Bangladesh

বিচার বিভাগ, শিক্ষা, অর্থনীতিসহ রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সকল স্তরে পরিবর্তন করতে হবে: ড. ইউনূস

ড. ইউনূস বলেন, “১২ থেকে ১৩ বছর বয়সী তরুণ শিক্ষার্থী এবং শিশুরা ৪০০ বছরের পুরনো এই শহরের দেয়ালে ‘নতুন গণতান্ত্রিক’ পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশের চিত্র দিয়ে রাঙিয়ে তুলছে। এ জন্য কোনো কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা বা দিকনির্দেশনা নেই। কারও কাছ থেকে বাজেট সাপোর্ট পায়নি তারা। এটা দ্বিতীয় বিপ্লবের লক্ষ্যের প্রতি তাদের আবেগ ও অঙ্গীকারের বহিঃপ্রকাশ মাত্র।”

তরুণ প্রজন্মের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিতে, বিচার বিভাগ, নির্বাচন ব্যবস্থা, স্থানীয় সরকার, শিক্ষা ও অর্থনীতিসহ রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সকল স্তরে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এসময় টেকসই ভবিষ্যৎ বিনির্মাণ ও নতুন বিশ্ব গড়ে তুলতে গ্লোবাল সাউথ এর কৌশলের কেন্দ্রবিন্দুতে তরুণ ও ছাত্রদের রাখার আহ্বানও জানান তিনি।

আজ শনিবার (১৭ আগস্ট) ভারতে আয়োজিত তৃতীয় ‘ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ সামিট’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘লিডার্স সেশন’-এ ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে ড. ইউনূস এ কথা বলেন।

অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান হিসেবে শপথ নেওয়ার পর এটাই ছিল ড. ইউনূসের প্রথম বহুপক্ষীয় বৈঠক। এর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁকে সম্মেলনে যোগদানের আমন্ত্রণ জানান। প্রধানমন্ত্রী মোদির সঞ্চালনায় রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান পর্যায়ের এই অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।

আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা, এশিয়া ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের দেশ গ্লোবাল সাউথের অন্তর্ভুক্ত। মূলত এসব দেশে মাথাপিছু আয় উন্নত দেশের তুলনায় কম।

অধিবেশনে দেওয়া তার বক্তব্যে ড. ইউনূস দেশের শিক্ষার্থী ও তরুণদের অর্জিত ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’-এর মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার করেন; একইসাথে সকলের সম্পদ প্রাপ্তি নিশ্চিতে বাংলাদেশের আর্থিক ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ড. ইউনূস বলেন, “আমার জীবনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে দেখতে পাই, আমাদের আর্থিক ব্যবস্থা সম্পদ আত্তীকরণের বিষয়টিকে উৎসাহিত করে। এক্ষেত্রে সকলের সম্পদ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে আর্থিক ব্যবস্থাকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে।”

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, “সম্পদের একমুখী পথ থাকা উচিত নয়। আমাদের অবশ্যই সকল মানুষের, বিশেষ করে নারী ও যুবকদের জন্য আর্থিক সেবা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা একে অপরের কাছ থেকে শিখতে পারি যে, কীভাবে এটি সফলভাবে করা যায়। …এই বিষয়ে বহু দেশ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। এক্ষেত্রে আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে।”

বক্তব্যে বিচার বিভাগ, নির্বাচন ব্যবস্থা, স্থানীয় সরকার, শিক্ষা ও অর্থনীতিসহ রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সকল স্তরে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার পরিকল্পনার কথা জানান নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ।

তিনি বলেন, “আপনারা সকলেই জানেন, বাংলাদেশ গত ৫ আগস্ট, ২০২৪-এ ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’ এর সাক্ষী হয়েছে। আমাদের বীর ছাত্রদের নেতৃত্বে এবং জনসাধারণের যোগদানের মধ্য দিয়েই তা সম্ভব হয়েছে।”

ড. ইউনূস বলেন, “১২ থেকে ১৩ বছর বয়সী তরুণ শিক্ষার্থী এবং শিশুরা ৪০০ বছরের পুরনো এই শহরের দেয়ালে ‘নতুন গণতান্ত্রিক’ পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশের চিত্র দিয়ে রাঙিয়ে তুলছে। এজন্য কোনো কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা বা দিকনির্দেশনা নেই। কারও কাছ থেকে আর্থিক সহায়তাও পায়নি তারা। এটা দ্বিতীয় বিপ্লবের লক্ষ্যের প্রতি তাদের আবেগ ও অঙ্গীকারের বহিঃপ্রকাশ মাত্র।”

তিনি বলেন, “তারা রঙ এবং ব্রাশ কেনার জন্য দোকানে যায়। তারা তাদের নিজস্ব বিষয় এবং নিজস্ব বার্তা তৈরি করে। তারা যে বার্তাগুলো আঁকছে, তা যে কাউকে শিহরিত করবে। তরুণরা কী স্বপ্ন দেখছে তা যে কেউ তাদের মধ্যে পড়তে পারে। তাদের স্বপ্নকে সত্যি করাই আমাদের কাজ।”

ড. ইউনূস মনে করেন, গ্লোবাল সাউথের জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ তরুণ ও শিক্ষার্থীদের অবশ্যই সরকারের কৌশলের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ তরুণ। এরা সমাজের সবচেয়ে ক্ষমতাধর অংশ। তারা আলাদা। তারা একটি নতুন বিশ্ব গড়তে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

তরুণ ও শিক্ষার্থীরা সক্ষম এবং প্রযুক্তিগতভাবে তারা আগের প্রজন্মের চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। 

তিনি বলেন, “তারা সব অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে। তারা উদ্যোক্তা। তারা যে কাজ চায়, সেটা উপভোগ করার কারণে নয়। বরং তারা অন্য কিছু করতে পারছে না তাই। কারণ আমাদের সব দেশের শিক্ষাব্যবস্থা তাদের শুধু চাকরির জন্য প্রস্তুত করে।”

অধ্যাপক ইউনূস মনে করেন, এই মারপ্যাঁচে তরুণেরা তাদের সৃজনশীল সক্ষমতা সম্পর্কে ভুলে যায়। প্রধান উপদেষ্টা বলেন,  “তারপরও সব মানুষই সৃজনশীল জীব হিসেবে জন্মগ্রহণ করে। তারা স্বভাবজাত উদ্যোক্তা। কিন্তু আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ও আর্থিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে শুধুমাত্র চাকরিপ্রার্থী তৈরি ও তাদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য।”

তিনি বলেন, “আমাদেরকে ব্যবস্থাটি পুনরায় সাজাতে হবে। তিনি আশা করেন, তারা গ্লোবাল সাউথে একসঙ্গে এটি করতে পারে। এটি দারুণভাবে সৃজনশীল তরুণ জনগোষ্ঠী সমৃদ্ধ।”

অধ্যাপক ইউনূস সকল পরিবেশগত ও সামাজিক সমস্যা সমাধানে সামাজিক ব্যবসা গড়ে তুলতে গ্লোবাল সাউথের নেতাদের একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d