Hot

বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ৭১% বিনিয়োগ ও রাজস্বে ব্যাপক ধস

দেশে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগে (এফডিআই) বড় ধরনের পতন হয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে গত অর্থবছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় নিট বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে প্রায় ৭১ শতাংশ, যা গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। বিনিয়োগ কমার পেছনে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তাকে দায়ী করেছেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা।

চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই দেশজুড়ে ছিল রাজনৈতিক অস্থিরতা।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে তৈরি হয় নতুন পরিস্থিতি। এর পরও কাটেনি অস্থিরতা, নানা দাবিতে বিভিন্ন সংগঠন বারবারই পথে নেমেছে।

শিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণে বিনিয়োগের কোনো পরিবেশ নেই। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের ধারাবাহিকতার কারণে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।

তা ছাড়া বিনিয়োগের বাধার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যাংকের উচ্চ সুদহার। এমন পরিস্থিতিতে বাড়ছে বেকারত্বের হারও। নতুন বিনিয়োগে যাচ্ছেন না দেশীয় বিনিয়োগকারীরা। তাঁদের মতো নতুন বিনিয়োগকারীরাও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।

দেশের মোট এফডিআইয়ের ৯০ শতাংশের প্রতিনিধিত্বকারী ফরেন ইনভেস্টর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ফিকি) সভাপতি জাভেদ আখতার কালের কণ্ঠকে বলেন, “দুই-তিন বছর ধরে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনার মধ্যে রয়েছে। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল ছিল। এতে বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস কমে যায়। দেশের মাটিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তাঁরা নিরুৎসাহিত হয়েছেন। ফলে এখন তাঁরা বিনিয়োগ করা থেকে বিরত থাকছেন। পরিস্থিতি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা বিনিয়োগের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করছেন। বলা যায়, ‘ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ’ নীতি গ্রহণ করেছেন। ঘন ঘন নীতির পরিবর্তন বিদেশি বিনিয়োগ কমার অন্যতম কারণ।”

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত দুই অর্থবছর ধরেই সামষ্টিক অর্থনীতির কিছু বিষয়ে সমস্যা সৃষ্টি করেছে। এই সমস্যাগুলোর মধ্যে মূল্যস্ফীতির কারণে অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে যাওয়া, ডলারের বাজারে অস্থিতিশীলতার কারণে মূলধন কমে যাওয়া এবং আমদানিতে প্রভাব পড়া অন্যতম। এসবের সঙ্গে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে অভ্যুত্থান-পরবর্তী অস্থিরতা যোগ হয়। ফলে উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটে এবং সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়। সব মিলিয়ে আপাতত বিনিয়োগের পরিমাণ অনেক কমে গেছে।’

১১ বছরে সর্বনিম্ন বিনিয়োগ

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে দেশে নিট সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ গত অর্থবছরের একই প্রান্তিকের তুলনায় প্রায় ৭১ শতাংশ কমেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বিদেশ থেকে সরাসরি বিনিয়োগ আসে ৯৬ কোটি ৯০ লাখ ডলার। আর এ সময় বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ৮৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার নিয়ে গেছেন। তাতে নিট বিনিয়োগ দাঁড়ায় ১০ কোটি ৪০ লাখ ডলার।

এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বিদেশ থেকে সরাসরি বিনিয়োগ আসে ৯০ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এ সময় আগের বিনিয়োগের অর্থ পরিশোধ হয় ৫৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার। সে হিসাবে তখন নিট বিনিয়োগ দাঁড়ায় প্রায় ৩৬ কোটি ডলার। এতে এক বছরের ব্যবধানে বিনিয়োগ কমেছে ২৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার বা ৭১ শতাংশ।

গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিক এপ্রিল থেকে জুন সময়ে নিট বিনিয়োগ ছিল ২৭ কোটি ২২ লাখ ডলার। সে সময় ১০৮ কোটি ডলার দেশে এলেও আগের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পরিশোধ হয় ৮১ কোটি ১০ লাখ ডলার। সেই হিসাবে আগের প্রান্তিকের চেয়ে চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে নিট বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ৬১.৭৪ শতাংশ।

দেশে যে বিনিয়োগ কমছে তার চিত্র দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) তথ্যেও। বিডার তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে এক হাজার ৮৩টি ব্যবসা প্রকল্পের জন্য এক হাজার ৩৩৪ কোটি ৫১ লাখ ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব নিবন্ধন হয়েছে। পরের বছর এক হাজার ৮১টি ব্যবসা প্রকল্প নিবন্ধনের মাধ্যমে এক হাজার ২৮৮ কোটি ৩৫ লাখ ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছিল। ২০২৩ সালে আরো কমে ব্যবসার ৯৯৮টি প্রকল্পে ৮৯৭ কোটি ৮৫ লাখ ডলার হয়। আর ২০২৪ সালে ব্যবসার ৭৪২টি প্রকল্পে এক হাজার ১৬৩ কোটি ডলার বিনিয়োগ নিবন্ধন হলেও এপ্রিল-জুন প্রান্তিকেই ২৫৪টি প্রকল্পে ৬৬৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার হয়। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সরকার পরিবর্তনকালীন জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে তা কমে ১৮৬টি প্রকল্পে মাত্র ১৮৬ কোটি ৭১ লাখ ডলার হয়।

মুলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে

বিনিয়োগ কমার চিত্র উঠে এসেছে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাস জুলাই-নভেম্বরে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির ঋণপত্র বা এলসি খোলা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৬ শতাংশ কমেছে। একইভাবে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির ঋণপত্র নিষ্পত্তি কমেছে প্রায় ২২ শতাংশ।

বাড়ছে বেকারত্ব

পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে বেকারের সংখ্যা বেড়ে এখন ২৬ লাখ ৬০ হাজার। আগের বছরের একই সময় দেশে বেকার জনগোষ্ঠী ছিল ২৪ লাখ ৯০ হাজার। গত বছরের একই সময়ের চেয়ে বেকার বেড়েছে এক লাখ ৭০ হাজার। পাশাপাশি বেকারত্বের হার বেড়ে হয়েছে ৪.৪৯ শতাংশ। গত বছর একই সময় তা ছিল ৪.০৭ শতাংশ।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘বর্তমানে দেশে বিনিয়োগের কোনো পরিবেশ নেই। গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকট, ব্যাংকের সুদের হার বেশি, নানা রকমের সমস্যা, ব্যাংকগুলোর চরম অসহযোগিতাসহ নানা কারণে একেবারেই বিনিয়োগ নেই।’

উচ্চ সুদহারে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি তলানিতে

দেশের বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি তলানিতে নেমেছে। গত নভেম্বর মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ৭.৬৬ শতাংশ। এই প্রবৃদ্ধি গত সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। 

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বাড়ানোর কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য দফায় দফায় নীতি সুদহার বাড়ানো হয়েছে। ফলে ব্যাংক ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি কমেছে। সুদের হার বৃদ্ধির কারণে অনেকে বিনিয়োগ থেকে পিছিয়ে যাচ্ছেন। 

দফায় দফায় ঋণের সুদহার বাড়ানোয় চরম সংকটে পড়েছে বেসরকারি খাত। ফলে ব্যবসা প্রসারসহ থমকে রয়েছে বিনিয়োগ। ব্যবসা ও বিনিয়োগে খরচ বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে রয়েছেন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। তাঁরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি কমানোর একমাত্র উপায় সুদহার বৃদ্ধি নয়। আরো অনেক উপায় রয়েছে। দেশে এখন বিনিয়োগের কোনো পরিবেশ নেই। বরং ব্যবসায়ীরা টিকে থাকার লড়াই করছেন।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘উচ্চ মূল্যস্ফীতি যা নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। একদিকে কঠোর নিয়ন্ত্রণ ব্যাংকগুলোর ওপর, আরেক দিক দিয়ে যদি কঠোর মুদ্রানীতি অনুসরণ করা হয়, তাহলে অস্থিরতা সৃষ্টি হবেই। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি যদি ঠিক না হয় তাহলে ব্যবসা-বাণিজ্য চালানো অসম্ভব। আর নতুন বিনিয়োগ তো হবেই না।’

এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, যখন বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের কথা আসে তখন তারা দীর্ঘদিন ধরে সংকুচিত মুদ্রানীতি অনুসরণ করেছে। আবার যখন সরকারের ঋণের বেলায় আসে তখন কিন্তু সংকোচন নেই। নানা সংকটে ব্যবসা-বাণিজ্যে এখন বিরাট প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। এর একটি হলো আইন-শৃঙ্খলাজনিত, আরেকটি ব্যাংকিং খাতের অস্থিরতাজনিত। সবটার মূলেই আছে রাজনীতি। তাই অর্থনীতি ঠিক করতে, বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে আগে রাজনীতি ঠিক করতে হবে।

ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান বলেন, ‘দেশি বিনিয়োগকারীদের সুবিধা দিলে বিদেশি বিনিয়োগ এমনিই বাড়বে। কারণ বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করার আগে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের জিজ্ঞেস করেন, দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতি কেমন।’

তিনি বলেন, ‘১৫ বছর ধরে আমরা একই কথা বলে আসছি যে কেন বাংলাদেশে অনেক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বে বিনিয়োগ হচ্ছে না। বিনিয়োগকারীদের একটা কমন প্রশ্ন থাকে, বাংলাদেশে ট্যাক্স রেটটা আসলে কত? কোনো বেঞ্চমার্ক নেই। বিভিন্ন ধরনের ট্যাক্স রেট আরোপ করায় কার্যকর মৌলিক করহারের কাঠামো নেই। এটা হচ্ছে বিনিয়োগের প্রথম বাধা। এরপর উচ্চ করের সঙ্গে আছে অসংগত নীতি। নীতি চেঞ্জ করে দেওয়া হচ্ছে যখন-তখন। এতে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েন বিনিয়োগকারীরা।

অর্থনীতিসংক্রান্ত টাস্কফোর্সের ৩১ সুপারিশ

এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়াতে অর্থনীতিসংক্রান্ত টাস্কফোর্স ৩১টি সুপারিশ প্রণয়ন করেছে। সুপারিশগুলোতে উল্লেখযোগ্য কিছু প্রস্তাব রয়েছে, যেমন-১০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ পণ্য রপ্তানির সক্ষমতা রয়েছে এমন এক হাজার ৫০০ কম্পানিকে বিশেষ নীতির আওতায় আনা, এসএমই খাতকে সমর্থন করতে ‘ঢাকা হাট’ প্রকল্প স্থাপন, আন্তর্জাতিকমানের হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার জন্য বিদেশি বিনিয়োগ উদ্বুদ্ধ করা এবং বিভিন্ন শিল্পে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির প্রয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ। এই প্রতিবেদনে দেশের বিনিয়োগযোগ্য খাতগুলোর বিশদ বিবরণ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের উন্নয়ন এবং সরকারি দপ্তরগুলোর প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছে। সম্প্রতি টাস্কফোর্সের প্রধান কে এ এস মুরশিদ জানিয়েছেন, প্রতিবেদনটি সমাপ্তি পর্যায়ে রয়েছে এবং সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টার কাছে পাঠানো হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot