USA

বাইডেন সরে দাঁড়ালে ডেমোক্রেটিক পার্টি কী করবে

আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থীর পদ থেকে জো বাইডেনের সরে দাঁড়ানোর আলোচনা বাড়ছে। কারণ, গত বৃহস্পতিবার রাতে রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রথম বিতর্কে তিনি ভালো করেননি।

এই পরিস্থিতিতে ডেমোক্র্যাটরা বাইডেনের পরিবর্তনে নতুন প্রার্থী দিতে চাইলে বা বাইডেন নিজে সরে দাঁড়ালে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে? ডেমোক্রেটিক পার্টির নতুন প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়াটি কেমন হবে?

ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান পার্টি উভয়ে দীর্ঘ ও জটিল বাছাইপর্বের (প্রাইমারি) মধ্য দিয়ে নিজেদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মনোনয়ন দেয়, যা ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। বাছাইপর্বে বাইডেন অনেকটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই উতরে গেছেন। দলটির প্রায় সব ডেলিগেট (প্রতিনিধি) বাইডেনকেই সমর্থন দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে বাইডেন ব্যক্তিগতভাবে সরে না দাঁড়ালে তাঁকে জোর করে সরানোর সম্ভাবনা অত্যন্ত কম।

বাইডেনের বিকল্পের বিষয়ে সিএনএনের বিশ্লেষক ও ডেমোক্রেটিক ভোট কৌশলী ডেভিড অ্যাক্সেলরড বলেন, ‘এটা গত শতকের ষাটের দশক নয়। এখন (প্রাথমিক দলীয় বাছাইয়ে) দলের নিবন্ধিত ভোটাররা প্রার্থী বাছাই করেন। সুতরাং প্রাথমিক বাছাইয়ে যিনি জয়ী হবেন, তিনিই প্রার্থী।’

১৯৬৮ সালে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বাছাই নিয়ে ডেমোক্রেটিক পার্টি ব্যাপক ঝামেলায় পড়েছিল। সেই ঝামেলার পরই দলটির বর্তমান বাছাইপর্বের নিয়ম তখন তৈরি করা হয়। তখন ডেমোক্র্যাটরা তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট হুবার্ট হামফ্রেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছিলেন। কারণ, ভিয়েতনাম যুদ্ধের কারণে চাপে থাকা ও জনপ্রিয়তা হারানো ডেমোক্রেটিক দলীয় তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন পরবর্তী নির্বাচনের দৌড় থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন।

মনোনয়ন পাওয়া হামফ্রে শিকাগোতে অনুষ্ঠিত দলের জাতীয় সম্মেলনে (কনভেনশন) জনসনের ভিয়েতনাম যুদ্ধের নীতি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন। এমন ঘোষণার পরও হামফ্রেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়। এই ইস্যুতে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছিলেন।

এখন ২০২৪ সাল, ইতিমধ্যে অনেক কিছু বদলে গেছে। এখন যদি বাইডেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে নির্দিষ্ট কিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নতুন প্রার্থী বাছাই করতে হবে।

দলের নিয়ম অনুযায়ী, অধিকাংশ বাছাইপর্ব শেষ হওয়ার পর বা সম্মেলন চলাকালে যদি কোনো প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সরে দাঁড়ান, সে ক্ষেত্রে প্রতি ডেলিগেটকে দলীয় সম্মেলনেই নতুন প্রার্থী বাছাইয়ে ভোট দিতে হবে। কোনো কারণে ডেলিগেটরা সরাসরি ভোট দিতে না পারলে অনলাইনে নিজের মতামত জানাতে হবে। আগামী আগস্টে শিকাগোতে ডেমোক্রেটিক পার্টির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

এ ক্ষেত্রে বাইডেনকে নিয়ে বড় প্রশ্ন হলো, এবার ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রকৃত ডেলিগেট কারা? কারণ, ডেমোক্রেটিক পার্টি বিভিন্ন রাজ্য থেকে নিজেদের ৩ হাজার ৯০০-এর বেশি ডেলিগেটকে ২২ জুনের মধ্যে প্রার্থী বাছাই করার সময় বেঁধে দিয়েছিল, যা ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। ডেলিগেটদের প্রায় সবাই বাইডেনকে সমর্থন দিয়েছেন।

এমন পরিস্থিতিতেও আগস্টে অনুষ্ঠেয় ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় সম্মেলনে ডেলিগেটদের একটা বড় অংশ নতুন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বাছাইয়ের প্রস্তাব করতে পারেন। তাঁরা এমনটি প্রস্তাব করলে বাইডেনের সমর্থকদের সঙ্গে তাঁদের ব্যাপক মতবিরোধ দেখা দেবে, দলের অভ্যন্তরে বিবাদ দেখা দেবে।

আর বাইডেন নিজেই সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলেও সহজে সমস্যার সমাধান হবে না। কারণ, যেসব ডেলিগেট ইতিমধ্যে তাঁকে সমর্থন দিয়েছেন, তাঁদেরই নতুন প্রার্থীর জন্য ভোট বা সমর্থন দিতে হবে। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে নির্বাচনের কয়েক মাস আগে ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যে একটা বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button