Bangladesh

বাংলাদেশি কূটনীতিককে গ্রহণ করছে না বাহরাইন

প্রস্তাবিত বাংলাদেশ দূতকে গ্রহণ করছে না বাহরাইন। যদিও প্রায় ৬ মাস ধরে মানামায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের পদটি শূন্য অবস্থায় রয়েছে। কাউন্সেলর পদমর্যাদার একজন কূটনীতিক চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সের রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ ওই দেশটিতে। বাংলাদেশ দূতকে গ্রহণে বাহরাইনকে কনভিন্স করতে এই সময়ে দফায় দফায় অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ হয়েছে রাষ্ট্রাচার প্রধানের দপ্তর তথা মানামার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি দেখভালকারী দিল্লিস্থ বাহরাইন মিশনের মাধ্যমেও পারসু করা হয়েছে। কিন্তু না, প্রস্তাবিত বাংলাদেশ দূতকে গ্রহণে মানামার তরফে ইতিবাচক কোনো সিগন্যাল মিলেনি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নতুন কাউকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে প্রস্তাব করার চিন্তা-ভাবনা করছেন নীতি-নির্ধারকরা। 

সেগুনবাগিচার দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, কোনো রাষ্ট্রদূতকে গ্রহণ বা বর্জন এটা একান্তই হোস্ট কান্ট্রির সার্বভৌম সিদ্ধান্ত। এখানে প্রস্তাবকারী রাষ্ট্রের অনুরোধ বা আবদার করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। সাধারণত কোনো রাষ্ট্রদূতের এগ্রিমো পাঠানোর পর ন্যূনতম দুই মাস থেকে সর্বোচ্চ ৩ মাস অপেক্ষা করাই রেওয়াজ। এর মধ্যে হোস্ট কান্ট্রি ‘হ্যাঁ’ না বললে (সম্মতি না দিলে) ধরে নিতে হবে প্রস্তাবিত দূতকে গ্রহণে রিজারভেশন রয়েছে।

সেক্ষেত্রে জানা-বোঝার চেষ্টা হয়। অনানুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ হয়, আপত্তি গুরুতর না হলে তা দূর করার জন্য কাউন্টার ন্যারেটিভ শেয়ার করা হয়। যেমনটি গত বছরের শুরুতে ভিয়েনার ক্ষেত্রে করা হয়েছে। ভিয়েনা  বাংলাদেশের  প্রস্তাবিত একজন বাংলাদেশি কূটনীতিককে রাষ্ট্রদূত হিসেবে গ্রহণ করেনি। 

মানামার ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভিন্ন দাবি করে দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, বাহ্‌রাইনে নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের উপ-রাষ্ট্রদূত পেশাদার কূটনীতিক খোরশেদ আলম খাস্তগীরের এগ্রিমো গেছে গত সেপ্টেম্বরে। সে হিসাবে ডিসেম্বরের মধ্যে তার এগ্রিমো ক্লিয়ার হবে- এমনটা ধরে নেয়া হয়েছিল। দেশে দ্বাদশ নির্বাচনের ডামাডোলে ওই সময়টা পার হয়েছে। নির্বাচনের পর নতুন সরকার গঠিত হওয়ার সময়ে ঢাকা অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু তা-ও আসেনি। পরবর্তীতে এ নিয়ে যোগাযোগ শুরু হয়। একটা পর্যায়ে মানামার আপত্তির বিষয়টি ওপেন-সিক্রেট হয়ে পড়ে। 

অনানুষ্ঠানিক আলাপে প্রস্তাবিত বাংলাদেশ দূত সম্পর্কে মানামা কি ধারণা দিয়েছে জানতে চাইলে দায়িত্বশীল ওই কর্মকর্তা বলেন, তারা কোনো কারণ বলেনি। এটা বলতে তারা বাধ্য নয়। ঢাকা ধারণা করছে ব্যক্তি খোরশেদ আলম খাস্তগীরকে হয়তো কোনো কারণে পছন্দ করছে না মানামা। হয়তো উনার ব্যাপারে কোনো জায়গা থেকে তারা কোনো তথ্য পেয়েছে। উল্লেখ্য, গাল্‌ফ রিজিওনে বাংলাদেশ প্রস্তাবিত রাষ্ট্রদূতকে গ্রহণ না করার ঘটনা সম্প্রতিককালে এটাই প্রথম। বহু বছর আগে সৌদি আরবে এমনটি ঘটেছিল বলে রেকর্ডে রয়েছে।

যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ বাহরাইন: 
মধ্যপ্রাচ্যের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বাহরাইনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের শুরু ৬ই জুন ১৯৭৪ সালে। গালফ রিজিওন থেকে বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দেয় মানামা। দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের অনেক মিল রয়েছে। উভয় দেশ ১৯৭১ সালে  (একই বছরে) স্বাধীনতা অর্জন করে। বাহরাইন ১৬ই ডিসেম্বর জাতীয় দিবস পালন করে, একই দিন বাংলাদেশ বিজয় দিবস পালন করে। বাহরাইনে ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ দূতাবাস চালু হয়। ১৯৯৯ সালে বাহরাইনের প্রয়াত আমীর মহামহিম শেখ ঈসা বিন সালমান আল খলিফার দাফনে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলতি ২০২৪ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছে দুই দেশ। বাহরাইনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য বিনিময়ের পরিমাণও সন্তোষজনক। প্রায় ৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্য রয়েছে দুই দেশের। দেশটিতে দেড় লাখের বেশি বাংলাদেশি কর্মী রয়েছেন। ২০২২ সালে বাহরাইন থেকে প্রায় ৫৬৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (রেমিট্যান্স) দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। রেমিট্যান্স পাঠানোর শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে বাহরাইন অন্যতম। ২০১৮ সালে একজন ইমাম-হত্যার ঘটনায় বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ওয়ার্ক ভিসার উপর অলিখিত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল বাহরাইন। অবশ্য পরবর্তীতে তা প্রত্যাহার করে নেয়। বাহরাইনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একটি স্কুল রয়েছে। ঢাকায় বাহরাইনের কোনো দূতাবাস না থাকায় অনারারি কনসাল নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button