বিদেশী দায় মেটাতে চাপের মুখে সরকার

বিদেশী দায় মেটাতে চাপের মুখে সরকার
গত অর্থবছরের প্রথম দশ মাসের (জুলাই-এপ্রিল) তুলনায় চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই সময়ে প্রতিশ্রুতিতে ৪৩.৯৭ শতাংশ ভাটা পড়েছে।গত অর্থবছরের প্রথম দশ মাসের (জুলাই-এপ্রিল) তুলনায় চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই সময়ে প্রতিশ্রুতিতে ৪৩.৯৭ শতাংশ ভাটা পড়েছে।
- প্রতিশ্রুতি আগের তুলনায় ৪৩.৯৭ শতাংশ বা ৩৩৪ কোটি ডলার কমেছে
- ব্যয় সুদ পরিশোধে ৩৬.৯৭ শতাংশ, আসলে ৬৩.০২ শতাংশ
- ছাড়ে এডিবি এগিয়ে, তবে প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বব্যাংক (আইডা) বেশি
দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে নেয়া বিদেশী ঋণের দায় মেটাতে সরকার বেশ চাপের মুখে। উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুত ও অর্থ ছাড় কমলেও সরকারের দায় মেটানোর চাপ প্রতি মাসেই বেড়ে চলছে। তবে এক্ষেত্রে আসলের চেয়ে সুদের অঙ্ক বাড়ছে। গত অর্থবছরের প্রথম দশ মাসের (জুলাই-এপ্রিল) তুলনায় চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই সময়ে প্রতিশ্রুতিতে ৪৩.৯৭ শতাংশ ভাটা পড়েছে। অর্থছাড় কমেছে ১৭.৮৩ শতাংশ। তবে দায় পরিশোধ ৩৫.৪০ শতাংশ বেড়েছে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায়। অর্থছাড়ে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এগিয়ে থাকলেও প্রতিশ্রুতিতে সবার ওপরে বিশ্বব্যাংক (আইডা)।
গতকাল প্রকাশিত অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্যে এসব প্রকাশ করা হয়েছে। ইআরডির তথ্যানুযায়ী চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) প্রতিশ্রুতি ছিল ৪২৫ কোটি ৯৪ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার, যার বিপরীতে ছাড় হয়েছে ৫১৬ কোটি ৩৪ লাখ ৪০ হাজার ডলার। এখানে আগের প্রতিশ্রুতিরও অর্থ রয়েছে। এই ছাড় চলতি সময়ের প্রতিশ্রুতির চেয়ে বাড়লেও আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৩.৯৭ শতাংশ কম, যা ডলারে ৩৩৪ কোটি ৩৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার। বাংলাদেশের অন্যতম বড় উন্নয়ন সহযোগী হলো এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। ১০ মাসে সংস্থাটি ৭০ কোটি ডলার প্রতিশ্রুতির বিপরীতে দিলো ১৪০ কোটি ৩৫ লাখ ৯০ হাজার ডলার। বিশ^ব্যাংকের আইডিএ প্রতিশ্রুতির ১৭৯ কোটি ৪৫ লাখ ডলারের বিপরীতে দিয়েছে ১১৫ কোটি ৮৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার।
প্রতিশ্রুতি ৪৩.৯৭ শতাংশ কমেছে
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত প্রথম দশ মাসে প্রতিশ্রুতি এসেছে ৪২৫ কোটি ৯৪ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার, যা আগের অর্থবছর একই সময়ে ছিল ৭৬০ কোটি ৩৪ লাখ ২০ হাজার ডলার। ফলে প্রতিশ্রুতি কমেছে ৩৩৪ কোটি ৩৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার বা আগের তুলনায় ৪৩.৯৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছর প্রতিশ্রুতিতে অনুদানের পরিমাণ ৩৫ কোটি ৬৯ লাখ ৪০ হাজার ডলার এবং ঋণ ছিল ৩৯০ কোটি ২৫ লাখ ৩০ হাজার ডলার। আগের সময়ে অনুদান ছিল ৫০ কোটি ২৮ লাখ ৭০ হাজার ডলার এবং ঋণ ছিল ৭১০ কোটি পাঁচ লাখ ৫০ হাজার ডলার।
অর্থছাড় কমেছে ১৭.৮৩ শতাংশ:
উন্নয়ন সহযোগীরা অর্থ ছাড় করেছে এ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে মোট ৫১৬ কোটি ৩৪ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার। যার মধ্যে অনুদান হলো ৩৫ কোটি ৪৪ লাখ ৪০ হাজার ডলার এবং ঋণ ৪৮০ কোটি ৯০ লাখ ডলার। তবে অনুদানের মধ্যে সাড়ে তিন কোটি ডলার ছিল খাদ্যসহায়তা। যেখানে আগের অর্থবছর একই সময়ে ছাড় হয়েছিল ৬২৮ কোটি ৪০ লাখ ২০ হাজার ডলার। সেখানে অনুদান ছিল ৩৩ কোটি ৫৮ লাখ ৪০ হাজার ডলার এবং ঋণ ৫৯৪ কোটি ৮১ লাখ ৮০ হাজার ডলার। অনুদানের মধ্যে খাদ্যসহায়তা ছিল এক কোটি ৯০ লাখ ডলার। ফলে গত বছরের তুলনায় অর্থছাড় ১৭.৮৩ শতাংশ কম হয়েছে, যা ১১২ কোটি পাঁচ লাখ ৮০ হাজার ডলার।
দায় পরিশোধে চাপ ৩৫.৪০ শতাংশ বেড়েছে
ইআরডির এপ্রিল ’২৫ পর্যন্ত হালনাগাদ তথ্য বলছে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছর প্রথম ১০ মাসে বাংলাদেশকে সুদ ও আসল বাবদ ৩৫০ কোটি ৭১ লাখ ৭০ হাজার ডলার উন্নয়ন সহযোগীদেরকে পরিশোধ করতে হয়েছে। যার মধ্যে আসল বাবদ ২২১ কোটি চার লাখ ৪০ হাজার ডলার এবং ঋণের সুদ ১২৯ কোটি ৬৭ লাখ ৩০ হাজার ডলার। সুদ হলো মোট পরিশোধের ৩৬.৯৭ শতাংশ। আর আগের বছর সুদাসলে পরিশোধ করা হয় মোট ২৮১ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার। এর মধ্যে আসল বাবদ ১৬৬ কোটি ৩৭ লাখ ডলার এবং সুদ দিতে হয়েছে ১১৪ কোটি ৮০ লাখ ৫০ হাজার ডলার। ফলে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় পরিশোধ ১৯৯ কোটি ৫৫ লাখ ২০ হাজার ডলার বা ৩৫.৪০ শতাংশ বেড়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ইআরডির সদ্য প্রকাশিত তথ্য বলছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে সহায়তা পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় এক হাজার ৮২ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এখানে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল বাজেটে সহায়তা প্রাপ্তির সরকারের লক্ষ্যমাত্রা হলো ৯৩০ কোটি ৪০ লাখ ডলার। যেখানে আমেরিকা ও জাপান ১৮৮ কোটি ২০ লাখ ডলার, বিশ্বব্যাংক (আইডিএ) ২২৫ কোটি ডলার, অ্যাডমিন ও মধ্যপ্রাচ্য ১৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার, জাতিসঙ্ঘ ১৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ১৯৫ কোটি ২০ লাখ ডলার, সমন্বয় এবং নর্ডিক ১৫ কোটি ১০ লাখ ডলার, ইউরোপ থেকে ১৩১ কোটি ৯০ লাখ ডলার, এশিয়া, জেইসি এবং এফঅ্যান্ডএফ থেকে ১৪০ কোটি ৬০ লাখ ডলার ধরা হয়েছে।