Hot

বাংলাদেশে ৩৩৯৯ অবৈধ ভারতীয়র বসবাস

মেয়াদোত্তীর্ণ ভিসাসহ অবৈধভাবে দেশে অবস্থান করছেন ৬ হাজার ৯৭ জন বিদেশি নাগরিক। তাদের মধ্যে শীর্ষ পাঁচ দেশ হলো– ভারত, চীন, নেপাল, পাকিস্তান ও ফিলিপাইন। এখন অবৈধভাবে বসবাসকারীর মধ্যে ভারতীয়র সংখ্যা ৩ হাজার ৩৯৯, চীনের ১ হাজার ৯৯, নেপালের ৩৭৬, পাকিস্তানের ১৪০ ও ফিলিপাইনের ১৩১ জন।

তিন মাসে আগেও দেশে অবৈধ বিদেশি নাগরিক ছিল ৪৯ হাজার ২৬৫ জন। সম্প্রতি নিয়মবহির্ভূতভাবে যেসব নাগরিক দেশে অবস্থান করছেন, তাদের বিরুদ্ধে অভিযানসহ নানামুখী তৎপরতা চালানো হয়। এতে গত ১৮ নভেম্বর থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত অবৈধ বিদেশি নাগরিক কমেছে ৪৩ হাজার ১৬৮ জন। এ ছাড়া গত ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিন মাসে জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৪০ কোটি ২৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। 

পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) একটি সূত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বর্তমানে দেশে বৈধভাবে বিদেশি নাগরিক বসবাস করছেন ৮৩ হাজার ৬৮৬ জন। তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ১৬ হাজার ৮৬৬ জন, ভারতীয় ১৪ হাজার ২৭৭, যুক্তরাজ্যের ১০ হাজার ৫৮২, চীনের ৮ হাজার ৬৪ ও কানাডার ৬ হাজার ৯৩ জন। এর বাইরে আরও অনেক দেশের নাগরিকরা বৈধভাবে দেশে বসবাস করছেন। 

গত ৮ ডিসেম্বর বৈধ ভিসা ছাড়া বাংলাদেশে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকদের বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে ভিসার মেয়াদ না বাড়ালে বা নবায়ন না করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করা হয়।

এরপর ২৬ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশে অবৈধভাবে অবস্থানকারী বিদেশি নাগরিকদের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে বৈধতা অর্জনের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। অন্যথায় অবৈধভাবে অবস্থানকারী ব্যক্তি ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনেক বিদেশি নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন বা কর্মরত। অবৈধভাবে অবস্থানরত বা কর্মরত ভিনদেশি নাগরিকদের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে বাংলাদেশে অবস্থান করার বা কর্মরত থাকার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ বৈধতা অর্জনের জন্য বিজ্ঞপ্তিতে অনুরোধ করা হয়। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সব দপ্তর বা প্রতিষ্ঠানকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করার জন্যও বিজ্ঞপ্তিতে জানায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। 

সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক অনুষ্ঠান শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, কোনো বিদেশি নাগরিককে অবৈধভাবে বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না। অনেক দেশের নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন বলে তথ্য রয়েছে।

গত বছরের ২৮ মে দেশে অবস্থানরত বৈধ ও অবৈধ বিদেশি কর্মীর প্রকৃত সংখ্যা অনুসন্ধানের মাধ্যমে নিরূপণ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এসব বিদেশি কর্মী কীভাবে ও কোন চ্যানেলের মাধ্যমে তাদের অর্থ দেশের বাইরে পাঠান, সে বিষয়েও অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। 

এসবির একজন কর্মকর্তা সমকালকে জানান, গত বছরের ১৮ নভেম্বর থেকে দেশে বসবাস করা অবৈধ বিদেশি নাগরিক শনাক্ত ও তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে নানা কার্যক্রম শুরু হয়। অবৈধ বিদেশি নাগরিক ছিল ৪৯ হাজার ২৬৫ জন। বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে দেশে অবস্থান করে ১ লাখ ১১ হাজার ৫৮১ জন বিদেশি নাগরিক। এরপর অবৈধ নাগরিকদের মধ্যে কারা কোন প্রক্রিয়ায় অবস্থান করছেন, সেটা শনাক্ত করতে তদন্ত শুরু হয়। ঢাকা ও বাইরের জেলাকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে একাধিক কর্মকর্তার সমন্বয়ে টিম করা হয়। অনেকের বাসায় সশরীরে হাজির হয়ে অনেকের তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। বসবাসকারীদের ঠিকানায় তথ্য নেওয়া হয়েছে ১২ হাজার ৭৬৩ জনের। একই ব্যক্তির একাধিক তথ্য রয়েছে ২৩৯ জনের। 

এই তৎপরতা শুরুর পর দেশ ত্যাগ করেছেন ৩ হাজার ১২৫ জন। মারা যাওয়ার তথ্য মিলেছে ৩০ জনের। ভুল ঠিকানা ব্যবহার করেছেন এমন বিদেশি নাগরিকের সংখ্যা ১ হাজার ৮৪৭। সঠিক ঠিকানায় রয়েছেন, তবে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে এই সংখ্যা ৪৮১। 

পুলিশের একজন পদস্থ কর্মকর্তা জানান, বেশ কয়েক ধরনের ভিসা নিয়ে বিদেশি নাগরিকরা বাংলাদেশে আসতে পারেন। কর্মসংস্থান, ব্যবসা ও বিনিয়োগ ভিসা এবং পর্যটক ভিসা রয়েছে। অনেক বিদেশি নাগরিকের তথ্য হালনাগাদ ছিল না। আবার অনেকে বাংলাদেশে অবস্থান করেও ভিসার মেয়াদ বাড়াননি। আবার কেউ কেউ নতুনভাবে ভিসা নিলেও তার ডেটা এন্ট্রি করা হয়নি। ইমিগ্রেশন সিস্টেমে নতুন পাসপোর্ট ও ভিসা গ্রহণের তথ্য ছিল না। আবার কেউ কেউ একধরনের ভিসায় দেশে পরে ভিসার শ্রেণি পরিবর্তন করেছেন। তবে পরিবর্তিত ভিসার তথ্য আপডেট না করায় তিনি অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত ছিলেন। আবার ৫ আগস্টের পর অনেক ভারতীয় নাগরিক স্থলবন্দর ও সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে দেশ ত্যাগ করেন। আবার ট্যুরিস্ট ও বিজনেস ভিসায় অনেকে এসে স্টুডেন্ট ভিসা গ্রহণ করলেও সেই তথ্য ইমিগ্রেশনে আপডেপ ছিল না। এসব আপডেট করার কাজ চলছে। 

সংশ্লিষ্ট আরেক কর্মকর্তা জানান, যারা অবৈধভাবে দেশে অবস্থান করছেন, তাদের মধ্যে আরেকটি শ্রেণি রয়েছে। তারা মূলত অনেক বছর ধরে ভারত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে বসবাস করেছেন। সেখানে যে কোনোভাবে সেসব দেশের পাসপোর্টধারী হন। এরপর জীবনসায়াহ্নে তাদের কেউ কেউ বাংলাদেশে ফিরছেন। তারা ভিন্ন দেশের পাসপোর্ট নিয়ে ফিরলেও ফের দেশ ছাড়ছেন না। তাই এসব পাসপোর্টধারী অবৈধ হয়ে যাচ্ছেন। 

ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, অবৈধভাবে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হলে অনেক জরিমানা দিয়েছেন। গত বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিন মাসে অবৈধ নাগরিকদের কাছ থেকে ৪০ কোটি ২৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে। গত ডিসেম্বরে আদায় হয়েছে ৫ কোটি ২৬ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। জানুয়ারি মাসে ৩২ কোটি ৫৩ লাখ ৪৮ হাজার ৬০১ টাকা এবং ফেব্রুয়ারিতে ২ কোটি ৪৭ লাখ ৫৯ হাজার টাকা আদায় হয়েছে। এ ছাড়া অবৈধ বিদেশি নাগরিকদের অনেকে আয়করের আওতায় এসেছেন। 

অবৈধভাবে দেশে অবস্থানকারীদের বিরুদ্ধে ‘ফরেনার্স অ্যাক্ট, ১৯৬৪’র অধীনে সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা করার অনুমোদন দিতে পারেন এসবির অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক। অনেকের ভাষ্য, আইনি দুর্বল কাঠামোর সুযোগ নিচ্ছেন অনেক বিদেশি নাগরিক। আবার মেয়াদোত্তীর্ণ ভিসাধারীরা নানা অপরাধে জড়াচ্ছেন। তারা প্রতারণা, জালিয়াতি, মাদক পাচার, মুদ্রা লেনদেন, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা, স্বর্ণ চোরাচালান, ক্যাসিনোর মতো অপরাধে সম্পৃক্ত হচ্ছেন। অনেকে আবার অবৈধ চ্যানেলে নিজ দেশে অর্থ পাচার করেন বলেও ধারণা করা হয়। 

বাংলাদেশে প্রবেশের ক্ষেত্রে ৩৩ ধরনের ভিসা দেওয়া হয়। তবে অনেকে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও অবস্থান করছেন। বিশেষ করে ‘ভিসা অন অ্যারাইভাল’ এবং ব্যবসায়িক ভিসা ব্যবহারকারীদের মধ্যে এ প্রবণতা বেশি। ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৪৫ হাজার ভারতীয় এবং প্রায় ১০ হাজার চীনা নাগরিক বাংলাদেশে বসবাস করেছেন। 

ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর (ডিআইপি) তথ্যমতে, আগে ভিসার মেয়াদ শেষে দিনে জরিমানা করা হতো ২০০ টাকা এবং মাসিক ১০ হাজার টাকা। তিন মাস পর্যন্ত থাকার জন্য সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা। গত ডিসেম্বরে এটি সংশোধন করা হয়। এখন ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর প্রথম ১৫ দিনের জন্য জরিমানা এখন প্রতিদিন ১ হাজার টাকা। ১৫ দিন পর থেকে ৯০ দিন পর্যন্ত জরিমানা প্রতিদিন ২ হাজার টাকা। এরপর ৯১ দিন থেকে প্রতিদিনের জরিমানা ৩ হাজার টাকা।

পুলিশ সদরদপ্তরের মুখপাত্র এআইজি ইনামুল হক সাগর সমকালকে বলেন, অবৈধভাবে যেসব বিদেশি বসবাস করছেন, তাদের ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যেসব নির্দেশনা রয়েছে সেই আলোকে কার্যক্রম চলছে। এরই মধ্যে আমাদের অনেক অগ্রগতি হয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d