Bangladesh

বিতর্ক ছিল ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফের সঙ্গী

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চট্টগ্রাম, ফটিকছড়ি ও ঢাকায় আত্মগোপনে ছিলেন সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। তবু শেষ রক্ষা হয়নি, গতকাল রোববার রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। চট্টগ্রাম-১ আসন থেকে ছয়বারের এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ এখন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী না হলেও মিরসরাই আসনে ছেলে মাহবুব উর রহমান রুহেলকে এমপি বানান তিনি। ক্ষমতায় হোক বা ক্ষমতার বাইরে– সব সময় বিতর্ক ছিল তাঁর সঙ্গী।

অভিযোগ রয়েছে, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন মন্ত্রী থাকাকালে উৎকোচ নিয়ে প্লট বরাদ্দ দিয়েছেন, করেছেন বদলি ও ঠিকাদারি বাণিজ্য। গণপূর্তমন্ত্রী থাকাকালে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), গণপূর্ত অধিদপ্তর, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষসহ অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারি কাজ নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। জলাধারে আবাসন প্রকল্প করার সুযোগ দিয়ে নিয়েছেন মোটা অঙ্কের টাকা। আলোচিত ঠিকাদার জি কে শামিম ও রাজউকের ফাইল জালিয়াতির হোতা হিসেবে পরিচিত ‘গোল্ডেন মনির’ ছিলেন তাঁর ঘনিষ্ঠ। প্রভাব খাটিয়ে তিনি ছেলেকে পাইয়ে দেন বিভিন্ন ধরনের ঠিকাদারি কাজ। রাজধানীর পূর্বাচলে রয়েছে তাঁর কয়েকটি প্লট, সবই মন্ত্রী থাকাকালে নিয়েছেন তিনি। বেসামরিক বিমানমন্ত্রী থাকাকালে মিসর থেকে ভাড়ায় এয়ারক্রাফট আনার ঘটনায়ও অনিয়ম-লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। 

মামলার আসামি বাবা-ছেলে

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মোশাররফ হোসেনের অনিয়ম ও দুর্নীতি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাঁর বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের মিরসরাই ও জোরারগঞ্জ থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।

২০২২ সালের ১২ অক্টোবর চট্টগ্রাম শহরের পলোগ্রাউন্ড মাঠে বিএনপির সভায় যোগ দিতে যাওয়ার পথে মিরসরাইয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ইশরাক হোসেনের গাড়িবহরে হামলা চালিয়ে ২৫টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে মিরসরাই থানায় মোশাররফ হোসেন ও তাঁর ছেলে মাহবুব উর রহমানসহ ১২৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ ছাড়া, ২০১৭ সালে কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাওয়ার সময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় জোরারগঞ্জ থানায় গত শুক্রবার রাতে মামলা হয়। এই মামলায় মোশাররফ হোসেন, তাঁর ছেলেসহ ৪২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর মিরসরাই পৌরসভায় বিএনপি কার্যালয় ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ ও তাঁর ছেলেসহ ৯০ জনের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা হয়েছে। 

ছিলেন আত্মগোপনে 

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। কখনও ছিলেন চট্টগ্রামে, কখনও ফটিকছড়িতে, আবার কখনও ঢাকায়।

সম্প্রতি মিরসরাইয়ের বাসিন্দা দুবাইপ্রবাসী ফখরুল ইসলাম খান ফেসবুক লাইভে সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, তাঁর ছেলে মাহবুব উর রহমান রুহেল এবং বারৈয়ারহাটের সাবেক পৌর মেয়র রেজাউল করিম খোকনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিতে ৩০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন।

ছড়ি ঘোরাতেন চট্টগ্রামের রাজনীতিতে

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ১৯৭৫ সালে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বাকশাল এবং ১৯৭৭ সালে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। ১৯৮০ ও ১৯৮৪ সালে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন তিনি। এর পর ১৯৯২, ১৯৯৬, ২০০৪ ও ২০১২ সালে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। অভিযোগ রয়েছে, তাঁর ইশারা ছাড়া চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের কোনো কমিটি হতো না। সব কমিটিতে রাখতেন পছন্দের লোক। ২০১৩ সালে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হওয়ার পর তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলার দায়িত্ব ছাড়েন। তার পরও চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ছড়ি ঘোরাতেন তিনি। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor