Hot

বাজারে বছরে ছড়াচ্ছে ১০ কোটি টাকার নকল ওষুধ, সরবরাহ চক্রে নামি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কর্মীও

রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জেও ছড়িয়ে পড়ছে নানা ধরনের নকল ওষুধ। গোয়েন্দা তথ্য বলছে, পুরান ঢাকা ও বরিশালকেন্দ্রিক অন্তত ১৫টি চক্র বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নকল ওষুধ তৈরি করে দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের মোড়কে বাজারজাত করছে। চক্রটি প্রথমে খোলাবাজার থেকে ৫ থেকে ১০ টাকায় টিটেনাস, এট্রোপিন সালফেট, ডায়াজিপাম ও জেশন গ্রুপের অ্যাট্রোপিন কিনে মোড়ক পরিবর্তন করে হেপাবিগ, ভিটামিন ডি৩, ক্লোপিকজল ও ফ্লুয়ানজল ডিপোর্ট ইনজেকশন, রেসোগামা পি ও হিউম্যান অ্যান্টি ডির মতো জটিল ওষুধ বলে বিক্রি করছে। এসব ওষুধের কোনো কোনোটি সাড়ে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয়। 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, ১৫টি চক্র বছরে অন্তত ১০ কোটি টাকার নকল ওষুধ বাজারজাত করছে। গত বছর নকল ওষুধ সরবরাহের অভিযোগে ১৫টি মামলা করেছে পুলিশ। এ বছরের প্রথম পাঁচ মাসে হয়েছে আরও চার মামলা। এসব মামলায় ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ঢাকার মোহাম্মদপুর, মতিঝিল, বারিধারা, বাড্ডা, উত্তরা ও পুরান ঢাকাকেন্দ্রিক শতাধিক নকল ওষুধ তৈরি কারখানা ও ফার্মেসিকে শনাক্ত করেছে ডিবি। নর্দ্দায় বারিধারা জেনারেল হাসপাতালের ফার্মেসি, মিটফোর্ডের নাঈম ফার্মেসি, শাকিল ব্রাদার্স, সাহারা ড্রাগস, রাজীব এন্টারপ্রাইজ, আল আকসা মেডিসিন, আলাউদ্দিন মেডিসিনসহ আরও কিছু ফার্মেসিতে নকল ওষুধ বিক্রির প্রমাণ মিলেছে। এসব ফার্মেসি সিলগালা করা হয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি নিবন্ধনহীন ‘প্রেগন্যান্সি স্ট্রিপ’ এবং ‘কনডম রি-প্যাকিং’-এর একটি কারখানায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও ডিবি অভিযান চালায়। সেখান থেকে নকল ওষুধ প্রস্তুতকারক কারখানার মালিক মানিক চন্দ্র সরকারকে আটক করে পুলিশ।

কোন চক্র বানাচ্ছে কোন ওষুধ
ঘুমের ইনজেকশন ‘জি-ডায়াজিপাম’ দিয়ে বানানো হচ্ছে চেতনানাশক ‘জি-পেথিডিন’। এই চক্রের হোতা পিরোজপুরের আলমগীর খান; তার সহযোগী মাসুদ রানা এবং বিক্রি করেন বারিধারা জেনারেল হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট আহসান হাবীব শাওন। আলমগীর মিটফোর্ডের বিভিন্ন ফার্মেসি থেকে ৮ টাকা পিস হিসাবে জি-ডায়াজিপাম কিনে জি-পেথিডিন নামে বিক্রি করেন ৬০০ টাকা দামে। 

ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিককে নকল টিকা ও ইনজেকশন সরবরাহ চক্রের হোতা আনোয়ার হোসেন ওরফে ওয়াসিম ও অসীম ঘোষ। চক্রটি ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন কোম্পানির অন্তত ৯টি ওষুধ দক্ষিণ কোরিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি এবং ডেনমার্কের ওষুধ প্রস্তুত প্রতিষ্ঠানের মোড়ক লাগিয়ে বাজারে ছাড়ে। কুমিল্লা, বরিশাল ও ময়মনসিংহের বেসরকারি ক্লিনিকেও এগুলো সরবরাহ করা হয়। তাদের নকল ওষুধ রাখা তিন শহরের বেশ কিছু ফার্মাসিকে শনাক্ত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সম্প্রতি তাদের কাছ থেকে কোটি টাকা মূল্যের নকল ওষুধও জব্দ করেছে ডিবি।

নকল অ্যান্টিবায়োটিক প্রস্তুতকারক এবং সরবরাহকারী চক্রে রয়েছে পাঁচজন। চক্রের হোতা আবু বক্কর। তার হয়ে মো. শাহীন ঢাকায় সরবরাহকারী হিসেবে কাজ করে। তাকে বরিশাল থেকে ওষুধ পাঠায় ডিলার শহীদুল ইসলাম ও সিরাজুল ইসলাম। তাদের সহযোগী মো. হৃদয় ও অপসোনিন ওষুধ কোম্পানির বিক্রয়কর্মী মো. হুমায়ুন ওরফে রাজীব। চক্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়া বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যালসের ১১ ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ট্যাবলেট নকল করে বাজারজাত করে। এক্‌মি ফার্মাসিউটিক্যালস ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ওষুধও নকল করত তারা।

নকল ওরস্যালাইন তৈরিতে সক্রিয় একটি চক্র। তারা এসএমসি এন্টারপ্রাইজের মোড়কে লবণ ও চিনি মিশিয়ে ওরস্যালাইন বানিয়ে বাজারজাত করছে। নকল স্যালাইন তৈরি কারখানার মালিক মো. দুলাল। তবে পুলিশ তার সন্ধান পায়নি। চক্রটির হয়ে স্যালাইনের ফয়েল পেপার তৈরি কারখানার ম্যানেজার সায়েম ভূঁইয়া ও অপারেটর ইয়াদুল সর্দার। 

ইনসেপ্‌টার প্যান্টোনিক্স ওষুধকে প্যান্টোপ্রাজল নামে এবং স্কয়ারের সেকলো, হেলথ কেয়ারের সার্জেল, অপসোনিন ফার্মার ফিনিক্স, এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালসের লোসেকটিল ও ইটোরিক্স নকল করে তৈরি করে নীলফামারীর মো. আতিয়ার। ঢাকার সেই নকল ওষুধ সরবরাহ করত ইকবাল হোসেন। ইকবাল সরকারি এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানির এজিথ্রোমাইসিন ট্যাবলেট ও সেটরিক্সিন ইনজেকশন এবং ড্রাগস ইন্টান্যাশনালের ফেক্সোফাস্ট ওষুধ হাসপাতাল থেকে কিনে বিক্রি করত মিটফোর্ডের রঞ্জন বর্মণের ফার্মেসিতে। 

আরেকটি চক্র পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালসের টিটেনাস ইনজেকশনের মোড়ক পরিবর্তন করে সুইজারল্যান্ডের ‘রহফিলাক ৩০০’ ইনজেকশন বানাচ্ছে। কিডনি ডায়ালাইসিসের জন্য ভারতে তৈরি ‘অ্যালবুমিন’ দিয়ে তারা বানায় যুক্তরাষ্ট্রের ‘গ্রিফোলস অ্যালবুমিন (হিউম্যান)’। চক্রের হোতা আশফাক আহম্মেদ আলী ওরফে সুমন। তার সহযোগী জসিম উদ্দিন, শুভ বর্মণ, পবিত্র, বিশ্বজিৎ, পারভেজ, দীপংকর, আইয়ুব ও প্রেস মালিক মো. সালাউদ্দিন। 

ডিবির মতিঝিল বিভাগের সহকারী কমিশনার এরশাদুর রহমান বলেন, নকল ওষুধ ও টিকা সরবরাহ চক্রের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক অভিযান চলছে। সম্প্রতি চারটি অভিযানে জব্দ করা হয়েছে প্রায় ৬ কোটি টাকার নকল ওষুধ। 

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মুখপাত্র আশরাফ হোসেন বলেন, ‘নকল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে ঔষধ প্রশাসন। প্রতিনিয়ত টিম বাজার তদারকি করছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গত বছরও বিভিন্ন ফার্মেসিকে ৩ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে সাত প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d