Science & Tech

বাড়ছে সাইবার হামলা: ঝুঁকিতে বৈশ্বিক পণ্য পরিবহন

বিশ্বজুড়ে বড় বন্দরগুলোতে সাইবার হামলা বাড়ছে। এটিকে বৈশ্বিক জাহাজ চলাচলের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, বিশ্বের পণ্য পরিবহনের ৮০ শতাংশের বেশি হয় জাহাজে। আর বন্দর নেটওয়ার্কে যদি হামলা হয় তবে পুরো শিপিং লাইন অচল হয়ে যেতে পারে।

এতে পণ্য পরিবহন বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়বে। কারণ বিশ্ববাণিজ্যের প্রাণশক্তি মনে করা হয় জাহাজ চলাচলকে। গত শুক্রবার আকস্মিক সাইবার হামলায় অচল হয়ে পড়ে অস্ট্রেলিয়ার বেশ কয়েকটি বড় বন্দর। যা বিশ্বজুড়ে শিপিং খাতের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির বিষয়টি আরো স্পষ্ট করল।

অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বন্দর পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বহুজাতিক কম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ড সাইবার হামলার শিকার হয়। এ কম্পানিটির বন্দরগুলোর মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ার ৪০ শতাংশ পণ্য বাণিজ্য হয়। এ হামলায় কয়েক দিনের জন্য তাদের অনলাইন কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে হয়। বিশ্বজুড়ে বন্দরগুলোতে যে সাইবার হামলা শুরু হয়েছে, এটি তার সর্বশেষ ঘটনা।

সাইবার নিরাপত্তায় হুমকির বিষয়টি ধরা পড়ার পর দুবাইয়ের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ডের অধীন ডিপি ওয়ার্ল্ড অস্ট্রেলিয়া মেলবোর্ন, সিডনি, ব্রিসবেন এবং পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার ফ্রেমান্টেলে তাদের কনটেইনার টার্মিনালের কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করে। ডিপি ওয়ার্ল্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১৮টি ভিন্ন স্থানে তাদের বন্দর ও টার্মিনাল রয়েছে, যেখানে সাত হাজারের বেশি মানুষ কর্মরত।

কারা টার্গেটে পড়ছে

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাইবার হামলায় বিশ্বের বেশ কিছু ব্যস্ত বন্দরের কার্যক্রম আংশিক বা পুরোপুরি বিঘ্নিত হয়েছে। গত জুলাই মাসে জাপানের অন্যতম ব্যস্ত বন্দর নাগোইয়াতে সাইবার হামলা হয়। এতে কয়েক দিনই বন্দরের কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়।

গত বছর পশ্চিম ইউরোপের কয়েকটি বন্দরে তেল টার্মিনালগুলো সাইবার হামলায় পড়ে। এতে বন্দরগুলোতে জাহাজ কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়। ২০১৭ সালে ‘নটপেটায়া’ ম্যালওয়ার বিশ্বজুড়ে জাহাজ পরিবহন ব্যবস্থায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে বৈশ্বিক শিপিং জায়ান্ট মায়েরেস্কের কার্যক্রম অচল হয়ে পড়ে। এ ছাড়া নেদারল্যান্ডস, কানাডা, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও যুক্তরাষ্ট্রের বড় বন্দরগুলোতেও সাইবার হামলা হয়েছে। লা ফার্ম জনস ওয়াকার পরিচালিত ২০২২ সালের একটি জরিপে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজশিল্পের প্রায় ৭৫ শতাংশ নির্বাহী বলেছেন, তাঁদের কম্পানি সাইবার হামলার শিকার হয়েছে।

উদ্বেগ বাড়ছে যে কারণে

বিশ্ব অর্থনীতির প্রাণশক্তি মনে করা হয় জাহাজ চলাচলকে। জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠান আংকটাডের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের পণ্য পরিবহনের ৮০ শতংশের বেশি হয় জাহাজে। একটি হামলায় এ খাতের পুরো কাঠামোই অচল হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে যায়। কারণ একটি বন্দরব্যবস্থায় হামলা হলে পুরো সরবরাহব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়, যা লজিস্টিক্যাল দুঃস্বপ্ন হয়ে ওঠে। সিডনিতে ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়্যালসের সহকারী অধ্যাপক রব নিকলস বলেন, ‘যদি আপনি একটি দুর্বলতা খোঁজেন তাহলে পুরো ব্যবস্থাই একটি টার্গেটে পড়ে যায়। সে কারণেই বিশ্বজুড়ে শিপিং লাইনের জন্য বন্দরগুলোকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো মনে করা হচ্ছে। কারণ এর একটিতে আঘাত করলে পুরো সরবরাহব্যবস্থাই অচল হয়ে পড়তে পারে।’

যুক্তরাষ্ট্রের সাইবারস্পেস সলারিয়াম কমিশন এ বছর এক প্রতিবেদনে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ‘জাহাজ পরিবহনের জটিল ইকোসিস্টেমে যদি একটি সাইবার হামলা হয় তবে তা হবে বিশ্ব অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত বিপর্যয়কর।’

জাহাজ চলাচল আগের চেয়ে ঝুঁকিতে

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৈশ্বিক জাহাজ চলাচল ব্যবস্থায় স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি ও সংযুক্তি বেড়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button