Hot

বিএনপির ঘরে অবিশ্বাস আর দোষারোপের বিষ, রেষারেষি আর দ্বন্দ্ব-ফ্যাসাদেই বেশি সময় খরচ করছেন দলটির শীর্ষ নেতারা

নিষ্ফল সরকারবিরোধী আন্দোলনের পর এখন বিএনপির ঘরেই জ্বলছে তুষের আগুন। বিশ্বাস-অবিশ্বাস, অভিযোগ-অনুযোগ, রেষারেষি আর দ্বন্দ্ব-ফ্যাসাদেই বেশি সময় খরচ করছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। বিশেষ করে সংসদ নির্বাচনের পর কারামুক্ত হওয়া কোনো কোনো নেতাকে ‘সন্দেহ’ করছেন গ্রেপ্তার না হওয়া নেতারা। কারাগারে যাওয়া সেসব নেতার বিষয়ে দল ও শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলছে ওই পক্ষটি। বিপরীতে সারাদেশে গণগ্রেপ্তার অভিযানের মধ্যেও জেলে না যাওয়া কোনো কোনো শীর্ষস্থানীয় নেতার বিরুদ্ধে সরকারের সঙ্গে আঁতাত করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন কারাভোগকারী নেতারা। দলের একাধিক কেন্দ্রীয় ও নীতিনির্ধারক নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। 

এ পটভূমিতে দলের প্রভাবশালী দু’পক্ষের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ নিবিড়ভাবে খতিয়ে দেখছে দলটির হাইকমান্ড। তবে কোনো পক্ষের বিরুদ্ধে আনা গুরুতর অভিযোগের ‘অকাট্য’ প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। তবে দলটির দায়িত্বশীল কোনো কোনো নেতার দাবি, দলের কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতাদের সংসদ নির্বাচনের আগে এক দফা আন্দোলনে ভূমিকা, ব্যক্তিগত গতিবিধি ও বক্তব্য-বিবৃতিকে ‘মূল্যায়ন’ করছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সে মূল্যায়নের ভিত্তিতেই দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় নেতাদের পদোন্নতি ও পদাবনতি দেওয়া হচ্ছে। 

অবশ্য এতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ও আঞ্চলিক ত্যাগী নেতার যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগ সঠিক নয় বলেও দাবি করছেন দলটির দায়িত্বশীল নেতারা। তারা বলছেন, যারা অবমূল্যায়নের অভিযোগ তুলছেন, তারা ভবিষ্যতে আবার গুরুত্বপূর্ণ পদপদবি পেতেও পারেন। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নির্দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের এক দফা দাবির আন্দোলনের ব্যর্থতা নিয়েও দোষারোপের রাজনীতি চলছে বিএনপিতে। ব্যর্থতার দায় নিতে রাজি নন কেন্দ্রীয় ও মাঠ নেতার অনেকেই। তাদের মতে, আন্দোলনের কৌশল নির্ধারণ ছিল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এক দফা দাবি আদায় করতে না পারলে দ্বিতীয় বিকল্প কী– সে কৌশল নির্ধারণের দায়িত্ব দলের নীতিনির্ধারকের। তবে তারা সে দায় নিচ্ছে না; বরং আন্দোলনে ব্যর্থতার ধুয়া তুলে দলের কমিটি ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে ঢাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ মহানগর ও অঙ্গ সংগঠন যুবদলের কমিটি গুটিয়ে নেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো নেতাকে পদোন্নতি ও পদাবনতি করা হচ্ছে।

অবশ্য পদপদবি হারানোর ভয়ে কেউ সর্বসমক্ষে কথা বলতে রাজি হননি। নাম প্রকাশ না করে বিএনপি নেতাদের দাবি, যে কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে বিরোধী দলের বিকল্প কৌশল থাকে। তবে বিএনপির বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলনে ‘বিকল্প কোনো পথ’ না রাখা রাজনৈতিক কৌশলে বড় ভুল ছিল, যা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বিদেশি কূটনীতিকরাও বিএনপি নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বিস্ময় প্রকাশ করেন। এ পরিস্থিতিতে অনেকে জাতীয় ও দলীয় রাজনীতি নিয়ে নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। হতাশায় ডুবে আছেন অনেকে। কেউ কেউ রাজনীতির মাঠ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে ব্যক্তিগত ব্যবসা-বাণিজ্য ও পারিবারিক কাজে সময় দিচ্ছেন।  

এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য 

সেলিমা রহমান বলেন, বড় রাজনৈতিক দলের ভেতর পরস্পরের বিরুদ্ধে দোষারোপ সব সময় ছিল, এখনও আছে। কারও বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেন। যারা দলে গুরুত্বপূর্ণ পদপদবি পান না, তারাও ক্ষোভ থেকে কিছু কথাবার্তা বলবেন– এটাই স্বাভাবিক। তবে আবার কিছুদিন পর তা ঠিক হয়ে যায়। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যোগ্য ও ত্যাগী নেতাকে যথাযথ মূল্যায়ন করছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেক গুজব ছড়ানো হয়, যা সত্য নয়।

যদিও ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। কেন্দ্রীয়সহ তৃণমূল নেতাকর্মী হাজার হাজার মামলা-মোকদ্দমা মাথায় নিয়েই রাজনীতি করছেন। দল ছেড়ে কেউ যাননি। গত সংসদ নির্বাচনের সময় দলের ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীরউত্তম, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তৈমূর আলম খন্দকার ও কেন্দ্রীয় সদস্য শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর ছাড়া আর বড় কেউ দল ছাড়েননি। তবু ওয়ান-ইলেভেন রাজনৈতিক বিপর্যয় এখনও তাড়া করছে বিএনপি তথা জিয়া পরিবারকে। কখন দলের ভেতর ভাঙন ধরে, সে শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন দলটির হাইকমান্ড। অবশ্য অতীত এবং ওয়ান-ইলেভেনের অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে আগামী দিনের সংকট উত্তরণের চেষ্টা করছেন দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব।

সদ্য বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদে পদ পাওয়া এবং কারাভোগকারী এক নেতা বলেন, কারাগারে থাকা বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ দলের কতিপয় নেতা তুলছেন, তা ঠিক নয়; বরং যারা এসব কথা বলে দলের হাইকমান্ডকে সরকারের সঙ্গে নিজেদের আঁতাতের ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা করছেন। যেখানে বিএনপির সক্রিয় নেতাকর্মী আত্মগোপন করে গ্রেপ্তার এড়াতে পারেননি, সেখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা কমবেশি প্রকাশ্যে থেকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের চোখে দেখেনি। এতেই প্রমাণ হয়, তারাই ভেতরে ভেতরে সরকারের সঙ্গে আঁতাত করেছেন। আন্দোলনকে ব্যর্থ করতে ষড়যন্ত্র করেছেন।

অবশ্য গ্রেপ্তার এড়িয়ে থাকা দলের স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে বিএনপিকে ভাঙার চেষ্টা করেছে। দু-তিনজন নেতা দল ছেড়ে নির্বাচনেও গেছেন। নির্বাচনের সময় কারাগারে দলের কোনো কোনো শীর্ষস্থানীয় নেতাও গোপন ‘ষড়যন্ত্র’ করেছেন। অবশ্য তাদের ‘ষড়যন্ত্র’ সফল হয়নি। দলের হাইকমান্ড তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে জানে। তাদের ব্যাপারে সতর্ক রয়েছেন। তারা মাঝেমধ্যে চুপচাপ থাকেন, আবার সক্রিয় হন। 

বিএনপির সাবেক এক যুগ্ম মহাসচিব ও বর্তমানে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বলেন, কতিপয় নেতার একটি সিন্ডিকেট দলকে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করছে। যারা কারাগারের বাইরে ছিল, তারাই কারাগারে থাকা নেতাদের বিষয়ে গল্প তৈরি করেছে। সেখানে যোগ্য নেতার বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও মিথ্যা অভিযোগ তুলে তাদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারকে ক্ষতিগ্রস্ত করার হীন চেষ্টা করছে। দলের ক্লিন ইমেজের নেতার সম্পর্কে হাইকমান্ডকে মিথ্যা কানকথা বলে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছে। সাময়িকভাবে তারা কিছুটা সফল হলেও আখেরে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সত্য কখনও চাপা রাখা যায় না। 

অবশ্য বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, দলের জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ অনেক আলোচিত নেতাকে সাইডলাইনে বসিয়ে রাখা হয়েছে। এতে দল ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে জাতীয় পর্যায়ে দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হারুন উর রশীদ ও ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকনকে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করাকে সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন না দলের অনেক নেতাকর্মী। আবার আঞ্চলিক নেতার মধ্যে রাজশাহীর সাবেক মেয়র ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, বরিশালের সাবেক মেয়র ও সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ারকে গুরুত্বহীন করে রাখায় ওই সব অঞ্চলে দল বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন অনেকে। একই সঙ্গে খুলনার সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘটনাও ওই অঞ্চলের বেশির ভাগ নেতাকর্মী ভালোভাবে নেননি।

গত বছরের ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর দলের বিপুলসংখ্যক শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তার হন। কেউ কেরানীগঞ্জ, কেউ গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন। নির্বাচনের পর পর্যায়ক্রমে নেতারা ধীরে ধীরে জামিনে মুক্তি পান। আবার শীর্ষ নেতার অনেকে আন্দোলন চলাকালে অভিযানের সময় গ্রেপ্তার এড়িয়ে কেউ প্রকাশ্যে, কেউ আত্মগোপনে থেকে কারামুক্ত ছিলেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto