বালির পরিবেশ রক্ষায় যে উদ্যোগ নিয়েছে ইন্দোনেশিয়া
ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপ পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এবার সেখানকার পরিবেশ সংরক্ষণের উদ্যোগে পর্যটনকে কাজে লাগানোর একাধিক উদ্যোগ শুরু হয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে সচেতনতাও বাড়ছে। বালির সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ অরণ্যে তিন জেলে মিলে প্রতি মাসে আট টনেরও বেশি ভারি আবর্জনা উদ্ধার করেন। সেগুলি তাঁদের কাঁকড়া ধরার ফাঁদের জন্য বড় সমস্যা।
ইকোসিস্টেম আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে রোপণ করা ম্যানগ্রোভের জন্যও এই আবর্জনা হুমকি হয়ে উঠছে। বাটু লুম্বাং ম্যানগ্রোভ ইকোটুরিজম ম্যানেজমেন্টের প্রধান ওয়াইয়ান পাসোক পাস্তিকা বলেন, ‘‘বৃক্ষরোপণের এই পদ্ধতিকে কেজড ম্যানগ্রোভ রেস্টোরেশন বলা হয়। ফ্রন্ট জোনে আমরা যে ম্যানগ্রোভের চারা লাগাই, তার জন্য এটা প্রয়োজনীয়। আমরা ভূমি কিছুটা উপরে তুলে জাল দিয়ে চারাগাছ রক্ষা করি। গাছে ও স্রোতের মধ্যে প্লাস্টিক আবর্জনা আটকানো বন্ধ করে সেগুলি তুলে নেওয়াই এই উদ্যোগের লক্ষ্য।”
পর্যটকদের ম্যানগ্রোভ দেখাতে গাইডসহ ভ্রমণের সুযোগ এই পুনর্গঠন প্রকল্পের অর্থায়নে সাহায্য করে। চলতি বছর প্রাদেশিক সরকার যে ‘বালি টুরিস্ট ট্যাক্স’ চালু করেছে, তা থেকে এমন প্রকল্পের জন্য বাড়তি অর্থ পাওয়া যায়। প্রত্যেক পর্যটক প্রবেশের সময় প্রায় দশ ইউরো কর দেন। সেই অর্থ পরিবেশ ও সংস্কৃতি সংক্রান্ত প্রকল্পে ব্যয় করা হয়।
ওয়াইয়ান ওয়ার্ডিকা বালিতে ফায়ারফ্লাই-এর সংখ্যা আবার বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করছেন। ফায়ারফ্লাই সংরক্ষণ কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ওয়াইয়ান ওয়ার্ডিকা বলেন, ‘‘আবাসন ও ভবনের জন্য যত বেশি প্রাকৃতিক সম্পদ কাজে লাগানো হয়, তার ফলে ফায়ারফ্লাইয়ের বসতির উপর তত চাপ সৃষ্টি হয়। ফলে তাদের জায়গা কমেই চলেছে। একমাত্র কৃষিজমিই এখন তাদের একমাত্র টিকে থাকার জায়গা। কিন্তু বেশিরভাগ জায়গায় রাসায়নিকের ব্যবহারের ফলে ভালো প্রভাব নেই।”
গোটা বালি দ্বীপ জুড়ে আরো বাড়িঘর তৈরি হচ্ছে, যার ফলে আলোর দূষণও বাড়ছে। যে জীববিজ্ঞানীরা ফায়ারফ্লাই সংরক্ষণ প্রকল্পে কাজ করছেন, তাঁদের মতে এটাও একটা সমস্যা। জীববিজ্ঞানী মার্গারেটা নোভিয়ানি বলেন, ‘‘বেশিরভাগ চারণক্ষেত্র আর অন্ধকার নেই। ফলে পোকার মিলনের হার কমে যাচ্ছে। কারণ ফায়ারফ্লাই আলো ব্যবহার করে ভাবের আদানপ্রদান করে। পুরোপুরি অন্ধকার না থাকায় সেগুলি বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছে।”
ভারতের দিল্লি থেকে আসা কয়েকজন পর্যটক এমনকি প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়েও ফায়ারফ্লাই বা জোনাকি পোকা দেখতে চান। তারা নৈশভোজ ও ফায়ারফ্লাই ট্যুরে অংশ নিচ্ছেন।
পানির নীচেও পর্যটন ও সংরক্ষণ চলছে। দ্বীপের উত্তরে জেলেরা যে প্রবাল প্রাচীর ধ্বংস করেছিলেন, সেগুলি পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ চলছে। বায়োরক নামের পদ্ধতি প্রয়োগ করে ও সৌর বিদ্যুৎ কাজে লাগিয়ে বৈদ্যুতিক চার্জ প্রবালকীটের ক্ষমতা বাড়াচ্ছে। ফলে সেগুলি পানি থেকে খনিজ পদার্থ সংগ্রহ করে শক্ত কোরাল সৃষ্টি করছে। তবে সেই উদ্যোগও যথেষ্ট নয়। নতুন প্রাচীরগুলির সুরক্ষা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বায়োরক ম্যানেজার হিসেবে কোমাং আস্তিকা বলেন, ‘‘কোরাল পুনরুদ্ধার করতে হলে সেগুলির দেখাশোনার জন্য লোকের প্রয়োজন। যেমন আমাদের এমন ধরনের শিকারির খোঁজ করতে হবে। কমপক্ষে সপ্তাহে একবার রক্ষণাবেক্ষণ ও পরীক্ষা করতে হয়।”
এদিকে ফায়ারফ্লাই ক্যাম্পে দর্শকরা পোকার খোঁজে ধানের ক্ষেতের দিকে চলেছেন। তবে বেশ অন্ধকার। বন্দি অবস্থায় বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে এই পোকার ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছুটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে।