Bangladesh

বিদেশি ঋণের ছাড় কমছে, বাড়ছে পরিশোধের চাপ

গত ১৫ বছরে বিদেশি ঋণের পরিমাণ বেড়ে তিনগুণ হয়েছে, আর ঋণ পরিশোধের চাপ বেড়ে হয়েছে চারগুণ। মূল ঋণ এবং সুদ দুই ক্ষেত্রেই আগের তুলনায় বেশি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে সরকারকে। অন্যদিকে প্রতিশ্রুত ঋণের ছাড় কমিয়েছে উন্নয়ন সহযোগীরা। অবশ্য নতুন ঋণের প্রতিশ্রুতি অনেক বাড়িয়েছে তারা। 

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ঋণ পরিশোধের চাপ এখনও সহনীয় পর্যায়ে আছে। তবে রিজার্ভ বাড়াতে না পারলে মেগা প্রকল্পের জন্য নেয়া ঋণ শোধ শুরু হলে পরিস্থিতি কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে। আর কয়েক বছরের মধ্যে ঋণের কিস্তির পরিমাণ বেড়ে এখনকার তুলনায় দ্বিগুণ হতে পারে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য বলছে, ২০০৮-০৯ অর্থবছর শেষে বিদেশি ঋণের স্থিতি যেখানে ছিল ২১ বিলিয়ন ডলার, গত জুন মাস পর্যন্ত তা বেড়ে ৬২.৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এদিকে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে নেয়া বিদেশি ঋণ পরিশোধের প্রাক্কলন করা হয়েছে প্রায় ৩৫৬ কোটি ডলার। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এর পরিমাণ ৪২১ কোটি ডলারের ঘর ছাড়িয়ে যাবে।

ইআরডি’র তথ্য অনুযায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে দাতাদের পুঞ্জিভূত পাওনা থেকে পরিশোধ করতে হয়েছে ১৮৩ কোটি ৩৯ ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে পরিশোধ করতে হয়েছে ১৯১ কোটি ৪৮ লাখ ডলার এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে পরিশোধ করা হয়েছে ২৭৯ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩৫৬ কোটি ডলার।

বিজ্ঞাপন এরমধ্যে অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে ৮৭ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে।

ইআরডি প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে বিদেশি ঋণের সুদাসল পরিশোধে ব্যয় আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ৫২ শতাংশ। এ বাবদ গত চার মাসে মোট ১১০ কোটি ১৪ লাখ ডলার পরিশোধ করা হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৭২ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের চার মাসে বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধে ব্যয় বেড়েছে ৩৭ কোটি ৭২ লাখ ডলার।

ইআরডি’র প্রাক্কলন অনুযায়ী, আগামী অর্থবছর থেকে বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপ আরও বাড়ছে। আগামী অর্থবছরে পরিশোধ করতে হবে প্রায় ৪২১ কোটি ডলার এবং ২০২৫ সালে প্রায় ৪৭২ কোটি ডলারের পরিশোধ করতে হতে পারে।

ইআরডি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত দাতা দেশ বা সংস্থার যে অর্থ পাওনা রয়েছে, তার মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৩ শতাংশ ঋণ পাওনা বিশ্ব ব্যাংকের। এরপর ২৪ শতাংশ নিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাওনা এডিবি’র; ১৭ শতাংশ পাওনা রয়েছে জাপানের। এছাড়া রাশিয়া ৯ শতাংশ, চীন ৮ শতাংশ, ভারত ২ শতাংশ এবং দক্ষিণ কোরিয়া ও আইডিবি ১ শতাংশ অর্থ পাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, বিদেশি ঋণ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ২০১৮ সালের পর। ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে বিদেশি ঋণের স্থিতি ৬৮.৫৫ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকে। ২০২০-২১ অর্থবছরে এ প্রবৃদ্ধি ১৯ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। ওই অর্থবছর শেষে বিদেশি ঋণের স্থিতি দাঁড়ায় ৮১.৬২ বিলিয়ন ডলারে। ২০২১-২২ অর্থবছরে বিদেশিঋণের প্রবৃদ্ধি হয় ১৬.৯ শতাংশ। অর্থবছর শেষে এ ঋণের স্থিতি ৯৫.৪৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে সুদহার বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ থেকে বিদেশি অনেক প্রতিষ্ঠান স্বল্পমেয়াদি ঋণ প্রত্যাহার করে নেয়। এতে বিদেশি ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধিও কমে যায়। ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে বিদেশি ঋণের স্থিতি ৯৮.৯৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক শেষে তথা সেপ্টেম্বরে এসে বিদেশি ঋণের স্থিতি ১০০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, বিদেশি ঋণ ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ালেও দেশের জিডিপি’র আকারের তুলনায় এটি খুব বেশি নয়। এখনো অনেক বিদেশি ঋণ নেয়ার সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। 

ঋণ পরিশোধে বড় অঙ্কের ব্যয় হলেও সে হারে প্রতিশ্রুত অর্থ ছাড় করেনি উন্নয়ন সহযোগীরা। ইআরডি’র তথ্যমতে, গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে গত চার মাসে অর্থছাড় কমেছে ১৭.৪৫ শতাংশ। মোট ১৬২ কোটি ৬২ লাখ ডলার অর্থছাড় হয়েছে এ সময়। গত অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১৯৭ কোটি ডলারের মতো। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের চার মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় উন্নয়ন সহযোগীরা ছাড় কমিয়েছে ৩৪ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। ঋণের পাশাপাশি অনুদানের অর্থছাড়ও কমে গেছে এ সময়ে। 

অবশ্য অর্থছাড় কমলেও নতুন ঋণের প্রতিশ্রুতি বেড়েছে গত চার মাসে। চলতি অর্থবছরের চার মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি এসেছে ৪৬২ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। এর মধ্যে ঋণ ৩৩৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলার ও অনুদান ২৪ কোটি ৩২ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে প্রতিশ্রুতি ছিল ৪১ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। এর মধ্যে ঋণ ছিল ৩০ কোটি ও অনুদান ছিল ১১ কোটি ৩৬ লাখ ডলার।

সূত্র জানায়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও মেট্রোরেলসহ কয়েকটা মেগা প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ শুরু হলে চাপ আরও বাড়বে। এ ছাড়া বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে এখনই কিছুটা বেকায়দায় আছে সরকার। নানামুখী চাপের মধ্যে রিজার্ভ ইতিমধ্যে ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। 
বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বিদেশি ঋণ পরিশোধের যে চাপ আছে, এখনও তা আশঙ্কাজনক পর্যায়ে যায়নি। তবে পরিস্থিতি বেশিদিন স্বস্তির জায়গায় থাকবে না। তিনি বলেন, বিদেশি ঋণ ডলারে পরিশোধ করতে হওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রায় একটা চাপ পড়বে। সেই চাপ মোকাবিলা করতে রপ্তানি এবং রেমিট্যান্স বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন তিনি। 

সিপিডি’র সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, কয়েক বছরের মধ্যে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের প্রবাহ ব্যাপকভাবে বেড়ে যেতে পারে। তুলনামূলক কম সুদের ঋণের দিকে মনোযোগ বাড়াতে হবে বাংলাদেশকে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d