বিকল্প গন্তব্যে পাচারের অর্থ, তিন কারণে কমছে সুইস ব্যাংকের আকর্ষণ
চলতি বছরে মানি লন্ডারিং ঘটনা বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি ও সিঙ্গাপুরে
সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আমানত কমছে ৫৯৭ কোটি টাকা। আগের বছরে আমানত তুলে নেওয়ার অঙ্ক ছিল সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা। ২০২৪ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে টাকা তুলে নেওয়ার তথ্য প্রকাশ হলে প্রশ্ন উঠেছে এ অর্থের নতুন গন্তব্য কোথায়। কোন কারণে তুলে নেওয়া হচ্ছে বিপুল অঙ্কের আমানত, সুইস ব্যাংকের আকর্ষণই বা কমছে কেন। তবে ভূ-রাজনৈতিক ঘটনা এবং তথ্যপ্রযুক্তি ও ডিজিটালাইজেশনের অগ্রগতির কারণে পাচারের অর্থ এখন বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ছুটছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এদিকে সম্প্রতি প্রকাশিত ‘কেওয়াইসি হাব’র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি ও সিঙ্গাপুরে মানি লন্ডারিংয়ের ঘটনা বেড়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পাচারের অর্থ এসব দেশে প্রবেশ করছে। তবে এর মধ্যে মানি লন্ডারিংয়ের জন্য সবচেয়ে বেশি শাস্তি দেওয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রে। মানি লন্ডারিংয়ের ঘটনায় ঝুঁকি বেড়েছে এমন দশটি দেশ শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-হাইতি, চাদ, মিয়ানমার, দ্য ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো এবং রিপাবলিক অব কঙ্গো, মোজাম্বিক, গাবন, লাওস, ভেনিজুয়েলা ও গিনি বিসাউ।
অর্থনীতিবিদ ও অর্থ পাচারসংক্রান্ত বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তথ্যপ্রযুক্তির সুবাদে বিকল্প গন্তব্যে পাড়ি দিচ্ছে পাচারের অর্থ। যেখানে শুধু ব্যাংকে টাকা রাখাই নয়, সংশ্লিষ্ট দেশের পাসপোর্ট প্রাপ্তি, সম্পদের (বাড়ি-ঘর) মালিকানা অর্জন এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের আকর্ষণীয় সুবিধা দেওয়া হয়। স্মার্ট অর্থ পাচারকারীরা এখন টাকা শুধু ব্যাংকে ফেলে রাখছে না। এসব অর্থের বিনিময়ে গড়ে তুলছে বিনিয়োগের সাম্রাজ্য। সংশ্লিষ্টদের মতে, সুইস ব্যাংকে তিন শ্রেণির লোক আমানত রাখেন। এর মধ্যে রয়েছে সরকারি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত, পাসপোর্ট হোল্ডার যারা বিদেশে থাকে বা ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। এছাড়া দেশ থেকে অর্থ পাচারকারী যারা নিজেদের তথ্য গোপন রাখতে সেখানে অর্থ জমা করেন।
সুইস ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশের আমানতকারীদের টাকার অঙ্ক ৫৬ কোটি ২৯ লাখ থেকে লাফ দিয়ে ২০২১ সালে ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁতে দাঁড়ায়। এতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় শীর্ষ আমানতকারী দেশ হিসাবে স্বীকৃতি পায় বাংলাদেশ। এরপর ২০২২ সালে অস্বাভাবিক গতিতে কমে আমানত দাঁড়ায় ৫ কোটি ৫২ লাখ ফ্রাঁতে। আর ২০২৩ সালে নেমে আসে ১ কোটি ৭৭ লাখে।
ধারণা করা হচ্ছে, অর্থ পাচারকারীদের কাছে কয়েকটি কারণে সুইস ব্যাংকের আকর্ষণ কমছে। প্রথম আন্তর্জাতিক চাপে সুইস ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পৃথিবীর দেশ ভিত্তিক আমানতের হিসাব প্রকাশ করতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে যারা সত্যিকার অর্থে পাচারকৃত টাকার তথ্য গোপন রাখতে চায় তারা এখন সুইস ব্যাংককে প্রাধান্য দিচ্ছে না। দ্বিতীয় হচ্ছে সুইস ব্যাংকের প্রতিযোগী দেশগুলো আরও বেশি সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে পাচারের অর্থ নেওয়ার ক্ষেত্রে। ফলে পাচারকৃত অর্থ দিয়ে যে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে তোলা ও সম্পদের (ঘরবাড়ি) মালিকানা অর্জনের সুবিধা আছে সেখানে চলে যাচ্ছে। এ ধরনের অনেক কোম্পানি দুবাই ও নিউইয়র্কে সন্ধান মিলবে। অনেক দেশে পাচারকৃত অর্থের কর দিতে হয় না, অর্থ ব্যয় করলে সহজে সংশ্লিষ্ট দেশের পাসপোর্ট মেলে এবং সম্পদের মালিক হওয়া যায়। ফলে সুইস ব্যাংকের তুলনায় অন্যান্য দেশ ও গন্তব্যগুলো আরও বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে পাচারকারীদের কাছে। এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতির কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচারের অর্থ সরিয়ে নেওয়া সহজ হয়ে উঠছে। এসব কারণে আকর্ষণ কমছে সুইস ব্যাংকের।
জানতে চাইলে অর্থ পাচার নিয়ে কাজ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ) সাবেক উপদেষ্টা দেবপ্রসাদ দেবনাথ বলেন, সুইস ব্যাংকের বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শাখা আছে। ফলে যে কোনো দেশে সুইস ব্যাংকের শাখায় বাংলাদেশি কোনো ব্যক্তি অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করলে সেটি কেন্দ্রীয় ভাবে সুইস ব্যাংকের হিসাবে গণনায় আসে। কোনো বাংলাদেশি সুইস ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে সেটি তাদের এসেটে দেখাবে। রপ্তানি সময় হিসাব নিষ্পত্তি না হলে সেগুলো সুইস ব্যাংকের নষ্ট অ্যাকাউন্টে দেখানো হয়। তবে সুইস ব্যাংকের কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কোনো তথ্য দেয় না। এখন আমানত কমে যাওয়ার পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে। তার মতে, পাচারকৃত অর্থ সেখান থেকে বের করে নেওয়া হলেও সেটি বোঝার উপায় থাকবে না। কারণ অন্য দেশগুলোতে নেওয়া হচ্ছে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। বিশেষ করে একজন ব্যক্তি আমেরিকায় একটি ব্যবসা করে বছরে এক লাখ ডলার মুনাফা করেন। কিন্তু আয়কর দেওয়ার সময় মুনাফা দেখানো হলো ২০ লাখ ডলার। বাকি ১৯ লাখ ডলার সে দেশে প্রবশে করলেও ধরার উপায় থাকছে না।
এদিকে অর্থ পাচার ও মানি লন্ডারিং শুধু বাংলাদেশ নয় এটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা। এটি বিশ্বব্যাপী হুমকি হয়ে উঠছে। জাতিসংঘের মাদকদ্রব্য ও অপরাধ সংক্রান্ত কার্যালয় (ইউএনওডিসি) অনুসারে প্রতিবছর বিশ্বে পাচার হচ্ছে ৭৬ হাজার ৪৭২ কোটি ডলার। এটি প্রতিবছর বৈশ্বিক জিডিপির ২ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশের সমান। যে কারণে মানি লন্ডারিং বিরোধী কার্যক্রম আরও চাপের মধ্যে পড়েছে। পাশাপাশি ডিজিটালাইশেনের কারণেও বেড়েছে অর্থ পাচারের ঘটনা। কেওইসির প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থ পাচারের বিষয়টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ ২০২৪ সালের মানি লন্ডারিং, সন্ত্রাসী অর্থায়ন এবং বিস্তার অর্থায়নের জাতীয় ঝুঁকি মূল্যায়ন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে অবৈধ আর্থিক হুমকি, দুর্বলতা এবং ঝুঁকিগুলো তুলে ধরা হয়। সেখানে অর্থ পাচার বেড়ে যাওয়ায় ২০২২ সালে ১৪ বিলিয়ন ডলার জরিমানা করা হয় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।
দ্বিতীয় অর্থ পাচারের দেশ যুক্তরাজ্য। মাদক পাচারের মাধ্যমে অর্থ পাচারের ঘটনায় শীর্ষ রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। কানাডায়ও বেড়েছে মানি লন্ডারিংয়ের ঘটনা। সেখানে রিয়েল এস্টেট খাতে বেশি আসছে পাচারকৃত অর্থ। একই ভাবে জার্মানি ও সিঙ্গাপুরে অর্থ পাচারের ঘটনা বেড়েছে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে বাংলাদেশেও মানি লন্ডারিংয়ের ঘটনা বেড়েই চলছে। গত অর্থবছরের (২০২২-২৩) তুলনায় চলতি বছরে (২০২৩-২৪) পাচারের ঘটনা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। মূলত ব্যাংক লেনদেন, হুন্ডি ও মোবাইল ব্যাংক এবং গেমিং বেটিংয়ের মাধ্যমেই এসব ঘটনা ঘটছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের সন্দেহে প্রায় সাড়ে ৫শ ব্যাংক হিসাব শনাক্ত করা হয়। সেখানে লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনার জন্য যৌথভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিআইএফইউ) এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে বিনিময় করা হয়। এর আগের অর্থবছরে ২৮৫টি ঘটনার তথ্য বিনিময় হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে আরও প্রায় ১১ হাজার লেনদেনকে সন্দেহজনক তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে কাজ করছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। পাশাপাশি হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচারের অভিযোগে ব্যক্তিগত ২৭ হাজার ৬৮০ মোবাইল ব্যাংক (এমএফএস) স্থগিত এবং ৫ হাজার ২৯টি এমএফএস এজেন্টশিপ বাতিল করা হয়েছে।
সূত্রমতে, পাচার হয়ে যাওয়ার ঘটনা সম্পর্কে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৬৫টি চিঠি দিয়েছে বিএফআইইউ। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, আমরা আইনি প্রক্রিয়া মেনে সুইস ব্যাংকসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চিঠি দিয়েছি। একইভাবে আমাদের কাছেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ সম্পর্কে তথ্য চেয়েছে। এরই মধ্যে পাচারকৃত অর্থের তথ্য চেয়ে ১৫টি দেশ বাংলাদেশকে অনুরোধপত্র পাঠিয়েছে। আর অর্থ বিভাগের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়নের তথ্যাদি চেয়ে এরই মধ্যে বিশ্বের ৬৫টি দেশ থেকে অনুরোধপত্র এসেছে।
অনেক দেশেই অর্থ পাচার করা হচ্ছে
অধ্যাপক মইনুল ইসলাম যুগান্তরকে জানান, নানা কারণে সুইস ব্যাংকের আকর্ষণ কমছে। এখন ঝামেলা ছাড়া নিরাপদে বিশ্বের অনেক দেশে বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করা যায়। অর্থ পাচার আগের তুলনায় আরও সহজ হয়েছে। বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে পাচারকারীরা আগের তুলনায় আরও বেশি সুবিধা নিতে পারছে। ফলে পাচারকারীরা এখন সুইস ব্যাংকের বিকল্প হিসাবে ইউএসএ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়াসহ অনেক দেশে টাকা নিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া সুইস ব্যাংক আগের মতো কঠোর নিয়মে চলছে না। তারা এখন বিভিন্ন দেশকে তথ্য দিতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে যারা এক সময় পাচারকৃত অর্থ গোপনে রাখার জন্য সুইস ব্যাংককে নিরাপদ মনে করছে তারা এখন সেখান থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। যে কারণে সুইস ব্যাংকে আগের মতো আমানত বাড়ছে না।
তথ্য গোপন না থাকায় আকর্ষণ কমছে
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর জানান, তিন শ্রেণির লোক সুইস ব্যাংকে টাকা রাখে। প্রথম হচ্ছে সরকারি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থও সেখানে রাখা হয়। দ্বিতীয় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত, পাসপোর্ট হোল্ডার যারা বিদেশে থাকে বা বাণিজ্য করছে তারাও সুইস ব্যাংকে টাকা রাখে। এরা রাখে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য। আর তৃতীয় হচ্ছে দেশ থেকে অর্থ পাচারকারী। যারা নিজেদের গোপন রাখতে সেখানে অর্থ জমা করে। তবে সম্প্রতি সুইস ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সে ধরনের গোপনীয়তা রাখছে না। কোনো দেশের সরকার চাইলে তথ্য দিয়ে দিচ্ছে ব্যাংকটি। ফলে যারা সত্যিকার অর্থে পাচারকৃত টাকার তথ্য গোপন রাখতে চায় তারা এখন সেখানে রাখছে না।
তিনি আরও বলেন, পাচারকারীরা বিদেশে দুভাবে অর্থ ব্যবস্থাপনা করে। এক শ্রেণি দেশ থেকে টাকা পাচার করে বিদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে তোলে। দুবাই ও নিউইয়র্কে এ ধরনের অনেক কোম্পানির সন্ধান মিলবে। ওইসব পাচারকারী ব্যাংকে বেশি টাকা রাখে না। দ্বিতীয় হচ্ছে ব্যাংকে টাকা না রেখে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে বাড়িঘর ও স্থায়ী সম্পদ ক্রয় করছে। এসব কারণে সুইস ব্যাংকে কোনো গুরুত্ব নেই। এছাড়া দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় সুইস ব্যাংকে সরকারের ডিপোজিটও কমে আসছে। আগে পাচারকৃত অর্থ ব্যাংকে রেখে চলে আসত। এখন পাচারকৃত অর্থ ব্যবহারের বিকল্প অনেক উৎস তৈরি হয়েছে। ফলে ব্যাংকে টাকা রাখার প্রবণতা কমছে।
অর্থ গোপনের সুবিধা আছে নানা দেশে
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশন অব বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান জানান, আগের তুলনায় সুইস ব্যাংক বেশি নিয়মকানুন মানার চেষ্টাসহ তথ্য প্রকাশ করছে। নানা কারণে এ ব্যাংকে টাকা রাখার বিষয়টি নিরুৎসাহিত হচ্ছে। এছাড়া বিশ্বের অনেক দেশে এখন সুইস ব্যাংকের মতো অর্থ রাখার সুবিধা আছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডাসহ অনেক দেশে পাচারকৃত অর্থকে স্বাগত জানার মতো পরিস্থিতি বিরাজ করছে। শুধু তাই নয়, ওইসব দেশে পাচারকৃত অর্থ দ্বারা সম্পদের মালিকানা অর্জন করা যাচ্ছে। এর সঙ্গে আরও যুক্ত হয়েছে মালয়েশিয়া, হংকং ও সিঙ্গাপুর। আরও আছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে আরব আমিরাত। অর্থাৎ আগে সুইস ব্যাংকের একটি মনোপলি ব্যবসা ছিল সেটি ভেঙে গেছে। কারণ বিকল্প হিসাবে অন্য দেশগুলো প্রতিযোগিতায় এগিয়ে গেছে। ওইসব দেশের সুযোগ-সুবিধা আমাদের দেশের অর্থ পাচারকারীরা নিচ্ছে বলে মনে করি। সুইস ব্যাংকে আমানত কমেছে এর মানে দেশ থেকে অর্থ পাচার কমেছে সেটি বলা যাবে না। বরং দেশ থেকে অর্থ পাচারের ঘটনা বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, অনেক দেশে পাচারকৃত অর্থের কর দিতে হয় না। আবার নতুন দেশ যুক্ত হয়েছে যেমন গ্রিস ও পর্তুগাল-এ ধরনের দেশগুলো আছে এই তালিকায় কিন্তু তাদের নাম আসছে না। যেসব দেশে অর্থ ব্যয় করলে সহজে সংশ্লিষ্ট দেশের পাসপোর্ট মেলে এবং সম্পদের মালিক হওয়া যায়। ফলে সুইস ব্যাংকের তুলনায় অন্যান্য দেশ ও গন্তব্যগুলো আরও বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে পাচারকারীদের কাছে। যে কারণে আকর্ষণ সুইস ব্যাংকের। সুইস ব্যাংক এখন তথ্য প্রকাশ করছে, আগের মতো কড়াকড়ি নেই। এছাড়া প্রতিযোগিতায় থাকা কাছাকাছি দেশগুলো যেমন, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং ও আরব আমিরাতসহ কয়েকটি দেশে যেখানে যাওয়া আসা ও সম্পদ অর্জন এখন সহজ। এসব দেশ সুযোগগুলো করে দিচ্ছে। ফলে আমাদের দেশের স্মার্ট অর্থ পাচারকারীরা সুযোগগুলো নিচ্ছে। এছাড়া ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং কানাডায় শুধু অর্থ পাচার নয়, বাড়িঘরে মালিকানা নিচ্ছে।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আইনি কাঠামো আগের তুলনায় অনেক সক্রিয় হয়েছে। সরকারের সদ্দিচ্ছা থাকলে পাচারকৃত অর্থ শনাক্ত, ফেরত আনা এবং পাচারের সঙ্গে জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনা অবশ্য সম্ভব।
চিঠি দিলেই সুইস ব্যাংক বা অন্য কোনো দেশ পাচারের তথ্য দেবে এটি ঠিক নয়। এটি ফাঁকা আওয়াজের মতো। কি প্রক্রিয়ায় চিঠি দেওয়া হচ্ছে, আইন অনুসরণ করা হচ্ছে কিনা এসব বিষয় সরকারের পক্ষ থেকে খোলাসা করে বলা হয় না।