বাইডেন-শির একসুরে ট্রাম্পের জন্য কী বার্তা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও চীনের নেতা শি জিনপিং গত শনিবার লাতিন দেশ পেরুতে বৈঠক করেছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী পরাশক্তির এ দুই নেতার মধ্যে সম্ভবত এটাই শেষ সাক্ষাৎ। বাইডেন তাঁর সময়ে চীনের সঙ্গে প্রকাশ্যে কোনো সংঘাতে যাওয়া থেকে বিরত থেকেছেন। কিন্তু উভয় ব্যক্তিই তাদের আলোচনায় হয়তো একজনের বিষয়ে বলেছেন, যিনি ওই কক্ষেই উপস্থিত ছিলেন না। তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী জানুয়ারিতে আবারও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ট্রাম্প বেইজিংয়ের প্রতি আরও আক্রমণাত্মক পথ অবলম্বনের অঙ্গীকার করেছেন।
সূচনা বক্তব্যে শি জিনপিং যা বলেছেন, তাতে রয়েছে নির্বাচন-পরবর্তী যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক অনিশ্চয়তার এক নতুন সময়ে প্রবেশ করার সতর্কবার্তা। পেরুর রাজধানী লিমার একটি হোটেলের সম্মেলন কক্ষে যেখানে চীনের প্রতিনিধি দল অবস্থান করছিল, সেখানে শি জিনপিং বলেন, জ্ঞানীর মতো সিদ্ধান্ত নিন। দুটি প্রধান দেশ একে অপরের সঙ্গে যাতে ভালোভাবে চলতে পারে, সেই সঠিক পন্থার সন্ধান চালিয়ে যান।’ জো বাইডেন তাঁর সূচনা বক্তব্যে বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টার কথা বলেছেন। এরই মধ্যে ট্রাম্প চীনের ওপর আরও শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপের কথা বলেছেন। তিনি প্রশাসনের শীর্ষ পদগুলোতে কট্টরপন্থিদের (চীনবিরোধী অর্থে) ঠাঁই দিয়েছেন।
বাইডেন বলেন, এ ধরনের আলোচনা ভুল বোঝাবুঝিকে ঠেকায়। এটা নিশ্চিত করে, আমাদের দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক সংঘাতে মোড় নেবে না, এটা প্রতিযোগিতার মধ্যেই থাকবে। তিনি বলেন, এটা আমাদের দায়িত্ব। গত চার বছর ধরে আমরা এ ধরনের একটি সম্পর্ক গড়ারই চেষ্টা করেছি।
দুই নেতার মধ্যে এ বৈঠক এক ঘণ্টা ৪০ মিনিট ধরে চলে। বাইডেন ও বিশ্ব সম্পর্কে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি একটি সারবাক্যে শেষ হয়– চীনের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ এটাই প্রতীয়মান করে, ওয়াশিংটনের সঙ্গে শত্রুতার সম্পর্ক তৈরিতে তাদের কোনো আগ্রহ নেই।
বৈঠকে মার্কিন কর্মকর্তারা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে চীনের ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। চীনা হ্যাকারদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি মার্কিন টেলিযোগাযোগ সিস্টেমে প্রবেশ ও মার্কিন কর্মকর্তাদের ফোন থেকে তথ্য নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়। এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলেও প্রভাব বাড়াচ্ছে বেইজিং। তাইওয়ানের চারপাশে চীনের সামরিক মহড়া ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দক্ষিণ চীন সাগরে তাদের আগ্রাসন নিয়েও মার্কিন কর্মকর্তারা ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান জানান, বৈঠকে বাইডেন তাইওয়ানে শান্তি বজায় রাখতে প্রেসিডেন্ট শিকে বলেন এবং রাশিয়ার প্রতি বেইজিংয়ের সমর্থনের জন্য চাপ দেন। সেই সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধে রাশিয়াকে সমর্থন করা থেকে উত্তর কোরিয়াকে নিরুৎসাহিত করতেও বাইডেন চীনের নেতাকে অনুরোধ করেন। তবে বাইডেনের এসব অনুরোধ শির কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, তা স্পষ্ট নয়। ঘড়ির কাঁটা দ্রুতগতিতেই চলছে; তাঁর প্রেসিডেন্ট মেয়াদের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি আছে।
কার্যত চীনের মনোনিবেশ এখন ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনের প্রস্তুতির দিকে। ট্রাম্প বেইজিংকে তাঁর রপ্তানি পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। ট্রাম্প ফ্লোরিডার রিপাবলিকান সিনেটর মার্কো রুবিওকেও বেছে নিয়েছেন তাঁর সরকারের সম্ভাব্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে। এই রুবিও চীনের একজন কঠোর সমালোচক হিসেবে পরিচিত।
বৈঠকে শি আশার বাণী শোনালেও কঠোর বার্তাও দিয়েছেন। তিনি বলেন, তাঁর দেশ ট্রাম্প প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে সব সময় দ্বার খোলা রাখবে। তবে দুই পরাশক্তির প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নতুন কোনো শীতল যুদ্ধ শুরু করা যাবে না; এতে কেউ জয়ীও হবে না। চীনকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা হবে অজ্ঞতাপ্রসূত, অপ্রত্যাশিত; এটা সাফল্যের মুখ দেখবে না।’