Hot

বাধাহীন সমাবেশে জনস্রোত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাল হিসেবে দাঁড়ানোর আহ্বান তারেক রহমানের

প্রতিশোধ-প্রতিহিংসা নয়, ভালোবাসা ও শান্তির সমাজ গড়ার আহ্বান খালেদা জিয়ার

ধ্বংস নয়, প্রতিশোধ নয়, প্রতিহিংসা নয়, ভালোবাসা, শান্তি ও জ্ঞানভিক্তিক সমাজ এবং বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম ও ত্যাগের বিনিময়ে আমরা ফ্যাসিবাদী অবৈধ সরকারের কাছ থেকে মুক্তি পেয়েছি। আমাদের বীর সন্তানদের যারা মরন পণ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। তাদের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই এবং শত শত শহীদদের জানাই শ্রদ্ধা। এই বিজয় আমাদের নতুন সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে। দীর্ঘদিনের নজিরবিহীন দুর্নীতি, গণতন্ত্রের ধ্বংস স্তুপের মধ্য থেকে আমাদের নির্মাণ করতে হবে এক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। তিনি বলেন, ছাত্র-তরুণরাই আমাদের ভবিষ্যত। তরুণরা যে স্বপ্ন নিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছে, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে মেধা, যোগ্যতা, মানবাধিকার, সামাজিক ন্যায়বিচার ও সাম্যের ভিত্তিকে নির্মাণ করতে হবে শোষণহীন সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। বেগম খালেদা জিয়া বলেন, সকল ধর্মের, গোত্রের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। শান্তি, প্রগতি আর সাম্যের ভিত্তিতে আধুনিক বাংলাদেশ নির্মাণে আসুন আমরা তরুণদের হাত শক্তিশালী করি। ধ্বংস নয়, প্রতিশোধ নয়, প্রতিহিংসা নয়, ভালোবাসা, শান্তি ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলি। গতকাল বুধবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর পর প্রথম কোন সমাবেশে গতকালই প্রথম বক্তব্য রাখলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মিথ্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাবন্দী হওয়ার আগে ২০১৭ সালের নভেম্বরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তিনি সর্বশেষ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। এরপর ২ বছরের বেশি সময় ছিলেন কারাগারে এবং পরবর্তী সময় নির্বাহী আদেশে বাসভবন ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে কোন ধরণের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়ার বিষয়ে তার নিষেধাজ্ঞা ছিল। মঙ্গলবার তারা মুক্তির প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর বুধবার ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির সমাবেশে তিনি বক্তব্য রাখেন।

বক্তব্যের শুরুতেই সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, দীর্ঘদিন অসুস্থ্য থাকার পর আপনাদের সামনে কথা বলতে পারার জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। আমার কারাবন্দি অবস্থায় আপনারা আমার কারামুক্তি ও রোগমুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন, দোয়া করেছেন। সেজন্য আমি সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

একই সমাবেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশবাসীকে ধর্ম-বর্ণ-পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাল হিসেবে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, স্বাধীনতাপ্রিয় মানুষ স্বাধীনতা রক্ষায় কোনো শর্ত মানে না। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে ২০২৪ সালে দেশের জনগণ দেখেছে এক নতুন স্বাধীনতা। দেশের চলমান অর্জনকে নষ্ট করতে ষড়যন্ত্র চলছে। ধর্ম-বর্ণ-পরিচয় এর ঊর্ধ্বে উঠে সকলকে নিরাপত্তা দিতে হবে। যে যেখানে বসবাস করছেন সেখানে ধর্মীয় পরিচয় যাই হোক না কেন, সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাল হিসেবে দাঁড়িয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন। বাংলাদেশের ভূখণ্ডে দাঁড়িয়ে সকল জনগণের পরিচয় একটি, সেটি হলো- সবাই বাংলাদেশি।

তারেক রহমান বলেন, পুলিশ জনগণের শত্রু নয়। বিনা ভোটে নির্বাচিত শেখ হাসিনা পুলিশকে জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে বাধ্য করেছে। শেখ হাসিনা পালানোর পর একটি চক্র পুলিশের মনোবল ভাঙতে চেষ্টা চালাচ্ছে। দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপির নামে কেউ যদি অপকর্ম করতে চায় তাকেও আইনের হাতে তুলে দিন। কেউ যদি নিয়ম ভঙ্গ করে, তার বিরুদ্ধেও পুলিশের কাছে অভিযোগ দাখিল করুন। কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। বিচারের ভার দয়া করে নিজ হাতে তুলে নেবেন না। সমালোচনা বা নৈরাজ্যের সমাধান নৈরাজ্য হতে পারে না। প্রশাসনকে সময়োপযোগী করে গড়ে তোলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি আরও বলেন, নিয়োগ বা প্রমোশনে মেধার সর্বাধিকার অগ্রাধিকার থাকতে হবে। উন্নয়নে বৈদেশিক নির্ভরতা কমিয়ে আনতে হবে। দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে বেকার সমস্যা সমাধান করতে হবে। সবার জন্য সুবিচার নিশ্চিত করতে আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে।

তারেক রহমান বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা স্থানান্তর করতে হবে। সকলে ঐক্যবদ্ধ থাকলে আমরা দেশের তরুণদের জন্য একটি নিরাপদ দেশ গড়ে তুলতে পারব।

এদিকে দীর্ঘদিন পর বাধাহীনভাবে রাজধানীতে সমাবেশ করেছে বিএনপি। এরআগে পুলিশের অনুমতি, পথে পথে বাধা, নানারকম প্রতিবন্ধকতা পেরিয়েই সভা-সমাবেশ করতে হয়েছিল বিএনপিকে। দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর পর কোনরকম প্রতিবন্ধকতা ছাড়া এদিন নয়াপল্টনে সমাবেশের আয়োজন করে দলটি। আর এতেই বাধভাঙা জোয়ার নেমে আসে নয়াপল্টনে। দলটির সাম্প্রতিক বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যণীয়। জনসভা ডাকলেই লাখ লাখ লোক জড়ো হতেন এসব কর্মসূচিতে। আর গতকাল সাম্প্রতিককালের সকল রেকর্ড ভেঙে জনস্রোত তৈরি হয় সমাবেশে। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ মঞ্চ তৈরি করা হলেও এটিকে কেন্দ্র করে একদিকে প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনে থেকে শুরু করে নয়াপল্টন-ফকিরেরপুল হয়ে আরামবাগ-মতিঝিল পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য। অন্যদিকে শান্তিনগর, পুরানাপল্টন, দৈনিক বাংলা মোড় পর্যন্ত ছিল সমাবেশের স্রোত।

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অনতিবিলম্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের দাবি জানান। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে আগামী তিন মাসের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করার আহ্বান করছি। তাই, অবিলম্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে হবে। স্বৈরাচার এবং তাদের দোসর পালিয়ে গেছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ যারা করছে এরা আন্দোলনকারী নয়, এরা দেশের শত্রু। এদের বিচার হবে। এসময় হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে ছাত্রদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিজয়কে সুসংহত করার আহ্বান জানান তিনি।

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সুযোগ সন্ধানীদের বিরুদ্ধে নেতাকর্মীদের সজাগ থাকার আহবান জানান। তিনি বলেন, নেতাকর্মীদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে- বিভিন্ন জায়গা থেকে আমার কাছে হামলার অভিযোগ আসছে। আমার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেও আমার কাছে অভিযোগ আসছে, অনেকে সুযোগ সন্ধানী হয়ে বিভিন্ন জায়গায় গণ্ডগোল থেকে শুরু করে নানা অপকর্ম করতে চাচ্ছে। এসব সুযোগ সন্ধানীদের বিরুদ্ধে নেতাকর্মীদের সজাগ থাকতে হবে। বহু লোক এখন খোলস পালটে সুযোগ-সুবিধা নিতে চাইবে, তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, শেখ হাসিনা পালিয়েছেন, তবে তার প্রেতাত্মারা এখনো দেশে রয়েছে। তাদের হাত থেকে সাবধান। তিনি বলেন, আজকে যা অর্জন হয়েছে তার সকল অবদান ছাত্রদের। বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্রদের কোনো আন্দোলন ব্যর্থ হয়নি। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে কে প্রধান উপদেষ্টা হবেন- সেটা আমাদের ভাবার বিষয় না। আমাদের দাবি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে জনগণের নির্বাচনে নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে হবে।

বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, পাড়া-মহল্লায় নব্যবিএনপি সৃষ্টি হয়েছে। তারা বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালাচ্ছে, লুটপাট করছে। এদের সাথে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই। এদের ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। আপনারা যারা হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন, ভাই হারিয়েছেন- আর একটু কষ্ট করে এসব হামলা ঠেকাতে হবে। পুলিশ বাহিনীর উদ্দেশে গয়েশ্বর রায় বলেন, পুলিশ সদস্যদের মধ্যে সবাই অন্যায় করেছেন- বিষয়টি সঠিক নয়। সুতরাং আপনাদের সবার ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, দেশে পরিবর্তনের চিহ্ন পাওয়া যাচ্ছে। দেশের মানুষ তার মালিকানা ফিরে পেয়েছে। বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছে। জনগণ মুক্ত হয়েছে। আমরা মুক্ত বাংলাদেশ গড়ব।

তিনি বলেন, যাদের রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হলো তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন। এই আন্দোলনে ছাত্র ও শিশুরা প্রাণ দিয়েছে। বয়স্করা প্রাণ দিয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে এত হত্যাকাণ্ড ঘটেনি। যারা প্রাণ দিয়েছে তারাই এই আন্দোলনের মহানায়ক। সবাই রাস্তায় নেমে দুঃসাহসিক ভূমিকা পালন করেছে।

তিনি বলেন, রক্তের বিনিময় দিতে হবে। সেটা হলো বাংলাদেশের সকল মানুষের সমান অধিকার। বাংলাদেশের সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক অধিকার পুরোপুরিভাবে ফিরিয়ে দিতে হবে। ছাত্রজনতার এই আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনীতির চিত্র বদলে দিয়েছে। দেশের জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে। এর মাঝামাঝি করার সুযোগ নেই।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমানসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d