Bangladesh

বাংলাদেশে উন্নয়নের নামে লুঠপাট

দৈনিক সমকালের ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম হচ্ছে “উদ্বোধনের পরই ভাঙতে হবে হাজার কোটি টাকার সড়ক”; প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, রাজধানীর কুড়িল থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত আট লেনের পূর্বাচল সড়কটি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাতে উদ্বোধন করতে পারেন, সেই লক্ষ্যে দ্রুততার সঙ্গে শেষ করা হচ্ছে। কিন্ত রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)-এর তৈরি এই সড়ক উদ্বোধনের পরপরই ভেঙে ফেলতে হবে। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা, কিন্ত কাজ শেষে তা বেড়ে দাঁড়াতে পারে ১ হাজার ৫০০ কোটিতে। যদিও প্রতিবেদনে বলা হয়নি তথাপি আমরা অনুমান করতে পারি এই সড়ক ভেঙ্গে ফেলার জন্যেও প্রচুর অর্থের দরকার হবে। কিন্ত প্রশ্ন হচ্ছে এই প্রকল্পের ক্ষেত্রে যা হচ্ছে তা কি বিরল ঘটনা, ব্যতিক্রম? বাংলাদেশের গত কয়েক বছরে যে সব অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রকল্প নেয়া হয়েছে তার অনেক ক্ষেত্রেই এই ধরণের পরিকল্পনাহীনতা, ব্যয় বৃদ্ধি এবং অপচয়ের ঘটনা ঘটেছে। এই সব বিষয়ে প্রশ্ন তুললে সেগুলো ধর্তব্যে নেয়া হয়নি, উপরন্ত এগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে ‘উন্নয়ন বিরোধী প্রচারণা’ বলে, সরকার-বিরোধিতা এমনকি ‘রাষ্ট্র বিরোধিতা’ বলেও। (এগুলোকে ২০২২ সালের আগস্ট মাসে আটলান্টিক কাউন্সিল থেকে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে আমি ‘আনসাস্টেইনেবেল প্রজেক্ট’ বলে চিহ্নিত করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকটের একটি কারন বলে বর্ণনা করেছিলাম। ব্রাউন ইউনিভার্সিটির দক্ষিন এশিয়া সেন্টারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ১০ সেপ্টেম্বরে উন্নয়নের এই ধারা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ছিলাম)। কিন্ত এই ধরণের অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে অর্থ অপচয় হচ্ছে সংকটের একটি দিক। আরও দিক আছে। তার একটি উদাহরণ এখন প্রতিদিনের সংবাদপত্রেই দেখতে পাচ্ছেন – ভারতীয় কোম্পানী আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তি। কিন্ত এই ধরণের অসম চুক্তি কি কেবল আদানী’র সঙ্গে হয়েছে? বাংলাদেশের যে সব বিদ্যুৎ কোম্পানী তাঁদের সাথে চুক্তিগুলোর কি অবস্থা? তাঁদের যেভাবে আইনি সুরক্ষা দেয়া হয়েছে তার উদ্দেশ্য কি? এগুলো বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। এগুলোর সঙ্গে ক্ষমতা কাঠামো’র সম্পর্ক না বুঝলে এর প্রক্রিয়া বোঝা যাবেনা। সেই চেষ্টা থেকেই পাঁচজন লেখক/সাংবাদিকের বিশ্লেষণ নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে ‘লুন্ঠিত ভবিষ্যৎ – বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকটের চালচিত্র’ (প্রথমা প্রকাশনী)। এ বইয়ের লেখক তালিকায় আছে শওকত হোসেন, জিয়া হাসান, ইসমাইল আলী, তারিক চয়ন। এই বই পড়লে এটা বুঝতে সহজ হবে কেনো ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার সড়ক তৈরি হয় এবং ভেঙ্গে ফেলতে হয়, কারা তা থেকে লাভবান হন, কোথা থেকে এই অর্থ আসে আর সেই অর্থের দায় নাগরিক হিসেবে আপনার ওপরে কতটা চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button