Bangladesh

বাংলাদেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের তাগিদ: মানবাধিকার পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানিয়ে ইইউ পার্লামেন্টে প্রস্তাব পাস, ইইউ পার্লামেন্টের প্রস্তাবে হতাশ ঢাকা

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আনা প্রস্তাব ইউরোপীয় ইউনিয়ন পার্লামেন্টে পাস হয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়া আজারবাইজান এবং গুয়াতেমালার বিরুদ্ধেও একই ধরণের প্রস্তাব পাস হয়েছে ইইউ পার্লামেন্টে। যৌথ প্রস্তাবে নাগরিক অধিকার চর্চার বিষয়ে আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুসরণে দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইইউ পার্লামেন্ট।

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ‘মোশন ফর অ্যা রেজোলিউশন’ শিরোনামের প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটির মাধ্যমে এই প্রস্তাব পাস হয়। প্রস্তাবে বলা হয়, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং শ্রমিকদের অধিকার খর্ব করা সহ বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে।
প্রস্তাব পাসের পর এক বিবৃতিতে ইইউ পার্লামেন্ট সদস্যরা বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে সরকারের প্রতি এনজিও, মানবাধিকার সংস্থা এবং কর্মী, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতের আহবান জানিয়েছেন।

এর আগে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মধ্য-ডানপন্থি, সোশাল ডেমোক্রেট, বামপন্থী সহ বেশ কয়েকটি গ্রুপ তাদের যৌথ এক প্রস্তাবে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতিতে গভীর উদ্বেগ পুনর্ব্যক্ত করেছে। ওই প্রস্তাবে তারা নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার চর্চার আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার অনুসরণে বেসরকারি সাহায্য সংস্থা, মানবাধিকার কর্মী এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের কাজের জন্য একটি নিরাপদ এবং অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে। ইইউ›র দাবির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার বিবেচনা করবে বলেও আশা করা হয়েছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রশাসনিক কার্যালয় ফ্রান্সের স্ত্রাসবুর্গে স্থানীয় সময় গত বুধবার রাতে বাংলাদেশ বিষয়ক প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে অনুষ্ঠিত সংসদীয় বিতর্কে এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়। প্রস্তাবে বাংলাদেশে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গণগ্রেফতার এবং বাংলাদেশে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। তাছাড়া ২০২৪ সালে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিশেষ করে অধিকারের মামলা শীর্ষক ওই প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ৭টি আলাদা গ্রুপ। প্রস্তাবটি নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ৬ জন সদস্য বিতর্কে অংশ নেন।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রস্তাবে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার প্রসঙ্গে বলা হয়, অনতিবিলম্বে অধিকারের প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে সব অভিযোগ প্রত্যাহার করার এবং সংগঠনের নিবন্ধন পুনরায় চালু করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলো অনুমোদিত বিদেশি অনুদানগুলো যাতে কাজে লাগাতে পারে সে বিষয়টিতে সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে।

বলপূর্বক অন্তর্ধানের অভিযোগ তদন্তের জন্য একটি বিশেষ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘের সঙ্গে সহযোগিতা করার জন্য জিওবিকে উৎসাহিত করে; আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের আদালতের শুনানিতে অংশগ্রহণের অনুমতি দেয়ার জন্য জোর দেয়; প্রস্তাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করার জন্য সরকারকে পুনরায় আহ্বান জানিয়েছে। এবং আন্তর্জাতিক মানদ-ের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রণয়নে উৎসাহিত করে।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা তাদের প্রস্তাবে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে তুলে ধরতে ইউরোপীয় এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিস, ইইউ প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর দূতাবাসকে অনুরোধ জানান।

‘বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি, বিশেষ করে মানবাধিকারের ক্ষেত্রে’ ইউরোপীয় পার্লামেন্টে গৃহীত একটি প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বাংলাদেশ সরকার ‘চরম হতাশা’ প্রকাশ করেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিচারাধীন বিষয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে যৌথ প্রস্তাব উত্থাপন এবং ঢাকায় বৃহস্পতিবার দুই ‘অধিকার’ কর্মকর্তার বিষয়ে আদালতের রায় নিয়ে যে কথা বলা হয়েছে তা একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপের সামিল।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের স্বাধীন বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন ও ন্যায়সঙ্গতভাবে পরিচালিত হয় এবং সব পক্ষের অধিকার সম্মানের সহিত সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত করে চলেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, বাংলাদেশ সরকার ‘অধিকার’- বিষয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের রেজুলেশন সম্পূর্ণ পক্ষপাতিত্বমূলক।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এটা সবার জানা যে ‘অধিকার’-সম্পাদক আদিলুর রহমান খানকে বিএনপি-জামায়াত সরকার ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নিযুক্ত করেছিলেন এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর সেই পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

অতএব, শত দাবি করলেও ‘অধিকার’ মোটেও একটি নিরপেক্ষ বা স্বাধীন সংস্থা নয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ইউরোপীয় পার্লামেন্টসহ সব প্রতিষ্ঠানের সাথে ৫০ বছরের ক্রমবর্ধমান অংশীদারিত্বকে গভীরভাবে মূল্যায়ন করে এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও একে অপরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতির ভিত্তিতে অর্থবহ সম্পৃক্ততার মাধ্যমে এটি অব্যাহত থাকবে বলে আশা করে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d