Bangladesh

বিতর্কিত বিচারপতিদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত যে কোনো দিন

আরও ১৮ বিচারপতির বিষয়ে তদন্তের দাবি * সুপ্রিমকোর্টের কয়েকজন বিচারপতির বিষয়ে তথ্যাদি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়েছে -রেজিস্ট্রার জেনারেল

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখা হাইকোর্ট বিভাগের কয়েকজন বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ রাষ্ট্রপতির দপ্তরে পাঠিয়েছে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল। এ বিষয়ে এখন রাষ্ট্রপতি সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে রাষ্ট্রপতি সেটি পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে পাঠাবেন নাকি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়। প্রসঙ্গত, ১৬ অক্টোবর থেকে ওই ১২ বিচারপতিকে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখা হয়েছে। এদিকে ১২ বিচারপতির বিষয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল তদন্ত অব্যাহত রাখায় সাধুবাদ জানিয়ে আরও ১৮ দলবাজ বিচারপতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারী সুপ্রিমকোর্টের এক সিনিয়র আইনজীবী।

সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসনের একাধিক সূত্রের তথ্যমতে, কয়েকজন বিচারপতির বিষয়ে তথ্যাদি গত সপ্তাহে পাঠানো হয়েছে। তবে কতজন বিচারপতির বিষয়ে তথ্যাদি পাঠানো হয়েছে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেনি সূত্রগুলো।

নভেম্বরে সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসনের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ষোড়শ সংশোধনী রায়ের পর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা হলেও ওই কাউন্সিলে কয়েকজন বিচারপতিসংক্রান্ত তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলমান। এরপর সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন ৪ ডিসেম্বর জানায়, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে বর্তমানে বেশ কয়েকজন বিচারপতির আচরণের (কনডাক্ট) বিষয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধান চলছে। এরপর রোববার নিউজ আপডেটে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করে সুপ্রিমকোর্টের কয়েকজন বিচারপতির বিষয়ে তথ্যাবলি রাষ্ট্রপতির কাছে ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে বলে জানানো হয়।

জানতে চাইলে সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. আজিজ আহমদ ভূঞা সোমবার যুগান্তরকে বলেন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করে সুপ্রিমকোর্টের কয়েকজন বিচারপতির বিষয়ে তথ্যাদি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়েছে। সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটে রোববার প্রকাশিত এক নিউজ আপডেটে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এর বাইরে আমি কিছু জানি না।

৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলে তার আমলে নিয়োগকৃত হাইকোর্ট বিভাগে কর্মরত ৩০ বিচারপতিকে দুর্নীতিবাজ, দলকানা আখ্যা দিয়ে তাদের অবিলম্বে পদত্যাগ বা অপসারণ চান সুপ্রিমকোর্টের একদল আইনজীবী। সর্বশেষ ৭ অক্টোবর হাইকোর্ট বিভাগের এসব বিচারপতিকে ১৮ অক্টোবরের মধ্যে পদত্যাগ বা অপসারণ চেয়ে প্রধান বিচারপতি বরাবর স্মারকলিপি দেন আন্দোলনকারীরা।

এদিকে ১৬ অক্টোবর ‘দলবাজ’ ও ‘দুর্নীতিবাজ’ বিচারপতিদের পদত্যাগ অথবা তাদের অপসারণের দাবিতে হাইকোর্ট ঘেরাও এবং বিক্ষোভ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বৈষম্যবিরোধী আইনজীবী সমাজ ও জাতীয় নাগরিক কমিটি-লিগ্যাল উইং। বিক্ষোভের মুখে হাইকোর্ট বিভাগের ১২ জন বিচারপতিকে আপাতত বেঞ্চ না দেওয়া, অর্থাৎ বিচারকাজ থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানায় সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন। ১৭ অক্টোবর ১২ জন বিচারপতিকে বাদ দিয়ে বেঞ্চ গঠন করা হয়। তারা হলেন বিচারপতি এসএম মনিরুজ্জামান, বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান, বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিন, বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামান, বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলাম, বিচারপতি এসএম মাসুদ হোসাইন দোলন, বিচারপতি আতাউর রহমান খান, বিচারপতি নাইমা হায়দার, বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ, বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার, বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাস ও বিচারপতি খিজির হায়াত।

সুপ্রিমকোর্টের পাবলিক রিলেশন অফিসার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, বিক্ষোভের মুখে হাইকোর্ট বিভাগের ১২ জন বিচারপতিকে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখা হয়। পরবর্তী সময়ে একজন অবসরে যান।

তিনি বলেন, সুপ্রিমকোর্টের কয়েকজন বিচারপতির বিষয়ে তথ্যাদি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়েছে। আইনানুযায়ী এখন রাষ্ট্রপতি সেটি পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য ফের জুডিশিয়াল কাউন্সিলে পাঠানোর কথা রয়েছে। তবে এটি রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার।

৩০ বিচারপতি অপসারণের আন্দোলনে যুক্ত আছেন সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ৩০ জনের মধ্যে প্রধান বিচারপতি ১২ জনকে বিচারকাজ থেকে বিরত রেখেছেন। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে সেটি এখন বিচারাধীন। এ ব্যাপারে প্রধান বিচারপতি অত্যন্ত আন্তরিক, এতে আমরা খুশি। তিনি বলেন, আরও ১৮ জন বিচারপতি রয়েছেন, যারা দুর্নীতি ও দলবাজের সঙ্গে জড়িত। ফ্যাসিবাদের দোসর। আশা করব, তারা সবাই যেন পদত্যাগ করেন। না হলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল যেন প্রয়োগ হয়।

সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে অভিযোগ নিষ্পত্তি প্রসঙ্গে মনজিল মোরসেদ বলেন, কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে সেটি যাবে রাষ্ট্রপতির কাছে। পরে সেটি প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠালে তিনিসহ (প্রধান বিচারপতি) আরও দুজন বিচারপতি নিয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে তা তদন্ত করবেন। তাদের ডাকবেন, কথা বলবেন, তদন্ত করে আত্মপক্ষ সমর্পণের সুযোগ দেবেন। যদি মনে করেন, অভিযোগ প্রমাণ হয়েছে, তখন সুপারিশ দিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবেন। রাষ্ট্রপতি সেটি গেজেট আকারে জারি করবেন।

প্রসঙ্গত, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠিত হয় প্রধান বিচারপতি ও পরবর্তী জ্যেষ্ঠ দুজন বিচারপতিকে নিয়ে। ষোড়শ সংশোধনীর আগের সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে কাউন্সিল যাচাই-বাছাই করে অভিযোগ রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে পারেন। অভিযোগ তদন্ত করে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশসহ প্রতিবেদন পাঠাতে পারেন। কাউন্সিল তদন্ত করে রাষ্ট্রপতির কাছে যদি এমন রিপোর্ট দেন যে সংশ্লিষ্ট বিচারক তার পদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে অযোগ্য হয়ে পড়েছেন বা গুরুতর অসদাচরণের জন্য দোষী হয়েছেন, তাহলে রাষ্ট্রপতি আদেশের মাধ্যমে ওই বিচারককে তার পদ থেকে অপসারিত করবেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d