বাদী নিয়ে মামলাবাজদের টানাটানি, প্রলোভন
রাজধানীর পল্টনের বটতলা গলিতে ১৯ জুলাই নিহত হন রিকশাচালক কামাল মিয়া (৩৯)। তাঁর স্ত্রী ফাতেমা খাতুন এখন এক অম্লমধুর সমস্যায় পড়েছেন। নিহতের পরিবারের পক্ষ হয়ে মামলা করতে অনেকে তাঁকে দিচ্ছেন নানা টোপ। কেউ কেউ তাঁর বাসায় গিয়ে দেখা করেছেন। মামলা করার অনুমতি দিলে মেয়েকে ভালো চাকরি দেওয়ার প্রলোভনও দেখাচ্ছেন।
ফাতেমা সমকালকে বলেন, ‘তারা মামলা করার আবদার নিয়ে আসছেন। কী স্বার্থ তাদের? এত চাপাচাপি কেন করেন বুঝি না। স্বামীকে হারাইছি, মাথাব্যথা আমার। যারা দোষী না, তাদের কেন জড়াব? আল্লাহর কাছে আমার জবাব দেওয়া লাগব না?’
তিনি আরও জানান, তাঁর পাশের এক ভাড়াটিয়া কিছুদিন আগে অচেনা একজনকে নিয়ে আসেন। তিনিও মামলা করার অনুরোধ করেন। আরও কয়েকজন যোগাযোগ করেছেন। ফাতেমা সবাইকে বলেছেন, তিনি একটা মামলা করেছেন। আর কোনো মামলা করতে চান না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নরসিংদীর বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ ইউনিয়ন ও একই গ্রামের কামাল মিয়া নিহত হওয়ার পরদিন তাঁর স্ত্রী বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন। মামলাটির তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
তবে একই ঘটনায় গত ৩০ অক্টোবর শাহরিয়ার শুভ নামে একজন বাদী সেজে ২৮১ জনকে আসামি করে আদালতে একটি মামলা করেন। অথচ কামালের স্ত্রী ওই মামলা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। এর পর পল্টন থানা পুলিশ আদালতে জানায়, কামাল নিহতের ঘটনায় এরই মধ্যে মামলা হয়েছে।
জানতে চাইলে কামালের স্ত্রী ফাতেমা খাতুন বলেন, তিনি শাহরিয়ার শুভ নামে কাউকে চেনেন না। তাঁর ভাষায়, ‘মারা গেছেন আমার স্বামী, সে মামলা করবে কেন? আমার স্বাক্ষর ছাড়া কীভাবে সে মামলা করল? খোঁজ পেলে আমি শুভর বিরুদ্ধে মামলা করব। জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে আমাদের ৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। আমার লায়েক কোনো ছেলে নেই। নির্দোষ ব্যক্তিদের ফাঁসালে বিবেকের কাছে কী জবাব দেব?’
শুধু ফাতেমাই নন, শহীদ পরিবারের স্বজনের এখন বেশ কদর মামলাবাজদের কাছে। বেশ কয়েকটি মামলার তথ্য বিশ্লেষণ করে তাতে নানা অসংগতি পাওয়া গেছে। এসব মামলায় কারা আসামি, তা জানে না ভুক্তভোগী পরিবার। কিছু মামলায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক শত্রুদের আসামি করা হচ্ছে। অনেক সময় মামলা দিয়ে টাকা দাবি করা হয়। বলা হয়, টাকা দিলে মামলা থেকে নাম বাদ দেওয়া হবে। এ ছাড়া এরই মধ্যে কিছু কথোপকথন ফাঁস হয়েছে; যেখানে মামলা থেকে নাম কাটানোর কথা বলে টাকা দাবি করতে শোনা গেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলা বিএনপি নেতা মহসিন আহমেদ ভূঁইয়ার একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। মামলার আসামির তালিকা থেকে নাম বাদ দিতে উপজেলার পত্তন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য হৃদয় আহমেদ জালালের কাছে মহসিন চাঁদা দাবি করেন বলে অভিযোগ ওঠে। সম্প্রতি রাজশাহীতেও টাকার বিনিময়ে নাম কাটানোর আলাপের একটি অডিও ছড়িয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ঢালাও মামলার পেছনে কারা রয়েছে, তা বের করতে টাস্কফোর্স গঠন করা উচিত। হয়রানিমূলক মামলার ব্যাপারে অনেক অভিযোগ পাচ্ছি। ভুয়া মামলা দায়েরে জড়িতদের মধ্যে দু’একজনকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিলে অন্যরা সতর্ক হবে।
তিনি বলেন, আগে মামলা নিয়ে যা হতো, এখনও একই ঘটনা ঘটবে– এটার জন্য তো এতগুলো মানুষ জীবন দেয়নি। মামলায় স্বচ্ছতা নিশ্চিতে কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এ জন্য আমি কিছুটা হতাশ। একেকটি হয়রানিমূলক মামলা ভুক্তভোগীর পরিবারকে বিপর্যস্ত করে তোলে।
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, কেউ মিথ্যা মামলা করলে দণ্ডবিধির ২১১ ধারায় সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। অহেতুক কাউকে মামলায় জড়ানো হলে তাকে হয়রানি করা ঠিক হবে না। তদন্তের পর চার্জশিট থেকে নাম বাদ যাবে।
পুলিশ সদরদপ্তরের মুখপাত্র এআইজি ইনামুল হক সাগর বলেন, নির্ভুল তথ্যের মামলার ক্ষেত্রে বাদীর একটি ভূমিকা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে সম্পৃক্ততার বিষয়টি যাচাইয়ের পর মামলার রেকর্ড করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া আছে। এরপর নিরপরাধ কেউ আসামি হয়ে গেলে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তদন্তে তাদের নাম বাদ দিয়ে চার্জশিট দেওয়া হবে।
ঢালাও মামলা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে বারবার উষ্মা প্রকাশ করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইন্সে মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, আগে ভুয়া মামলা করত পুলিশ। তারা ১০টা নাম আর ৫০টা বেনামি আসামি দিত। এখন ভুয়া মামলাগুলো করছে জনগণ। তারা ১০টা নাম, ৫০টা বেনামি আসামিও দিচ্ছে। ভুয়া মামলাগুলোতে কাউকে যাতে হয়রানি করা না হয়, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া আছে।
সম্প্রতি রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে গায়েবি মামলা হতো। সরকারের পক্ষ থেকে গায়েবি মামলা দিত। আর এখন আমরা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো মামলা দিচ্ছি না। সাধারণ লোকজন, ভুক্তভোগী লোকজন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ অন্যদের ব্যাপারে ঢালাও মামলা দিচ্ছে। ঢালাও মামলার মারাত্মক প্রবণতা দেশে দেখা দিয়েছে।’
আসামিদের কাউকে চেনেন না রিপনের স্ত্রী
পুরান ঢাকায় রিকশাভ্যান চালিয়ে কষ্টে জীবিকা নির্বাহ করতেন ৩৬ বছর বয়সী মো. রিপন। গণআন্দোলন চলাকালে তাঁতীবাজার এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ আগস্ট তাঁর মৃত্যু হয়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে মহাবিপাকে পড়েছেন তাঁর স্ত্রী শামীমা আকতার রুমা। প্রতিবন্ধী ছেলে ও স্কুলপড়ুয়া মেয়ের মুখে খাবার তুলে দিতে পারছেন না মা। এখন পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারি কোনো সাহায্যও পাননি। আগামী দিনগুলোর কথা ভেবে চোখে অন্ধকার দেখছেন তিনি।
তাঁর কষ্টের এই সময়ে কেউ সাহায্যের হাত না বাড়ালেও রিপন হত্যা মামলা নিয়ে শুরু হয়েছে টানাহেঁচড়া। কয়েক ব্যক্তি রুমাকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এনে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা করিয়েছেন। ঢাকায় যাওয়া-আসা, থাকা-খাওয়ার খরচ তারাই দিয়েছেন। শুধু তাদের কথামতো এজাহারে স্বাক্ষর করেছেন বাদী। তবে তিনি আসামিদের কাউকেই চেনেন না। অন্যদিকে এ মামলার তিন সপ্তাহ পর রিপনের মা সুফিয়া বেগম বাদী হয়ে আদালতে আরেকটি মামলার আবেদন করেন। দুই মামলায় ঘটনার স্থান, বর্ণনা ও আসামির তালিকায় কিছু পরিবর্তন রয়েছে। দুই পক্ষেরই দাবি, অন্যপক্ষ বিএনপি-জামায়াতের লোকজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে মামলা করেছে।
রিপন হত্যার ঘটনায় প্রথম মামলাটি হয় গত ২৮ আগস্ট। এজাহারে বলা হয়েছে, গত ৫ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে তাঁতীবাজার মোড় এলাকায় ছিলেন তিনি। তখন সেখানে আন্দোলনরতদের ওপর হামলা চালায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। তারা এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। এর মধ্যে গলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়েন রিপন। তাঁকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গভীর রাতে তাঁকে নেওয়া হয় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ আগস্ট রাত পৌনে ৮টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় দায়ের মামলার আসামির তালিকায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানসহ আওয়ামী লীগ, এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ৩১ জনের নাম রয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২০০ থেকে ২৫০ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
দুই মামলায় দুই বর্ণনা
গত ১৮ সেপ্টেম্বর রিপনের মা সুফিয়া বেগমের করা এজাহারে বলা হয়েছে, বংশাল থানা এলাকার তাঁতীবাজার মোড় ও বংশাল চৌরাস্তার মধ্যবর্তী স্থানে ঘটনাটি ঘটে। গত ৫ আগস্ট সরকার পতন হলেও এজাহারে বলা হয়, ৬ আগস্ট রাত দেড়টার দিকে মায়ের চিকিৎসা করিয়ে বাসায় ফিরছিলেন রিপন। হঠাৎ ওই স্থানে পুলিশের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। তাদের পিটুনিতে আহত হয়ে রিপন মাটিতে পড়ে যান। তখন বংশাল থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আজহার উদ্দিন অন্য আসামিদের সহযোগিতায় রিপনের গলার ডান পাশে গুলি করে। রাত সোয়া ২টার দিকে তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে সুফিয়ার মোবাইল ফোনে কল করা হলে রিসিভ করেন তাঁর স্বামী ফারুক হোসেন। তাঁর দাবি, পুত্রবধূর করা মামলার তথ্য ঠিক নেই। তিনি হয়তো বিএনপি-জামায়াতের লোকজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে মামলাটি করেছেন। তাই তারা নতুন করে মামলার আবেদন করেন। পুত্রবধূর করা মামলা বাতিলের চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি।
রিপনের স্ত্রী রুমা বলেন, ‘আমি তো মামলা করেছি। তাহলে আবার মামলা করার দরকার কী? আমার তো মনে হয়, উনারা কারও কাছ থেকে টাকা নিয়ে মামলা করেছেন।’
অবশ্য সুফিয়ার মামলার আবেদন নথিভুক্ত করেনি পুলিশ। সিআরপিসির ১৩২ ধারা মেনে অভিযোগপত্রটি এজাহার হিসেবে গণ্য করতে বংশাল থানাকে নির্দেশ দেন চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। তবে বংশাল থানা আদালতকে জানায়, কোতোয়ালি থানার মামলার এজাহার এবং আদালতে দায়ের করা অভিযোগ পর্যালোচনায় দেখা যায়, একই ঘটনায় দুটি মামলার আবেদন করা হয়েছে।
স্ত্রীর মামলায় ২৫০ নেতাকর্মীকে আসামি করা হলেও মায়ের মামলার আবেদনে ১৭২ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায়ও শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খানসহ আগের মামলার কিছু আসামি রয়েছেন।
এক মামলায় ২৮১ আসামি, ফরিদপুরেরই ৬৪ জন
রিকশাচালক কামাল মিয়া নিহতের ঘটনায় আদালতে শাহরিয়ার শুভ বাদী হয়ে যে মামলা করেন, তাতে ২৮১ জনকে আসামি করা হয়। এই মামলায় ব্যবসায়ী, গণপূর্তের একাধিক প্রকৌশলী, আওয়ামী লীগ নেতা, বিভিন্ন জেলার বাসিন্দাদের নাম দেওয়া হয়েছে। রাজধানীর পল্টনে ঘটনা ঘটলেও মামলায় ফরিদপুরের ৬৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে আছেন সাবেক পৌর মেয়র শেখ মাহতাব আলী মেথু, পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মনিরুল হাসান মিঠু, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফারুক হোসেন, ফরিদপুর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আরিফ, আওয়ামী লীগের সাবেক কাউন্সিলর মোবারক খলিফা প্রমুখ।
তাদের মধ্যে তিনজনের সঙ্গে কথা হয় সমকালের। তারা বলেন, হত্যায় জড়িত থাকার প্রশ্নই আসে না। ঘটনার আগে-পরে তারা কখনোই পল্টনে যাননি। অসৎ উদ্দেশ্যে মামলা করা হয়েছে। বাড্ডা থানায়ও একই ধরনের আরেকটি মামলা করা হয়। এসব মামলায় পেছন থেকে ফরিদপুরের কেউ কলকাঠি নেড়েছে। একই মামলায় একসঙ্গে মতিঝিল, রমনা ও পল্টন থানার সাবেক তিন ওসিকে আসামি করা হয়।
প্রশ্নবিদ্ধ মামলা
এখন পর্যন্ত চারটি মামলার আসামি হয়েছেন– এমন ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া গেছে। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাডাইডার, ডিশ ও মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবসা রয়েছে তাঁর। নাম প্রকাশে ভীত ওই ব্যবসায়ী গতকাল শুক্রবার জানান, কোনো ধরনের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নেই তাঁর। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করতেই একের পর এক মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে তিনটি হত্যা ও একটি হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি তিনি। এসব মামলা নিয়ে গ্রেপ্তারের আতঙ্কে এখন বাড়িছাড়া।
এ ছাড়া পরিবর্তিত পরিস্থিতির অপব্যবহার করে অনেক আগের ঘটনায় এখন নানা ধরনের মামলা হচ্ছে। এই ধরনের একটি মামলা হয়েছে ফরিদপুর সদর উপজেলার ডিক্রিরচরের ইউপি চেয়ারম্যান মেহেদি হাসান মিন্টু ও তাঁর চার ভাইসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে। ২০২০ সালের ৬ নভেম্বর হিরু শেখ নামে একজন মারা যাওয়ার ঘটনায় তাঁর ছেলে শেখ রুমন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। বাদীর অভিযোগ– পোস্টার লাগানোর জের ধরে তাঁর বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। তবে এই মামলার অন্যতম আসামি মিন্টু বলছেন, হামলা বা মারধরের কোনো ঘটনায় তাঁর পরিবার জড়িত নয়। আরও কয়েকটি মামলায় তাঁকে জড়ানো হয়। এসব পুঁজি করে অর্থ আদায়ের চেষ্টা চলছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন ঢাকার আশুলিয়ায় ছাত্র-জনতার বিজয় মিছিল চলাকালে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের গুলিতে স্বামী নিহত হয়েছেন উল্লেখ করে গত ২৪ অক্টোবর কুলসুম বেগম নামের এক নারী মামলা করেন। এতে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৩০ জনকে আসামি করা হয়। পরে এটি আশুলিয়া থানায় এজাহারভুক্ত হয়। এর তিন মাস পর তাঁর স্বামী থানায় এসে হাজির হয়ে জানান, তাঁর অজান্তে স্ত্রী তাঁকে মৃত দেখিয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে মামলা করেছেন।
১৪০ জন মিলে ২০ হাজার টাকা চুরি!
ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় একটি মামলা করেন। এজাহারে তিনি বলেছেন, ২০২৩ সালের ২৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় মগবাজার টিঅ্যান্ডটি কলোনি থেকে বাসায় ফিরছিলেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন গাজীপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সম্রাট ভূঁইয়া। নয়াটোলা তিন রাস্তার মোড়ে আসামিরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাদের আটক করে। একটি বেকারিতে রেখে তাদের বেধড়ক পেটানো হয়। ওই সময় আসামিরা তাঁর পকেটে থাকা ২০ হাজার টাকা চুরি করে। এ ঘটনায় তিনি ৭২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৭০-৮০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। তাদের মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের থানা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা রয়েছেন।