Science & Tech

বিখ্যাত ৫ হ্যাকার

নামি-দামি সব প্রতিষ্ঠানের কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছেন এমন ইতিহাসের অন্যতম ‘সেরা’ ৫ হ্যাকারকে নিয়ে আজকের এই লেখা।

ইন্টারনেটের এই যুগে হ্যাকিং একটি বড় হুমকির নাম। প্রতিবছর বিশ্বের বড় বড় সব প্রতিষ্ঠান নিজেদের সাইবার নিরাপত্তার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে। কিন্তু এরপরও গুগল, ইয়াহু কিংবা ফেসবুকের মতো বড় প্রতিষ্ঠানও হ্যাকিং এর হাত থেকে বাঁচতে পারেনি।

নামি-দামি সব প্রতিষ্ঠানের কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছেন এমন ইতিহাসের অন্যতম ‘সেরা’ ৫ হ্যাকারকে নিয়ে আজকের এই লেখা।

কেভিন মিটনিক

কেভিন মিটনিক। ছবি: সংগৃহীত

‘হ্যাকিং ও হ্যাকার’ ইতিহাসের সবচেয়ে পরিচিত নাম কেভিন মিটনিক। কিশোর বয়সে তিনি উত্তর আমেরিকার এরোস্পেস ডিফেন্ড কমান্ডের অধীনে থাকা নেটওয়ার্ক সিস্টেম হ্যাক করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। তবে এই কীর্তির জন্য প্রশংসা নয়, বরং কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়েছিল তাকে।

এছাড়াও তিনি প্যাসিফিক বেল, নোকিয়া ও মটোরোলার মতো বিখ্যাত ফোন কোম্পানিগুলোর সিস্টেম হ্যাক করেও বারবার আলোচনায় এসেছেন।

হ্যাকিংয়ের কাজে মিটনিক প্রযুক্তি নির্ভর প্রক্রিয়ার চেয়ে বড়ং ‘সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং’ পদ্ধতি বেশি কাজে লাগাতেন। অর্থাৎ তিনি নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গোপন তথ্য প্রকাশ করতে নানান কৌশলে প্রভাবিত করতেন।

প্যাসিফিক বেলের কম্পিউটার সিস্টেম হ্যাক করতে তাকে খুব বেশি কষ্ট করতে হয়নি। তাদের একজন কর্মচারীকে ফোন দিয়ে মিটনিক কৌশলে নিরাপত্তা ব্যবস্থাপকের কম্পিউটারের ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড জেনে নিয়েছিলেন।

এমন আরও অজস্র হ্যাকিং এর অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। হ্যাকিং এর পেছনের উদ্দেশ্য জানতে চাওয়া হলে উত্তরে তিনি জানান, নিছক আনন্দ ছাড়া এগুলোর পেছনে অন্য কোনো কারণ ছিল না।

জেল থেকে বের হয়ে তিনি তার এই দক্ষতাকে সমাজের উপকারে কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন। এরপর তিনি বহু বছর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করার কাজ করেছেন। এই বিখ্যাত হ্যাকার এ বছরের জুলাই মাসে ৫৯ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

গ্যারি ম্যাকিনন

গ্যারি ম্যাকিনন। ছবি: সংগৃহীত

২০০১ সালে নাসার ওয়েবসাইট হ্যাক করে “আপনাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যাচ্ছেতাই” লিখে বার্তা পাঠিয়ে সাড়া ফেলে দেওয়া ব্যক্তির নাম গ্যারি ম্যাকিনন। ছোটবেলা থেকেই তার ভিনগ্রহের প্রাণী ও তাদের কল্পিত যানবাহন  ইউএফও (UFO) সম্পর্কে প্রবল আগ্রহ ছিল। তিনি ভেবেছিলেন কোনোভাবে যদি নাসার ওয়েবসাইটে ঢোকা যায় তবে ইউএফও সম্পর্কে অনেক গোপন তথ্য জানা যাবে। এটা ভেবেই তিনি নাসার সিস্টেম হ্যাক করে ফেলেন। তিনি নাসার সিস্টেমে ভাইরাস ইনস্টলের মাধ্যমে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাইলও মুছে দেন যা আদালতের ভাষ্যমতে প্রায় ৭০ লাখ মার্কিন ডলার ক্ষতির সমতুল্য। নাসা ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিরক্ষা বিভাগ যেমন সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর মত বড় বড় নেটওয়ার্কে অবৈধভাবে প্রবেশ করে রেকর্ড সৃষ্টি করেন তিনি।  

এছাড়া তিনি ওয়াশিংটন নেটওয়ার্কের আওতায় থাকা ইউএস সামরিক বাহিনীর প্রায় ২ হাজার কম্পিউটার ২৪ ঘন্টার জন্য বন্ধ রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। এটা ছিল মিলিটারি কম্পিউটার হ্যাকের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা।

অ্যাড্রিয়ান লামো

পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন অ্যাড্রিয়ান লামো। ছবি: রয়টার্স

ইয়াহু, মাইক্রোসফট, গুগল ও নিউইয়র্ক টাইমসের মতো সর্বোচ্চ নিরাপত্তাযুক্ত ওয়েবসাইটগুলো হ্যাক করে শিরোনামে এসেছেন অ্যাড্রিয়ান লামো।

২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকার ওয়েবসাইট হ্যাক করে তিনি তাদের লেখকদের তালিকার মাঝে নিজের নাম জুড়ে দেন। এর পরপরই তিনি ধরা পড়ে যান এবং ছয় মাসের জন্য তাকে গৃহবন্দী থাকার সাজা দেওয়া হয়।

তবে এই বিষয়ে লামো বলেন যে পত্রিকার অনেক কর্মচারীরাই নিজেদের সোশাল সিকিউরিটি নাম্বারকেই পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করছিলেন। আর এটিই সাইটের জন্য বড় নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করেছিলো।

ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন যাযাবর প্রকৃতির। একটি ব্যাকপ্যাক কাধে নিয়ে তিনি ঘুরে বেড়াতেন এবং নানান প্রতিষ্ঠানকে সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে পরামর্শ দিতেন। তিনি ইয়াহু, এওএল এর মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠানে হ্যাক করে তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটিগুলো বের করে সতর্ক করার জন্য কাজ করেছেন। তবে তিনি এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো ক্ষতি করেননি। এজন্যই তিনি সকলের কাছে গ্রে হ্যাট হ্যাকার বলে পরিচিত। ২০১৮ সালে লামো মাত্র ৩৭ বছর বয়েসে মারা যান। তার আকস্মিক মৃত্যুর কোনো যথার্থ কারণ আজও উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয়নি।

কেভিন পলসেন

কেভিন পলসেন। ছবি: সংগৃহীত

লস এঞ্জেলসের এক রেডিওতে একটি প্রতিযোগিতা চলছিল। প্রতিযোগিতাটি এমন ছিল যে ১০২ নম্বর কলারকে একটি দামী পোর্শে গাড়ি পুরস্কার দেওয়া হবে। কেভিন পলসেন গাড়িটি পাওয়ার জন্য হ্যাকিং এর সাহায্যে পুরো ফোনকল ব্যবস্থা জ্যাম করে নিজে ১০২ নম্বর কলার হয়ে পুরস্কারটি জিতে নেন।

১৯৮৩ সালে ১৭ বছর বয়সী পলসেন ‘ডার্ক দান্তে’ ছদ্মনাম ব্যবহার করে পেন্টাগনের কম্পিউটার নেটওয়ার্ক আরপানেট হ্যাক করেছিলেন। এর প্রায় সাথে সাথেই তিনি ধরা পড়ে যান তবে অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাকে শাস্তি না দিয়ে শুধু সতর্কবার্তা দিয়েই ছেড়ে দেওয়া হয়।

তবে পলসেন এই সতর্কবার্তায় বিন্দুমাত্র কান না দিয়ে তার হ্যাকিং চালিয়ে যান। এরপর একে একে তিনি সরকারি বিভিন্ন সাইট হ্যাক করে রাষ্ট্রের স্পর্শকাতর সব গোপন তথ্য ফাঁস করতে থাকেন।ধরা পরে গেলে তিনি পালিয়ে যান এবং পলাতক অবস্থায়ও হ্যাকিং অব্যাহত রাখেন।

এক পর্যায়ে পলসেন পুলিশের হাতে ধরা পড়েন এবং তাকে গৃহবন্দী করা হয়।পাশাপাশি তাকে তিন বছরের জন্য কম্পিউটার ব্যবহার করতে বাধা দেওয়া হয়।  এরপর থেকে তিনি লেখালেখির দিকে মনোনিবেশ করেন। ওয়্যারড, দ্য ডেইলি বিস্ট এবং তার নিজের ব্লগ থ্রেট লেভেলের জন্য সাইবার নিরাপত্তা এবং ওয়েব-সম্পর্কিত নানান বিষয়ে তিনি নিয়মিত লিখে থাকেন।

জোনাথন জেমস

জনাথন জেমস। ছবি: সংগৃহীত

মাত্র ১৫ বছর বয়সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের কম্পিউটার সিস্টেম হ্যাক করেন জোনাথন জেমস।এছাড়াও তিনি আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন হ্যাক করে এর সোর্স কোড চুরি করেন। ধরা পড়লে তাকে ছয় মাসের জন্য কারাদণ্ড দেওয়া হয়।  সাইবার অপরাধ আইন লঙ্ঘনের জন্য দোষী সাব্যস্ত হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বয়সের দিক থেকে তিনিই সর্বকনিষ্ঠ।

২০০৭ সালে একটি ডিপার্টমেন্ট স্টোরের কম্পিউটার সিস্টেম হ্যাক হয়।এর ফলে বহু গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য চুরির অভিযোগ উঠে আসে। পর্যাপ্ত প্রমাণ ছাড়াই কর্তৃপক্ষ জেমসকে দোষী হিসেবে গণ্য করেন। এরপরের বছর জেমস আত্মহত্যা করেন। জানা যায় ন্যায়বিচার না পেয়ে বিচার ব্যবস্থার উপর আস্থা হারিয়ে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor