বাংলা ব্লকেডে স্থবির রাজধানী সড়ক-মহাসড়ক
সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে গতকাল স্থবির হয়ে পড়েছিল রাজধানী। একই কর্মসূচিতে সড়ক-মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করা হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে। দিনের কর্মসূচি শেষে রাতে শাহবাগ থেকে আজও ব্লকেড কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা। একদফা দাবিতে এখন থেকে আন্দোলন চলবে বলে তারা ঘোষণা দেন। কর্মসূচির কারণে গতকাল বিকালে স্থবির হয়ে পড়ে রাজধানী। যানজট ছড়িয়ে পড়ে পুরো রাজধানী জুড়ে। বিশেষ করে শাহবাগ ও আশপাশের এলাকার সড়কে চলতে পারেনি কোনো যানবাহন। এতে মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল ক্লাস পরীক্ষাও বর্জন করেন শিক্ষার্থীরা।
গতকাল পূর্বঘোষিত কর্মসূচি শেষে রাত ৮টার দিকে আন্দোলনকারীরা একদফার আন্দোলনের ঘোষণা দেন। বলেন, চলমান ব্লকেড আগামীকাল (আজ) থেকে কাওরান বাজার ও ফার্মগেট পর্যন্ত পালিত হবে।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বাংলা ব্লকেড থেকে আবারো কোটাকে ‘না’ বলেছেন। তারা বলেন, দাবি আদায়ের জন্য রাজপথে নেমে এসেছেন শিক্ষার্থীরা। সে দাবি আদায় করেই কেবল ঘরে ফিরবেন। এদিন শিক্ষার্থীরা রাজধানীর শাহবাগ ছাড়াও ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, সায়েন্সল্যাব, চানখারপুল, নিউমার্কেট, আগারগাঁও, বাংলামোটর, কাওরান বাজার, মিরপুর রোড এলাকার সড়কে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন।
রোগী বহনকারী গাড়ি ও জরুরি সেবা ব্যতীত কোনো গাড়ি চলতে দেননি আন্দোলনকারীরা।
সড়ক বন্ধ করে তারা স্লোগান দেন- ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘কোটা প্রথা, বাতিল চাই বাতিল চাই’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’। এর আগে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পালনের উদ্দেশ্যে দুপুরের পর থেকেই বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে জড়ো হতে থাকেন। হাতে প্ল্যাকার্ড, মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে তারা কোটা বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন।
বিকাল ৩টার দিকে আন্দোলনকারীরা বিশাল মিছিল নিয়ে শাহবাগের উদ্দেশ্যে বের হন। মিছিলটি কলা ভবন, বিজনেস ফ্যাকাল্টি, মাস্টার দা সূর্যসেন হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, ভিসি চত্বর ও টিএসসি হয়ে শাহবাগ মোড়ে গিয়ে অবস্থান নেয়। এসময় পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে আন্দোলনকারীদের একটি অংশ অবস্থান নেয় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে। এতে করে ব্যস্তময় এ দুটি মোড়ের সব সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। যানবাহনের দীর্ঘ জট তৈরি হয় সব পথে। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বাংলামোটরও অবরোধ করে। এতে করে মগবাজার, মৌচাক, বাংলামোটর, পান্থপথের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। একই সময়ে রাজধানীর চানখারপুলে অবস্থান নিয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হল, শহীদুল্লাহ হল, ফজলুল হক মুসলিম হল, কবি সুফিয়া কামাল হল ও বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে বন্ধ হয়ে যায় চানখারপুল গুলিস্তান, বখশিবাজার, বঙ্গবাজারের এলাকার যান চলাচল। যানজটের দীর্ঘ লাইন তৈরি হয় মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে।
ফ্লাইওভারে যানজটের কারণে ঢাকার প্রবেশ মুখে তৈরি হয় দীর্ঘ যানজট। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা অবরোধ করেছে সায়েন্স ল্যাব মোড়। অবরোধ করা হয়েছে নিউমার্কেট মোড়ও। ইডেন মহিলা কলেজ ও গভর্নমেন্ট কলেজ অব এ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্সের শিক্ষার্থীরা সেখানে অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। এ ছাড়াও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আগারগাঁও মোড় অবরোধ করে। এতে ওই এলাকার ৮টি রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। পুরান ঢাকায় অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। আর ঢাকার আরেক প্রবেশ পথ ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আয়োজিত শাহবাগের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি প্রায় সোয়া ৪ ঘণ্টা চলমান ছিল। বিকাল পৌনে ৪টা থেকে শুরু হওয়া অবরোধ শিক্ষার্থীরা রাত ৮টার দিকে তুলে নেয়। এসময় নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীরা।
আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আজ (গতকাল) থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পর্যায়ে আমরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও ছাত্র ধর্মঘটের যে কর্মসূচি দিয়েছি, এ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে অনির্দিষ্টকালের জন্য। পাশাপাশি “ব্লকেড” কর্মসূচি পয়েন্টে পয়েন্টে চলবে। তিনি বলেন, আগামীকাল (আজ) অবরোধের আওতা আরও বাড়বে। আজ (গতকাল) আমরা শাহবাগ থেকে কাওরান বাজার পর্যন্ত গেছি। আগামীকাল (আজ) আমরা কিন্তু ফার্মগেট পার হয়ে যাবো। বিকাল সাড়ে তিনটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে আমাদের জমায়েত হবে। আমরা আমাদের ব্লকেড কর্মসূচি পালন করবো। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কোনো কিছুতে ভয় না পাওয়ার আহ্বান জানিয়ে নাহিদ বলেন, কোনো আবাসিক হলে বাধা দেয়া হলে আমাদের জানাবেন।
আমরা সম্মিলিতভাবে সেই হল ঘেরাও করবো। তিনি বলেন, কোটা বাতিলের আন্দোলনের যৌক্তিকতা আমরা ২০১৮ সালেই প্রমাণ করেছি। আমাদের আদালত দেখিয়ে লাভ নেই, আমরা আপনাদের সংবিধান দেখাচ্ছি। আমরা আশা করি, প্রধানমন্ত্রী এবারো শিক্ষার্থীদের জনমতের পক্ষে সংসদে দাঁড়িয়ে কোটার বিষয়ে চূড়ান্ত সুরাহা দেবেন। নাহিদ বলেন, শিক্ষার্থীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আর কোনো অপশন নেই। আমরা হয় দাবি আদায় করে ফিরবো, নয় তো দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে। আরেক সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আগামীকাল (আজ) থেকে আমাদের এক দাবি। আমাদের দাবিটি হচ্ছে সকল গ্রেডে অযৌক্তিক বৈষম্যমূলক সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর পিছিয়ে পড়া জাতিগোষ্ঠীর জন্য কোটা ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করতে হবে।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ জাবি শিক্ষার্থীদের: একই দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হন। সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনের ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। এ সময় ওই এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন হাজার হাজার মানুষ। শিক্ষার্থীরা জানায়, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসব রথযাত্রার প্রতি সম্মান জানিয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মসূচির সময় পরিবর্তন করে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত নির্ধারণ করেছে। তারা বলেন, দাবিটি কোনো রাজনৈতিক দাবি নয়। সংবিধানবহির্ভূত কিংবা সরকারবিরোধী আন্দোলন নয়। বৈষম্যের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন চলছে তা চলবে। ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার সদস্য সচিব মাহফুজ ইসলাম মেঘ বলেন, আমাদের এই আন্দোলন সাধারণ মানুষের, জনমানুষের আন্দোলন। দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা সমাধানের জন্য যাত্রীদের সাময়িক দুর্ভোগের জন্য আমরা দুঃখিত। আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেয়া না হলে প্রয়োজনে সারা দেশ অচল করে দেয়া হবে।
চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ: চট্টগ্রামে দুই নম্বর গেইট এলাকায় সড়ক অবরোধ করেছে নগরীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে ব্যস্তময় সড়কটিতে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে ষোলশহর এলাকায় জড়ো হতে থাকে শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে দুই নম্বর গেইট মোড় অবরোধ করেন তারা। চট্টগ্রাম কলেজ শিক্ষার্থী সাইদ আনোয়ার জিহাদ বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ছিল সাম্যভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু সরকারি চাকরিতে কোটার ফলে বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা মেধা থাকার পরও যোগ্য চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
ময়মনসিংহে ট্রেন অবরোধ: ময়মনসিংহ নগরীতে জামালপুরগামী অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ট্রেন অবরোধ করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। গতকাল বিকাল পৌনে ৪টার দিকে নগরীর সানকিপাড়া লেভেল ক্রসিং এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালিত হয়। প্রায় ১ ঘণ্টা ট্রেনটি আটকে রাখায় ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। আন্দোলনকারীরা বলেন, কোটাপ্রথা বাতিলের দাবিতে দেশব্যাপী বাংলা ব্লকেড কর্মসূচির আওতায় এ ট্রেন অবরোধ করা হয়েছে। অবিলম্বে কোটাপ্রথা বাতিল করা না হলে যেকোনো কর্মসূচি বাস্তবায়নে রাজপথে আরও কঠোর হতে বাধ্য হবে ছাত্রসমাজ। ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশন সুপারিনটেনডেন্ট মো. নাজমুল হক খবরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আন্দোলনের মুখে জামালপুরগামী অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ট্রেনটি কিছুক্ষণ আটকা পড়েছিল। তবে এখন ময়মনসিংহ-জামালপুর রেলপথে ট্রেন যোগাযোগ স্বাভাবিক রয়েছে।
শেকৃবি শিক্ষার্থীদের আগারগাঁও মোড় অবরোধ: চার দফা দাবিতে রাজধানীর আগারগাঁও মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) শিক্ষার্থীরা। বিকাল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে জড়ো হয়ে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে আগারগাঁও মোড়ে অবস্থান নেয়। এতে মিরপুর-ফার্মগেট এবং মহাখালী-শিশুমেলা সড়ক দুই ঘণ্টার বেশি সময় অবরুদ্ধ ছিল। বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। বিকাল ৫টায় শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
রাবি শিক্ষার্থীদের রেললাইন অবরোধের ঘোষণা: গান-কবিতা-স্লোগানের মাধ্যমে কোটা সংস্কারের দাবি জানিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের পাশাপাশি এ আন্দোলন থেকে আজ থেকে রেললাইন অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে তারা। বিকাল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবন সংলগ্ন প্যারিস রোডে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। আন্দোলনের সমন্বয়ক আমানুল্লাহ আমান বলেন, সোমবার আমরা ঢাকা-রাজশাহীর যে রেললাইন রয়েছে তা অবরোধ করবো। ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের পাশাপাশি ক্যাম্পাসের কোনো বাসও চলাচল করতে পারবে না। নওগাঁয় ছাত্রলীগের বাধা: নওগাঁয় শিক্ষার্থীদের চলমান চার দফার আন্দোলনে বাধা দিয়েছে ছাত্রলীগ। গতকাল সকাল ১১টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড়ে ছাত্রসমাবেশের ডাক দিয়েছিল জেলার শিক্ষার্থীরা। তবে আন্দোলনরতদের মাঠে নামতে দেয়নি ছাত্রলীগ। এ আন্দোলনে জেলার সমন্বয়ক নওগাঁ সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী নাকিব আল হাসান বলেন, আন্দোলনের সব প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু গত রাতেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হুমকি-ধমকি দিয়ে তারিকুল ভাইকে এই আন্দোলন থেকে সরিয়ে দিয়েছে। একপ্রকার বাধ্য হয়ে তিনি মেস ছেড়ে বাড়িতে চলে গেছেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা কোটা বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিলে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়েছে।
সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ: সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিকাল সাড়ে ৩টায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করে মহাসড়কে অবস্থান নেয় তারা। অবরোধের ফলে সড়কের দুইপাশ জুড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। শিক্ষার্থীরা বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলবে।
যবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ: দেশব্যাপী ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সড়ক অবরোধ করেছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। বিকাল ৩টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-চৌগাছা স্বাধীনতা সড়ক অবরোধ করে এ কর্মসূচি পালন করে তারা। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় ১ ঘণ্টা পর শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। শিক্ষার্থীরা বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে আধুনিক বাংলাদেশ গড়তে এমন কোটা প্রথা মানা যায় না। আমরা চাই অবিলম্বে কোটা সংস্কারের মাধ্যমে সকল ক্ষেত্রে মেধাবীদের সুযোগ করে দেয়া হোক। দেশব্যাপী বাংলা ব্লকেডের সঙ্গে আমরা একাত্মতা প্রকাশ করে সড়ক ব্লক করেছি।
ইবি শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ: কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা এ কর্মসূচি পালন করে তারা। এ সময় রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে ও গাছের গুঁড়ি ফেলে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় শিক্ষার্থীরা। অবরোধে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ অভিমুখে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
মহাসড়ক অবরোধ হাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের: ৪ দফা দাবিতে প্রায় দেড় ঘণ্টা দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করেছে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এ কর্মসূচি পালন করে তারা। এতে মহাসড়কের উভয় পাশের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আন্দোলনে অংশ নেয়া সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মানিক বর্মণ বলেন, কোটা নামক এক প্রথা চালু করে আমাদের সাধারণ ছাত্রসমাজের সঙ্গে যে বৈষম্য চালু করা হয়েছে তা সহজে মেনে নেয়া হবে না।
গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমর্থন: শিক্ষার্থীদের চলমান কোটা বিরোধী আন্দোলনে একাত্মতা পোষণ করেছে বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। একইসঙ্গে দুই দফা দাবিও জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয়া হয়। তাদের দাবিগুলো হলো, বৈষম্যমূলক মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করতে হবে এবং অনগ্রসর জাতিসত্তা ও বঞ্চিত শ্রেণির জন্য যৌক্তিক মাত্রায় কোটা নিশ্চিত করতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ও ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাগীব নাঈম বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা বৈষম্যের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে এদেশের তরুণ ছাত্রসমাজ আন্দোলন করে আসছে। সর্বশেষ ৫ই জুন হাইকোর্টের একটি রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে আবারো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বৈষম্যমূলক কোটা প্রথা চালু হওয়ায় সারা দেশের ছাত্রসমাজ আন্দোলনে নেমেছে। এরইমধ্যে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে লাগাতার আন্দোলন চলছে। রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের লড়াকু অবস্থানের প্রতি গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট একাত্মতা পোষণ করছে। একইসঙ্গে কোটা প্রথার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে সারা দেশে সচেতন ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছে।