Hot

বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ একটি ‘লুটেরা মডেল’

সরকারি প্রতিবেদন

ছবি : প্রতীকী

দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ হচ্ছে একটি ‘লুটেরা মডেল’। এই ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে গত ১৪ বছরে ৯০ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ ডলার গচ্চা গেছে। ক্যাপাসিটি চার্জের বর্তমান মডেল কোনোভাবেই টেকসই নয়।

বিদ্যুৎ খাতের প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তৈরি এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমনটাই বলা হয়েছে। ক্যাপাসিটি চার্জ না থাকলে বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ আসবে না—এমন দাবিও মিথ্যা বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে স্থানভেদে ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ বেশি দামে বিদ্যুৎ বিক্রির সুবিধা রাখা এবং সরকার নিরবচ্ছিন্নভাবে এক–চতুর্থাংশ বা অর্ধেক বিদ্যুৎ কেনার নিশ্চয়তা দেবে—এ দুটি শর্তই যথেষ্ট; সঙ্গে সহজ শর্তে ব্যাংকের ঋণপ্রাপ্তির বিষয়টিও থাকবে।

প্রসঙ্গত, বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রকে অলস বসিয়ে রাখলে চুক্তি অনুযায়ী তাদের যে পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হয়, সেটারই আনুষ্ঠানিক নাম ক্যাপাসিটি চার্জ।

আইএমইডির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি) ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থবছরে পিডিবিকে লোকসান গুনতে হবে প্রায় ১ লাখ ১৬ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা। এর আগের ১২ বছরে সংস্থাটি লোকসান গুনেছে ১ লাখ ৫ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১২ বছরে বিদ্যুৎ খাতে সরকার মোট যা লোকসান করেছে, তার চেয়ে বেশি লোকসান হয়েছে গত দুই অর্থবছরে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে স্থাপিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট সক্ষমতার মাত্র ৫৬ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। এর কারণ, জ্বালানি ও কয়লানির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ অনেক বেশি। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে অতিরিক্ত মূল্যে বিদ্যুৎ কিনে গ্রাহকদের সরবরাহ করতে সরকারকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ভর্তুকি দিতে হয়।

আইএমইডি বলছে, ইউনিটপ্রতি উচ্চমূল্য, ক্যাপাসিটি ও ওভারহোলিং চার্জ; স্বল্পমূল্যে জ্বালানি ও জমি ক্রয়; সহজে ব্যাংকের ঋণপ্রাপ্তি এবং শুল্কমুক্ত আমদানির সুবিধা বন্ধ না করলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের তহবিল সংকটের সমাধান নেই।

‘২০১০ সালে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি’ নামে বিশেষ আইন করে সরকার। আইনটি দায়মুক্তি আইন নামেই বেশি পরিচিত। এ আইন বিদ্যুৎ খাতে লোকসান বয়ে আনছে বলে আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, দায়মুক্তির সুযোগ দেওয়া এ আইনের বলে বিদ্যুৎ খাতের ইউনিটপ্রতি ক্রয়মূল্য ও খরচের মডেল জবাবদিহির ঊর্ধ্বে। অলস বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জসহ হিসাব করলে দেখা যায়, কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইউনিটপ্রতি বার্ষিক গড় মূল্য ১০০ টাকাও ছাড়ায়। মার্কিন ডলারে অর্থ পরিশোধ করা হয় বলে এতে পিডিবির লোকসান থামানো যাচ্ছে না। এই দুর্বৃত্তায়ন থামানো জরুরি।

আইএমইডির প্রতিবেদনে পিডিবি, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি), ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো), ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি, নেসকো, শ্রেডা, ইজিসিবি, পাওয়ার সেল, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি), আরপিসিএলসহ বিভিন্ন সংস্থা ২০১৩ সাল থেকে নেওয়া ৬৭টি বিদ্যুৎ প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতিকে ‘হতাশাজনক’ বলে উল্লেখ করে আইএমইডি বলেছে, ৭ বছর পেরিয়ে গেলেও কিছু কিছু প্রকল্পের বাস্তবায়ন মাত্র ১০ শতাংশ। প্রথম বছরে কোনো প্রকল্পেরই অগ্রগতি হয়নি।

আইএমইডি বলছে, কারিগরি জ্ঞানহীন ও অভিজ্ঞতাহীন একদল দুর্নীতিপরায়ণ ব্যবস্থাপক ভুল ও অদূরদর্শী সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত আইন ও নীতিমালা এবং আইনি প্রক্রিয়ার দোহাই দিয়ে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতকে অযোগ্য করে রেখেছে; বিশেষ করে চীন ও ভারতীয় সরবরাহকারীদের পুনর্বাসনকেন্দ্র বানিয়ে ফেলেছে। সব মিলিয়ে বিদ্যুৎ খাত এখন বহুবিধ সমস্যার মুখোমুখি। এসবের সমাধানে দরকার মেধাবী, দূরদর্শী, ভবিষ্যৎমুখী স্বচ্ছ ও দায়বদ্ধ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto