বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
বাজারে পাওয়া যায় এমন খাদ্য পণ্যের প্রায় ২০ শতাংশই মানহীন। এর মধ্যে বিভিন্ন প্রকার সস, ভিনেগার, হোয়ায়েটেনিং পাউডার, আইসিং সুগার, চকোলেট সিরাপ, বেবি ফুডসহ ১৭-২০ ধরনের আমদানিকৃত পণ্য নকল ও ভেজাল হচ্ছে বেশি। এর কারণে দেশেরে মানুষের স্বাস্থ্যগত ক্ষতির পাশাপাশি সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া দেশেরে ভাবমূর্তির ক্ষতি, আমদানিকারকদের ব্যবসায়িক লোকসান ও ব্র্যান্ডসমূহের সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
সোমবার রাজধানীর ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামে (ইআরএফ) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের বাজারে ভেজাল পণ্যের প্রভাব এবং জনস্বাস্থ্যের ক্ষতিকর দিক’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। ইআরএফ এবং বাংলাদেশ ফুডস্টাফ ইমপোর্টার্স এ্যান্ড সাপ্লায়ার্স এসোসিয়েশন (বাফিসা) যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান। ইউএসডিএ ফান্ডেড বাংলাদেশ ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন প্রজেক্টের সহায়তায় এই সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।
ইআরএফ সভাপতি রেফায়েতুল্লাহ মৃধার সভাপতিত্বে সেমিনারে বক্তব্য দেন বাফিসার সভাপতি মোহাম্মদ বোরহান ই সুলতান, সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য ড. মোহাম্মদ মোস্তফা, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউটের (বিএসটিআই) সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আরাফাত হোসেন প্রমুখ।
সেমিনারে ড. মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, গত বছর বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বাজার থেকে বিভিন্ন ধরনের ১৩৮১টি খাদ্য পণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাব টেস্ট করিয়েছিলেন। তাতে ২০ শতাংশ পণ্যই মানহীন পাওয়া গেছে। তারা শাস্তি দেয়ার চেয়ে মানুষকে সচেতন করার দিকেই বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন। এতে ভেজাল খাদ্য উৎপাদন কমে আসবে বলে কর্তৃপক্ষ মনে করে।
বাংলাদেশের বাজারে নকল পণ্য তৈরি ও উৎপন্নের কারণ ও প্রতিকারের বিষয়গুলো তুলে ধরে বক্তারা বলেন, যখন বাজারে আসল পণ্যের চাহিদা অনুপাতে সরবরাহ কম থাকে অথবা যেটুকু সরবরাহ আছে তার মূল্য খুব বেশি বেড়ে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায় তখন কিছু অসাধু ব্যক্তি অতি মুনাফার আশায় নকল পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করে। আর এটি তখনই বেশি হয় যখন আমদানিকৃত পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ফলে পণ্যের বিক্রয়মূল্য অতিরিক্ত বেড়ে যায়। বিভিন্ন বিদেশি ব্র্যান্ডের মোড়ক ও প্যাকেট তৈরি করে অসাধু ব্যক্তিরা এই নকল পণ্য তৈরি করে।
নকল পণ্য বাংলাদেশে উৎপাদন করার কারণে, এর দশ ভাগের এক ভাগ পণ্যও এখন আমদানি হয় না। এর কারণে সরকার বছরে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার মতো রাজস্ব হারাচ্ছে। নকল পণ্যের কারণে বাংলাদেশের মানুষ মারাত্মক বড় রকমের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। যেমন, মানুষের এখন কিডনি, হার্ট এবং ক্যান্সার জনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। যার কারণে বিদেশে স্বাস্থ্য চিকিৎসার জন্য প্রচুর ডলার ব্যয় করতে হচ্ছে।
এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে যেসব পণ্য দেশে উৎপাদন হয় না সেগুলোর আমদানি শুল্ক কমিয়ে চাহিদা অনুসারে পণ্য আমদানির সুযোগ দিতে হবে। এছাড়া টাস্ক ফোর্স গঠন করে বাজারে কারা এসব পণ্য নকল করছে তা খুঁজে বের করতে হবে। সর্বোপরি বাজারে শৃঙ্খলা আনতে দীর্ঘ, মাধ্যম ও স্বল্প মেয়াদী পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।