Bangladesh

বাংলাদেশে নির্বাচনে বহুমুখী সঙ্কট

বাংলাদেশে আসন্ন ১২তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বহুমুখী সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এখানকার তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় দুই ক্রেতা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ। কিন্তু তারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অসন্তুষ্ট। নির্বাচনের পরে যদি ক্ষমতাসীন দল ক্ষমতায় অব্যাহত থাকে অথবা ক্ষমতার অদলবদল হয় তাহলে বাণিজ্যিক গতিশীলতায় কি প্রভাব ফেলে তা দেখার বিষয়। ভারতের অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনে প্রকাশিত ‘ইলেকশন্স ইন বাংলাদেশ: এ কালিডোস্কোপিক ওভারভিউ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ কথাই বলেছেন সাংবাদিক সোহিনী বোস। তিনি অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের একজন অ্যাসোসিয়েট ফেলো। ওই প্রতিবেদনে লিখেছেন, বিরোধী দলগুলোর দেশজুড়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভের মধ্যে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ৭ই জানুয়ারিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে। ১২তম এই জাতীয় নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার আশা করছেন, যাতে বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘসময় ক্ষমতায় তার লিগ্যাসিকে আরও সুসংহত করতে পারেন। তবে আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক আবহ বর্তমানে সহজ জয়ের জন্য অনুকূল নয়। প্রতিবাদ বিক্ষোভ, হরতাল, অবরোধ এবং আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে সহিংসতা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ একটি ‘টিপিং পয়েন্টে’ বলে বর্ণনা করছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া। 

এতে আরও বলা হয়, ১৫ই নভেম্বর নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর থেকে চট্টগ্রাম, ঢাকা, চাঁদপুর, গাজীপুর, সিলেট, নোয়াখালী এবং বগুড়াসহ দেশের বেশ কিছু জেলায় তাণ্ডব দেখা দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামিসহ বিরোধী দলগুলো ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ দেয়ার পরপরই যানবাহন ভাংচুর করা হয়েছে। টাঙ্গাইল রেলস্টেশনে একটি যাত্রীবাহী ট্রেনে আগুন দেয়া হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে চালক ও কয়েকজন যাত্রী এতে আহত এবং অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন। এসবই হলো ধারাবাহিক প্রতিবাদ বিক্ষোভের ফল, এসব প্রতিবাদ বিক্ষোভ দেশের বিভিন্ন অংশে শুরু হয়েছে নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবিতে ২৮শে অক্টোবর মহাসমাবেশ করে বিএনপি। এতে বিপুল পরিমাণ মানুষের সমাবেশ ঘটাতে আয়োজকরা নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ঢাকায় আনার জন্য পদক্ষেপ নেন। কিন্তু প্রধান বিচারপতি, অন্য বিচারকদের বাসভবনে হামলা এবং গাড়িতে অগ্নিসংযোগের পর এই সমাবেশ সহিংস হয়ে ওঠে। এ সময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে। বিক্ষোভকারীদের ওপর রড, লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে। বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশি তল্লাশি চালানোর রিপোর্ট আছে। এর মাধ্যমে তারা বৈষম্যমূলকভাবে পরিবারের সদস্যসহ শত শত নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার ও আটক করছে। একজন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। কয়েকজন সাংবাদিক সহ আহত হয়েছেন ৪১ জন। বিএনপি বলে আসছে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ার পূর্ব পর্যন্ত তাদের মহাসমাবেশ ছিল শান্তিপূর্ণ। কিন্তু ক্ষমতাসীন দল বলছে, ‘বিএনপি-জামায়াতে ইসলামী হলো সন্ত্রাসী। বিএনপি হলো একটি সন্ত্রাসী দল, তা আরও একবার প্রমাণিত হয়েছে’। 

বিরোধী দলের বহু নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিএনপি অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে যে, যদি প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ না করেন এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করা না হয়, তাহলে ২০১৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করবে তারা। নির্বাচনে প্রায় এক দশক নিষিদ্ধ থাকার পর গত জুনে এই দাবি প্রথম উত্থাপন করে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইসলামপন্থি দল জামায়াতে ইসলামী। 

কিন্তু ২০১১ সালে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট সাংবিধানিক বিষয়ে একটি ডিক্রি জারি করেন। তাতে বলা হয়, পার্লামেন্ট নির্বাচন তদারকির জন্য ক্ষমতার মেয়াদ শেষে একটি নির্বাচিত সরকার অনির্বাচিত একটি পক্ষপাতহীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা বেআইনি। 
তা সত্ত্বেও বিএনপি দাবি করছে বর্তমান সংবিধানের কাঠামোর মধ্যে থেকেই একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করার সুযোগ আছে। তবে শেখ হাসিনার সরকার একে অসাংবিধানিক বলে অব্যাহতভাবে বলে আসছে। 

পুরো উপমহাদেশের মধ্যে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ সংক্রান্ত আইন করা হয়েছে। এর ফলে এই কমিশন অধিক পক্ষপাতহীনভাবে কাজ করতে সক্ষম। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গণতান্ত্রিক নির্বাচনকে নিশ্চিত করতে বেশ কিছু আইনগত প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। এর মধ্যে আছে পার্লামেন্ট ইলেকশন (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) রুলস ২০১৮, ডিলিমিটেশন অব কনস্টিটিউয়েন্সিস অ্যাক্ট ২০২১ এবং চিফ ইলেকশন কমিশনার ও ইলেকশন কমিশনার্স অ্যাপয়েন্টমেন্ট অ্যাক্ট ২০২২। নির্বাচনকে অধিক সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক এবং বিশ্বাসযোগ্য করতে সংশোধন করা হয়েছে কনডাক্ট রুলস ফর পলিটিক্যাল পার্টিস অ্যান্ড ক্যান্ডিডেটস ২০০৮ এবং ইলেকশন কনডাক্ট রুলস ২০০৮। 

নির্বাচন বর্জন করা হতে পারে এমন সতর্কতা সত্ত্বেও সম্ভবত এই আইনি পদক্ষেপের কারণেই বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে পরপর তিনবার বিজয়ী হওয়ার জন্য ক্ষমতাসীন দলে আশাবাদ দেখা দিয়েছে। এতে ক্ষমতাসীন দল ও নির্বাচন কমিশনের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি হয়েছে নির্বাচন অনুষ্ঠানে।  নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী শিডিউলের বিস্তারিত ঘোষণা করেছে। তারা ৬৬ জন রিটার্নি অফিসার এবং ৫৯২ জন সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ চূড়ান্ত করেছে। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ ছিল ৩০শে নভেম্বর। ১ থেকে ৪ ডিসেম্বরের মধ্যে বৈধ প্রার্থী বাছাই করা হয়েছে। তারা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে পারবেন এ মাসের ১৭ তারিখ পর্যন্ত। ১৮ই ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে। তারপর ৫ই জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারণা চালানো যাবে। দেশজুড়ে স্থাপিত ৪২ হাজার ভোটকেন্দ্র এবং দুই লাখ ৬২ হাজার বুথে মুক্ত পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আওয়াল। তিনি আরও বলেছেন, স্বচ্ছতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নির্বাচনের জন্য দায়বদ্ধ এসব প্রতিষ্ঠানের আশ্বাস অবশ্যই আশাবাদী করে, কিন্তু মাঠপর্যায়ে যে অস্থির পরিবেশ তা এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সন্দেহাতীত নয়। 

আওয়ামী লীগ দেশের ভিতরে রাজনৈতিক ঘূর্ণিচক্র সত্ত্বেও পরিস্থিতিকে শান্ত দেখানোর চেষ্টা করলেও আন্তর্জাতিক গতিবিধি তাদের কপালে চিন্তার ভাজ আরও গভীর করতে পারে। ৩১শে অক্টোবর জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের অফিস থেকে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে চলমান প্রতিবাদবিক্ষোভের সময় ধারাবাহিক সহিংস ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। দেশ যেহেতু একটি নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তাই আমরা সব রাজনৈতিক পক্ষের প্রতি আহ্বান জানাই এটা পরিষ্কার করতে যে, এসব সহিংসতা অগ্রহণযোগ্য। একইসঙ্গে সহিংসতা উস্কে দেয় এমন বক্তব্য বিবৃতি, কর্মকাণ্ড এড়িয়ে চলার আহ্বান জানাই। ওদিকে ডেমোক্রেসি সামিটে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানায়নি যুক্তরাষ্ট্র। উপরন্তু বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী অথবা জড়িত বলে যাকেই সন্দেহ করা হবে, তার বিরুদ্ধেই ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়ার সর্বশেষ পদক্ষেপ ঘোষণা করে তারা। 

বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় অংশীদারের অন্যতম যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধুত্বপূর্ণ উপায়ে এখানে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন নিশ্চিত করার বিষয়ে অগ্রাধিকার দিয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে র‌্যাবের সাবেক ও বর্তমান উচ্চ পর্যায়ের সাতজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য ২০২১ সালে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিএনপির নিখোঁজ নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের পরিবার সহ অপহরণের শিকার পরিবারগুলোর সঙ্গে মিটিং করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। 
সম্প্রতি ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ঘোষণা করেছে বাজেট বিষয়ক বিধিনিষেধ এবং ‘প্রয়োজনীয় পরিবেশের’ অনুপস্থিতির কারণে বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে পর্যবেক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ টিম পাঠাবে না। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের এই ঘোষণা বিরোধীদের দাবিকে আরও বৈধতা দিয়েছে। তাহলো নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। এখানে এটা উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্য হলো যুক্তরাষ্ট্র। এ খাতে মোট রপ্তানির শতকরা ২১.৫০ ভাগ যায় যুক্তরাষ্ট্রে। এ খাতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য হলো ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। বাংলাদেশের নির্বাচনী পরিবেশের সঙ্গে এই দুটি পক্ষের অসন্তোষের বিষয়টি আমলে নিয়ে বলা যায়- নির্বাচনের পরে যদি ক্ষমতাসীন দল ক্ষমতায় অব্যাহত থাকে অথবা ক্ষমতার অদলবদল হয় তাহলে বাণিজ্যিক গতিশীলতায় কি প্রভাব ফেলে তা দেখার বিষয়। 

পশ্চিমাদের তুলনায় এশিয়ার শক্তি চীন এবং ভারত যথাক্রমে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং দ্বিতীয় সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। তারা ঢাকার নির্বাচনে তাদের প্রতিক্রিয়া দেয়া থেকে অধিক হারে বিরত থাকছে। তারা যখন বলছে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়, তখন চীন বলছে বাইরের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারকে তারা সমর্থন করবে। ভারত মনে করছে সরকারের ওপর খুব বেশি চাপ দিলে তাতে বিরোধীদের মধ্য থেকে উগ্রপন্থিরা শক্তিশালী হবে। তারা যুক্তরাষ্ট্রকেও একই অনুরোধ করেছে যাতে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ঠিক থাকে। সবচেয়ে দীর্ঘ সীমান্ত আছে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের। বাংলাদেশে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার প্রশংসা করে ভারত। এটা ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে স্থিতিশীলতা আনতে ব্যাপকভাবে অবদান রেখেছে। তাই বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা রাখে ভারত। তাই বলেছে, এটা বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়। 

বাংলাদেশের দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার মধ্যে স্থল সংযুক্তি থাকায় অবস্থানগত সুবিধা এবং বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থান হওয়ার কারণে বহু ইন্দো-প্যাসিফিক দেশের কাছে বাংলাদেশ একটি বিশ্বাসযোগ্য অংশীদার। তাই বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এর আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব বাকি ইন্দো-প্যাসিফিকের জন্য মঙ্গলজনক নয়।     

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor