বাংলাদেশে পপ্সিকল নেই, আছে ফ্রুটসিকল
শুধু তাজা মৌসুমী ফল দিয়েই এই আইসপপের যাত্রা শুরু। কিন্তু এতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় শীতকালীন ফল। গরমের সময়ে চারপাশ ভরে ওঠে আম, লিচু, তরমুজ, আনারস সহ নানা জাতের ফলের মিষ্টি ঘ্রাণে। কিন্তু শীতকালে কমলা ছাড়া তেমন কোনো ফল পাওয়া যায় না যা দিয়ে পপ্সিকল বানানো যায়। তাই শীতকালের ঠাণ্ডা আবহাওয়ার জন্য সেসময় বেশ কিছু ডেইরি আইটেম, কফি, মাইলো, চা-য়ের মতো কিছু পপ্সিকল বানানো হয়। যেমন এরমধ্যে আছে, লেমোনেড টি, ব্ল্যাক টি, এসপ্রেসো ইত্যাদি। তবে বড়দের পছন্দ বেশি কাঁচা আমের পপ্সিকল আর ছোটোদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে মাইলো এবং অরেঞ্জ ফ্লেভারের পপ্সিকল।
১৯০৫ সালের কথা। যুক্তরাজ্যের ক্যালিফোর্নিয়ার সানফ্রান্সিসকো শহরে বাস করতো ফ্রাঙ্ক এপারসন নামে এক কিশোর। এক সন্ধ্যায় সে এক কাণ্ড করে বসলো। সারাদিনের খেলাধুলা শেষে এপারসন একটি পাত্র নিয়ে, তাতে ঢেলে দিলো কিছু চিনিযুক্ত গুঁড়ো সোডা আর পানি। মিশ্রণটিকে নাড়াবার জন্য একটি কাঠের নড়িও নিলো। কিন্তু বেখেয়ালবশত মিশ্রণটিকে ওভাবে রেখে দিয়েই অন্যকাজে ব্যস্ত হয়ে যায় সে। এগারো বছর বয়সী এপারসন ভুলেই গিয়েছিল সোডামিশ্রিত পানির কথা। তখন ছিল শীতকাল। শীতের কনকনে ঠাণ্ডার মধ্যে সারারাত বাইরে ছিল সে পাত্রটি। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে এপারসন দেখে, তার করা সে তরল মিশ্রণ একটি ‘আইসিকল’ হয়ে গেছে। যদিও নিজের অসাবধানতার জন্য এমনটি হয়েছে, কিন্তু এপারসন তা দেখে দুঃখিত হলো না। বরং খুব কৌতূহল বোধ করলো। আগ্রহ থেকে আইসিকলটিকে সে একটু চেটে দেখলো- এ তো দারুণ! এভাবে নিজের অজান্তেই সে বানিয়ে ফেললো একটি মজাদার আইটেম!
এপারসন নতুন এ খাবারটির নাম দিলো, এপ্সিকল। এপারসনের নাম আর আইসিকল থেকে নাম দেওয়া হলো ‘এপ্সিকল’। একইভাবে আরও কয়েকটি বানিয়ে প্রতিবেশী বন্ধুদেরও খাওয়ালো তখন এপারসন। তারাও প্রশংসা করল খুব। এরপর সে সিদ্ধান্ত নিলো, এই জিনিস বিক্রি করা শুরু করবে। এভাবেই শুরু হলো নেপচুন বিচে তার প্রথম বিক্রি। একপর্যায়ে এই ব্যবসা বড় হয়ে যায়। তখন তার সন্তানেরা নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম দেয়, ‘পপ্সিকল’।
বাংলাদেশে পপ্সিকল নেই, তবে ফ্রুটসিকল আছে
বাংলাদেশে পপ্সিকলের কোনো শাখা বা দোকান নেই। পপ্সিকলের আদলে সৈয়দা শারমিন আহমেদের হাত ধরে শুরু হয় ফ্রুটসিকল-এর। এর শুরুটা গতবছর হলেও এটি সম্পূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে এ বছর ফেব্রুয়ারী থেকে। তবে সৈয়দা শারমিন পপ্সিকল নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন করোনার সময় থেকেই।
করোনাকালে যখন সবাই বাসায় বন্দি তখন পারিবারিক পরিসরেই এই পপ্সিকল বানানো শুরু করেন প্রথম। মৌসুমী ফল অনুযায়ী বাসায় নিজের হাতেই তখন তিনি বানাতেন এসব পপ্সিকল। পরিবার থেকে উৎসাহ পেলে প্রতিবেশীদেরও বানিয়ে খাওয়ানো শুরু করেন তিনি। তখন কেবল চারটি ফলের পপ্সিকল বানাতেন তিনি। তরমুজ, আম, আনারস আর কমলা ফলের। একপর্যায়ে দেখলেন, পরিবার ও প্রতিবেশীদের কাছ থেকে অনেক চাহিদা এবং উৎসাহ পাচ্ছেন। তারাই একসময় তাকে বুদ্ধি দিলেন এই আইটেমটিকে ব্যবসায়িক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার।
কেন শুরু করেছিলেন
সৈয়দা শারমিন আহমেদ নিজে একজন সামাজিক উদ্যোক্তা, যিনি সবসময় চেয়েছেন বাংলাদেশের তরুণদের জন্য কিছু করতে। তিনি নিজেও একজন মা। তাই আশেপাশের এসব অস্বাস্থ্যকর খাবারের মাঝে অনেকদিন ধরেই ভাবছিলেন বাচ্চাদের জন্য এরকম কী বানানো যায় যেটা তাদের স্বাস্থ্যের পক্ষেও ক্ষতিকর হবেনা, আবার বাচ্চারাও খেতেও চাইবে। এ নিয়ে অন্যান্য বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলে এবং নিজেও অনেক ঘেঁটেঘুটে বুঝতে পারলেন, বাচ্চাদের যা খাওয়াতে চান এবং বাজারে যে মানের আইটেম পাওয়া যায় তারমধ্যে তফাৎটুকু অনেক।
তাছাড়া, বুড়োগুঁড়ো সবার কাছেই আইসক্রিম এক ভালোবাসার নাম। আইসক্রিম পছন্দ করেনা এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। আর শিশু বা তরুণ হলে তো কথাই নেই। আর এদেশের আবহাওয়া এমন যে, আইসক্রিম বা ললি জাতীয় জিনিস প্রায় সারাবছরই খাওয়া যায়। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে আইসক্রিমের চেয়ে ললির মতো আইসপপগুলোই টানে বেশি আমাদের। কিন্তু বাজারে ললি নামক যে আইসক্রিম পাওয়া যায়, তার গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। প্রায়ই খবরে দেখা যায়, এসব আইসক্রিমের নকল কারখানার বিরুদ্ধে মামলা, জরিমানা হচ্ছে। তাই ছোট- বড় সব শিশুদের কথা মাথায় রেখেই সৈয়দা শারমিন আহমেদ শুরু করেন ঘরে পপ্সিকল বানানো। এদেশের আবহাওয়া এবং বাজারে মানহীন ভেজালমিশ্রিত সব খাদ্যের মাঝেও যে স্বাস্থ্যকর, কার্বন ফ্রুটপ্রিন্ট –কেমিক্যালহীন, সম্পূর্ণ হাতে তৈরি আইসক্রিম বানিয়ে বাজার ধরে রাখা যায় সেটিই তিনি দেখাতে চান।
সবার উৎসাহ থেকেই পপ্সিকলের ব্যবসায় আসেন
শারমিন বলেন, ‘করোনার সময় বাসায় অনেক অবসর পেতাম। তাই তখন নিজের বাচ্চার কথা ভেবেই বানাতে শুরু করি। আস্তে আস্তে দেখলাম পরিচিত অন্যান্য বাচ্চারা, এমনকি বড়রাও পছন্দ করতে শুরু করলো।’
প্রথমদিকে বিল্ডিং থেকেই অর্ডার আসতো। বিল্ডিংয়ের ছোটোখাটো বিভিন্ন ঘরোয়া আয়োজনের জন্য ডাক পড়লো তার বানানো পপ্সিকলের। এরপর শারমিন ফেবুকে পেজ খুললেন, সেখানে অর্ডার আসতে শুরু করলো। আশেপাশের এলাকাগুলো থেকেই অর্ডার আসতে থাকলো। ধীরে ধীরে শারমিন বুঝতে পারলেন, পপ্সিকলের চাহিদা আছে, মানুষ পছন্দ করছে। একপর্যায়ে দেখলেন, ঘরে বসেই মাসে বেশ ভালো একটি পরিমাণ উঠে আসছে তার। তখন একে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দাঁড় করানোর কথা ভাবলেন শারমিন। এর জন্য করোনার পর কয়েকমাস কিছুটা সময়ও নিলেন। সে সময়ের মধ্যে জনবল, বাইরে থেকে মেশিন কিনে আনা, একটা আউটলেট ঠিক করা, এসবকিছু শুরু করলেন।
হোমমেড নয়, তবে হ্যান্ডমেড
গতবছর থেকে হোম ডেলিভারি শুরু হলেও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায় এবছর আগস্টের দিকে। গুলশান-২ এর শেফস টেবিলের ফুটকোর্টেই এর আউটলেট আছে। এছাড়া গুলশান ইউনিমার্ট এবং ধানমন্ডি ইউনিমার্টেও ফ্রুটসিকলের আউটলেট রয়েছে। সপ্তাহের কোনদিন কোন ফলের পপ্সিকল তৈরি করা হবে তা আগেই ঠিক করে রাখেন শারমিন। যেন তাজা ফলের পপ্সিকল দিতে পারেন গ্রাহকদের। তাই যেদিন যে ফলের পপ্সিকল বানানো হবে, সেদিন সকালে বাজার থেকে টাটকা সে ফলগুলো কিনে আনা হয়। শুধু চিনি, লবণ বা শুকনো উপকরণগুলো সাপ্তাহিক ভিত্তিতে বাজার করা হয়।
করোনার সময় একদম নিজ হাতেই তৈরি করতেন শারমিন। তবে বিক্রি শুরু করার পর যখন সাড়া আসতে থাকলো, তখন চায়না থেকে পপ্সিকল বানানোর মেশিন এনে বড় পরিসরে কাজ শুরু করেন। শারমিন আহমেদ বলেন, ‘এখন তো আমাদের পরিসর বেড়েছে। তাই আমাদের আইটেমগুলো আর হোমমেড পর্যায়ে রাখা যাচ্ছে না, তবে আমাদের কোনো ফ্যাক্টরি নেই, এগুলো সব হ্যান্ডমেড। অটোমেটিক মেশিন বলতে চায়না থেকে আনা পপ্সিকল মেশিনটি ছাড়া বাকি সব ম্যানুয়ালি হচ্ছে।’
যেন কোনো ভেজাল এবং বাড়তি ফ্লেভার যুক্ত করতে না হয় সেজন্য শুধু তাজা মৌসুমী ফল দিয়েই এই আইসপপের যাত্রা শুরু। কিন্তু এতে বাধা হয়ে দাঁড়ালো শীতকালীন ফল। আমাদের দেশে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসেই ফলের আগমন ঘটে। এদেশে গ্রীষ্মকাল মানেই মুখরোচক ফলের সমাহার। স্বাদের দিক থেকেও এসব ফল যেমন অতুলনীয় তেমনি গুণের দিক থেকেও। তাই গরমের এ সময়ে চারপাশ ভরে ওঠে আম, লিচু, তরমুজ, আনারস সহ নানা জাতের ফলের মিষ্টি ঘ্রাণে। কিন্তু শীতকালে কমলা ছাড়া তেমন কোনো ফল পাওয়া যায় না যা দিয়ে পপ্সিকল বানানো যায়। তাছাড়া শীতকালের ঠাণ্ডা আবহাওয়ার জন্য সেসময় বেশ কিছু ডেইরি আইটেম, কফি, মাইলো, চা-য়ের মতো কিছু পপ্সিকল বানানো হয়। যেমন এরমধ্যে আছে, লেমোনেড টি, ব্ল্যাক টি, এসপ্রেসো ইত্যাদি। তবে বড়দের পছন্দ বেশি কাঁচা আমের পপ্সিকল আর ছোটোদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে মাইলো এবং অরেঞ্জ ফ্লেভারের পপ্সিকল।
শারমিন জানান, ‘শীতের সময় বেভারেজ আইটেমগুলো রাখি। যেমন, বাজারে এখন কাঁচা আম শেষের দিকে, আমরা আর এটা বানাব না, এর বদলে কোল্ড কফি নিয়ে আসব। সামনে শীত, আর শীতে কফি অনেক টানে মানুষকে। এছাড়া শীতে বাটারস্কচ, বিভিন্ন ক্রিমি টাইপের ফ্লেভার রাখি শীতকাল বলে ফলের চেয়ে বেশি এ ধরনের ডেইরি বা কফি, চায়ের মতো আইটেমগুলো অনেকেই পছন্দ করে। তবে ডেইরি আইটেমের মধ্যে মাইলোটা আমরা গরমের দিনেও রাখি।’
সর্বনিম্ন ১৮০ থেকে সর্বোচ্চ ২৩০ টাকা
সাধারণ ললির বর্তমান বাজারমূল্য এখন ২০-২৫ টাকা। যা দামে কম হলেও, মান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। সেখানে ১৮০ থেকে ২৩০ এরমধ্যেই মিলবে ফ্রুটসিকলের এসব পপ্সিকল। যা পুরোপুরি হাতে তৈরি এবং কোনোপ্রকার ক্যামিক্যাল এবং কার্বন ফ্রুটপ্রিন্ট নেই এতে। শারমিন আহমেদ বুঝতে চেয়েছিলেন এদেশের মানুষের মধ্যে পপ্সিকলের ধারণাটুকু বা চাহিদা কেমন। পরিচিতজনদের মাঝে পরীক্ষা করে দেখলেন, এর চাহিদা আছে, স্বাস্থ্যসম্মত হওয়ায় পছন্দও করছে সকলে। বর্তমানে তাদের কর্মী সংখ্যা ছয়। দিনে আইসক্রিম বানানো হচ্ছে দুইশোর মতো। খুব ছোটো পরিসরেই ইতোমধ্যে অনেকের প্রিয় জায়গা হয়ে উঠেছে ফ্রুটসিকল। শারমিন জানান, দিনে প্রডাকশন হয় দুইশোর মতো। বিক্রি হয় দেড়শোর মতো। ছুটির দিনে আউটলেটেই ভিড় হয় বেশি, তবে অন্যান্য দিনে অর্ডার আসে বেশি। নিজস্ব ফেসবুক পেজে মেসেঞ্জার এবং হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে অর্ডার নেওয়া হচ্ছে এখনও। ভবিষ্যতে অ্যাপভিত্তিক ডেলিভারি ব্যবস্থা করার ইচ্ছে শারমিনের। সেইসাথে ইচ্ছে একসময় গলির মুদি দোকানগুলোতেও তাদের তৈরি হ্যান্ডমেড পপ্সিকলগুলো পৌঁছে দেবার।
ফ্রুটসিকলের আগে ২০১৬ সালে শারমিন শুরু করেন ক্লে স্টেশনের যাত্রা। যেখানে বসে খালি হাতেই মেশিন বা চাকা ছাড়া নিজের মনের মতন বানানো যাবে মাটির বিভিন্ন জিনিস, তা হতে পারে যেকোনো পুতুল, খেলনা, ম্যুরাল বা ভাস্কর্য। শিশু তরুণদের মাঝে সৃজনশীলতা, মৃৎশিল্পের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতেই ক্লে স্টেশনের পথচলা। বর্তমানে এটি গুলশান দুইয়ে শেফস টেবিলের পাশেই অবস্থিত।
বিয়ে-হলুদ, কর্পোরেট বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য অর্ডার আসছে
করোনার সময় যখন একদম ঘরোয়াভাবে শুরু করেন তখন প্রতিবেশীদের কাছ থেকে অনেক সাড়া পেতেন। একপর্যায়ে তাদের কাছ থেকেই ৩০-৪০ জনের জন্যছোটোখাটো বিভিন্ন পারিবারিক ঘরোয়া অনুষ্ঠানের জন্য অর্ডার আসা শুরু করলো। একেবারে বড় পরিসরে আনুষ্ঠানিকভাবে অর্ডার আসে ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে। বিয়ে-হলুদ, কর্পোরেট বিভিন্ন প্রোগ্রাম, ব্যংক এমনকি সারাদিনের জন্য ঢাকার অদূরে রিসোর্টগুলোতেও এখন ফ্রুটসিকল ডেলিভারি দিচ্ছে। সেক্ষেত্রে অর্ডার করতে হয় অন্তত ৭-১০ দিন আগে। তখন এগুলো আগেই বানিয়ে ফ্রিজ করে রাখা হয় এবং ডেলিভারির সময় সাথে একটি ফ্রিজিং বক্স দেওয়া হয় যেন তিন-চার ঘণ্টা ঠান্ডা থাকে। অনুষ্ঠান শেষে বক্সগুলো আবার নিয়ে আসেন। আবার সারাদিনব্যপী কোনো অনুষ্ঠানের জন্যও চার্জার সহ ফ্রিজিং ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১২৫০ জনের অর্ডার নিয়ে কাজ করেছে ফ্রুটসিকল।
ফ্রোজেন বা হিমায়িত ডেজার্টের (মিষ্টান্ন) প্রতি মানুষের চাহিদা নতুন কিছু নয়। আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট মধু মাখানো বরফ খেতে পছন্দ করতেন। বাইবেলে আছে, রাজা সলোমন বরফ কুচি মেশানো পানীয়ের ভক্ত ছিলেন। প্রাচীন রোমান ক্রীতদাসদের পাহাড়ে পাঠানো হত বরফের টুকরো কুড়িয়ে আনতে। যা পরবর্তীতে চূর্ণ করে ফল ও মশলার সিরাপ দিয়ে পরিবেশন করা হতো। ভেনেসীয় পর্যটক মার্কো পোলো যখন কুবলাই খানের চীনা আদালত ভ্রমণে গিয়েছিলেন, সেখানে তাকে খেতে দেওয়া হয় বরফমিশ্রিত একধরনের শরবত। সতেরো শতকে ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম চার্লসের খাবার টেবিলে ক্রিম আইস উপস্থিত থাকত নিয়মিতভাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম দিকের ইতিহাসেও পাওয়া যায় এ ধরনের খাবারের উপস্থিতি। টমাস জেফারসন (যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় প্রেসিডেন্ট) মন্টিসেলোতে অনেক দর্শককে বরফযুক্ত শরবত এবং মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করেছিলেন। সুতরাং হিমায়িত মিষ্টি খাবারের প্রতি মানুষের চাহিদা অনেক আগে থেকেই। আর আমাদের দেশে যেভাবে দিনদিন গরমের মাত্রা বাড়ছে তাতে আইসক্রিমের চাহিদা দিনদিন বাড়বে বৈ কমবে না। সেই সাথে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এবং শহর এলাকার বিস্তৃতি ইত্যাদি নানা কারণে দিনদিন আমাদের দেশে আইসক্রিমের চাহিদা বেড়ে চলছে। আগে আইসক্রিমের চাহিদা ছিল কেবল ছোটোদের মাঝেই। আর এখন ছোটো-বড় সকলের কাছেই আইসক্রিম এক ভালো লাগার নাম। আর সেটি যদি হয় ভেজালজীন তাজা মৌসুমী ফলের তৈরি পপ্সিকল তবে তো কথাই নেই…।