International

বন্দিদের বাঁচাতে যুদ্ধবিরতি চুক্তি চেয়ে লাখো ইসরাইলির বিক্ষোভ

যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে কোনো অগ্রগতি নেই : হামাস গাজায় নিহত আরো ৪০ ফিলিস্তিনি

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরাইলি বর্বর হামলায় আরো ৪০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে করে উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৩৭ হাজার ৮৭৭। এছাড়া গত বছরের অক্টোবর থেকে চলা এই হামলায় আহত হয়েছেন আরো প্রায় ৮৭ হাজার ফিলিস্তিনি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজা ভূখ-ে চলমান ইসরাইলি আগ্রাসনে মোট মৃতের সংখ্যা ৩৭ হাজার ৮৩৪ জনে পৌঁছেছে বলে গত শনিবার অবরুদ্ধ এই ভূখ-টির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হামলায় আরো ৮৬ হাজার ৮৫৮ জন আহত হয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলের হামলায় ৪০ জন নিহত এবং আরো ২২৪ জন আহত হয়েছেন। অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন কারণ উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না। মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরাইল অবরুদ্ধ এই ভূখ-ে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরাইল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। এছাড়া ইসরাইলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। মূলত ইসরাইলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরাইলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখ-ের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরাইল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।

লড়াই করে যাচ্ছে হামাসও। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, উত্তর গাজার শুজাইয়ায় তাদের দুই সেনা নিহত হয়েছে। শুজাইয়ায় অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। এ সপ্তাহে সেখান থেকে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ সরে যেতে বাধ্য হয়েছে। তবে যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোন আশার বাণী শোনা যাচ্ছে না। হামাস মুখপাত্র জানিয়েছেন ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে কোন অগ্রগতি নেই। স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং সেনা প্রত্যাহার করা হলে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হবে বলেও জানায় হামাস।

এদিকে গাজায় আটক থাকা বন্দিদের বাঁচাতে এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তি করার দাবিতে হাজার হাজার ইসরায়েলি বিক্ষোভকারী আবারও দেশটির তেল আবিবের রাজপথে নেমে বিক্ষোভ করেছেন। তেল আবিবে সরকার বিরোধী এই বিক্ষোভের আয়োজকরা অনুমান করেছেন, ১ লাখ ৩০ হাজার ইসরায়েলি শনিবার রাতের এই বিক্ষোভে যোগ দিয়ে শহরের কেন্দ্রস্থলে জড়ো হয়েছিলেন।

এছাড়া ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাইরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গাজায় আটক ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা জনগণের উদ্দেশে বিবৃতি দিয়েছেন। গাজায় আটক বন্দির এক অজ্ঞাত আত্মীয় বলেছেন, ‘নেতানিয়াহুকে আবার চুক্তিটিকে নষ্ট করতে দেবেন না। যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করার জন্য নেতানিয়াহুর জেদ আমাদের এবং আমাদের প্রিয়জনদের মধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া মানে ইসরায়েলি সরকারের হাতে গাজায় আটক থাকা বন্দিদের নিহত হওয়া। জনগণ বোঝে, নেতানিয়াহু ব্যক্তিগত কারণে যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করছেন। কারণ চুক্তিতে পৌঁছানোর ফলে (যুদ্ধ বন্ধ হলে) ইসরায়েলে আগাম নির্বাচন হবে এবং তার শাসনের অবসান ঘটবে।’

মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরায়েল অবরুদ্ধ এই ভূখ-ে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button