বাংলাদেশ প্রতিদিনকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন
গণতন্ত্র সুরক্ষায় একসঙ্গে কাজ করছি
জো বাইডেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রশ্নের লিখিত জবাব দিয়েছেন (ডানে)
রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ১২ কংগ্রেসম্যান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে বাংলাদেশ সম্পর্কে যে নোট দিয়েছেন, এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ প্রতিদিনের উত্তর আমেরিকা সংস্করণের নির্বাহী সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার গত মাসে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে একটি চিঠি দেন।
সেখানে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস দমনের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি-স্থিতি সুরক্ষায় শেখ হাসিনার দৃঢ়চেতা নেতৃত্বের প্রসঙ্গ ছাড়াও নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাংলাদেশকে উন্নয়নের মডেলে পরিণত করার পাশাপাশি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে সুসংহত ও আইনের শাসনের ক্ষেত্রে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করা হয়।
সামগ্রিক পরিস্থিতির আলোকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক অটুট রেখেই রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখার নীতিতে অবিচল রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ অবস্থায় মহল বিশেষের প্ররোচনায় মার্কিন কংগ্রেসম্যানরা বাংলাদেশের প্রকৃত পরিস্থিতি সম্পর্কে কোনো খোঁজ-খবর না নিয়ে একতরফা অভিযোগ উত্থাপনের মাধ্যমে প্রকারান্তরে জঙ্গিবাদকে উসকে দেওয়ার মতো আচরণ করছেন বলে বাইডেনকে অবহিত করা হয়।
বাংলাদেশি-আমেরিকানরাও কংগ্রেসম্যানদের নোটের ভাষায় খুশি হননি। যুক্তরাষ্ট্রের একজন সিনিয়র সিটিজেন ও গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে বাংলাদেশের বিষয়ে বাইডেন প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি তথা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে জানতে ৫ জুলাই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের নির্বাহী সম্পাদক লাবলু আনসারকে তার চিঠির জবাবে লিখেছেন।
সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমাদের পৃথিবী এখন একটি পরিবর্তনের সন্ধিক্ষণে রয়েছে। বৃহৎ বৈশ্বিক শক্তিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়ছে। তাই আমরা যে ধরনের হুমকির সম্মুখীন হচ্ছি, তা মোকাবিলায় আগের চেয়ে আরও বেশি পারস্পরিক সহযোগিতার দাবি রাখে। এ কারণেই আমার প্রশাসন আমাদের জাতির গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থকে এগিয়ে নিতে, বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে, গণতন্ত্র রক্ষা করতে এবং আমাদের বিশ্বের ভবিষ্যৎ নিরাপদ করার জন্য কৌশলগত প্রতিযোগিতায় জয়ী হতে বিশ্বজুড়ে মিত্র ও অংশীদারদের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে। ’
বাইডেন লিখেছেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক মঞ্চে আমেরিকান নেতৃত্বকে পুনরুদ্ধার করেছি এবং সর্বত্র মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে প্রভাবিত করে এমন শেয়ার্ড চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করেছি। জলবায়ু সংকট মোকাবিলা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা থেকে দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই এবং গণতন্ত্রের জন্য প্রযুক্তি যে কাজ করে তা নিশ্চিত করতে সবাইকে নিয়ে কাজ করছি এবং তা করতে সংকল্পবদ্ধ রয়েছি। আমরা ইউক্রেনের সাহসী জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য একটি বৈশ্বিক জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছি। কারণ তারা রাশিয়ার নৃশংস আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিজেদের রক্ষা করছে এবং যখন আমরা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের মৌলিক নীতির প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি, তখন আমরা ইরান ও উত্তর কোরিয়ার উসকানিমূলক আচরণসহ বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তার হুমকি মোকাবিলার জন্য নতুন কৌশলে অংশীদারদের একত্র করেছি। ’
বাইডেন আরও উল্লেখ করেছেন, ‘এখন আমাদের অবকাঠামো ও উৎপাদনে প্রজন্মের বিনিয়োগের জন্য ধন্যবাদ। আমরা নিশ্চিত করেছি যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উদ্ভাবনে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে থাকবে। আমরা আমাদের সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করছি আজ এবং আগামীকালের হুমকির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও প্রতিরক্ষার জন্য। এবং আমাদের মিত্র ও অংশীদারদের অতুলনীয় নেটওয়ার্ককে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সব জায়গায়- গণপ্রজাতন্ত্রী চীনসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে এবং সফল হয়েছে। ’
বাইডেন বলেছেন, ‘দিনের শেষে আমাদের বৈদেশিক নীতি হলো- সব আমেরিকানের জীবন আরও উন্নত ও নিরাপদ করে তোলা। আমি আপনার বার্তা মনে রাখব, যখন আমরা সামনের চ্যালেঞ্জ ও সুযোগগুলো মোকাবিলা করার জন্য কাজ করি, যা আগামী প্রজন্মের জন্য আমাদের বিশ্বের দিক নির্দেশনা নির্ধারণ করবে। ঈশ্বর আমেরিকাকে আশীর্বাদ করুন এবং ঈশ্বর আমাদের সৈন্যদের ও যারা নিজের জীবন বিপন্ন জেনেও আমাদের সুরক্ষায় কাজ করছেন, তাদের রক্ষা করুন। ’