বাজেট সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু, সংশোধিত বাজেটেও ব্যয় সাশ্রয়ী নীতি থাকছে
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রেও ব্যয় সংকোচন নীতি নিয়েছে সরকার। এজন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরকে সাশ্রয়ে নেওয়া পদক্ষেপ অনুসরণ করেই চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট প্রণয়ন করতে বলেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট প্রণয়নে পরিপত্র জারি করে এ নির্দেশনা দিয়েছে। এতে বলা হয়, সরকারের অগ্রাধিকার খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতে মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামো পদ্ধতির আওতায় সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য দপ্তরের চলতি অর্থবছরের বাজেট সুষ্ঠু ও সময়মতো বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে ‘সংশোধিত বাজেট’ প্রণয়ন প্রয়োজন।
পরিপত্রে বলা হয়, চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে যে পরিমাণ বরাদ্দ রাখা হয়েছে, সংশোধিত বাজেটে ব্যয়সীমা (পরিচালন এবং উন্নয়ন) একই রাখতে হবে। সংশোধিত বাজেটে কোনোভাবেই অতিরিক্ত বরাদ্দ দাবি করা যাবে না। তবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নীতি ও উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য অগ্রাধিকারভিত্তিক কার্যক্রম বাস্তবায়নে বরাদ্দকৃত অর্থের মধ্যে থেকে খাতভিত্তিক বরাদ্দ কমানো বা বাড়ানো যাবে। তবে উন্নয়ন বাজেটের অর্থ অব্যয়িত থাকলে তা পরিচালনা বাজেটে স্থানান্তর করা যাবে না।
চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার ২ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা। ব্যয় সংকোচন প্রাধান্য দিয়ে সংশোধিত বাজেটের কাজ শুরু করেছেন অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা। আগামী সম্পদ কমিটির বৈঠকে সংশোধিত বাজেট চূড়ান্ত করা হবে। পরিপত্রে বলা হয়, সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সব যানবাহন ক্রয় বন্ধ রাখতে হবে। তবে পরিচালন বাজেটের আওতায় ১০ বছরের বেশি পুরোনো গাড়ি প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমে অর্থ ব্যয় করা যাবে। সরকারি ব্যয় সংকোচনের অংশ হিসেবে জ্বালানি খাতে বরাদ্দ অর্থের সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ এবং বিদ্যুৎ খাতে ৭৫ শতাংশের বেশি ব্যয় না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে ভূমি অধিগ্রহণ খাতে পরিচালন বাজেটে বরাদ্দ দেওয়া অর্থ ব্যয় বন্ধ থাকবে। তবে এ খাতে উন্নয়ন বাজেটের আওতায় অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের পূর্বানুমোদন নিয়ে ব্যয় করা যাবে। এই চারটি খাতে বরাদ্দ করা অর্থ অন্য কোনো খাতে স্থানান্তর করা যাবে না। পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ধরনের বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ থাকবে। তবে অত্যাবশ্যকীয় বিবেচনায় সীমিত আকারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে বিদেশ ভ্রমণ করা যবে।
রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের পরিপত্রে বলা হয়, গত দুই অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস এবং চলতি অর্থবছরের চার থেকে পাঁচ মাসের রাজস্ব আদায়ের ধারা বিবেচনা করে সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলন করতে হবে। বেতন-ভাতা খাতে চলতি অর্থবছরের তিন মাসের প্রকৃত ব্যয়ের ভিত্তিতে সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ চাইতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ব্যয়ের ক্ষেত্রেও নতুন নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে। অনুমোদন হয়নি এমন প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব করা যাবে না। একই সঙ্গে এডিপিতে প্রকল্প সংখ্যা সীমিত রেখে কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দিতে হবে। এছাড়া সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দবিহীন কোনো প্রকল্প রাখা যাবে না। তবে চলতি অর্থবছরে যে সব প্রকল্প সমাপ্ত হবে, সেগুলোতে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান রাখতে হবে। বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পের ক্ষেত্রে বিদেশি উৎস থেকে পাওয়া অর্থ সম্পূর্ণ ব্যয় করা যাবে। এ ক্ষেত্রে সরকারি অংশেও প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখতে হবে।