Bangladesh

বাংলাদেশে নাগরিক সমাজের স্থান ‘ক্লোজড’, নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ অনুমোদনের আহ্বান, রাজবন্দিদের মুক্তি দাবি: সিভিকাস মনিটরের রিপোর্ট

বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের কথা বলার স্থান বন্ধ (ক্লোজড) হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন সিভিকাস মনিটর বুধবার প্রকাশিত নতুন এক রিপোর্টে বাংলাদেশ সম্পর্কে এ কথা বলেছে। একই সঙ্গে ওই রিপোর্টে বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে আগামী নির্বাচনে যেন সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়, বাংলাদেশ সরকারের প্রতি সে বিষয়ে আহ্বান জানাতে। 
সিভিকাসের করা বাংলাদেশের এই রেটিং সবচেয়ে খারাপ। নির্বাচন পূর্ববর্তী ‘ব্রুটাল’ দমনপীড়নের মধ্যে বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের স্থান বিষয়ক রেটিংয়ে অবনতির এই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ৭ই জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী রাজনীতিক ও নিরপেক্ষ সমালোচকদের বিরুদ্ধে সরকারের গণ-দমনপীড়নের ফলে বাংলাদেশের এই অবনমন হয়েছে। সিভিকাস মনিটরের অফিস রয়েছে নিউ ইয়র্ক, সুইজারল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকায়। তারা ‘পিপল পাওয়ার আন্ডার এটাক ২০২৩’ শীর্ষক রিপোর্টে ১৯৮টি দেশ ও টেরিটোরিসের নাগরিক সমাজের অবস্থা তুলে ধরেছে। 

বাংলাদেশ বিষয়ে বলা হয়েছে, জানুয়ারির ভোটকে সামনে রেখে ভিন্ন মতাবলম্বীদের দমন করতে সব রকম ব্যবস্থা নিচ্ছে ক্ষমতাসীন দল। কর্তৃপক্ষ টার্গেট করেছে মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক, প্রতিবাদকারী ও অন্য সমালোচকদের। এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে ভীতি প্রদর্শন, সহিংসতা, গ্রেপ্তার ও নির্যাতন। বানোয়াট অভিযোগে বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আটক করেছে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা। 

সিভিকাসের এশিয়া প্যাসিফিক বিষয়ক গবেষক জোসেফ বেনেডিক্ট বলেন, ‘আমাদের ডাটা এটাই বলছে যে, শেখ হাসিনা শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য কোনো কিছুতেই থেমে নেই।

বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না’।  

সিভিকাস মনিটর প্রতিটি দেশকে তার নাগরিক সমাজের পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে বছরজুড়ে দেশভিত্তিক নাগরিক সমাজের অধিকারকর্মী, অঞ্চলভিত্তিক গবেষণা দল, আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের সূচকগুলো এবং মনিটরের নিজস্ব বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে সংগৃহীত ডাটা নিয়ে। এই চারটি আলাদা উৎস থেকে প্রাপ্ত ডাটাকে তারপর সংকলিত করে প্রতিটি দেশকে ৪টি ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। তা হলো- ওপেন (বা মুক্ত), ন্যারোড (বা সংকীর্ণ), অবস্ট্রাকটেড (বা বাধার সম্মুখীন) রিপ্রেসড অর ক্লোজড (বা নিষ্পেষণমূলক, বন্ধ হয়ে যাওয়া)। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বোঝানো হয় ক্লোজড ক্যাটেগরি দিয়ে। এই ক্যাটেগরিতে অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বেও ২৮টি বিধিনিষেধের দেশের মধ্যে অন্যতম। 

এ বছর মানবজাতির প্রায় এক তৃতীয়াংশ বা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৩০.৬ ভাগই বসবাস করছেন ‘ক্লোজড’ ক্যাটেগরির দেশগুলোতে। ২০১৮ সালে সিভিকাস মনিটর এই রেকর্ড রাখা শুরু করে। তারপর থেকে এমন ক্যাটেগরিতে থাকা মানুষের সর্বোচ্চ সংখ্যক এ বছর রেকর্ড করা হয়েছে। অন্যদিকে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার শতকরা মাত্র ২.১ ভাগ মানুষ মুক্ত বা ওপেন ক্যাটেগরির দেশে বাস করেন। সেখানে নাগরিকদের জন্য কথা বলার স্থান উন্মুক্ত এবং সুরক্ষিত। তবে শতকরা এই হার এ বছরেই সবচেয়ে কম। এসব পরিসংখ্যান একসঙ্গে মিলে বিশ্বের সঙ্কটজনক অবস্থাকেই নির্দেশ করে। 

সিভিকাস মনিটরের শীর্ষ গবেষক মারিয়ানা বেলালবা ব্যারেতো বলেন, নাগরিক সমাজের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে অস্বাভাবিক দমনপীড়ন প্রত্যক্ষ করছি আমরা। বিশ্বে অধিকার লঙ্ঘনের সামনের সারিতে আছে এখন বাংলাদেশ। নিরপেক্ষ নাগরিক সমাজের কার্যত এখন কর্মকাণ্ড চালানোর মতো স্পেস নেই। রাজনৈতিক বিরোধীদের ‘ক্র্যাশ’ করে দেয়ার সহিংস উদ্দেশ্যই বাংলাদেশের রেটিং অবনমনের প্রধান কারণ। প্রতিবাদ সমাবেশ ও সড়কে অবরোধ নিষিদ্ধ করেছে পুলিশ। তারপরও কেউ যদি বেরিয়ে আসেন প্রতিবাদ করতে বৈষম্যমূলকভাবে তাদের ওপর রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ছোড়া হয়। বিরোধী দলীয় সমর্থকদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকদের হাতে থাকে হাতুড়ি, লাঠিসহ অন্যান্য জিনিস। তারা  এসব নিয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা করে। আর আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন অলস দাঁড়িয়ে দেখে। যেসব সাংবাদিক রাষ্ট্রীয় অনিয়ম উন্মোচন করে দেন কর্তৃপক্ষ তাদেরকে টার্গেট করে এবং সমালোচনাকারী মিডিয়া আউটলেটকে বন্ধ করে দেয়। অনলাইনে মত প্রকাশের স্বাধীনতার পরিবর্তে নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইনে সাবেক বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নিষ্পেষণমূলক কিছু অংশ ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এটা অনলাইনের সমালোচনাকারী হাজারো মানুষকে অপরাধী হিসেবে প্রমাণ করতে ব্যবহার করা হয়। 

এতে আরও বলা হয়, মানবাধিকারের পক্ষের কর্মীদেরও হয়রান বৃদ্ধি পেয়েছে নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের দ্বারা। এর মধ্যে আছেন নির্বাসনে থাকা ব্যক্তি ও তাদের পরিবারও। সেপ্টেম্বরে সুপরিচিত অধিকার বিষয়ক কর্মী আদিলুর রহমান খান এবং নাসিরউদ্দিন এলানকে দুই বছরের জেল দেয় ঢাকার একটি আদালত। ১০ বছর আগে বিচারবহির্ভূত একটি হত্যাকাণ্ডের রিপোর্টকে কেন্দ্র করে তাদেরকে এই শাস্তি দেয়া হয়। তারপর থেকে তারা জেলেই ছিলেন। অবশ্য পরে তারা জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। 

জোসেফ বেনেডিক্ট বলেন, বাংলাদেশি নাগরিক সমাজের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এখনই সময় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এবং শেখ হাসিনা শাসকগোষ্ঠীর গতিপথ পরিবর্তনের আহ্বান জানানো। জেলবন্দি রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি অবশ্যই দাবি করতে হবে বিশ্ব নেতাদের। একই সঙ্গে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাতে হবে নির্বাচনে প্রকৃতপক্ষে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে। 
এই রিপোর্টে অন্য যেসব দেশের রেটিং অবনমন হয়েছে তার মধ্যে আছে বসনিয়া হার্জেগোভিনা, জার্মানি, কিরগিজস্তান, সেনেগাল, শ্রীলঙ্কা ও ভেনিজুয়েলা।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor