Bangladesh

বাংলাদেশের নির্বাচনে জাতিসঙ্ঘের ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে!

বাংলাদেশের নির্বাচনে জাতিসঙ্ঘের ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে! – ফাইল ছবি

স্নায়ুযুদ্ধ সবে শেষ হয়েছে, কম্বোডিয়ার সরকারের সাথে একটি শান্তি চুক্তি করেছে খেমাররুজসহ যুদ্ধরত তিন দল। ওই চুক্তির আওতায় জাতিসঙ্ঘের একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ওই দেশে নির্বাচনের আয়োজন করে, যেখানে ভোট পড়েছিল ৮৯.৫৬ শতাংশ।

এর পরে জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে ইন্দোনেশিয়া থেকে পৃথক হওয়ার পূর্ব তিমুরের গণভোটও আয়োজিত হয়েছে। সেটাও হয়েছিল আরেকটি যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে। নামিবিয়াসহ আরো কয়েকটি দেশে একসময় জাতিসঙ্ঘের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে নির্বাচন হয়েছে।

কিন্তু গত এক দশকে জাতিসঙ্ঘের ওই ভূমিকার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। সংস্থাটির নীতিমালাতেও অনেক পরিবর্তন এসেছে।

রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ মতবিরোধের জের ধরে কোনো দেশের নির্বাচনে জাতিসঙ্ঘের এগিয়ে আসার উদাহরণ কি রয়েছে?

বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে করতে প্রস্তাব উত্থাপন করার জন্য জাতিসঙ্ঘে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধির কাছে মার্কিন কংগ্রেসের ১৪ জন একটি চিঠি পাঠানোর পর এই বিতর্ক শুরু হয়েছে।

মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যরা এই চিঠি পাঠালেন এমন সময় যখন বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সরকার ও বিরোধীদের মধ্যে তুমুল মতবিরোধ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশে ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’ এবং ‘জনগণকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ করে দিতে’ উদ্যোগ নেয়ার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্টকে চিঠি দিয়েছিলেন কয়েকজন কংগ্রেস সদস্য।

কিন্তু জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে কোন দেশের নির্বাচন অনুষ্ঠিত বলতে আসলে কী বোঝানো হয়? বিশ্বের কোন কোন দেশে এভাবে নির্বাচন হয়েছে? কী প্রক্রিয়াতেই বা জাতিসঙ্ঘ এরকম নির্বাচনের আয়োজন করে থাকে?

ইতিহাস ঘেঁটে এবং বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে জানার চেষ্টা করেছে বিবিসি বাংলা।

যেসব পদ্ধতিতে জাতিসঙ্ঘ নির্বাচনে সহায়তা করে থাকে
কোনো দেশের নির্বাচনে জাতিসঙ্ঘের ভূমিকা কী হতে পারে, কিভাবে হবে, এ নিয়ে গত বছরের পহেলা ফেব্রুয়ারি একটি নীতিমালা তৈরি করেছে জাতিসঙ্ঘ।

ইলেকটোরাল অ্যাসিস্ট্যান্ট : সুপারভিশন, অবজারভেশন, প্যানেল অ্যান্ড সার্টিফিকেশন শিরোনামের ওই দলিলে নির্বাচনে জাতিসঙ্ঘের সম্পৃক্ততা বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

জাতিসঙ্ঘের নির্বাচনে সহায়তা-সংক্রান্ত দলিলপত্রে বলা হয়েছে, কোন দেশের নির্বাচন জাতিসঙ্ঘ শুধুমাত্র তখনি তত্ত্বাবধান করতে যাবে যদি ওই দেশ সহায়তার অনুরোধ করে অথবা নিরাপত্তা পরিষদে বা সাধারণ পরিষদে এ সংক্রান্ত কোনো প্রস্তাব পাস করা হয়।

কোনো দেশের নির্বাচনে কয়েকভাবে জাতিসঙ্ঘ সহায়তা করতে পারে। কখনো কখনো এসব পদ্ধতি একসাথেই কার্যকর হতে পারে, আবার আলাদা আলাদাও হতে পারে। এসব পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে :

* জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে নির্বাচনের আয়োজন
* নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানো
* বিশেষজ্ঞ কমিটির পরামর্শ ও নজরদারি করা
* নির্বাচন সম্পর্কে স্বীকৃতি দেয়া বা না দেয়া
* এর বাইরে কারিগরি সহায়তা দেয়া, নির্বাচনী পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের কাজে সহায়তার মতো কাজও জাতিসঙ্ঘ করে থাকে।

এসব লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রয়োজনে শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন, শান্তি রক্ষা এবং বিশেষ রাজনৈতিক মিশনও পরিচালিত হতে পারে। কিন্তু চাইলেই জাতিসঙ্ঘ এসব করতে পারবে না, সেজন্য অবশ্যই নিরাপত্তা পরিষদ বা সাধারণ পরিষদের ম্যান্ডেট লাগবে। সেইসাথে ওই দেশের সমর্থনও থাকতে হবে।

জাতিসঙ্ঘের দলিলে বলা হয়েছে, ‘কোন দেশের রাজনৈতিক জটিলতার কারণে সেদেশের নির্বাচন আয়োজনে সরকার জাতিসংঘের সহায়তা চাইলেই হবে না, সেজন্য অবশ্যই ওই দেশে জাতিসঙ্ঘের এরকম দায়িত্ব পালনে জনগণের সমর্থন থাকতে হবে।‘

জাতিসঙ্ঘের ওয়েবসাইটেই বলা হয়েছে, যদিও একসময়ে নির্বাচনে পর্যবেক্ষণ করার মতো মূল দায়িত্বগুলো পালন করতো জাতিসঙ্ঘ, কিন্তু বর্তমানে এটা খুব কমই করা হয়। বরং নির্বাচন আয়োজনে দায়িত্বপ্রাপ্ত জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বল্প ও মধ্য মেয়াদি সক্ষমতা বৃদ্ধিতেই বিশেষ সহায়তা করা হয়।

নানা দেশে যেভাবে নির্বাচনে ভূমিকা রেখেছে জাতিসঙ্ঘ
ইলেকটোরাল অ্যাসিস্ট্যান্স : সুপারভিশন, অবজারভেশন, প্যানেল অ্যান্ড সার্টিফিকেশন নীতিমালায় বলা হয়েছে, কখন কোন দেশের নির্বাচনের প্রধান অনুষঙ্গগুলো জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে আয়োজন করা হবে।

১৯৫০ এবং ষাটের দশকে যখন উপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হতে একের পর এক দেশ স্বাধীনতার জন্য গণভোটের আয়োজন করতে শুরু করে, তখন থেকে জাতিসঙ্ঘের এ ধরনের কর্মকাণ্ড শুরু হয়।

সেখানে জাতিসঙ্ঘ মূলত নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছে যে, যাতে সবাই কোনো রকম বাধা ছাড়াই নিজের মতামত ভোটের মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারেন।

ওই সময় জাতিসঙ্ঘের একজন তত্ত্বাবধানকারী কমিশনার বা ছোট একটি প্যানেল বা কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচনের কাজ তদারকি করা হয়। মূলত সেই দেশের কর্মকর্তারাই নির্বাচনের কাজ করেন, কিন্তু এই কমিশন নজরদারি করে, পরামর্শ দেয়, পর্যালোচনা করে। নির্বাচনের প্রতিটি ধাপ সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে জাতিসঙ্ঘ কমিশনের অনুমোদন থাকতে হয়। কিন্তু খুব বিরল ক্ষেত্রে এ ধরনের কাজে জড়িত হয় জাতিসঙ্ঘ। সর্বশেষ এ ধরনের নির্বাচন আয়োজিত হয়েছিল ১৯৮৯ সালে নামিবিয়ায়। এছাড়া ২০০১ সালের পূর্ব তিমুরের পার্লামেন্টারি নির্বাচন ও ২০০২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন জাতিসংঘের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়।

নির্বাচন প্রক্রিয়ায় জাতিসঙ্ঘের অংশগ্রহণের আরেকটি মাধ্যম হচ্ছে পর্যবেক্ষক দল পাঠানো, যদিও এটাও এখন খুব একটা পাঠানো হয় না। এজন্যও জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদ বা নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন লাগে। পর্যবেক্ষক দল নিজেরা সরাসরি নির্বাচনের কোন প্রক্রিয়ায় অংশ নেয় না, কিন্তু যথাযথভাবে নির্বাচন হচ্ছে কিনা, সেটা নজরদারি করে। এর ভিত্তিতে তারা নির্বাচন কতটা সুষ্ঠু এবং অবাধ হয়েছে, সেই বিষয়ে সরাসরি জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের কাছে প্রতিবেদন দেয়।

যদিও এই পর্যবেক্ষণের যে মতামত দেয়া হবে, তাতে আইনগত কোনো বাধ্যবাধকতা তৈরি হয় না। কিন্তু ওই নির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবে কতটা গ্রহণযোগ্য, তা অনেকাংশে এই মতামতের ওপর নির্ভর করে। তবে যেসব দেশের নির্বাচনে জাতিসঙ্ঘ কারিগরি সহায়তা দিয়ে থাকে, সেসব দেশে সাধারণত এরকম পর্যবেক্ষক মিশন পাঠায় না জাতিসঙ্ঘ।

বুরুন্ডিতে ২০১৫ সালে এবং ফিজিতে ২০০১ সালে এরকম পর্যবেক্ষক মিশন পাঠিয়েছিল জাতিসঙ্ঘ।

এরকম ক্ষেত্রে নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদের অনুমোদন ছাড়াও ওই দেশের সরকারের আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানাতে হয়। যেমন ২০২০ সালের নভেম্বরে ইরাকের নির্বাচনে সেদেশের সরকারের অনুরোধে পর্যবেক্ষক মিশন পাঠিয়েছিল জাতিসঙ্ঘ। অবশ্য ইরাকের নির্বাচন ব্যবস্থা শক্তিশালী করে তোলার জন্য ২০০৪ সাল থেকেই জাতিসঙ্ঘের একটি দফতর কাজ করছে।

বার্মিংহ্যাম ইউনিভার্সিটির ডেমোক্রেসি বিভাগের অধ্যাপক নিক চিজম্যান বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘সাধারণত ইউএনডিপি বা অন্য সংস্থাগুলোর মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজনে সহায়তা করে জাতিসঙ্ঘ। কিন্তু সরাসরি কোনো দেশের নির্বাচনে ভূমিকা রাখার ঘটনা এখন খুবই বিরল। বাংলাদেশের মতো দেশগুলোয় সাধারণত বড় দাতা দেশগুলো বা আঞ্চলিক সংস্থাগুলো বরং এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে।‘

কিন্তু সাধারণত রাজনৈতিক বিরোধের মধ্যে নিজেদের জড়াতে চায় না জাতিসঙ্ঘ, তিনি বলছেন।

কোনো কোনো সময় নির্বাচনী কর্মকাণ্ড দেখতে এবং ওই বিষয়ে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য অনেক সময় বিশেষজ্ঞদের একটি দল পাঠিয়ে থাকে জাতিসঙ্ঘ। তারা নির্বাচনী কর্মকাণ্ড নজরদারি করে, প্রয়োজনে মধ্যস্থতা বা আলোচনা করে। এই প্যানেলের মধ্যে রাজনৈতিক, নির্বাচনী, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ থাকতে পারে।

বিশেষজ্ঞ প্যানেল পাঠাতে অবশ্য জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদ বা সাধারণ পরিষদের অনুমোদন দরকার হয় না। জাতিসংঘের নির্বাচনী সহায়তা সংক্রান্ত দফতরের মাধ্যমে বা একজন আন্ডার-সেক্রেটারির মাধ্যমে এই প্রতিবেদন পাঠানো হয়।

আফগানিস্তানে ২০০৪-২০০৫ সালের নির্বাচন এবং ইরাকে ২০০৫ সালের নির্বাচনে জাতিসঙ্ঘের বিশেষজ্ঞ মিশন সহায়তা করেছিল। দুই বছর আগে ইরাকে যখন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও নির্বাচন নিয়ে অবিশ্বাস আর অনাস্থা চূড়ান্ত আকার ধারণ করেছিল, তখনো ওই দেশের অনেক রাজনৈতিক দল এই আহবান জানিয়েছিল। যদিও তাতে সাড়া মেলেনি।

সর্বশেষ ভেনিজুয়েলায় ২০২১ সালের নির্বাচনে এরকম বিশেষজ্ঞ প্যানেল পাঠানো হয়েছিল।

এর আগে ২০১৭ সালে নিউ ক্যালিডোনিয়ায়, ২০০৯, ২০১২, ২০১৪ ও ২০১৭ সালে আলজেরিয়ায়, ২০১০-২০১১ সালে সুদানে, ২০০৮ সালে নেপালে এরকম বিশেষজ্ঞ প্যানেল পাঠানো হয়েছিল।

কোনো দেশের নির্বাচন কেমন হলো, ওই বিষয়ে ওই দেশের নির্বাচন কমিশনই ফলাফলের সার্টিফিকেট বা সনদ দিয়ে থাকে। কিন্তু কখনো বিশেষ পরিস্থিতিতে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদ বা নিরাপত্তা পরিষদ মহাসচিবকে সনদ দেয়ার অনুরোধ জানাতে পারে। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সরাসরি অংশ না নিলেও এর মাধ্যমে আসলে জাতিসঙ্ঘ ওই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতি জানায়। এ ধরনের সার্টিফিকেট দিতে হলে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের অবশ্য সাধারণ পরিষদ বা নিরাপত্তা পরিষদের ম্যান্ডেট দরকার হয়।

নব্বইয়ের দশকের আগের নির্বাচনগুলোর ক্ষেত্রে এ ধরনের সনদ দিতো জাতিসংঘ। যেমন অ্যাঙ্গোলা, এল সালভাদর, হাইতি, নিকারাগুয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং মোজাম্বিকের নির্বাচন নিয়ে ‘সার্টিফিকেট’ ইস্যু করেছিল জাতিসঙ্ঘ। ২০০৭ সালের পূর্ব তিমুরের আর আইভরি কোস্টের ২০১০ সালের নির্বাচন নিয়ে যখন বিতর্ক তৈরি হয়েছিল, সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য বলে সনদ দিয়েছিল জাতিসঙ্ঘ।

এছাড়া কঙ্গো, দক্ষিণ সুদান, আফগানিস্তান বা ইরাকের মতো দেশগুলোয় সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা, প্রশিক্ষণ দিয়েছে জাতিসঙ্ঘ।

অধ্যাপক নিক চিজম্যান বলছেন, অনেক সময় যেমন সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সহায়তার জন্য জাতিসঙ্ঘ প্রশংসিত হয়েছে, তেমনি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজনে সরকারগুলোকে বাধ্য করতে না পারার বা যথেষ্ট চাপ তৈরি করতে না পারার জন্য সমালোচনার মুখেও পড়েছে জাতিসঙ্ঘ।

‘কোন দেশের নির্বাচন ঠিকভাবে না হলেও সাধারণত সেখানে জাতিসঙ্ঘের তরফ থেকে খুব শক্ত কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। পর্যবেক্ষকরা প্রতিক্রিয়া দেন, দাতাদেশ বা যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলো প্রতিক্রিয়া দেখায়। কিন্তু জাতিসঙ্ঘের তরফ থেকে সেরকম বিবৃতি বা প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। যেমন সিয়েরালিওনের কিছু দিন আগের বিতর্কিত নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয়সহ অনেক দেশ সমালোচনা করলেও জাতিসঙ্ঘের কিন্তু বিবৃতি দেখা যায়নি,‘ বলছেন অধ্যাপক চিজম্যান।

তার ধারণা, এর কারণ হয়তো হতে পারে যে জাতিসঙ্ঘ যেহেতু সব দেশের সমন্বয়ে গঠিত একটা সংস্থা, তাই তারা যেকোন রকমের অবস্থান প্রকাশ করতে সতর্ক থাকে।

বাংলাদেশের নির্বাচনে কি জাতিসঙ্ঘের ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে?
আন্তর্জাতিক রাজনীতি বা কূটনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে বিশ্বের দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিরোধে এমনিতেই জাতিসঙ্ঘ সরাসরি কোন হস্তক্ষেপ করে না। অনেক সময় সংস্থাটি মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে। কিন্তু সেখানে সফল না হলেও তাদের কিছু করার থাকে না।

সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক তৌহিদ হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, ’বিশ্বের যেসব দেশের নির্বাচনে জাতিসংঘ ভূমিকা রেখেছে, সেখানে কিছু আলাদা পরিস্থিতি ছিল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই গৃহযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে যুদ্ধরত পক্ষগুলোর মধ্যে সমঝোতা হয়েছে বা কোনো এক পক্ষ পরাজিত হয়েছে, সেই পরিস্থিতিতে জাতিসঙ্ঘ সেখানে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশে তো সেই পরিস্থিতি নেই। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন নিয়ে জাতিসঙ্ঘের বর্তমানে কিছু করণীয় আছে বলে আমি দেখি না।’

এই বিশেষজ্ঞ বলছেন, কংগ্রেসম্যানদের চিঠিও এখনি বিশেষ কোনো বার্তা দেয় না। কারণ জাতিসঙ্ঘে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধি কাজ করেন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের অধীনে। কংগ্রেসের সদস্যদের এই চিঠির বিষয়ে তিনি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরকে জানাবেন। সেখান থেকে কোন সিদ্ধান্ত এলে তিনি জাতিসঙ্ঘে প্রস্তাব তুলতে পারেন। যদিও এরকম কোনো সম্ভাবনা এখনো দেখা যাচ্ছে না। আবার সেসব প্রস্তাবে চীন বা রাশিয়ার মতো দেশ ভেটো দিলে বাতিল হয়ে যাবে।

তবে অনেক সময় বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক বিরোধে জাতিসঙ্ঘের বিশেষ দূত বা মহাসচিবের দূত মধ্যস্থতা করে থাকে।

বাংলাদেশে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন কেন্দ্রিক অচলাবস্থা কাটাতে ঢাকায় তিন দফায় এসেছিলেন জাতিসঙ্ঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। ওই সময় তিনি বলেছিলেন, তার সফরের লক্ষ্য ছিল উভয় দলকে আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসা।

তিন দফায় ঢাকায় এসে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে আলোচনা করার পরেও বিরোধের কোনো সমাধান হয়নি। বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলে একতরফা সেই নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে পুনরায় সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।

২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতিসঙ্ঘের রাজনীতি বিষয়ক সহকারি মহাসচিব মিরোস্লাভ জেনকার সাথে বৈঠক করেছিলেন। যদিও পরে এ নিয়ে বিএনপি বা জাতিসংঘের তরফ থেকে কোনো বক্তব্য আসেনি।

কিছুদিন আগে জাতিসঙে।ঘর মধ্যস্থতায় সংলাপের কথা বলে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন আওয়ামী লীগের একজন প্রবীণ নেতা। ওই বক্তব্য সরকারি দল থেকে উড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস বাকি থাকলেও কোনো পক্ষ থেকেই জাতিসঙ্ঘের মধ্যস্থতার আহবান বা উদ্যোগ দেখা যায়নি, জাতিসঙ্ঘের তরফ থেকেও এমন কোনো ইঙ্গিত দেয়া হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বীর আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, এখনকার পরিস্থিতিতে আবার জাতিসঙ্ঘের মধ্যস্থতার মতো সম্ভাবনা তিনি দেখছেন না।

তিনি বলেন, ’জাতিসংঘকে মধ্যস্থতা করার জন্য তো সরকার বা বিরোধী দল- কারো তরফ থেকেই কিছু বলা হয়নি। তাহলে তারাই বা কেন নিজে থেকে আসবে? সরাসরি হস্তক্ষেপের তো প্রশ্নই আসে না, কারণ তেমন পরিস্থিতি এখানে নেই। আর জাতিসঙ্ঘের মধ্যস্থতায় আসলে তো তেমন কিছু হয় না। জাতিসঙ্ঘ তো ২০১৪ নির্বাচনের আগেও মধ্যস্থতা করেছে, তাতে কি কোনো পরিবর্তন এসেছিল?’

তৌহিদ হোসেন মনে করেন, যে কারো পক্ষ থেকেই হয়তো জাতিসঙ্ঘের কাছে চিঠি পাঠানো যেতে পারে। কিন্তু জাতিসঙ্ঘের মতো একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা তো কোনো দেশের রাজনৈতিক মতবিরোধে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। আর সরকার না চাইলে বিরোধীদের পক্ষেও জাতিসঙ্ঘের কাছে সরাসরি যাওয়ার কোনো উপায় তিনি দেখছেন না।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor