Bangladesh

বাদী-বিবাদীর সরাসরি সাক্ষ্য লাগবে না দেওয়ানি কার্যবিধি সংশোধন

বাদী ও বিবাদীকে প্রচলিত পদ্ধতিতে সাক্ষ্য দিতে হবে না। এফিডেভিটের মাধ্যমে দাখিলকৃত তাদের আরজি বা জবাবের লিখিত বক্তব্যই সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য হবে এবং তার ওপর হবে জেরা। মামলা মুলতবি চাওয়ার সুযোগেও পরবে লাগাম। আদালতে মামলাজট নিরসনে দেওয়ানি আইনের কার্যবিধিতে এমন বেশ কিছু সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে বিচারাধীন দেওয়ানি মামলা ১৭ লাখ ৫৪ হাজার ১৫৭টি। বাদী-বিবাদীর সাক্ষ্য গ্রহণে দেরিসহ নানা কারণে অনেক মামলা ৫০-৬০ বছর ধরে ঝুলছে। সংশোধনী কার্যকর হলে আদালতের কর্মঘণ্টা বাঁচবে; আমূল বদলে যাবে সাক্ষ্য ব্যবস্থাপনা। মামলার সঙ্গে জড়িতদের ভোগান্তি কমে আসবে।

আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যমান নিয়মে দেওয়ানি মামলায় বাদী-বিবাদী আরজি বা জবাবের বক্তব্য মৌখিকভাবে জবানবন্দি হিসেবে দিয়ে থাকেন। দিনের পর দিন আদালত তা গ্রহণ করেন। সংশোধনীতে আরজি এফিডেভিট করলেই তা জবানবন্দি হয়ে যাবে। বাদী-বিবাদীকে নতুন করে আদালতের সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে দিনের পর দিন জবানবন্দি দিতে হবে না। এফিডেভিটে যা আছে, তার ওপর জেরা করা হবে।

এ ব্যাপারে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল সমকালকে বলেন, ‘দেওয়ানি কার্যবিধি সংশোধন হলে সাক্ষ্য গ্রহণে সময় অনেক কমে যাবে। দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির সংখ্যা বেড়ে যাবে, কমবে খরচ। বিচারপ্রার্থীরা উপকৃত হবেন।’

এদিকে দেওয়ানি কার্যবিধি সংশোধনী আইন চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আজ বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তোলা হতে পারে। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এ বৈঠক হবে। সভাপতিত্ব করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনের পর তা কার্যকর হবে।

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি খসড়া অধ্যাদেশের ওপর মতামত চেয়ে তা ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়। 

১৯০৮ সালের দেওয়ানি কার্যবিধির বিদ্যমান নিয়মে, প্রতিটি পর্যায়ে এখন মামলা নিষ্পত্তির সময় বেঁধে দেওয়া রয়েছে। তবে সংশোধনী আইনের খসড়ায় এটি উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। যুক্ত করা হচ্ছে অনলাইন পদ্ধতিতে মামলা নিষ্পত্তির বিধান। সংশোধনের ফলে মূল মোকদ্দমাতে আদালতের রায় বাস্তবায়নের জন্য আবেদন করা যাবে।

আদালতের রায় বাস্তবায়ন না করলে পৃথক মামলার প্রয়োজন পড়বে না। এসএমএস, ভয়েস কল, হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে সমন জারি করা যাবে। এতে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্রুত ও সহজে মামলার তথ্য সম্পর্কে জানা সম্ভব হবে।

অর্থ আদায়ের মামলায় বিশেষ বিধান যুক্ত করা হয়েছে প্রস্তাবিত সংশোধনীতে। এতে বলা হয়েছে, বাদীকে মামলা করতে হলে আরজিতে নিজের ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে হবে বিবাদীর এনআইডি, ই-মেইল নম্বর উল্লেখ করতে হবে। মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলার জরিমানার ক্ষেত্রে জরিমানার পরিমাণ ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হচ্ছে। সংশোধনীতে রিমান্ডের সুযোগ সীমিত করা হয়েছে। আদালত তার আদেশ ও রায় বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করতে পারবে।

অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ শাহজাহান সাজু সমকালকে বলেন, গত ১১৭ বছরে জনসংখ্যা অনেক বেড়েছে; চাপ পড়েছে জমিতে। মামলাও বেড়েছে হাজার হাজার। সময়ের প্রয়োজনে দেওয়ানি আইনের কার্যবিধি সংশোধন জরুরি হয়ে পড়েছে। ডিজিটাল যুগে অনলাইন বিধান চালু করার পরামর্শ দেন তিনি।

বিচারাধীন মামলা সাড়ে ১৭ লাখ

সূত্র জানায়, গত বছর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ১৭ লাখ ৫৪ হাজার ১৫৭টি দেওয়ানি মামলা বিচারাধীন। প্রতিদিনই নতুন মামলা যোগ হচ্ছে। বর্তমানে বিচারিক আদালতে ১৬ লাখ ৩৬ হাজার ২৪৭ এবং সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে ৯৮ হাজার ৬১৯ ও আপিল বিভাগে বিচারাধীন মামলা রয়েছে ১৯ হাজার ২৯১টি। বিচারিক আদালতে পাঁচ বছরের বেশি সময় বিচারাধীন ৪ লাখ ১১ হাজার ১১৮ মামলা। এ ছাড়া উচ্চ আদালতের নির্দেশে বিচার স্থগিত ৪ হাজার ৮৬৪টি মামলার।

জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধে সিলেটের গোয়াইনঘাটের আসিরুন নেসা ১৯৫৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর মুনসেফ আদালতে মামলা করেন। ১৯৬২ সালের ২৩ আগস্ট বাদীর পক্ষে রায় দেন বিচারিক আদালত। ২০০৫ সালে আসিরুনের মৃত্যুতে নতুন বাদী হন তাঁর মেয়ে হামিদা খাতুন (৭০)। মামলার একাধিক বিবাদীও মারা গেছেন। ৬৩ বছর পর ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি সর্বোচ্চ আদালত মামলাটি নিষ্পত্তি করে রায় দেন। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর দখল বুঝে পেতে আরও কয়েক বছর লেগেছে হামিদার। আসিরুন নেসার মতো অনেক মামলা দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে রয়েছে।

৩৮ বছরেও হয়নি বাংলা

দেশের সর্বত্র বাংলা ভাষা চালুর লক্ষ্যে ১৯৮৭ সালের ৮ মার্চ হয় ‘বাংলা ভাষা প্রচলন আইন। এতে বলা হয়, সরকারি অফিস-আদালত, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বিদেশের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যতীত অন্য সব ক্ষেত্রে নথি ও চিঠিপত্র, আইন-আদালতের সওয়াল-জবাব এবং অন্যান্য আইনানুগ কার্যাবলি অবশ্যই বাংলায় লিখতে হবে। ইতোমধ্যে পাঁচ শতাধিক আইনের বাংলা অনুবাদ করা হয়েছে। কিন্তু দেওয়ানি কার্যবিধি ইংরেজিতেই রয়ে গেছে।

একাধিক বাদী-বিবাদীর অভিযোগ, ইংরেজি ভাষার কারণে আইনটি তারা বুঝতে পারেন না। আইন বোঝার জন্যও আইনজীবীকে বাড়তি ফি দিতে হয়। অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ শাহজাহান সাজু বলেন, ‘দেওয়ানি কার্যবিধির মূল আইনও বাংলা হলে জনগণ বেশি উপকৃত হতেন। এটি সংসদে অনুমোদন প্রয়োজন।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor