বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ৩ চ্যালেঞ্জ: বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন
বিশ্বব্যাংক বলেছে, বাংলাদেশে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার কমে যাচ্ছে। করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ঠ বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে প্রবৃদ্ধির হার কমছে।
প্রবৃদ্ধির হার কমার তালিকায় শুধু বাংলাদেশই নয়। মধ্য আয়ের প্রায় সব দেশেরই জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কমছে। এ হার বাড়াতে বাংলাদেশসহ এসব দেশকে মৌলিক তিনটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এর মধ্যে আছে গুণগতমানের টেকসই বিনিয়োগ বাড়ানো, দক্ষতা অর্জন ও জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন জোগান নিশ্চিত করা। সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংক এখন বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশ হিসাবে মনে করে। তবে জাতিসংঘের মানদণ্ডে ২০২৬ সাল নাগাদ বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার কথা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে সাড়ে ৬ শতাংশের বেশি হয়েছিল। করোনা ও বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে এ হার কমেছে। উন্নত দেশগুলো মন্দার কবল থেকে দ্রুত বের হয়ে এলেও বাংলাদেশ ততটা দ্রুত পারছে না। জিডিপির পুনরুদ্ধার কার্যক্রম অনেকটা ধীরগতিতে এগোচ্ছে। বিদায়ি বছরে প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের নিচে রয়েছে। যদিও সরকার মনে করছে প্রবৃদ্ধি আরও বেশি।
এদিকে বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে ডলারের দাম বৃদ্ধি ও স্থানীয় মুদ্রার মান কমায় বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ডলারের হিসাবে কমেছে। তবে বেড়েছে টাকার হিসাবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ নারী ক্ষমতায় বেড়েছে, মোবাইল আর্থিক লেনদেনে উলেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ফলে গ্রামে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রসারিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলেছে, বাংলাদেশসহ মধ্য আয়ের দেশগুলোকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম দ্রুত করতে হলে গুণগতমানের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এজন্য দক্ষতার উন্নয়ন ও নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ করতে হবে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর ক্ষেত্রে বর্তমানে এই তিনটিই বড় চ্যালেঞ্জ। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য বিনিয়োগের খরচ কমাতে হবে। বিনিয়োগ থেকে রিটার্ন হওয়ার সময়ও কমাতে হবে।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিকভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুনরুদ্ধার কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে। তবে করোনার আগের অবস্থায় যেতে আরও সময় লাগবে। বৈশ্বিক জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার বাড়তে শুরু করেছে। আগামীতে এ হার আরও বাড়বে।
বৈশ্বিকভাবে পণ্যের সরবরাহে বাধার ক্ষেত্রে বড় ধরনের আশঙ্কা নেই। বৈদেশিক ঋণের সুদের হারও চলতি বছরের মধ্যেই কমতে শুরু করবে। ইতোমধ্যে অনেক দেশ সুদের হার কমানোর আভাস দিয়েছে। উন্নত দেশগুলোর মূল্যস্ফীতির হার কমে আসায় তারা সুদের হার কমিয়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরও সচল করছে।
এদিকে বাংলাদেশ এখনও মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি। জুনের তুলনায় জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতির হার ২ শতাংশ বেড়ে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে ওঠেছে। আগে ছিল সাড়ে ৯ শতাংশের বেশি। তবে আগে মূল্যস্ফীতির প্রকৃত তথ্য গোপন করে কম দেখানোর অভিযোগ রয়েছে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখন তথ্য গোপন করবে না বলে জানিয়েছে। তারা প্রকৃত তথ্যই জনগণের উদ্দেশে প্রকাশ করবে।
মূল্যস্ফীতির হার কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদের হার সাড়ে ৮ শতাংশ থেকে তিনটি ধাপে বাড়িয়ে ১০ শতাংশে নিয়ে যাবে। এতে ব্যাংকগুলোরও ঋণের সুদহার বাড়বে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকের ধার করার খরচ বেড়ে যাবে। ফলে বাজারে টাকার প্রবাহ কমে মূল্যস্ফীতির হার কমে আসবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আশা করছে।