Bangladesh

বাড়ি ফ্ল্যাটে রমরমা বিপিসির সেলিম

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রাথমিক অনুসন্ধানে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) মহাব্যবস্থাপক (হিসাব) এ টি এম সেলিমের অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ মিলেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে একটি ছয়তলা বাড়ি, রাজধানীর বনানী ও গুলশানে তিনটি ফ্ল্যাটের তথ্য পাওয়া গেছে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিপিসির জিএম সেলিমের বিরুদ্ধে জমা হওয়া অভিযোগের প্রাথমিক তদন্তে কিছু তথ্যপ্রমাণ পাওয়ার পর পূর্ণাঙ্গ অনুসন্ধানের জন্য দুদকের সহকারী পরিচালক মো. রাজু আহমেদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি ব্যাংক, বীমা ও সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন দপ্তরের চিঠি পাঠিয়ে তথ্য জোগাড়ের পাশাপাশি যাচাই-বাছাই করছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে গত ২৫ নভেম্বর বিকেলে এ টি এম সেলিমের মোবাইল ফোনে কলা দেওয়া হলে তিনি ফোন ধরেননি। পরে তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

দুদকের তথ্যমতে, চলতি বছরের ২২ মার্চ বিপিসির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) এ টি এম সেলিমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে শত-কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ জমা পড়ে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে বিপিসিতে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর গত ৮ মে অনুসন্ধান শুরু করে সংস্থাটি। এ অভিযোগটি অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দুদকের চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়-১ এর সহকারী পরিচালক মো. রাজু আহমেদকে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি অনুসন্ধানের স্বার্থে গত ৩০ আগস্ট সেলিমের তথ্য-উপাত্ত চেয়ে ব্যাংক, বীমা, সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠান। ওই চিঠিতে সেলিম, তার স্ত্রী সুলতানা দিল হাসনাত ও দুই সন্তানের নামে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য সাত কর্মদিবসের মধ্যে দুদকে পাঠানোর জন্য বলা হয়।

সেলিমের নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ১০ ফ্ল্যাট থাকার কথা বলা আছে অভিযোগে। অভিযোগে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামের ফয়’স লেক আবাসিক এলাকায় তিনি বিলাসবহুল একটি ছয়তলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। হাজি আবদুল হামিদ রোডের ২/এ নম্বর ওই ভবনটি তিনি স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে নিয়ে থাকেন। সাত কাঠা জমির ওপর নির্মাণ করা বাড়িটির নাম তার শাশুড়ি জ্যোৎস্নার নামে রাখা হয়েছে। এছাড়া তার রাজধানী বনানীর ৯/এ নম্বর ভবনে, গুলশান-১ এর ২৩ নম্বর রোডে, গুলশান-২ এর ৪২ নম্বর রোডে ফ্ল্যাট রয়েছে। ধানম-ির ২৭ নম্বরে ফ্ল্যাট থাকার অভিযোগ থাকলেও সে ব্যাপারে পুরো তথ্যপ্রমাণ এখনো মেলেনি। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ায় সেলিম তার বন্ধু আবদুল করিমের মাধ্যমে সেখানে বাড়ি কিনেছেন। 

সেলিমের চাকরি পাওয়া নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিপিসি ১৯৯৯ সালে চারজন সহকারী ব্যবস্থাপক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। নিয়োগ বোর্ড পরীক্ষার মাধ্যমে সংস্থাটির হিসাব বিভাগে চারজনকে নিয়োগ দেয়। নিয়োগ পাওয়ার তিন মাসের মাথায় মো. মনিরুল ইসলাম নামের একজন চাকরি ছেড়ে আগের কর্মস্থল সিলেট গ্যাস ফিল্ডে যোগদান করেন। একটি পদ শূন্য হওয়ার পর সেলিমের চাচা বিপিসির তৎকালীন কোম্পানি সচিব কামাল উদ্দিন সংস্থার পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক পদে এ টি এম সেলিমকে নিয়োগ দেন। এ ক্ষেত্রে নিয়মনীতি মানা হয়নি বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

মোংলা অয়েল ইনস্টলেশন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগও আছে বিপিসির জিএম সেলিমের বিরুদ্ধে। তিনি এ প্রকল্পের সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে ছিলেন। প্রকল্পটির আরডিপিপি (সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) অনুযায়ী, অনুমোদিত ব্যয় ছিল ২০৫ কোটি ৪৬ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। কিন্তু খরচ দেখানো হয়েছে ২০৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। অনুমোদন থেকে অতিরিক্ত ৪ কোটি টাকার বেশি ব্যয় করায় ২০২০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি অডিট আপত্তি দিয়েছে অডিটকারী প্রতিষ্ঠান খান ওয়াহাব শফিক রহমান অ্যান্ড কোম্পানি। প্রকল্পের শুরুতে ৫০ শতাংশ অগ্রগতি দেখিয়ে ম্যাক্সওয়েল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস ও পাইপলাইন লিমিটেডকে বিল দেওয়ার বিষয়টি উঠে আসে অডিট রিপোর্টে। অডিটকালে প্রকল্পের অনেক বিল-ভাউচারের হদিস পাওয়া যায়নি। এছাড়া প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার বছর না পার হতেই অফিস ও আবাসিক ভবনের বারান্দায় ফাটল দেখা দেয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

এছাড়া বিপিসির অধীনস্ত প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণে দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগ আছে সেলিমের বিরুদ্ধে। প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা নয়-ছয় করা হয়েছে। জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ধানি জমির একরপ্রতি মূল্য ৩ লাখ ও পানের বরজ থাকা জমির মূল্য একরপ্রতি ৬৩ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। অধিগ্রহণকালে ধানি জমিকে পানের বরজ দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এর মধ্যে ৯৬ লাখ ৬০ হাজার টাকার বেশি লোপাটের তথ্য দুদকের হাতে রয়েছে। ২০২০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ঘুষের টাকা ভাগাভাগির সময় ৬৬ লাখ ৭৫ হাজার ৫৫০ টাকাসহ একজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এ ঘটনার সঙ্গেও এ টি এম সেলিম জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ আছে, স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েলে দুর্নীতি বন্ধে বিপিসিতে অটোমেশনের উদ্যোগ নিলে সেলিম চক্রের বাধার কারণে সেটি থেমে যায়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button