Bangladesh

বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের টানাপোড়েন বাড়ছে

বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে প্রায় ২৫ বছরে মিত্রতা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সেই মিত্রতার সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে। দল দুটির নেতারা সম্প্রতি একে অপরকে কটাক্ষ করছেন। রাজনৈতিক বিষয়ে বিপরীতমুখী অবস্থান নিচ্ছেন। বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। বিপরীতে জামায়াত ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে চাপ না দেওয়ার কথা বলছে। রাজনৈতিক বিরোধীদের ক্ষমা নিয়েও দল দুটির দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। আর অপ্রকাশ্যে চলছে বেসামরিক প্রশাসন, পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিজস্ব লোকের পদায়ন নিয়ে দ্বন্দ্ব। 

বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে অবস্থান সুসংহত করা নিয়ে ছাত্রদলের সঙ্গে ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিরোধও অনেকটা প্রকাশ্য। বিএনপির ধারণা, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে বেশি সমর্থন পাচ্ছে জামায়াত।

 অবশ্য দু্’দলের কয়েকজন নেতা মনে করেন, মাঠে আওয়ামী লীগ না থাকায় গণতন্ত্রের স্বার্থে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকা জরুরি। নয়তো জাতীয় পার্টি যেভাবে আওয়ামী লীগের ‘গৃহপালিত বিরোধী দলে’ পরিণত হয়েছিল, সেই অবস্থার উদ্ভব হতে পারে। 

আওয়ামী লীগকে ঠেকাতে ১৯৯৯ সালে জামায়াতের সঙ্গে জোট বাঁধে বিএনপি। ২০০১ সালে জোটবদ্ধ নির্বাচন করে সরকার গঠন করে। সম্পর্কে উত্থান-পতন হলেও জোট ভাঙেনি। ২০১০ সালে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াত নেতাদের বিচার শুরু হলে দলটিকে ছাড়ার জন্য বিএনপি ঘরে-বাইরে চাপে পড়ে। তবে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের অবস্থানের কারণে জোট ভাঙেনি। আবার মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ইস্যুতে জামায়াতের পাশেও দাঁড়ায়নি। 

২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ আন্দোলন করে বিএনপি ও জামায়াত। ২০১৮ সালের নির্বাচনে নিবন্ধন হারানো জামায়াতের নেতারা বিএনপির প্রতীকে প্রার্থী হন। ‘রাতের ভোট’খ্যাত ওই নির্বাচনের পর দু’দলের সম্পর্কে ভাটা পড়ে। ২০২২ সালে দু’দল আনুষ্ঠানিকভাবে জোট ভেঙে দিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে নামে।

তবে ধরপাকড়ে বিএনপি পাশে থাকছে না– অভিযোগে যুগপৎ আন্দোলন থেকে সরে যায় জামায়াত। পরের বছরের অক্টোবরে ফের যুগপৎ আন্দোলনে ফেরে। 
কিন্তু আগের ১০ বছরের মতো ২০২৩ সালের এবং গত ৭ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পরের যুগপৎ আন্দোলনে ব্যর্থ হয় বিএনপি ও জামায়াত। গত জুলাইয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এ আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার গণহত্যা চালায়। বিএনপি ও জামায়াতকে আন্দোলনের জন্য দায়ী করে ঢালাও মামলা এবং গ্রেপ্তার করে। ২৬ জুলাই জামায়াতের নাম উল্লেখ করে জাতীয় ঐক্যের ডাক দেয় বিএনপি। 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেতৃত্ব দিলেও সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের মতো বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরও সর্বাত্মক অংশগ্রহণ ছিল। বিএনপির দেড় শতাধিক এবং জামায়াতের শতাধিক নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। ১ আগস্ট জামায়াত ও শিবিরকে নিষিদ্ধ করেছিল আওয়ামী লীগ। 

বিরোধের শুরু
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর পথ আবার আলাদা হয়ে যায়। মতবিরোধ প্রথম প্রকাশ্যে আসে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের বক্তব্য ঘিরে। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ নিয়ে বিএনপির বিপরীতমুখী অবস্থান নেন। কৌশলে সমালোচনাও করেন দীর্ঘদিনের মিত্র দলটির। এর পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় বিএনপিতে। 

বিএনপি দ্রুততম সময়ে নির্বাচন চাইলেও জামায়াত আমির বলেন, এখনও শত শত মানুষ হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে। রক্তের দাগ মোছেনি। বন্যায় দেশ আক্রান্ত। এই সময়ে কেউ নির্বাচন নির্বাচন জিগির তুললে জাতি তা গ্রহণ করবে না। ২৬ জুলাইয়ের এই বক্তব্যে তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপি ক্ষমতার ৮০ ভাগ ইতোমধ্যে দখল করে ফেলেছে। ভিক্ষুকের থালা থেকে হাটবাজার কিছুই বাকি রাখেনি।

এর জবাবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘যাদের জনসমর্থন নেই, জনগণ মনে করে না যে, এরা সরকার চালাতে পারবে, তারা এ ধরনের বিভিন্ন চিন্তাভাবনা করে, আমি কোনো দলের নাম বলছি না। যাদের ভোটে জয়ের সামর্থ্য নেই, তারাই নির্বাচনের বিরুদ্ধে।’
দলটির সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও জামায়াতের অবস্থানে অসন্তুষ্ট।
 
কী নিয়ে টানাপোড়েন
দু’দলের সূত্রে জানা গেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনে প্রভাব বিস্তারে প্রতিযোগিতা হয় বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে। বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, আইন, বিচার, সচিবালয় থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আওয়ামী লীগের লোকজন সরিয়ে নতুন পদায়ন শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকার। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বীমাতেও চলছে রদবদল। কিন্তু এসব জায়গায় জামায়াতঘেঁষা কিংবা তাদের সমর্থকদেরই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্যের দল-সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও বিএনপির সন্দেহ তিনিও জামায়াতঘেঁষা।

অন্যদিকে, বিএনপির নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলছেন জামায়াতপন্থিরা। জামায়াতের একাত্তরের ভূমিকা, সংবাদমাধ্যমে দলটির আমিরের বক্তব্য নিয়ে পাল্টা সমালোচনা করছেন বিএনপিপন্থিরা। জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের ছেলে আবদুল্লাহিল আমান আযমী সম্প্রতি জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের দাবি তুললে বিএনপির সমর্থকরা এর কড়া সমালোচনা করেন। জামায়াতপন্থিরাও পাল্টা জবাব দেন। 

দু’দলের সূত্রই জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরস্পরের বিরোধিতার জন্য দলের দিক থেকে সমর্থন এবং নির্দেশনা রয়েছে।

গত ২৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণের প্রতিক্রিয়ায়ও বিএনপি ও জামায়াতের অবস্থান ছিল দুই মেরুতে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগামী নির্বাচন নিয়ে ভাষণে কোনো রোডম্যাপ নেই। জামায়াত ভাষণকে স্বাগত জানায়। তারা সরকারকে আরও সময় দেওয়ার কথা বলে। 

আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিএনপি ও জামায়াত দু’দলই কোণঠাসা ছিল। কিন্তু রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগকে ছাড় দেওয়ার প্রশ্নে বিএনপির তুলনায় জামায়াত নমনীয়। এতে অখুশি বিএনপি।

দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান কয়েক দিন আগে বলেন, জামায়াতের ওপর ১৫ বছরে যত জুলুম-নির্যাতন হয়েছে, তা ক্ষমা করে দিয়েছেন। প্রতিহিংসার রাজনীতি করতে চান না। তবে ভুক্তভোগী কেউ আইনের আশ্রয় নিলে জামায়াত সহায়তা করবে। 

এ বক্তব্যের জবাবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেন, ‘তারা বলছেন, আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। গণহত্যাকারীদের কীসের ক্ষমা করতে বলছেন তারা? যদি শেখ হাসিনাসহ অপরাধীদের বিচার না করা হয়, তাহলে বাংলাদেশ কবরস্থানে পরিণত হবে।’

বিএনপি নেতাদের মূল্যায়ন, সহানুভূতি পেতে জামায়াত নিঃশর্ত সমর্থন দিচ্ছে সরকারকে। নির্বাচনের আগে নিজেদের সংগঠিত করতে সময় নিতে চাচ্ছে। এজন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিজেদের অবস্থানকে জোরদার করার পাশাপাশি রাজনীতিতেও প্রভাব বিস্তার করতে চাচ্ছে। বিভিন্ন পেশাজীবী ও ছোট দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপিকে আটকাতে একটি জোট করার চেষ্টা করছে। তাই নির্বাচন নিয়ে উচ্চবাচ্য করছে না। 

জামায়াত সূত্রের ভাষ্য, বিএনপির সঙ্গে আর জোটবদ্ধ নির্বাচনের সম্ভাবনা নেই। আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকায় আগামী কয়েক মাসের মধ্যে নির্বাচন হলে বিএনপি একাই ২৭০ থেকে ২৮০ আসন পাবে। তখন দলটি স্বৈরাচার হয়ে উঠতে পারে। আবার আওয়ামী লীগের শাসনামলে ২০১৪ সালের উপেজলা নির্বাচনের পর থেকে জামায়াত ভোটের রাজনীতি থেকে দূরে। নেতাকর্মীরা সংগঠিত থাকলেও, ভোটার ও সমর্থকদের গোছাতে কিছুটা সময় লাগবে। আবার দখল এবং চাঁদাবাজির ইস্যুতে এই সময়ে বিএনপির সমর্থন কিছুটা কমতে পারে। এই সময়ে ব্যাপক সমাজকল্যাণমূলক কাজ করে নিজের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে চায় জামায়াত। ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠনটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে পারলে, বিএনপির সঙ্গে ভোট কাটাকাটিতে জামায়াতের লাভ হবে।

যা বললেন নেতারা
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলে, যে ক্ষমতার নির্দিষ্ট সময় থাকে না, সেই ক্ষমতা সবার জন্য উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার। এই সরকারকে সবাই সমর্থন জানিয়েছে এটা যেমন সত্য, তেমনি এটাও বাস্তবতা, তাদেরও একসময় যেতে হবে। সেটা যদি একটি পরিকল্পনার মাধ্যমে হয়, তাহলেই দেশ ও জনগণের জন্য মঙ্গলকর হবে। আর ওই পরিকল্পনাটাই হচ্ছে রোডম্যাপ। এখন জামায়াত কেন নির্বাচনী রোডম্যাপের বাইরে থাকতে চাচ্ছে, তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। 
জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের সমকালকে বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান থেকে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কারের দাবি এসেছে। এ সরকারকে তা করতে হবে। এজন্য জামায়াত সরকারকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা এবং সময় দেওয়ার পক্ষপাতী। তবে অনন্তকাল নয়। জামায়াতও চায় দ্রুততম সময়ে নির্বাচন হোক। নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে যতটুকু সংস্কার জরুরি, তাও হোক।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, গণতন্ত্রের জন্য দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশে একটি স্থিতি অবস্থা ফিরে এসেছে। তবে গণতন্ত্রহীন দেশ চলতে পারে না। নির্বাচনের বিষয়ে তাদের একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ থাকা উচিত। তবে জামায়াত কী বলছে, তা তাদের বিষয়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot