Bangladesh

বাংলাদেশ ইস্যু: যুক্তরাষ্ট্র তার সব উপায় অবলম্বন করবে

বাংলাদেশ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র তার উদ্দেশ্য সাধনের জন্য অব্যাহতভাবে সব রকম উপায় (টুলস) অবলম্বন করবে এবং সব পর্যায়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে তাদের উদ্বেগ তুলে ধরবে। যুক্তরাষ্ট্রের  পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেচার বিষয়ক ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ জি লেইডল এক চিঠির জবাবে একথা বলেছেন। ওদিকে এক্সে দেয়া এক পোস্টে সিনেট ফরেন রিলেশন্স কমিটি বলেছে, বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ঘনিষ্ঠ দৃষ্টি রাখছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার গণতান্ত্রিক অংশীদাররা। বাংলাদেশের জনগণ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিদার, যা হতে হবে স্বচ্ছ, শান্তিপূর্ণ, পক্ষপাতিত্বহীন এবং সব দলের জন্য উন্মুক্ত। সম্প্রতি বাংলাদেশের অবনতিশীল গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং আইনের শাসনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লু এবং গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং শ্রম বিষয়ক ব্যুরোর ভারপ্রাপ্ত সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এরিন বারক্লে’কে একটি চিঠি লিখেন মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য শেঠ মুলটন। তার উত্তর দিয়েছেন ফিলিপ জি. লেইডল। তার লেখা চিঠিতে বলা হয়, ঢাকা এবং ওয়াশিংটনে বাংলাদেশি সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকগুলোতে বাংলাদেশে মানবাধিকার, গণতন্ত্র, আইনের শাসন নিয়ে উদ্বেগ তুলে ধরেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা। এসব বৈঠকে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের গুরুত্ব জোর দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে। ১৪ই নভেম্বর লেখা চিঠিতে ফিলিপ জি লেইডল বলেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস প্রশাসনের শীর্ষ অগ্রাধিকারে রয়েছে বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারকে সমুন্নত রাখা। এতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র তার উদ্দেশ্য সাধনের সব হাতিয়ার (টুলস) অব্যাহতভাবে ব্যবহার করবে এবং সব পর্যায়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে তাদের উদ্বেগ তুলে ধরবে। 

এর আগে ডনাল্ড লু এবং এরিন বারক্লের কাছে লেখা চিঠিতে শেঠ মুলটন বলেন, বিশ্বজুড়ে কর্তৃত্ববাদের মুখে যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু গণতন্ত্রকে সমৃদ্ধ করতে চাইছে, তাই আমি আপনাদের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এসব ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা ও কূটনৈতিক ইস্যুকে অগ্রাধিকার দিতে।

বিজ্ঞাপন তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের অবনতিতে আমার উদ্বেগ তুলে ধরছি। ২০০৯ সালে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের আদর্শ ও নীতির হতাশাজনক ক্ষতি হয়েছে। বিচার বিভাগ ও নির্বাচনী প্রক্রিয়াসহ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সততার সঙ্গে দুর্নীতি ও জালিয়াতির আপস করা হয়েছে। বিরোধী কণ্ঠের বিরুদ্ধে নিষ্পেষণ, চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সের ক্ষয়, ব্যালটবাক্স ভর্তি করা এবং  ভোটারদের ভীতি প্রদর্শনসহ নির্বাচনী অনিয়মের অভিযোগ বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। মুলটন চিঠিতে আরও লিখেছেন- উপরন্তু ক্রমবর্ধমান বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, জোরপূর্বক গুম এবং নির্যাতনের ঘন ঘন রিপোর্টের মধ্যে বাংলাদেশে আইনের শাসনের পরিবেশের নাটকীয় অবনমন হয়েছে। বিরোধী দলকে দমন করা হচ্ছে। নিউ ইয়র্ক টাইমস সম্প্রতি রিপোর্ট করেছে যে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র অর্ধেকের বেশি- ২৫ লাখের বেশি সদস্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক মামলার মুখোমুখি। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিও খারাপ হয়েছে। মানবাধিকার এবং নাগরিক স্বাধীনতাকে উৎসাহী করতে গিয়ে হুমকি, হয়রানি এমনকি জেলের মুখোমুখি হচ্ছেন সাংবাদিকরা, অধিকারকর্মীরা এবং নাগরিক সমাজের সদস্যরা। ওই চিঠিতে তিনি আরও বলেন, জবাবদিহিতায় রয়েছেন মানবাধিকারকর্মী অধিকার’র আদিলুর রহমান খান ও নাসিরুদ্দিন এলান। তাদেরকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় দুই বছরের জেল দেয়া হয়। আদিলুর রহমান খান ও নাসিরুদ্দিন এলানের সঙ্গে সংহতি প্রকাশে নৈতিক বাধ্যবাধকতা আছে যুক্তরাষ্ট্রের। যারা সরকারের জবাবদিহিতা এবং  মৌলিক মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে কাজ করেন তাদের পাশেও থাকা উচিত। বাংলাদেশে যারাই নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবে তাদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে টার্গেটেড নিষেধাজ্ঞার এসব বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র যেসব জোরালো পদক্ষেপ নিয়েছে তাকে আমি অভিনন্দন জানাই। একজন অধিকারকর্মী বলেছেন, এই পদক্ষেপগুলো টনিকের মতো কাজ করেছে। তিনি বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার সময় গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারকে জোর দিয়ে তুলে ধরার আহ্বান জানান। এ ক্ষেত্রে অধিকার, গণতন্ত্র এবং বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় নাগরিক ‘স্পেসের’ বিষয়ে অগ্রাধিকার দেয়ার আহ্বান জানান। 

তার এ চিঠির জবাবে ভারপ্রাপ্ত সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ জি লেইডল লিখেছেন, এসব  ইস্যুকে অগ্রাধিকার দিয়ে শুধু এ বছরে বাংলাদেশি সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমরা বেশ  কয়েক দফা আলোচনা করেছি। এপ্রিলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন। এতে বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার নিয়ে আমাদের উদ্বেগ তুলে ধরা হয়েছে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে গুরুত্বে জোর দেয়া হয়েছে। জুলাই এবং সেপ্টেম্বর মাসে আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের সিনিয়র কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে উৎসাহী করতে, নাগরিক সমাজের জন্য স্থান সম্প্রসারণ করতে এবং বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে। তিনি আরও বলেছেন, ২২শে সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাজনৈতিক সহিংসতা কমাতে রাজনৈতিক স্বাধীনতার স্থানকে সম্প্রসারিত করতে গণতান্ত্রিক নির্বাচনে বাধাদানকারী আইনপ্রয়োগকারী, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের বিরুদ্ধে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে। উপরন্তু নির্বাচনে জালিয়াতি এবং হস্তক্ষেপের ক্ষেত্রে সুরক্ষার ভূমিকা রাখছে ভিসা নিষেধাজ্ঞা নীতি। ভারপ্রাপ্ত সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিলিপ জি লেইডল আরও লিখেছেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও নাগরিক সমাজের জন্য স্থান সংকুচিত হয়ে আসার ইস্যুতে দৃষ্টি রাখছে ইউএসএইড। একই সঙ্গে অন্য দাতা সংস্থার সহযোগিতায় দুর্নীতিবিরোধী উদ্যোগে এবং নাগরিক সমাজের প্রতি সমর্থন বিস্তৃত করা হচ্ছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নেতৃত্ব দুর্নীতিবিরোধী কর্মকাণ্ডে ৩ কোটি ১০ লাখ ডলারের তহবিল দিয়েছে ইউএসএইড ও বৃটেন। এর মধ্যে ইউএসএইড দিয়েছে এক কোটি ডলার এবং বাকি অর্থ দিয়েছে বৃটেন, সুইজারল্যান্ড, সুইডেন ও নেদারল্যান্ডস। তিনি আরও লিখেছেন, মানবাধিকারের পরিস্থিতি এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার অবস্থা মূল্যায়নের জন্য বার্ষিক ভিত্তিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মানবাধিকার বিষয়ক বার্ষিক কান্ট্রি রিপোর্ট প্রকাশ করছে। এক্ষেত্রে আমাদের দূতাবাস, বিশ্বাসযোগ্য এনজিও এবং মাঠপর্যায়ে আমাদের অংশীদারদের তথ্যের ভিত্তিতে এই রিপোর্ট করা হয়। মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘনিষ্ঠভাবে মনিটরিং করে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস এবং তার ওপর রিপোর্ট করে। একই সঙ্গে যখন সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের টার্গেট করা হয় অথবা হয়রানি করা হয়, তখন উদ্বেগ তুলে ধরা হয়। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে উৎসাহিত করতে কর্মসূচি, নাগরিক সমাজ এবং ধর্মীয় স্বাধীনতাকে শক্তিশালী করা, প্রান্তিক সম্প্রদায়ের সদস্যদের অধিকারের প্রতি সম্মান উৎসাহিত করতে, ন্যায়বিচার পাওয়া ও মানবাধিকার পাওয়া বিষয়ক কর্মসূচিতে আমরা অর্থ সহায়তা দিই। 

তিনি আরও লিখেছেন, উপরন্ত রাষ্ট্রদূত পিটার হাস্ নিয়মিতভাবে বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে প্রকাশ্যে উদ্বেগ তুলে ধরেন উচ্চপর্যায়ে এবং বিভিন্ন অংশীদারের কাছে। অধিকারের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে রায়ের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে ঢাকাস্থ দূতাবাস একটি বিবৃতি দিয়েছে। ১৫ই অক্টোবর আদিলুর রহমান খান এবং নাসিরউদ্দিন এলানকে ৩০ দিন জেলভোগের পর জামিনে মুক্তি দেয়া হয়েছে। এর একদিন পরেই তারা রাষ্ট্রদূত পিটার হাস্, সফররত ডেপুটি সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আখতারের আয়োজনে নাগরিক সমাজের একটি গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়েছেন। মানবাধিকার এবং আইনের শাসনের পক্ষে কাজ করা বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি সাহসী ব্যক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুরস্কার দিয়ে গত ১৮ মাসে তাদের স্বীকৃতি দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor