Hot

বাংলাদেশের গণতন্ত্র কেন লাইফ সাপোর্টে রয়েছে?

ভারতের প্রভাবশালী সংবাদ সংস্থা টাইমস অব ইন্ডিয়া এক প্রতিবেদনে সরকারী বার্তা সংস্থা পিটিআই এর বরাত দিয়ে বলেছে, আগামী বছরের নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণের আগেই বাংলাদেশে একটি সম্ভাব্য দীর্ঘ রাজনৈতিক সংকট তৈরি হচ্ছে। ১৯৭১ সালে একটি স্বাধীন দেশ হিসাবে তার জন্মের পর থেকে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনের সাথে একটি সমস্যাপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে, এর প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্টের হত্যা এবং এর প্রথম দশকগুলো একাধিক অভ্যুত্থান এবং পাল্টা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গেছে।

রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপে একদলীয়, সামরিক, গণতান্ত্রিক এবং স্বৈরাচারী- সব ধরণের শাসন ব্যবস্থাই দেখা গেছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা এখন অনেকটাই রাশিয়ার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। একদল অলিগার্ক প্রচুর আর্থিক সুবিধা ভোগ করছে এবং বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রাখার জন্য প্রচুর পরিমাণে বিনিয়োগ করছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের কথা রয়েছে।

এর আগে দেশের প্রধান বিরোধী দল ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল’ একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সরকারের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। তারা একের পর এক বিশাল সমাবেশ নিয়ে রাজপথে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন করতে অনড়।

বাংলাদেশে সর্বশেষ অবাধ ও সুষ্ঠু বলে বিবেচিত নির্বাচনটি হয়েছিল ২০০৮ সালে। এ নির্বাচনের মধ্য দিয়েই ক্ষমতায় এসেছিলেন শেখ হাসিনা। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনগুলি ছিল অত্যন্ত বিতর্কিত। ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করেছিল বিরোধী দলগুলো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া সহ প্রধান উদারপন্থী গণতান্ত্রিক দেশগুলো একটি নতুন ভোটের আহ্বান জানিয়েছিল কিন্তু ভারত, রাশিয়া এবং চীন নির্বাচন নিয়ে কোনও সমস্যা প্রকাশ করেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পশ্চাদপসরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে, তখন চীন ও রাশিয়া বর্তমান সরকারের প্রতি তাদের সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। শেখ হাসিনার উপর সাম্প্রতিক মার্কিন চাপ প্রসঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত বলেছেন যে, তার দেশ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না। আবার রাশিয়াও বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের হস্তক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে।

একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়ত বাংলাদেশের স্বৈরাচারী শাসন বন্ধ করতে পারবে এবং এর মধ্য দিয়ে বৃহত্তর জবাবদিহিতার পথও প্রশস্ত হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন সংকটময় সময় পাড় করছে এবং দেশের বেকারত্ব ক্রমশ বাড়ছে। বাংলাদেশ একটি তরুণে পূর্ণ দেশ। এখন একটি কার্যকর গণতন্ত্রই বাংলাদেশের সামনে একমাত্র আশা। যদিও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি না মানলে আগামী নির্বাচন বয়কট করতে পারে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল। তারা সম্ভবত দেশব্যাপী বিক্ষোভ অব্যাহত রাখবে।

২০১৮ সালের নির্বাচনে বিরোধীরা অংশগ্রহণ করেছিল। কিন্তু ওই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে বিরোধীদের দমন, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং ব্যাপক ভোট কারচুপির অভিযোগ রয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল তাদের এক জরিপে ৫০টি আসনের মধ্যে ৪৭টিতেই একাধিক অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছিল। শেখ হাসিনা জোর দিয়ে দাবি করেছেন যে, তার শাসনামলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নের কারণেই জনগণ তার সাথে রয়েছে। বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘ থেকে শুরু করে মার্কিন অর্থনীতিবিদ জেফ্রি শ্যাসও তার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন।

যদিও বাংলাদেশের পুলিশ, বিচার বিভাগ এবং রাষ্ট্রীয় আমলাদেরকে শেখ হাসিনার প্রতি অনুগত হিসেবে দেখা হয়। ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আরও ব্যবস্থা নেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। এরমধ্যে আছে, নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি এবং সুষ্ঠু নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে ঘোষিত বিশেষ ভিসা নীতি।

এক সময় নির্বাচন বাংলাদেশে উৎসবের কারণ ছিল। কিন্তু এখন লক্ষ লক্ষ তরুণরা দেখছেন যে, তাদের নিজের নেতা নির্বাচন করার মৌলিক অধিকার হরণ করা হয়েছে। আবার বাকস্বাধীনতাবিরোধী কঠিন আইন তাদের ক্ষমতাবানদের সমালোচনা করার ক্ষমতা হ্রাস করেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং সমালোচক ও বিরোধী ব্যক্তিদের কারাদণ্ডসহ নৃশংস কৌশল অনুসরণের অভিযোগ এনেছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের হিসাব অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে ৬০০ জনেরও বেশি মানুষ নিখোঁজ হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীগুলো ২০১৮ সাল থেকে ৬০০টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে জড়িত রয়েছে। সুইডিশ অনুসন্ধানী সংবাদ সাইট নেত্র নিউজ ঢাকা সেনানিবাসে আয়নাঘর নামে একটি গোপন কারাগার খুঁজে পায়। সেখানে এই নিখোঁজ ব্যক্তিদের আটক করে রাখা হয়েছে অভিযোগ করেছে তারা। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসন আধাসামরিক বাহিনী র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন এবং এর ছয়জন প্রাক্তন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দুই প্রাক্তন পুলিশ কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের উপরও ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট। নিউ ইয়র্ক টাইমস সম্প্রতি এক রিপোর্টে দাবি করেছে যে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ রাজনৈতিক হয়ে উঠেছে। দেশে লাখ লাখ বিরোধী নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বিচার চলছে। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ১৯৮টি মামলা চলছে আদালতে। একজন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল যিনি বলেছিলেন যে ইউনূস বিচারিক হয়রানির স্বীকার হয়েছেন তাকেও বরখাস্ত করা হয়েছে।

‘দ্য ওয়ার্ল্ড জুরিস্ট প্রজেক্ট’-এর আইনের শাসন সূচকে ১৪০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৭তম। ফ্রিডম হাউস বাংলাদেশকে ‘পার্টলি ফ্রি’ বা আংশিক স্বাধীন দেশের শ্রেণিতে রেখেছে। সর্বশেষ বিশ্ব প্রেস ফ্রিডম সূচকে বাংলাদেশ ছিল ১৬৩তম অবস্থানে, যা আফগানিস্তান (১৫২) এবং কম্বোডিয়ারও (১৪৭) পেছনে। এদিকে বর্তমান সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কযুক্ত রাজনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সিঙ্গাপুর এবং অন্যান্য দেশে বাড়ি কিনেছেন এবং কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছেন বলে জানা গেছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d