Bangladesh

বিজয় দিবসে বিএনপি‘কঠিন সময়ে’ বড় শোডাউনের পরিকল্পনা

সারাদেশে দলীয় নেতাকর্মীর গণগ্রেপ্তার ও কারাদণ্ডের ‘কঠিন সময়ে’র মধ্যেই বড় ধরনের শোডাউনের পরিকল্পনা করছে বিএনপি। টানা ৫০ দিন পর আবারও নয়াপল্টন এলাকায় কর্মসূচি দিয়েছে দলটি। মহান বিজয় দিবসে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে আবারও নিজেদের জনসমর্থনের ‘শক্তি পরীক্ষা’ দিতে চাচ্ছে তারা। নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। মামলায় এজাহারনামীয় নেতাকর্মী ছাড়া এদিন সবাই জড়ো হবেন দলের প্রধান কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। সেখান থেকে মগবাজার পর্যন্ত শোভাযাত্রা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। 

দলীয় সূত্র জানায়, প্রতিবছরের মতো এবার স্বতঃস্ফূর্তভাবে কর্মসূচি পালনের অনুকূল পরিবেশ না থাকলেও আয়োজনে কোনো ঘাটতি রাখেননি দলীয় নেতারা। বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দলবিহীন জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশ-বিদেশে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে বড় শোডাউনের প্রস্তুতিও চলছে দলটিতে। যদিও প্রশাসন থেকে এখন পর্যন্ত কর্মসূচি পালনে অনুমতি মেলেনি। কর্মসূচি পালনে তৈরি হয়েছে সংশয়ও। তবে আশাবাদী দলটির সিনিয়র নেতারা। 
আগামীকাল ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে শোভাযাত্রা কর্মসূচি পালনে এরই মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাছে আবেদনও করেছে বিএনপি। 

গত বুধবার দলটির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান আনুষ্ঠানিক অনুমতির আবেদন নিয়ে ডিএমপি সদরদপ্তরে যান। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ড. খ. মহিদ উদ্দিনের কাছে আবেদন হস্তান্তর করেন তারা। সেখান থেকে বেরিয়ে নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, বিজয় দিবস উপলক্ষে নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে থেকে শোভাযাত্রা বের করা হবে। বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠিত ওই শোভাযাত্রা মগবাজার পর্যন্ত যাবে। তবে ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে দেখা হয়নি তাদের। ফলে অনুমতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি। 

এ বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল এসেছিল তাদের ১৬ ডিসেম্বরের কর্মসূচির ব্যাপারে। তারা একটি আবেদনপত্র দিয়ে গেছেন। অনুমতির বিষয়ে কথা হয়নি। আলোচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে। অন্যদিকে, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার গতকাল রাতে জানান, এই মুহূর্ত পর্যন্ত অনুমতি দেওয়া হয়নি। 

তবে অনুমতির বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতারা আশাবাদী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ১৮ ডিসেম্বরের পর সব ধরনের রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ কর্মসূচি বন্ধের কথা বলা হয়েছে। এর আগে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বিএনপির শোভাযাত্রা নিয়ে টালবাহানা করলেও শেষ পর্যন্ত অনুমতি দেবে বলে মনে করছেন তারা। 

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রেখেছে পুলিশ। নয়াপল্টনের ত্রিসীমায় যেতে পারেন না নেতাকর্মীরা। চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়েও গভীর রাতে পুলিশ তাণ্ডব চালিয়েছে। সেখানে হানা দিয়ে কক্ষে কক্ষে তল্লাশি চালিয়েছে। মহান বিজয় দিবসের বিজয় র‍্যালি করার অনুমতি দিতেও তারা টালবাহানা শুরু করেছে। এর মাধ্যমে তারা গণতান্ত্রিক সব নিয়মনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। 

গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর নয়াপল্টন এলাকায় আর কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি দলটি। সেদিন থেকে দলের প্রধান কার্যালয়ও রয়েছে বন্ধ। নেতাকর্মীর আর আনাগোনা নেই সেখানে। এক দফার আন্দোলনের অংশ হিসেবে ২৯ অক্টোবর থেকে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি চলছে দলটির। এ অবস্থার মধ্যেও ঢাকায় আবারও প্রকাশ্য কর্মসূচিকে গুরুত্ব দিয়েছেন দলের হাইকমান্ড। 

বিএনপি নেতারা জানান, তাদের মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যাওয়ার ৪৩ দিন পর প্রথম প্রকাশ্য কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে আয়োজিত ওই কর্মসূচিতে নেতাকর্মীর উপস্থিতি সাড়া ফেলেছে। গ্রেপ্তার আতঙ্কের পরও সেদিন ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছেন হাজারো কর্মী-সমর্থক শ্রেণি। এ ঘটনাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত ওই মানববন্ধন ঘিরে অনেক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থাকলেও শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত করতে পেরেছে বিএনপি। এবার শোভাযাত্রা ঘিরে তেমন কোনো শঙ্কা না থাকায় আরও বেশি লোকসমাগম ঘটবে বলে মনে করছেন দলের নেতাকর্মীরা। 

দলটির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারা জানান, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় ছাড়া রাজপথ ছাড়বেন না তারা। ‘একতরফা’ নির্বাচন প্রতিহত করতে সারাদেশে আন্দোলনকে আরও জোরদার করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। বিশেষ করে চলমান হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিকে আরও কঠোর করার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। একই সঙ্গে তাদের আন্দোলনে জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়াতে নানামুখী কৌশলও রয়েছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীর ওপর অত্যাচার-নির্যাতন, গণগ্রেপ্তার, হয়রানি আর দ্রব্যমূল্যের ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে বিগত কয়েকদিন ভিন্ন ভিন্ন ব্যানারে কর্মসূচি পালন করেছে। এজন্য মাঠে নামানো হয় বিভিন্ন পেশাজীবী, নারী সংগঠনসহ গুম-খুন ও কারা নির্যাতিত পরিবারের সদস্যদের। রাজপথের আন্দোলনের বিরতিতে এসব কর্মসূচি নেতাকর্মীর মধ্যে ‘টনিক’ হিসেবে কাজ করছে। তাদের মধ্যে আরও স্পৃহা বাড়ছে। ওই কৌশলের অংশ হিসেবে মহান জাতীয় দিবস সামনে রেখে এবারও শোভাযাত্রার মতো কর্মসূচি রাখা হয়েছে। আতঙ্কিত আর ভীতসন্ত্রস্ত নেতাকর্মীর ভয় ভেঙে রাজপথে নামাতে চান তারা। একই সঙ্গে ‘একতরফা’ জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশ-বিদেশে নিজেদের জনভিত্তি আর সমর্থনকে সামনে আনতে এটাও তাদের একটি কৌশল।

দলীয় সূত্র জানায়, শুধু মহাসমাবেশের দিনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকায় দেড় শতাধিক মামলা হয়েছে নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী থেকে শুরু করে সারাদেশে প্রায় ২২ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতেও যে কোনো কর্মসূচি সফল করতে তারা সক্ষম। এজন্য নিয়েছেন নানা পরিকল্পনা। ওই দিন শুধু নেতাকর্মী নন, সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণও বাড়বে বলে মনে করছেন তারা। 

সার্বিক প্রস্তুতি বিষয়ে দুই মহানগরের নেতারা জানান, তারা ইতোমধ্যে প্রতিটি ইউনিটকে বার্তা দিয়েছেন। ওই দিন মামলায় এজাহার নামীয় নেতাকর্মী ছাড়া প্রত্যেককে কর্মসূচিতে অংশ নিতে হবে। বিজয় শোভাযাত্রা হিসেবে ঢাকঢোল আর সাজসজ্জা নিয়ে ওই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার জন্যও বলা হয়েছে। সার্বিক প্রস্তুতি হিসেবে তারা প্রতিদিনই থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলছেন, নির্দেশনা দিচ্ছেন। এমনকি দায়িত্বও বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। একইভাবে অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীকেও এই প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা হয়েছে। তারাও নিজেদের মতো করে উপস্থিতি নিশ্চিত করছেন। প্রকাশ্যে ঘরোয়া বৈঠক, প্রস্তুতি সভা করতে না পারলেও ভার্চুয়াল বৈঠকে দেওয়া হচ্ছে দিকনির্দেশনা। 

নেতারা জানান, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রকাশ্য কর্মসূচির সুযোগ নেই। আন্দোলন শুরুর পর তাদের অনেক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। রাজপথের সবচেয়ে সক্রিয় নেতাকর্মীর বেশির ভাগকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিভিন্ন ইউনিটের পদধারী নেতাদের টার্গেট করে এখনও চলছে সাঁড়াশি অভিযান। এমন অবস্থায় নেতাকর্মীর অনেকে একদিকে যেমন হতবিহ্বল, কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছেন, তেমনি আতঙ্কিতও হয়েছেন অনেকে। ওই সব নেতার মধ্যে একটি চাঙ্গাভাব তৈরি করতে চান তারা। 

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব লিটন মাহমুদ বলেন, শুধু বিএনপি নেতাকর্মী নয়, সাধারণ মানুষও এখন একটু স্বাধীনভাবে নিঃশ্বাস নিতে চায়। আর এর বহিঃপ্রকাশ ঘটে বিএনপির কর্মসূচিতে। হাজার নয়, লাখো নেতাকর্মী, সমর্থক আর সাধারণ মানুষের সম্মিলন ঘটে সেখানে। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না। তারা সেরকম প্রস্তুতি নিয়েছেন বলেও তিনি জানান।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor