Trending

বাঁশঝাড় উজাড় করায় আজ অস্তিত্বসঙ্কটে, বিদেশেও রফতানি হচ্ছে বাঁশের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী

শেরপুর সীমান্ত অঞ্চলে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে পরিবেশবান্ধব বাঁশশিল্প। দেশে লোকশিল্প হিসেবে সুপরিচিত বাঁশ গ্রামীণ জীবনে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এর ব্যবহার অল্প বিস্তর শহরেও রয়েছে। গ্রামাঞ্চলে অতি-প্রয়োজনীয় কাজে বাঁশশিল্পের ব্যবহার হয়। শহরেও বাঁশের তৈরি কিছু পণ্য সাধারণত. শৌখিন পণ্য হিসেবেই ব্যবহৃত হয়। গ্রামবাংলায় একসময় প্রতিটি বাড়ির পাশে বাঁশঝাড় ছিল ঐতিহ্যের চিরায়ত রূপ। কিন্তু নির্বিচারে বাঁশঝাড় উজাড় করায় আজ অস্তিত্বসঙ্কটে হারিয়ে যেতে বসেছে পরিবেশবান্ধব এই উদ্ভিদ ও এর তৈরি শিল্প। কালের বিবর্তনে বাঁশ-বেড়ার বাড়িঘরের স্থলে স্থায়িত্বশীল ইট, সুরকি ও পাথরে আবাসস্থল তৈরি এবং শহরে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর প্রভাবে প্রায় হারিয়েই যেতে বসেছে। বাঁশশিল্প পুরোটাই প্রাকৃতিক ও পরিবেশবান্ধব। এ শিল্পের প্রধান উপকরণ বাঁশ। গ্রামীণ জনগণই এ শিল্পের সাথে জড়িত। তারাই বেশির ভাগ পণ্য ব্যবহার করেন। ঘর, মাচা, মই, মাদুর, ঝুড়ি, কুলা, চালুন, খলই, মাছধরা পলো, মাথাল, সোফা, বই রাখার র‌্যাকসহ হস্তশিল্পের নানা সামগ্রী তৈরিতে বাঁশ ব্যবহৃত হয়। বাঁশের স্থায়িত্ব ও বহু ব্যবহারিক গুণাবলির জন্য কালক্রমে লোকসংস্কৃতি ও কারুশিল্পের অন্যতম উপকরণ। বাঁশের তৈরিশিল্প দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী ছাড়াও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জীবনে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত। বাঁশের তৈরি ধারাই-মাদুর, ঝুড়ি, অলংকৃত দেওয়াল সজ্জায়ও ব্যবহৃত হয়। দেশের লোকজীবনের খুব কম দিকই আছে যেখানে বাঁশের তৈরি সামগ্রী ব্যবহার না হয়। বাঁশের হাতপাখা গ্রামবাংলায় এখন ও ব্যাপক জনপ্রিয়। দোচালা, চারচালা, ঘরের বেড়া, ঝাঁপ, দরজা দেশের নিজস্ব শিল্প-সংস্কৃতির প্রতীক। আত্মরক্ষার কাজে ব্যবহৃত বর্শা, ঢাল, লাঠি, তির, ধনুক ও বল্লম হিসেবে বাঁশের ব্যবহার এককালে ছিল বিশেষভাবে লক্ষণীয়। লোকবাদ্য যন্ত্রের অন্যতম অনুষঙ্গ বাঁশি একতারা, যা বাঁশেই তৈরি হয়। বাঁশের তৈরি মোড়া আদিকাল থেকেই শহর-বন্দর, গ্রামগঞ্জে বসার অনুষঙ্গ হিসেবে জনপ্রিয়। গ্রামীণ জীবনে বাঁশের তৈরি মাদুর আর নগরজীবনে ফটো ফ্রেম, আয়না ফ্রেম, দোলনা, সোফা, ছাইদানি, ফুলদানি, প্রসাধনী বাক্সের ব্যবহার বিশেষভাবে লক্ষণীয়। এছাড়া চা-বাগানে পাতা তোলার ঝুড়ি। খাসিয়াদের পান রাখার ঝুড়ি। উপজাতীয়দের দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত গৃহস্থালি পাত্রগুলো রঙিন নকশা করা বাঁশশিল্পের নমুনা। বাঁশ মাটিতে বেড়ে ওঠা একধরনের শক্ত উদ্ভিদ। এটি এক ধরনের চির সবুজ বহু বর্ষজীবী উদ্ভিদ। যা নাতিশীতোষ্ণ ও গ্রীষ্মমÐলীয় অঞ্চলে জন্মায়। বাঁশ একত্রে ঘাসের মতো গুচ্ছ হিসেবে জন্মায়। একেকটি গুচ্ছে ১০ থেকে ৭০-৮০টি বাঁশ একত্রে দেখা যায়। যাকে বাঁশঝাড় বলা হয়। চিকন বা সরু মসৃণ লম্বাটে, গায়ের ও পাতার রং গাঢ় সবুজ। বাঁশকে ঘাস পরিবারের বৃহত্তর মোড়ল ও বড় বাঁশ বলা হয়। পৃথিবীতে ৩০০ প্রজাতির বাঁশ আছে। একটি বাঁশঝাড় তার চারপাশে তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি পর্যন্ত ঠান্ডা রাখতে সক্ষম। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ে সাধারণত. মুলি ও ডলু বা বড়বাঁশ দুই ধরনের বাঁশই বেশি জন্মায়। বড়বাঁশ মুলি বাঁশের চেয়ে অপেক্ষাকৃত মোটা ও লম্বাটে। এই জাতটি সিলেট অঞ্চলে বেশি। অনেকেই বড়বাঁশ মোড়ল এবং তাড়াই বাঁশের বাগানও করেন। নানা জিনিস তৈরির পাশাপাশি বড়বাঁশ উঁচু বিল্ডিং করা, রং করা বা মেরামত করার কাজে ব্যবহৃত হয়। মই ঘরের খুটি তৈরির কাজেও লাগে। বর্তমান ডিজিটাল যুগে বিশ্বজোড়া ছড়িয়ে পড়েছে অনলাইন শপের বাণিজ্য। ফলে বাঁশের তৈরি পণ্যের ব্যবহার আবারও বিশ্বজোড়া ছড়িয়ে পড়তে পারে। এসব পণ্য আড়ংসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বাঁশের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী। যা দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঁশ অনেকটাই প্রাকৃতিকভাবেই জন্মায়। একসময় পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঁশ কর্ণফুলী পেপার মিলে কাগজ তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হতো। বাঁশের বহুবিধ ব্যবহারে গ্রামীণ এউদ্ভিদ এক সময় শিল্পে রূপ নেয়। এশিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে শেরপুর সীমান্ত অঞ্চল ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ীর অনেক মানুষ। তারা বাঁশের বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। প্রকৃতপক্ষে বাঁশের বহুবিধ ব্যবহার বাঁশ শিল্পকে সম্ভাবনাময় একটি শিল্প। এ শিল্পকে মানুষের ব্যবহার উপযোগী করতে ব্যাপক প্রসার প্রয়োজন। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা অনেকেই বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। কিছু কিছু কারিগর এখনো বাপ-দাদার পেশাকে আঁকড়ে ধরে রয়েছেন। তারা এ শিল্পের ওপর নির্ভর করেই জীবিকা নির্বাহ করেন। গ্রামাঞ্চলে এখনও অনেক পরিবার বাঁশশিল্পের কাজ করেন। কারিগরা বলেন, পূর্বপুরুষের এ পেশাকে আঁকড়ে ধরেই বাঁচতে চান তারা। কিন্তু এ কাজের রোজগারে এখন সংসার চলে না। ছেলেরা তাই এ কাজ করতে চায় না।

ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশ্রাফুল আলম রাসেল বলেন, বাঁশশিল্পে কোনো ক্ষতিকর সামগ্রী নেই। এটা পুরোটাই পরিবেশবান্ধব। এই শিল্পকেই বাঁচিয়ে রাখা উচিত। তাছাড়া কারিগরদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে দেশিয় এই বাঁশশিল্প অনেক এগিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে মনে করি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d