Trending

বিতর্কে হালাল সনদ পদ্ধতি, প্রশ্নের মুখে উত্তর প্রদেশ সরকার

ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যে সম্প্রতি হালাল লেবেলযুক্ত খাবার, ওষুধ ও প্রসাধনী উৎপাদন, মজুদ এবং বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করতে জোরকদমে তল্লাশি অভিযান চালানো হচ্ছে।

‘ফুড সেফটি অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (এফএসএডিএ) কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে লক্ষ্ণৌ, গাজিয়াবাদ, নয়ডা-সহ বিভিন্ন জায়গায় শপিং মল, খাবারের দোকান, ওষুধের দোকান ও গুদাম, ছোট-বড় বিপনীসহ নানা জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছে।

জানা গেছে, এর মধ্যে বেশকিছু জায়গা থেকে এমন সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে যেগুলোতে হালাল লেবেলসহ বিক্রি করা যাবে না বলে উত্তর প্রদেশ সরকার আগেই এক নির্দেশে জানিয়েছিল।

শুধু তাই নয়, কয়েকটি দোকানকে নিয়ম ভাঙ্গার অভিযোগে জরিমানা দিতে হয়েছে বলেও জানা গেছে।

অন্যদিকে উত্তর প্রদেশের পর এবার বিহারেও একই নিষেধাজ্ঞা জারি করতে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে অনুরোধ জানিয়েছেন ভারতের কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েতি রাজ দফতরের মন্ত্রী গিরিরাজ সিং।

হালাল সার্টিফিকেশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ
এই পুরো ঘটনার মূলে রয়েছে দিন কয়েক আগে লক্ষ্ণৌয়ে দায়ের করা একটি এফআইআর, যেখানে হালাল সার্টিফিকেট বা সনদ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে।

হালাল মানে ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী তৈরি পণ্য।

গত ১৮ নভেম্বর রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব অনিতা সিং উত্তর প্রদেশে হালাল সার্টিফায়েড পণ্য নিষিদ্ধ করার আদেশ জারি করেন।

‘ড্রাগস অ্যান্ড কসমেটিকস অ্যাক্ট, ১৯৪০’-এর ভিত্তিতে জারি করা এই আদেশে বলা হয়, বর্তমান আইনে ওষুধ ও প্রসাধনী সামগ্রীকে হালাল হিসেবে চিহ্নিত করার কোনো বিধান নেই।

আদেশে বলা হয়েছে, কেউ যদি ওষুধ ও প্রসাধনীকে হালাল হিসেবে চিহ্নিত করেন, তাহলে তিনি বর্তমান আইন অনুযায়ী বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারের অপরাধে দোষী বলে বিবেচিত হবেন এবং ১৯৪০ সালের ‘ড্রাগস অ্যান্ড কসমেটিকস অ্যাক্টে’র অধীনে শাস্তিও পেতে পারেন।

কী বলা হয়েছে ওই আদেশে?
ওই আদেশে উল্লেখ হয়েছে যে উত্তর প্রদেশে হালাল লেবেলযুক্ত ওষুধ এবং প্রসাধনী উৎপাদন, মজুদ, বিতরণ এবং বিক্রয় করলে ১৯৪০ সালের ড্রাগস অ্যান্ড কসমেটিকস অ্যাক্ট-এর অধীনে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এছাড়াও ভিন্ন একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে, যাতে বলা হয়েছে, কিছু কোম্পানি দুগ্ধজাত পণ্য, তেল, কেক-পাঁউরুটি, নোনতা খাবার, রান্নার তেল মতো একাধিক পণ্যকে হালাল সার্টিফিকেশন-সহ বিক্রি করা হচ্ছে বলে সরকার তথ্য পেয়েছে।

উত্তর প্রদেশ সরকারের জারি করা ওই আদেশে জানানো হয়েছে, ‘খাদ্য পণ্যে হালাল সার্টিফিকেশন একটি সমান্তরাল ব্যবস্থা যা খাদ্যটি সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে এবং আইনের পরিপন্থী। ওষুধ এবং প্রসাধনী সামগ্রীতে হালাল লেবেলিং বিভ্রান্তিকর, যা ‘ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অ্যাক্ট ২০০৬’ এর অধীনে একটি অপরাধ।’

এই বিষয়ে উঠে আসা সমস্ত প্রশ্নের উত্তর জানতে যিনি ওই নির্দেশ জারি করেছেন, সেই অতিরিক্ত মুখ্য সচিব অনিতা সিংয়ের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছিল বিবিসি। কিন্তু তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

‘রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি’র হাত শক্ত হওয়ার আশঙ্কা
সরকারের নিষেধাজ্ঞার জারির প্রায় ২৪ ঘণ্টা আগে একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল যেখানে অভিযোগ করা হয়, লক্ষ্ণৌয়ের হজরতগঞ্জ থানার অন্তর্ভুক্ত অঞ্চলে উৎপাদিত অনেক পণ্যে হালাল স্টিকার লাগানো হচ্ছে।

চেন্নাইয়ের হালাল ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড, দিল্লির জমিয়ত উলেমা-এ-হিন্দ হালাল ট্রাস্ট, জমিয়ত উলেমা মহারাষ্ট্র এবং অজ্ঞাত এক সংস্থা, তাদের মালিক ও ম্যানেজমেন্টের বিরুদ্ধে ওই এফআইআরে অভিযোগ তোলা হয়েছে।

এফআইআরে লেখা হয়েছে, হালাল সার্টিফিকেট ও লেবেল লাগিয়ে একটি নির্দিষ্ট ধর্মের গ্রাহকদের মধ্যে বিক্রি বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল। হালাল সার্টিফিকেটের জন্য ভুয়ো কাগজপত্র ব্যবহার করা হয়েছে যার ফলে মানুষের বিশ্বাসের সঙ্গে খেলা করা হচ্ছে- এমনটাই অভিযোগে জানানো হয়েছে।

এফআইআরে আরো অভিযোগ করা হয়েছে, যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান এই হালাল সার্টিফিকেট নিচ্ছে না, তাদের পণ্য বিক্রির ওপর এর প্রভাব পড়ছে, যা তার মতে অন্যায্য।

গোস্তবিহীন পণ্য যেমন তেল, সাবান, মধু ইত্যাদি বিক্রির জন্য হালাল সার্টিফিকেট দেয়া হচ্ছে, যা অপ্রয়োজনীয়। এর ফলে অমুসলিম ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়িক স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।

যারা দেশকে দুর্বল করতে চান তারা এর সাথে জড়িত এবং এর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করা হচ্ছে যা সন্ত্রাসবাদী ও রাষ্ট্রবিরোধী সংগঠনের তহবিলে ব্যবহার করা হতে পারে- এই আশঙ্কার কথাও ওই এফআইআরে উল্লেখ করা হয়েছে।

জমিয়ত-উলেমা-এ-হিন্দ কী বলছে?
জমিয়ত-উলেমা-এ-হিন্দ হালাল ট্রাস্ট এক প্রেস বিবৃতিতে জানিয়েছে, যে তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার উদ্দেশ্যে ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা হয়েছে।

তারা বলছে, ‘ভুল তথ্য প্রচারের মোকাবিলা করতে জমিয়ত উলেমা-এ-হিন্দ হালাল প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

জমিয়ত-উলেমা-এ-হিন্দ ট্রাস্টের মতে, বিশ্বজুড়ে হালাল সামগ্রীর বাণিজ্য প্রায় সাড়ে তিন লাখ কোটি ডলার এবং ভারতও তা থেকে অনেকটাই লাভবান হয়। ট্রাস্টের দাবি, তাদের হালাল সার্টিফিকেশন প্রক্রিয়া দেশের ভেতরে বিক্রয় এবং আন্তর্জাতিক রফতানি দু’টির জন্যই প্রযোজ্য হয়।

ট্রাস্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভারতে আসা পর্যটকদের জন্যও প্রয়োজনীয় হালাল সার্টিফিকেট দরকার হয়, যারা শুধুমাত্র হালালের লেবেল দেখেই জিনিস কেনেন।

তারা কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের নিয়ম অনুসরণ করে এবং ন্যাশনাল অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড ফর সার্টিফিকেশন বডির (এনএবিসিবি) অধীনে কোয়ালিটি কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া এ নিবন্ধিত বলেও দাবি ওই ট্রাস্টের।

তাদের দেয়া হালাল সার্টিফিকেট মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরবের মতো দেশে-সহ পুরো বিশ্বে স্বীকৃত বলে ট্রাস্টের দাবি ।

শুধু তাই নয়, জমিয়ত-উলেমা-এ-হিন্দ হালাল ট্রাস্ট ওয়ার্ল্ড হালাল ফুডস কাউন্সিলেরও সদস্য। তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হালাল সার্টিফিকেশন এবং লেবেল শুধু হালাল উপভোক্তাদের সহায়তাই করে না বরং সকল গ্রাহকদের ‘জেনে বুঝে পছন্দ’ করার সুযোগও দেয়।

বিজেপি কর্মীর দায়ের করা অভিযোগ
এফআইআর দায়েরকারী শৈলেন্দ্র শর্মা নিজেকে বিজেপি কর্মী হিসাবে পরিচয় দিয়েছেন এবং বলেছেন তিনি আগে ভারতীয় জনতা পার্টির অযোধ্যা অঞ্চলের যুব মোর্চার সহ-সভাপতি ছিলেন।

তিনি বলেন, হালাল সার্টিফিকেশন ব্যবস্থা সরকারি ব্যবস্থার সমান্তরাল- এটা বলা ভুল।

শৈলেন্দ্র শর্মা বলেন, তিনি নিজে অ্যালোভেরা, চোখের ড্রপ এবং তুলসীর নির্যাসের ব্যবহার করেন যাতে হালাল লেবেল রয়েছে। নিজের দাবি প্রমাণ করতে তিনি ছবিও দেখান।

তার অভিযোগের ভিত্তিতে ১৭ নভেম্বর একটি মামলা দায়ের করা হয় এবং ১৮ নভেম্বর উত্তর প্রদেশ সরকার হালাল সার্টিফিকেশনযুক্ত পণ্য নিষিদ্ধ করার আদেশ জারি করে।

শৈলেন্দ্র শর্মা অবশ্য বলেছেন যে তার এফআইআরের সাথে সরকারি আদেশের কোনো সম্পর্ক নেই।

তিনি বলেন, ‘বিষয়টি গুরুতর এবং তার তদন্ত ত্বরান্বিত হয়েছে। আমি পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলাম এবং পুলিশ মনে করে যে এটির তদন্ত হওয়া উচিৎ, তাই তারা এফআইআর দায়ের করেছে।’

তিনি প্রশ্ন করেন, ‘গোস্তজাত পণ্যগুলোতে হালাল এবং ঝটকা-র উল্লেখ করার কথা এতদিন শুনে এসেছি। কিন্তু রোজকার সামগ্রীর ক্ষেত্রেও কি এটা প্রয়োজনীয়? রান্নার মশলার সাথে এর কী সম্পর্ক? হলুদ বা ধনে গুঁড়োর সঙ্গে হালালের কোনো সম্পর্ক আছে কি?’

শৈলেন্দ্র শর্মা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে যারা দেশকে দুর্বল করে তারা হালাল সার্টিফিকেশন এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবসার সাথে জড়িত এবং এর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করা হচ্ছে। এই অর্থ সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী এবং দেশবিরোধী সংগঠনগুলোর তহবিলে ব্যবহার করা হতে পারে বলেও তিনি আশঙ্কা করেছেন।

তার কাছে এর কী প্রমাণ রয়েছে এবং কিসের ভিত্তিতে তিনি এই অভিযোগ করেছেন শর্মার কাছে একথা বিবিসি জানতে চাইলে বলেছিলেন, ‘এই মুহূর্তে এখানে কথা বলার কোনো বিষয় নেই। বলে দিলে পুলিশ কী করবে? তারা এখনো তদন্ত করছে।’

‘বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান ধরা পড়েছে। পুলিশ এই মুহূর্তে আমাদের সাথে ওই পণ্যগুলো সম্পর্কে কথা বলছে এবং আমরা তাদের হাতে সেই সব সামগ্রী তুলে দিয়েছি,’ জানিয়েছেন শর্মা।

রাজনৈতিক দলগুলো দূরত্ব রাখছে
হালাল সার্টিফাইড ওষুধ, কসমেটিকস পণ্য এবং খাদ্যপণ্যের উৎপাদন, মজুদ ও বিক্রয় নিষিদ্ধ করার নির্দেশ দেয়ার তিন দিন পরেও উত্তর প্রদেশের কোনো বিশিষ্ট নেতা এখনো এই বিষয়ে তাদের মতামত দেননি।

বিজেপি ও মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সরকার তাদের এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে সামাজিকমাধ্যমেও কিছু শেয়ার করেনি। শুধুমাত্র উত্তরপ্রদেশ সরকার এই বিষয়ে প্রকাশিত মিডিয়া রিপোর্টগুলো এক্সে ( সাবেক টুইটার) শেয়ার করেছে।

সমাজবাদী পার্টির সভাপতি অখিলেশ যাদব বা তার দলের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলগুলো এই বিষয়ে কোনো বিবৃতি দেয়নি বা সামাজিকমাধ্যমে পোস্ট শেয়ার করেনি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor