Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
Hot

বানের পানি নামছে, বিধ্বস্ত ঘর নিয়ে দুশ্চিন্তা, আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ফিরে নতুন জীবনযুদ্ধ

মৃত্যু বেড়ে ২৭, এখনও পানিবন্দি ১২ লাখ পরিবার

ফেনীর ছাগলনাইয়ার শিলুয়া গ্রামের বেলাল হোসেনের ঘরে গত বুধবার রাতে হু হু করে পানি ঢোকে। জীবন বাঁচাতে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে আশ্রয় নেন স্থানীয় একটি স্কুল ভবনের দোতলায়। গতকাল মঙ্গলবার থেকে পানি নামতে থাকায় বাসায় ফিরে দেখেন, তাঁর ঘর লন্ডভন্ড। ঘরে থাকার মতো অবস্থা নেই। প্রিয় আঙিনা ছেড়ে তিনি আবার ছোটেন স্কুল ভবনে। বেলালের পুকুরের সব মাছও ভেসে গেছে। ছোট্ট মুরগির খামার ছিল, তাও বানের তোড়ে হাওয়া। এখন কী করবেন, দিশাহীন তিনি। বেলালের আশা, সরকার দ্রুত সহায়তার হাত বাড়াবে। 

ছাগলনাইয়া শহরের মাইলের মাথার পূর্বপাড়ে একটি মহল্লায় সড়কের ধারে বাস করে ২০টি পরিবার। গত বৃহস্পতিবার পরিবারগুলো আশ্রয় নেয় বাশার সিটি আশ্রয়কেন্দ্রে। গতকাল ওই এলাকা থেকে পানি নেমে গেছে। ঘর থেকে পানি সরলেও সবকিছু তছনছ। গতকাল দেখা গেছে, দীর্ঘদিনের সাজানো ঘরের ধ্বংসযজ্ঞ দেখে অনেকেই কাঁদছেন। মহল্লার বাসিন্দা মোস্তাফা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমাদের সব শেষ। কীভাবে ঘর ঠিক করব? জীবনটা বড় কঠিন হয়ে গেল। মাথার ওপর ঋণের বোঝা। কীভাবে তা শোধ করব?’

ফেনী শহরের পানি নেমেছে দু’দিন আগে। ডুবে ছিল ছাগলনাইয়া, পরশুরাম ও ফুলগাজীর বিস্তীর্ণ জনপদ। এখনও পানিবন্দি ফেনীর অন্য উপজেলার কিছু এলাকা। কিছু এলাকায় পানি নেমে যাওয়ায় এক সপ্তাহ পর ভেসে উঠতে শুরু করেছে ডুবে থাকা বাড়িঘর। গতকাল অনেকে ঘরের অবস্থা দেখতে পথে নামেন। তবে নিজের ঘরের চেহারা দেখে সবার হৃদয়ে হয়েছে রক্তক্ষরণ। পানির স্রোতে নষ্ট হয়ে গেছে প্রায় সবকিছু। তাই এখনও আশ্রয়কেন্দ্রেই কাটছে অনেকের দিন। যারা ছাড়ছেন, তারা ভাঙা ঘর মেরামতের কঠিন লড়াইয়ে নেমেছেন। এ লড়াই কবে শেষ হবে, তাও জানেন না কেউ। এ যেন এক অনিশ্চয়তাকে পেছনে ফেলে আরেক দুর্গম পথে পা বাড়ানো।

পানি সরে যাওয়ার পর জমাটবদ্ধ কাদা জানান দিচ্ছে বন্যার চিহ্ন। সড়কের কোথাও কোথাও বড় গর্ত। আশপাশের এলাকা ও সব উপজেলার সঙ্গে ফেনী জেলার সড়ক যোগাযোগ গতকাল কিছুটা চালু হলেও যানবাহন চলছে ঝুঁকি নিয়ে। ফেনী শহর ছাড়া উপজেলা এখনও বিদ্যুৎহীন; মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কেও এখনও ফেরেনি সবাই। এতে অনেকে নিতে পারছেন না স্বজনের খোঁজ। 
কুমিল্লায় গোমতীতে পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও জেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত আছে। ১৪ উপজেলায় এখনও ১১ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি। বন্যাকবলিত প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি, শুকনা খাবার, পোশাক, জরুরি ওষুধের সংকট।

নোয়াখালীর বন্যা পরিস্থিতি কোথাও উন্নতি, আবার কোথাও অবনতি হয়েছে। এর মধ্যে মাইজদীসহ সদর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি খারাপের দিকে। জেলার অনেক এলাকায় ঠিকমতো ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না বলে জানান বাসিন্দারা। সেনবাগ, কবিরহাট ও কোম্পানীগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী ও চাটখিলে বন্যা কার্যত অপরিবর্তিত রয়েছে। বেগমগঞ্জে সোমবার আলাদা ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দুই লাইনম্যান জাকির হোসেন (২৮) ও মো. ইব্রাহিম (২৮) এবং বেগমগঞ্জ টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটের দশম শ্রেণির ছাত্র সাব্বির আহমেদ (১৬)।

জেলা প্রশাসনের তথ্য বলছে, এখনও বিভিন্ন উপজেলায় ২০ লাখ ৩৬ হাজার ৭০০ মানুষ পানিবন্দি। দুর্গত এলাকায় বানভাসি মানুষের জন্য সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা এবং সংগঠন রান্না করা খাবার, শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ডায়রিয়া প্রতিরোধক ট্যাবলেট ও খাবার স্যালাইন বিতরণ করছে। দুর্গম এলাকায় অতিরিক্ত পানি ও ত্রাণ বহন করে নিয়ে যাওয়ার মতো পরিবহন না থাকায় সমস্যা হচ্ছে।

নোয়াখালীর বন্যার পানি লক্ষ্মীপুরের লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। জেলার রহমতখালী খাল, ভুলুয়া খাল ও ওয়াপদা খাল হয়ে ব্যাপকভাবে পানি ঢুকছে। বাড়ছে নদী-খালের পানির উচ্চতা। গতকাল দুপুরেও পানি বাড়ছিল বলে জানিয়েছেন লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত থাকায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা কমে আসছে। সোমবারের তুলনায় গতকাল ৩০ হাজারের বেশি পরিবার পানির বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়েছে। তবে বন্যায় মৃত ব্যক্তির সংখ্যা চারজন বেড়ে ২৭ জন হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা জানান, এখন পর্যন্ত ১১ জেলার ৭৪ উপজেলা বন্যায় প্লাবিত। জেলাগুলো হলো– ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সিলেট। এখনও ১২ লাখ ৭ হাজার ৪২৯টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে।
এদিকে গতকাল ফেনীর ছাগলনাইয়ায় বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি পশ্চিম ছাগলনাইয়ার দুটি গ্রামে ১১০ পরিবারের মধ্যে শুকনো খাবার ও পানি বিতরণ করেন। এ ছাড়া পৌর শহরে একটি মেডিকেল ক্যাম্প পরিদর্শন করেন তিনি। ফুলগাজীর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন এবং ত্রাণ বিতরণ করেন নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান।

কঠিন লড়াই আরও কঠিন হচ্ছে
সর্বনাশা বানের জলে ফেনীসহ ১১ জেলায় ঘরবাড়ি, কৃষিজমি, চিংড়ির খামার, পুকুর, ডোবা– সবকিছু তলিয়ে গেছে। এমন ক্ষত দীর্ঘ সময় বয়ে বেড়াতে হবে। সে কথাই ছাগলনাইয়ার আবদুর রবের মুখে। বলছিলেন, ‘বন্যার পানি নাইমছে, কিন্তু জীবন তছনছ করি গেছে। ঘরে থাকা কাপড়চোপড় সব পানি আর কাদায় নষ্ট হয়ে গেছে। এখন শুধু গায়ের পোশাকটাই একমাত্র সম্বল।’

ঋণ নিয়ে বর্গা জমিতে বেগুন ও পুঁইশাকের আবাদ করেছিলেন ছাগলনাইয়া বাজারের পাশের বাসিন্দা দিনমজুর অজি উল্যাহ। বন্যায় তাঁর সবজিক্ষেত ভেসে গেছে। পানির স্রোতে ভেঙে গেছে ঘরের একাংশও। এখন ঋণ পরিশোধ আর ঘর ঠিক করার পাশাপাশি আগামী দিনে সংসারের খরচ চালানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় তিনি। বলেন, ‘সামনের দিনে কিয়া করমু, জানি না। ঋণ ক্যামনে শোধ করমু! কামাই রুজিও তো বন্ধ। বন্যার পানি তো নাইমলো, কিন্তু পথে বসাই দিল।’

তপন চন্দ্র শীলের বাড়ি ফেনীর ফুলগাজীর মুন্সিরহাট ইউনিয়নের উত্তর আনন্দপুর গ্রামে। করোনার সময় বিদেশ থেকে এসে দেশে আটকে পড়েন তিনি। সবশেষ একটি মুদি দোকান চালাচ্ছিলেন। একের পর এক ব্যবসায় লোকসান হলেও চলতি বছর অনেকটা ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন। আকস্মিক বন্যায় সেই আশাও পানিতে ভেসে গেছে তপনের। গতকাল তাঁর সঙ্গে দেখা হয় আনন্দপুর গ্রামে। সে সময় তিনি বন্যায় দোকানের জমে যাওয়া কাদাপানি পরিষ্কার করছিলেন। দোকানের এক পাশে তখনও স্তূপাকারে পড়ে আছে বন্যার পানিতে নষ্ট হয়ে যাওয়া সারি সারি মুদি মালপত্র। এক পাশে পড়ে আছে পানি ঢুকে নষ্ট হওয়া দুটি ফ্রিজ। চোখেমুখে তাঁর রাজ্যের হতাশা আর চাপা কষ্ট। কথা বলতে গিয়ে তপন নিজেকে সামলাতে পারছিলেন না। তপন বলেন, ‘দোকানটাই আমার শেষ আশ্রয় ছিল। দোকানের বিক্রি থেকেই ধারদেনা শোধ করছিলাম। এখন কীভাবে যে আত্মীয়স্বজনের বাকি ধারদেনা শোধ করব আর কীভাবে সংসার চালাব, জানি না।’

ছাগলনাইয়ার শিলুয়া গ্রাম থেকে ফেনী শহরের দিকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে যাওয়ার পথে ওমর ফারুক বলছিলেন, ‘পানি কমার পর ঘরে গিয়ে দেখি, ঘর ভাঙা। মাটির ঘর ছিল, একেবারে মিশে গেছে। এখন দেখি, শহরের সার্কিট হাউসের কাছে ফুফাতো বোনের বাসার দিকে যাই। জানি না তারাও আছে কিনা, এখন গিয়ে দেখি।’

ফেনীর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের লেমুয়া এলাকায় দেখা হয় ষাটোর্ধ্ব আনিসুর রহমানের সঙ্গে। গত বৃহস্পতিবার পানিতে ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় তিনি পরিবারের সবাইকে নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছিলেন। গতকাল দুপুরে বাড়িতে ফিরে দেখেন ঘর বিধ্বস্ত। এখন দুই মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে কোথায় উঠবেন, তা জানেন না তিনি! ঘর সংস্কারের টাকাও নেই তাঁর কাছে।
দাগনভূঞার কামাল আতাতুর্ক উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে কথা হয় আয়েশা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পানি নামছে। তবে ঘরের বেড়া ও মেঝে ভাঙছে। হাতে টাকা-পয়সা নেই। ছেলেকে বলেছি, কারও কাছ থেকে ধার আনতে। ঘরের কাজ করেই বাড়িতে যাব।’

এখনও স্বজনের খোঁজে ছুটে চলা
এদিকে, এক সপ্তাহ পরও অনেকে পানিবন্দি স্বজনের খোঁজ পাচ্ছেন না। দুর্গম অনেক এলাকায় পানি না কমায় সেখানে যাওয়ার সুযোগ নেই। ফলে গতকালও শত শত মানুষ ফেনীর পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া এলাকায় গেছেন স্বজনের খোঁজে। তারা শুধু বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির খবর জানেন, কিন্তু জানেন না স্বজনের খোঁজ। কোনো উপায় না পেয়ে হেঁটে কিংবা ট্রাকে করে যাচ্ছিলেন তারা। তবে বানভাসি মানুষকে উদ্ধারে কাজ করছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

ফেনীর জেলা প্রশাসক শাহীনা আক্তার বলেন, ফেনীতে সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় আট লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, র‍্যাব ও ছাত্র-জনতার চেষ্টায় উদ্ধার এবং খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। দুর্গম এলাকায় হেলিকপ্টারে খাবার পাঠানো হচ্ছে। বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসন কার্যক্রমও চালানো হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacantoto4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d toto
slot toto
bacan4d
bacan4d
togel online
Toto Slot
saraslot88
Bacan4d Login
bacantoto
Bacan4d Login
bacan4d
bacan4drtp
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot maxwin
slot bacan4d
slot maxwin
bacan4d togel
bacan4d login
bacan4d login
bacan4d login
bacantoto 4d
slot gacor
bacansport
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot77 gacor
JAVHD
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
gacor slot
slot gacor777
slot gacor bacan4d
bacan4d
bacansport
toto gacor
bacan4d
bacansports login
slot maxwin
slot dana
slot gacor
slot dana
slot gacor
bacansports
bacansport
bacansport
bacansport
bawan4d
bacansports
bacansport
slot gacor
judi bola
slot maxwin
slot maxwin
bacansport
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot demo
slot gacor
slot gacor
slot gacor
toto slot
slot gacor
demo slot gacor
slot maxwin
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot toto