Bangladesh

বান্দরবানে এবারের বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি ৭০০ কোটি টাকা

বান্দরবানে গত সপ্তাহের ভয়াবহ বন্যায় যোগাযোগ, কৃষি, শিক্ষা, পর্যটন ও মত্স্য খাতে ৭০০ কোটি টাকা  ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে সরকারিভাবে জানানো হয়েছে। তবে বন্যায় জেলা সদরের অধিকাংশ অফিস, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হিসেব করলে টাকার অঙ্কে হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে অনেকের  ধারণা।

জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক (শস্য) হাসান আলী জানান, এবারের বন্যায় ৭১ হাজার চাষির ৮ হাজার ৮৫৩ হেক্টর  জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণ ৩১০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মধ্যে রয়েছে আমন ও রোপা ধানের বীজতলা, কলা, পেঁপে, কাজুবাদাম, জুম চাষ, বিভিন্ন ধরনের শরত্কালীন সবজি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনাসহ বীজতলা তৈরি এবং ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

স্থানীয়  সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জিয়াউল ইসলাম মজুমদার জানান, জেলার ৯০০ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৩০০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সড়কগুলো সংস্কার করতে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা প্রয়োজন। এছাড়াও অফিসের সরঞ্জামাদিতে আরো ২০ লাখ টাকার প্রয়োজন। প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু করা হবে। তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত অধিকাংশ সড়কে এখনো যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করা যায়নি। গ্রামীণ সড়কের বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন জানান, জেলায় ৪৬০ কিলোমিটার সড়কপথ রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী (ইসিবি) তত্ত্বাবধানে থাকা ১৮১ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৫০ কিলোমিটার সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সম্পূর্ণভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করতে ২০/২৫ দিন সময় লাগতে পারে। বান্দরবান সড়ক বিভাগের যে সকল সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাতে ক্ষতির পরিমাণ ৩০ কোটি টাকা। এছাড়াও ২৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণের ১০ মাস না পেরুতেই ২৩ কিলোমিটার বান্দরবান-কেরানিহাট মহাসড়কের অনেক স্থান বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। বহু স্থানে মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে। সড়ক বিভাগ  জানায়, দীর্ঘ ২৩ কিলোমিটার সড়কটি প্রশস্তকরণ, বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া সড়কের স্থানগুলো উঁচুকরণ, ২১টি ব্রিজ, ১৫টি কালভার্ট, ২১ কিলোমিটার ড্রেনেজ নিষ্কাশন অবকাঠামোসহ নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ২৬৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ইয়াসির আরাফাত জানান, উন্নয়ন বোর্ডের  বিভিন্ন সড়কে বন্যা ও পাহাড় ধসে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৪২ কোটি টাকা।

জেলা মত্স্য কর্মকর্তা অভিজিত্ শীল জানান, বন্যায় মত্স্য বিভাগের ৪৩০টি জলাশয় ও বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করা ১৬০টি প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩ কোটি টাকা। তিনি বলেন, ১৫০টি জলাশয়  ও ৩০টি লেক ভেসে গেছে লামা উপজেলায়।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস জানায়, জেলার সাত উপজেলায় বন্যায় ১২৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ডুবে গেছে। এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষা সামগ্রী  অবকাঠামো ও আসবাবের  ক্ষতি হয়েছে। টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণ ১ কোটি ৩৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। পানি নেমে গেলেও কাদায় পরিপূর্ণ হওয়ায় অনেক  বিদ্যালয়ে এখনো শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হয়নি। অনেক শিক্ষার্থী আসতে পারেনি তাদের ঘরবাড়ি ডুবে যাওয়ায় পাঠ্যবই ও পোশাক নষ্ট হওয়ায়। অপরিকল্পিত ও নিচু জায়গায় ভবন নির্মাণের কারণে এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অবহেলার কারণে জেলা গণগ্রন্থাগারের ২৮ হাজার দুষ্প্রাপ্য বই অফিসের যাবতীয় নথিপত্র নষ্ট হয়ে যায়। গ্রন্থাগারে বই বলতে একটিও নেই।

বন্যার কারণে বান্দরবানের প্রধান খাত পর্যটনশিল্পের  ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পর্যটনকেন্দ্রগুলোর যাতায়াতের মূল সড়কের অধিকাংশই ভেঙে গেছে। এখনো রুমা ও থানচি উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সড়ক দুটি মেরামত করে চালু করতে এক মাস সময় লেগে যেতে পারে। হোটেল মোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি  ও সাধারণ সম্পাদক অমল কান্তি দাশ ও মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, স্মরণকালের এবারের বন্যায় বেশ কিছু বড় হোটেল ডুবে গেছে। রাস্তা ভেঙে পর্যটন স্পটগুলোয় যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। জেলা সদর, রুমা ও থানচির পর্যটনকেন্দ্রগুলো এবং হোটেল রিসোর্টও ফাঁকা পড়ে আছে। পর্যটকবাহী পাঁচ শতাধিক গাড়ি, হোটেল মোটেলের শ্রমিক, পর্যটক গাইড বেকার হয়ে আছে।

পরিবেশবিদদের মতে অপরিকল্পিত উন্নয়ন, নির্বিচারে পাহাড় নিধন ও বনজঙ্গল ধ্বংস, ব্রিকফিল্ডের জন্য পাহাড় থেকে মাটি কাটা এবং  দোহাজারি কক্সবাজার রেললাইনের জন্য তৈরি  উঁচু  বাঁধের কারণে এবারের বন্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। এখন থেকে এ সমস্যা প্রতি বছর হতে পারে বলে স্থানীয়দের অভিমত।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button