন হয়নি।

সচিব পদে পরিবর্তন ২৭ মন্ত্রণালয়ে
বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এ পর্যন্ত ২৭ মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সচিব পদে নতুন মুখ এসেছে। এর মধ্য তিনজনের শুধু দপ্তর বদল হয়েছে। কেউ কেউ চুক্তিতে এসেছেন। সিনিয়র সচিব বা সচিবের দায়িত্বে এসেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগে ড. মো. আব্দুর রশীদ (মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদে নিয়োগ পেয়েছেন সম্প্রতি), রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে ড. নাসিমুল গণি, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব পদে এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব মো. সাইফুল্লাহ পান্না, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ড. মো. মোখলেস উর রহমান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে মো. এহছানুল হক, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে মো. হামিদুর রহমান খান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে এম এ আকমল হোসেন আজাদ, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগে ডা. সারোয়ার বারী, সংসদ সচিবালয়ে আনোয়ার উল্ল্যাহ, ভূমি মন্ত্রণালয়ে এএসএম সালেহ আহমেদ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে নাসরীন জাহান, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে মো. ইসমাইল হোসেন এনডিসি, কৃষি মন্ত্রণালয়ে ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মো. জসীম উদ্দিন, বিদ্যুৎ বিভাগে ফারজানা মমতাজ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগে মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে মো. মাহবুব হোসেন, সেতু বিভাগে মো. ফাহিমুল ইসলাম, খাদ্য মন্ত্রণালয়ে মো. মাসুদুল হাসান, শ্রম ও কর্মসংস্থানে এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগে শীষ হায়দার চৌধুরী, রেলপথ মন্ত্রণালয়ে আবদুল বাকী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে মো. মোকাব্বির হোসেন, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে মো. আবদুর রহমান খান।
 
চুক্তি নিয়ে অসন্তোষ
চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রশাসনে নেতিবাচক চোখেই সবসময় দেখা হয়। বর্তমান সরকারের আমলেও মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব এবং জনপ্রশাসন, জননিরাপত্তা, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিব পদে চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
গত ৮ আগস্টের আগ পর্যন্ত প্রশাসনের দুই শীর্ষ পদসহ অন্তত ২৪টি পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে ছিলেন অবসরে যাওয়া কর্মকর্তারা। এ নিয়ে প্রশাসনে একধরনের অস্বস্তি ছিল। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এক দিনে ১১ জন সচিবের চুক্তি বাতিল করা হয়। পরে আরও কয়েকটি পদের চুক্তি বাতিল হয়েছে। এরপর ৬ জনকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয় প্রশাসনে। তারা সবাই বিসিএস ১৯৮২ নিয়মিত ব্যাচের কর্মকর্তা। এর পর ধাপে ধাপে আরও কিছু পদে চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। ইউনূস সেন্টারের কর্মকর্তা লামিয়া মোরশেদকে সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় এসডিজির মুখ্য সমন্বয়ক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে চুক্তিতে। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সমন্বয়ক মো. মাহফুজ আলমকে সচিব পদমর্যাদায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়।

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মো. ফিরোজ মিয়া সমকালকে বলেন, ‘চুক্তি ছাড়া বর্তমান সরকারের কোনো বিকল্প নেই। সরকারকে গতিশীল করতে হলে অতীতের বঞ্চিত ও বর্তমান প্রশাসনে যাদের নিয়ে দলীয় বিতর্ক নেই– এমন কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের দায়িত্ব দিতে হবে। পরে ধীরে ধীরে তা নিয়মের মধ্য আসবে।’
এদিকে নতুন করে আর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ চান না প্রশাসনের অধিকাংশ কর্মকর্তা। তাদের মতে, একটি সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হলে তিন থেকে পাঁচজন কর্মকর্তা পদোন্নতি বঞ্চিত হন। এতে প্রশাসনের চেইন অব কমান্ড বিঘ্নিত হয় এবং হতাশার সৃষ্টি হয়। প্রশাসনিক কাজে স্থবিরতা নেমে আসে। তবে এ বিষয়ে দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা নাম প্রকাশ করে কথা বলতে রাজি হননি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto