Bangladesh

বিদেশি পর্যবেক্ষকদের জন্য ‘রাজসিক আয়োজন’

নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে ঢাকা আসার প্রস্তুতিতে থাকা ৮০ বিদেশি পর্যবেক্ষককে ‘রাজসিক আয়োজনে’ বরণ করা হবে। তাদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে রাজধানীর কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউয়ের একটি পাঁচ তারকা হোটেল। সেখানে তাদের থাকা-খাওয়ার সমুদয় ব্যয় মেটানো হবে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে। শুধু তা-ই নয়, আমন্ত্রিত বিদেশি পর্যবেক্ষকদের যাতায়াত পথের নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করতে কয়েক স্তরে দায়িত্ব পালন করবেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পর্যবেক্ষকের সামাজিক মর্যাদা এবং অবস্থান বিবেচনায় তাদের চলাচলে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবে পুলিশ ও আনসারের সমন্বয়ে গঠিত প্রটেকশন টিম (স্কট)। এ ছাড়া সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করবেন নিরাপত্তা বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যরা। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের গাইড হিসেবে থাকছেন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একদল স্মার্ট তরুণ-তরুণী। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মতে পুরো বিষয়টি সমন্বয় করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘নির্বাচন পর্যবেক্ষক সহায়তা সেল’। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের মেহমানদারিতে (লোকাল হসপিটালিটি) যেন কোনো কমতি বা ঘাটতি না হয় সেজন্য একজন মহাপরিচালকের নেতৃত্বাধীন ৩ সদস্যের পর্যবেক্ষক সহায়তা সেলকে শক্তিশালী করতে জনপ্রশাসনের এক ঝাঁক তরুণ কর্মকর্তাকে সেগুনবাগিচায় ন্যস্ত করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ইসি’র আমন্ত্রণে আগামী ৭ই জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ১২টি দেশের ৮০ বিদেশি পর্যবেক্ষক ঢাকা আসছেন এটা প্রায় চূড়ান্ত।

এমনটা ধরেই প্রস্তুতি কর্ম এগিয়ে চলছে। তবে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে এলে বিদেশে পর্যবেক্ষক সংখ্যা আরও বাড়তে পারে, সেটাও বিবেচনায় রাখা হয়েছে। এবং সে মতেই হোটেল বুকিং, ভেহিক্যাল রিক্যুইজেশনসহ সমন্বয়ের বিকল্প ফর্মুলা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। 

সূত্র জানায়, নির্বাচন পর্যবেক্ষক ছাড়াও ৭ই জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় ভোটাভুটির খবর সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৯০ জন গণমাধ্যমকর্মী ঢাকা আসছেন। তারা রাষ্ট্রীয় কোনো সুবিধা চাননি বা পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা এখন পর্যন্ত নেই বলে জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, আমন্ত্রিত ৮০ জন বিদেশি পর্যবেক্ষকসহ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য এবার মোট ১৮৭ জন রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন। তার মধ্যে বেশির ভাগই ঢাকা আসছেন বলে নিশ্চিত করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনের প্রস্তুতির সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ইসি’র পক্ষ থেকে বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ওই আবেদনে সাড়া দিয়ে এখন পর্যন্ত রাশিয়া, চীন, জাপান, ভারত, নাইজেরিয়া, গাম্বিয়া, লেবানন, জর্ডান, প্যালেস্টাইন, মরিশাসসহ ১১টি দেশের প্রায় ৮০ জন নির্বাচনী পর্যবেক্ষকের বাংলাদেশে আসার প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। বাংলাদেশে যেসব বিদেশি পর্যবেক্ষক আসছেন এদের বড় অংশই আমন্ত্রিত। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউয়ের কারিগরি পর্যবেক্ষক টিমসহ কয়েকজন অবশ্য নিজ খরচে আসছেন। তাদের নিরাপত্তা প্রদান করা ছাড়া অন্য কোনো ফ্যাসিলিটির বিষয়ে ভাবছে না বাংলাদেশ। 

সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এবং ব্যক্তিগতভাবে এই তিন শ্রেণিতে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর্যবেক্ষণের কাজটি করবেন। এদের মধ্যে রাশিয়া, ভারত, মরিশাস, শ্রীলঙ্কার নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধি থাকবেন বিদেশি পর্যবেক্ষকদের দলে। সংস্থা হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) এবং ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই), কমনওয়েলথ, ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা, আরব পার্লামেন্ট এবং আফ্রিকান ইলেক্টোরাল অ্যালায়েন্স নির্বাচন পর্যবেক্ষণে যুক্ত থাকছে। 

আমন্ত্রিত এবং স্বেচ্ছায় আসা পর্যবেক্ষকদের সম্পর্কে জানতে চাইলে এক কর্মকর্তা জানান, নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে যেসব বিদেশি পর্যবেক্ষণে আসবেন তাদের বাংলাদেশে থাকার সময় থাকা-খাওয়াসহ প্রয়োজনীয় সব খরচ বাংলাদেশ বহন করবে। আর যারা নিজেদের উদ্যোগে আসবেন তাদের নিজেদেরই পুরো খরচ বহন করতে হবে। প্রসঙ্গত বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আগ্রহী আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানাতে বাংলাদেশের বিদেশি মিশনগুলোতে চিঠি পাঠিয়েছিল সরকার। গত ১লা নভেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মিশনগুলোতে এ চিঠি পাঠানো হয়। মিশনগুলোতে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছিল, ২০২৪ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আমন্ত্রণ জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। এতে বাংলাদেশে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আগ্রহীদের ২১শে নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করার অনুরোধ জানানো হয়। পরে অবশ্য আবেদনের সময়সীমা বাড়ানো হয়। ৭ই ডিসেম্বর পর্যন্ত আবেদন গ্রহণ করে নির্বাচন কমিশন। 

স্মরণ করা যায়, ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ’ নির্বাচন না হওয়ার ইঙ্গিত পেয়ে পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক মিশন না পাঠানোর সিদ্ধান্ত আগেই জানায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তবে তাদের ছোট্ট দুটি বিশেষজ্ঞ দল নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছে। ভোটের আগে এবং পরের কয়েক সপ্তাহ টিম দুটি ঢাকায় অবস্থান করছে। পৃথক কারিগরি টিম দুটি মূলত ভোট পূর্ব এবং পরবর্তী বাস্তব এবং ভার্চ্যুয়াল কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করছে। স্মরণ করা যায়, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওআইসি ও কমনওয়েলথ ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোনো দেশ বা সংস্থা পর্যবেক্ষক পাঠায়নি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button