USA

বাইডেন ও ট্রাম্পের মুখোমুখি বিতর্ক আজ: উভয় নেতার মানসিক দক্ষতা গুরুত্ব পাবে

আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে আজ প্রথমবারের মতো মুখোমুখি বিতর্কে অংশ নিচ্ছেন জো বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট ৮১ বছর বয়সী জো বাইডেন এবং তার প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান দলের ৭৮ বছর বয়সী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকাল) আটলান্টার সিএনএন স্টুডিওতে মুখোমুখি হবেন। তবে এই বিতর্কে সরাসরি কোনো দর্শক উপস্থিত থাকবেন না। 
এই বিতর্ক সামনে রেখে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান শিবিরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। কারণ ইউক্রেন ও গাজাযুদ্ধসহ অন্যান্য ইস্যুতে বিশ্বজুড়ে চরম সমালোচনার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মনে করা হচ্ছে উভয় নেতা একে অপরকে কঠোর বাক্যবাণে বিদ্ধ করবেন। খবর সিএনএন ও বিবিসি অনলাইনের। 
এই বিতর্ক সামনে রেখে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন জো বাইডেনকে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। বুধবার নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক কলামে যুক্তরাষ্ট্রের এই ঝানু পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিতর্কের সময় ট্রাম্প বাধা দেন ও অপ্রাসঙ্গিক কথা বলেন। তিনি যুক্তিতে না পারলে প্রতিপক্ষকে কটূ কথা বলেন। কারণ হিলারিকেও তেমনটিই করেছিলেন ট্রাম্প।
হিলারি বলেন, ট্রাম্প নিজেকে প্রভাবশালী দেখাতে ও প্রতিপক্ষের যুক্তির ধারাবাহিকতা নষ্ট করার চেষ্টা করেন। ট্রাম্পের অবস্থান খ-ন করার চেষ্টা মানে ‘সময়ের অপচয়’। কারণ, তিনি বিতর্ক শুরু করেন অর্থহীন কথা দিয়ে এবং পরে তা রূপ নেয় গালাগালিতে। 
ট্রাম্পের বিতর্কের কৌশলের সমালোচনার পাশাপাশি ক্লিনটন তার অপরাধমূলক কর্মকা- নিয়েও কথা বলেন। এ সময় তিনি গর্ভপাতের অধিকার ও ট্যাক্স কমানোর বিষয়ে ট্রাম্পের অবস্থানের কঠোর সমালোচনা করেন। হিলারি মনে করেন, বৃহস্পতিবার ট্রাম্পের পারফরম্যান্সে জনসাধারণ হতাশ হবে।
অন্যদিকে, হিলারি বাইডেনকে একজন ‘জ্ঞানী ও ভদ্র মানুষ’ হিসেবে আখ্যা দেন। তিনি দাবি করেন, ‘আমাদের মধ্যে সবচেয়ে সহানুভূতিশীল নেতাদের একজন বাইডেন। তিনি বিতর্কে বাইডেনকে ‘ঠোঁটকাটা ও শক্তিশালী’ হওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি মনে করেন, এই কৌশল ট্রাম্পের আধিপত্য ও ভয় দেখানোর কৌশলকে সফলভাবে ব্যর্থ করবে।
নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বুড়ো দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বাইডেন এবং ট্রাম্পের বয়স ভোটারদের কাছে উদ্বেগের একটি বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই আগামীকালের এই বিতর্কের মধ্য দিয়ে মার্কিন ভোটাররা এই দুইজনের শারীরিক-মানসিক শক্তির তুলনা করার সুযোগ পাবেন। 
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রচার তুঙ্গে থাকার এই সময়ে জনমত জরিপগুলোতে এখন পর্যন্ত বাইডেন-ট্রাম্পের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এ পরিস্থিতির মধ্যেই মুখোমুখি বিতর্কে নামছেন তারা।
৯০ মিনিটের এ বিতর্ক অনুষ্ঠানে উন্নত প্রযুক্তির একাধিক ক্যামেরার সামনে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলবেন, যার মধ্যে থাকবে অর্থনীতি থেকে শুরু করে বিদেশে চলমান যুদ্ধ, অভিবাসন এমনকি গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের বিষয়ও।
তা ছাড়া ট্রাম্প আমলের ‘ব্যর্থ কোভিড-নীতি’, আর্থিক ঘাটতি, ‘মিথ্যাচার’ এবং ক্যাপিটলে দাঙ্গার প্রসঙ্গ তুলতে পারেন বাইডেন। আবার বাইডেনের বিরুদ্ধে ‘জাতীয় নিরাপত্তায় অবহেলা’, ‘কূটনৈতিক ব্যর্থতার মতো প্রসঙ্গ টেনে আনতে পারেন ট্রাম্প। এতসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তারা মুখ ফসকে ভুল কিছু বলে ফেললে বা আমতা আমতা করলে তা জনমনে তাদের বয়স নিয়ে উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। এতে উল্টেপাল্টে যেতে পারে ভোটের সমীকরণ।
তবে বয়সের বিচারে এ বিতর্কে দুইজনের মধ্যে বিশেষত, বাইডেনের জন্য প্রাণবন্ত বিতর্ক করাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের এই বুড়ো প্রেসিডেন্ট তার স্ট্যামিনা এবং মানসিক উপযুক্ততা নিয়ে বারবার প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছেন। 
জনমত জরিপগুলোতে দেখা যায়, ট্রাম্পের তুলনায় বাইডেনের বয়স নিয়েই মানুষ বেশি উদ্বিগ্ন। অথচ ট্রাম্প যদি নির্বাচনে জেতেন, তাহলে তার মেয়াদ শেষের আগেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেনের রেকর্ড ভেঙে ফেলবেন। তারপরও বয়সের দিক থেকে বাইডেনের তুলনায় একটু সুবিধাজনক অবস্থানেই আছেন ট্রাম্প। মার্চে নিউইয়র্ক টাইমস/সিয়েনা পরিচালিত কলেজ জরিপে দেখা গেছে, ৭৩ শতাংশ নিবন্ধিত ভোটারই মনে করে বাইডেন ‘প্রেসিডেন্ট পদের জন্য একটু বেশিই বুড়ো’। সব বয়সের ভোটারই প্রেসিডেন্টের ফিটনেস নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

আর ট্রাম্পের বয়স নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মাত্র ৪২ শতাংশ মানুষ। যদিও দুইজনের বয়সে মাত্র তিন বছরের ফারাক। গত বছর কলোরাডোতে বিমান বাহিনী একাডেমির এক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সময় মঞ্চে হোঁচট খেয়ে পড়ে যান বাইডেন। ঘটনাটি পত্র-পত্রিকায় শিরোনাম হয়। 
হোয়াইট হাউসের যোগাযোগ বিষয়ক প্রধান তখন বলেছিলেন, মঞ্চে একপাশে একটা ছোট বালির ব্যাগ ছিল। তাতে হোঁচট খেয়েই বাইডেন পড়ে যান। কিন্তু তাতেই যে বাইডেনের শারীরিক অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার আশঙ্কা দূর হয়েছে তা নয়। এই বিতর্কের আগে ট্রাম্প বলেছেন, বাইডেন বিতর্কে প্রত্যাশা ছাড়িয়ে যেতে পারেন। ভালো বিতর্ক করতে পারেন তিনি। তবে এর আগে এক মন্তব্যে ট্রাম্প বলেছিলেন, তার এই প্রতিদ্বন্দ্বী বিতর্কে ভালো করার জন্য প্রাণশক্তি বর্ধক ওষুধ খেতে পারেন। তবে বাইডেনের প্রচারশিবির বলছে, এ কথা ডাহা মিথ্যা।
৬৮ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সর্বশেষ রিম্যাচ হয়। অর্থাৎ গত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী উভয় নেতা ফের মাঠে নামেন। এই দীর্ঘদিন পর যুক্তরাষ্ট্রে ফের রিম্যাচ হতে যাচ্ছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button