Trending

বিএসআরএম’ স্টিল’কে জাইকার ৫ কোটি ডলারের ঋণ যুগান্তকারী যেকারণে

এই ঋণের যুগান্তকারী দিকটি হলো– বাংলাদেশের বেসরকারি প্রস্তুতকারক খাতে এটি জাইকার প্রথম বিনিয়োগ, এতে বেসরকারি খাতের জন্য খরচ-সাশ্রয়ী ঋণ সুবিধা লাভের নতুন উৎস তৈরির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

পরিবেশবান্ধব একটি ইস্পাত কারখানা নির্মাণে বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠান– বিএসআরএম’কে ৫০ মিলিয়ন ( বা ৫ কোটি) ডলার ঋণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। দেশের বেসরকারি প্রস্তুতকারক খাতে এটি হবে জাইকার প্রথম বিনিয়োগের ঘটনা।

জাইকার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতিতে এর গুরুত্ব তুলে ধরে বলা হয়, বাংলাদেশের বেসরকারি খাতকে পুনর্জীবিত করার কৌশলগত উদ্দেশ্যে এ বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

গত ৪ অক্টোবর ঋণ চুক্তিতে সই করে জাইকা। এরপরে ১৭ অক্টোবর চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে চুক্তি সই উদযাপনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।   

ইস্পাত কারখানা নির্মাণ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১০৮ মিলিয়ন (১০ কোটি ৮০ লাখ) ডলার। ডলারের বর্তমান বিনিময় হারে যার পরিমাণ ১ হাজার ১৮৮ কোটি টাকার সমান। অর্থাৎ, দরকারি অর্থের প্রায় অর্ধেক দিচ্ছে জাইকা।  

বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ উন্নয়ন অংশীদার জাইকা ঐতিহাসিকভাবে দেশের বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্পে সহযোগিতা দিয়েছে। এরমধ্যে এমআরটি- ৬ (মেট্রোরেল), মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর উল্লেখযোগ্য। চলতি বছরের শুরুতে, একটি বড় পদক্ষেপের আওতায় বাংলাদেশের সবুজ প্রকল্পে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে ব্র্যাক ব্যাংককে ১০০ মিলিয়ন (১০ কোটি) ডলার ঋণ দেয় জাইকা। এই অর্থ পরিবেশবান্ধব উৎপাদন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও সম্পদ ব্যবহারের দক্ষতা উন্নয়ন ও কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মতো খাতে ঋণ দেবে ব্র্যাক ব্যাংক।

তবে বাংলাদেশের বেসরকারি খাতে জাইকার প্রথম বিনিয়োগের চুক্তিটি একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এতে দেশের বেসরকারি খাতের জন্য খরচ-সাশ্রয়ী ঋণ সুবিধা লাভের নতুন উৎস তৈরির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

বিএসআরএম স্টিলের প্রদত্ত তথ্যানুসারে, ১২ বছর মেয়াদে এ ঋণ দেবে জাইকা। সুদহার হবে– তিন মাসের সিকিউরড ওভারনাইট ফিন্যান্সিং রেট বা সোফর রেটের সাথে বার্ষিক আরও ৩.৫০ শতাংশ যোগ করে। সে হিসাবে, বর্তমান সোফর রেট অনুযায়ী, মোট সুদহার দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৯ শতাংশ।

এ প্রকল্পে যৌথভাবে অর্থায়ন করবে, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক এবং ভারতের এক্সপোর্ট- ইমপোর্ট ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান।   

বিএসআরএমের নতুন কারখানাটি মিরসরাইয়ে গড়ে তোলা হবে। এতে প্রতিষ্ঠানটির ইস্পাত উৎপাদনের সক্ষমতা ৬ লাখ টন বেড়ে ১৪ লাখ টনে উন্নীত হবে।

শনিবার বিএসআরএম- এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমের আলীহোসাইন বলেন, ‘(বাংলাদেশে) বেসরকারি খাতের মধ্যে আমরাই প্রথম কোম্পানি হিসেবে জাইকার ঋণ পেয়েছি, যা আমাদের জন্য খুবই সম্মানজনক। এই ঋণচুক্তির মাধ্যমে দেশের বেসরকারি খাতে জাইকার ঋণ প্রদানের নতুন পথও তৈরি হয়েছে। এখন তারা অন্যান্য প্রকল্পে অর্থায়নেও আগ্রহী হবে।’

জাইকা কেন বিনিয়োগে রাজি হলো, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের কর্পোরেট গভর্নেন্স ও কমপ্ল্যায়েন্স দেখে জাইকা বিনিয়োগে আগ্রহী হয়েছে। এবার ডলারে ঋণ পাওয়ায়, প্রকল্পটির বাস্তবায়ন আরও সহজে করা যাবে।’  
২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে নতুন ইস্পাত কারখানাটি চালু করা যাবে বলে আশাপ্রকাশ করেন আমের আলীহোসাইন।

জাইকা জানায়, ভারতের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংকের (এক্সিম) মাধ্যমে তারা এ কারখানায় অর্থায়ন করছে।

ভারতে জাইকার প্রধান প্রতিনিধি সাইতো মিতসুনোরি বলেন, ‘ভারতের এক্সিম ব্যাংকের সাথে আমাদের প্রথম যৌথ অর্থায়নের এ উদ্যোগটি ঘোষণা করতে পেরে আমি আনন্দিত। ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের সাথে তৃতীয় দেশগুলোতে আরও যৌথ প্রকল্পের সম্ভাবনার বিষয়ে আমরা আশাবাদী।’   

জাইকার বিবৃতিতে বলা হয়, এ ধরনের অবকাঠামো নির্মাণে রিবার স্টিল পণ্য আবশ্যক উপকরণ, এবং আগামীতে বাংলাদেশে ইস্পাতের চাহিদা বার্ষিক ১৫ থেকে ২০ শতাংশ হারে বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। ‘অন্যদিকে কিছু ইস্পাত পণ্যের জন্য আমদানি-নির্ভরতা রয়েছে বাংলাদেশের, এতে চাহিদার এই প্রত্যাশিত বৃদ্ধি দেশটির বাণিজ্যিক ভারসাম্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এছাড়া, ইস্পাত কারখানাগুলো থেকে পরিবেশ দূষণকারী উপাদান ও গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণও একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ।’  

বাংলাদেশের ইস্পাত প্রস্তুতকারক সমিতির মতে, দেশে বার্ষিক এমএস রডের চাহিদা ৭০ থেকে ৭৫ লাখ টন। দেশের ৫৫টি স্টিল রি-রোলিং মিল এবং ১০০টির বেশি সেমি-অটো ও ম্যানুয়াল মিল এসব রড সরবরাহ করে। তবে উচ্চ মানের ইস্পাত পণ্যের বাজারে আধিপত্য রয়েছে কতিপয় বড় কোম্পানির, এবং স্থানীয় উৎপাদনের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে আমদানি-নির্ভরতা হ্রাস পাচ্ছে।    

জিকার বিবৃতিতে বলা হয়, এই ঋণ বাংলাদেশের ইস্পাত শিল্পের কারখানাগুলোয় সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন সুবিধা, বায়ুদূষণ ব্যবস্থাপনার প্রযুক্তি, বর্জ্য পানির পরিশোধনের ব্যবস্থা এবং অন্যান্য সহায়ক সুবিধা পুনর্ব্যবহারকে উৎসাহিত করবে; যা এ শিল্পে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির প্রসার ও গ্রিন হাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমাতে অবদান রাখতে পারবে।

বর্তমানে ফৌজদারহাট শিল্প এলাকায় বিএসআরএম এর একটি রোলিং কারখানা রয়েছে। আর দুটি বিলেট কারখানা আছে মিরসরাইয়ের নাসিরাবাদ শিল্প এলাকায়।

আগের অর্থবছরের তুলনায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিএসআরএম স্টিলের রাজস্ব আয় ২৬ শতাংশ বেড়ে ৮ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা হয়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d