Trending

বাংলাদেশকে নিরাপদ ঘোষণায় ইউরোপে ‘আশ্রয়ে’ যে প্রভাব পড়বে

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সাতটি দেশকে ‘নিরাপদ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, যার মাঝে বাংলাদেশের নামও রয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও ছয়টি দেশের মধ্যে রয়েছে কসোভো, কলম্বিয়া, মিসর, ভারত, মরক্কো ও তিউনিশিয়া।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সাতটি দেশকে ‘নিরাপদ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, যার মাঝে বাংলাদেশের নামও রয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও ছয়টি দেশের মধ্যে রয়েছে কসোভো, কলম্বিয়া, মিসর, ভারত, মরক্কো ও তিউনিশিয়া।

উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হচ্ছে, এসব দেশ থেকে যাতে ইউরোপে আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তি করা যায়।

ইউরোপীয় কমিশনের দিক থেকে বলা হয়েছে, গত বছর সিদ্ধান্ত নেয়া ‘অভিবাসন ও আশ্রয় চুক্তি’র কিছু দিকের বাস্তবায়ন দ্রুত গতিতে করার প্রস্তাব করা হচ্ছে, যা ২০২৬ সালের জুন মাস থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।

এই সাত দেশ থেকে যাওয়া নাগরিকদের আবেদনগুলো ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, এমন ধারণা থেকেই তাদের আবেদন তিন মাসের মধ্যে দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে।

শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায় বিবিসি।

ইউরোপসহ বিশ্বের অনেক দেশেই অভিবাসন প্রত্যাশীরা নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। যদিও এর মাঝে বড় একটা অংশের আবেদন নাকচ হয়ে যায়। এখন সেই বিষয়টি আরো দ্রুত গতিতে হবে এবং আবেদন নাকচ হলে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে।

অবশ্য ইউরোপীয় কমিশনের মার্কুস লামার্ট বলেছেন, এটি একটি ‘ডায়নামিক’ বা ‘গতিশীল তালিকা’ হবে, যা সময়ে সময়ে পর্যালোচনা ও সম্প্রসারণ করা যেতে পারে এবং কোনো দেশকে নিরাপদ না মনে হলে, তা স্থগিত বা বাদ দেওয়া যেতে পারে।

কেন এই সিদ্ধান্ত?

২০১৫-১৬ সালে ইউরোপীয় দেশগুলোতে বিপুল সংখ্যক অভিবাসী প্রবেশের পর থেকেই আশ্রয় নীতিতে সংস্কার করার চেষ্টা চলছে। ২০২৩ সালেও প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার অবৈধ অভিবাসী ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশের সীমান্ত পার করে প্রবেশ করেছে।

এমন বিষয় নিয়ে কয়েক বছর ধরে আলোচনা-মুলোমুলির পর গত বছর ইউরোপীয় পার্লামেন্টে অভিবাসন এবং আশ্রয় বিষয়ক আইন কঠোর করে একটি বড় সংস্কার অনুমোদন করে।

গত বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে এ সংক্রান্ত চুক্তি হয়েছিল যেটি ২০২৬ সালের জুন মাস থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু ইইউ জানিয়েছে যে তারা প্রক্রিয়ার কাজ দ্রুত করার জন্য দুটি মূল নিয়ম আগেই পাস করতে চায়।

ইউরোপীয় কমিশন এই প্রস্তাব দিয়েছে যাতে করে যেসব আশ্রয় আবেদন সম্ভবত অমূলক (ভিত্তিহীন) হবে, সেগুলো দ্রুত ও দক্ষভাবে নিষ্পত্তি করতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে সহায়তা করা যায়।

এর একটা কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যান অনুযায়ী অভিবাসন প্রত্যাশীদের যাদের দেশে ফেরত যাওয়ার আদেশ দেওয়া হয়, তাদের মাত্র ২০ শতাংশেরও কম সংখ্যক মানুষকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়।

তাই গত বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা কমিশনকে অনুরোধ করেছিলেন, যেন তারা অভিবাসীদের দ্রুত ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা তৈরি করে।

দু’টি দিক আগেই কার্যকর করার কথা বলছে সেগুলো হচ্ছে-

১. যেসব দেশ থেকে আবেদনকারীদের মধ্যে গড়ে ২০ শতাংশ বা এর কম কম আন্তর্জাতিক সুরক্ষা পায় সেসব দেশের মানুষের জন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলো ‘সীমান্ত প্রক্রিয়া’ বা ‘দ্রুত প্রক্রিয়া’ ব্যবহার করতে পারবে।

২. কিছু ব্যতিক্রম রেখে নিরাপদ তৃতীয় দেশ ও নিরাপদ উৎস দেশ চিহ্নিত করা যাবে যাতে করে নির্দিষ্ট অঞ্চল বা স্পষ্টভাবে শনাক্তযোগ্য ব্যক্তিদের বিভাগ বাদ দিয়ে ইউরোপের সদস্য দেশগুলোর জন্য কাজ সহজ করা যায়।

ইউরোপীয় কমিশনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ক ও অভিবাসন কমিশনার ম্যাগনাস ব্রুনার বলছেন, ‘যেখানে আমরা দ্রুত এগোতে পারি, সেখানে আমাদের আরও দ্রুত এগিয়ে যাওয়া উচিত। অনেক সদস্য রাষ্ট্রে আশ্রয় আবেদনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ জমা পড়ে (আটকে) রয়েছে, ফলে আমরা আশ্রয়ের সিদ্ধান্ত দ্রুতগতিতে নিতে যেভাবে সহযোগিতা করা সম্ভব তা করাটা অপরিহার্য।’

বাংলাদেশীদের জন্য শঙ্কা

যত দেশ থেকে অভিবাসীরা ইউরোপে পাড়ি দেয়, তার মাঝে সামনের দিকে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০২৩ ও ২০২৪ সালের সংখ্যার বিবেচনায় বাংলাদেশ ছিল ছয় নম্বর শীর্ষ দেশ যেখান থেকে অ্যাসাইলাম বা আশ্রয় চাওয়া হয়।

সবচেয়ে বেশি সংখ্যক আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে শীর্ষ দেশগুলো ছিল যথাক্রমে সিরিয়া, আফগানিস্তান, ভেনেজুয়েলা, তুরস্ক ও কলম্বিয়া। এই তথ্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এজেন্সি ফর অ্যাসাইলামের।

তাদের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ৪৩ হাজার ২৩৬ জন বাংলাদেশী আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছে। একই সময়ে পেন্ডিং বা ঝুলে ছিল ৪৭ হাজার ৭৭৮টি আবেদন। যদিও বাংলাদেশীদের আবেদন সফল হওয়ার হার বেশ কম।

আশ্রয়প্রত্যাশীদের মাত্র ৩ দশমিক ৯৪ শতাংশের মতো সফল হয়, ৯৬.০৬ শতাংশ ব্যর্থ হয়। অর্থাৎ প্রস্তাবের প্রথম যে দিকে ২০ শতাংশের কম সফলতার হার বিবেচনায় নেয়ার কথা বলা হচ্ছে, সে হিসেবে বেশ নিচেই রয়েছে বাংলাদেশীরা।

এছাড়া ‘নিরাপদ’ হিসেবে চিহ্নিত করায় ‘বাংলাদেশের নাগরিকদের ইউরোপে গিয়ে আশ্রয় প্রার্থনা করাটা কঠিন হয়ে যাবে। কারণ তারা মনে করছে যে, বাংলাদেশে আসলে সহিংসতা বা এমন কিছু নেই,’ বলছিলেন শরীফুল হাসান, যিনি অভিবাসন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন।

বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের পর পর বা রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তন, বা ২০১৩ সালের গণজাগরণ মঞ্চের সময়কার পর পর অনেক মানুষই নিজ দেশে নিরাপত্তা ইস্যুতে ইউরোপে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। এ বিষয়টি উল্লেখ করে শরীফুল হাসান বলেন, সেসবের তুলনায় এখনকার আশ্রয় চাওয়ার জায়গায় ভিন্নতা রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘ইউরোপে অনেক সাধারণ বাংলাদেশী যারা হয়তো কাজের জন্য যাচ্ছে বা সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে গিয়েছে, সেখানে গিয়ে তারা বলছে আমি আমার দেশে নিরাপদ নয়। ইউরোপ দেখেছে যে বেশিভাগ বাংলাদেশী নিরাপদ না বলার যে কারণগুলো দেখাচ্ছে সে কারণগুলো আসলে সঠিক নয়। যেসব কারণে তারা ৯০-৯৫ ভাগ খারিজ করে দিয়েছে। এর ফলে এখন সত্যিকারের যারা সঙ্কটে পড়েছেন, তাদের জন্য বাংলাদেশকে নিরাপদ ঘোষণার কারণে আশ্রয় পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।’

গত কয়েক বছরে মরক্কো, তিউনিশিয়া ও মিসর থেকে বহু অবৈধ অভিবাসী ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে গিয়েছে। সেই পথে এখন বেড়েছে বাংলাদেশিদের সংখ্যাও।

২০২১ ও ২০২৪ সালে ভূমধ্যসাগর পথ ধরে ইউরোপে পাড়ি দেয়া শীর্ষ সংখ্যক অভিবাসীর সংখ্যায় বাংলাদেশীদের নাম এসেছে।

এর আগে সেসব আবেদনের প্রক্রিয়াগত দিক পার করে নিষ্পত্তি হতে যে বছরখানেক সময় লাগতো, সে সময়টা আশ্রয় প্রার্থনার দেশে থেকে কাজ করতেন প্রত্যাশীরা।

শরীফুল হাসানের মতে, এবারের দ্রুতগতির সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে তেমন বেশি সময় ধরে তারা থাকতে পারবেন না। যাদের আবেদনের এখনো নিষ্পত্তি হয়নি তাদের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত একইভাবে দ্রুততার সাথে গ্রহণ করা হবে এবং ধীরে ধীরে আশ্রয়ের সুযোগও সীমিত হয়ে আসবে।

রয়েছে বিরোধিতা, জটিলতা

বিশ্বজুড়েই অভিবাসনের জন্য আগ্রহের শীর্ষে থাকা দেশগুলোর অনেকেই এ নিয়ে কড়াকড়ি আরোপ করার চেষ্টা করছে। যুক্তরাষ্ট্রে যেমন অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছেন। যুক্তরাজ্যও অভিবাসন রোধে কঠোর ভিসা নীতির পরিকল্পনা নিয়েছে।

জার্মানিসহ অন্যান্য কিছু দেশ অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। ইতালিসহ ইউরোপের কয়েকটি সদস্য দেশ ইতোমধ্যেই নিরাপদ দেশের তালিকা তৈরি করেছে।

এবার ধারণা করা হচ্ছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি সম্মত তালিকা থাকলে, যেসব সদস্য দেশে নিয়ম শিথিল পর্যায়ে আছে, সেসব দেশগুলোকে টার্গেট করে তাদের নিরুৎসাহিত করা যাবে।

ইতালির ডানপন্থী সরকারপ্রধান জর্জিয়া মেলোনির সরকার ‘নিরাপদের’ এই তালিকাকে স্বাগত জানিয়েছে। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি বাংলাদেশ, মিসর ও তিউনিসিয়া তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়াকে রোমের জন্য একটি সাফল্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

এর আগে মিসরীয় ও বাংলাদেশীদের আলবেনিয়ার বন্দিশালায় পাঠানোর জর্জিয়া মেলোনির পরিকল্পনাকে আটকে দিয়েছিল ইতালির বিচারকরা। কারণ হিসেবে ইউরোপীয় বিচার আদালত জানায়, রোম সরকার এই দেশগুলোকে নিরাপদ মনে করলেও যদি দেশটির সব অঞ্চল ও সংখ্যালঘুদের নিরাপদ না মনে করা যায়, তাহলে সেটি নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না।

নতুন প্রস্তাবগুলো এখন ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোর অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। কিছু মানবাধিকার সংগঠন এই পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন ইউরোমেড রাইটস সতর্ক করেছে, এই সাতটি দেশকে নিরাপদ বলা বিভ্রান্তিকর এবং বিপজ্জনক হতে পারে, কারণ এদের মধ্যে এমন দেশ আছে যেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ রয়েছে এবং নাগরিক ও অভিবাসীদের জন্য নিরাপত্তা সীমিত।

যদিও কমিশনের মুখপাত্র মার্কাস ল্যামার্ট বলেন, ‘আমরা মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকারে কাটছাঁট করি না।’

তিনি জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের আইনের অধীনে সদস্য দেশগুলোকে প্রতিটি আশ্রয় আবেদন আলাদাভাবে ও ব্যক্তিগতভাবে মূল্যায়ন করতে হয়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d